রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

Prof Dr Tareque Shamsur Rehman

In his Office at UGC Bangladesh

Prof Dr Tareque Shamsur Rahman

During his stay in Germany

Prof Dr Tareque Shamsur Rahman

At Fatih University, Turkey during his recent visit.

Prof Dr Tareque Shamsur Rehman

In front of an Ethnic Mud House in Mexico

গ্রেটা থানবার্গ ও বিশ্ব পরিবেশ আন্দোলন




 Image result for Gita climate activist NYC UNO


মাত্র ১৬ বছর বয়স তাঁর। গ্রেটা থানবার্গ। ডেনমার্কের নাগরিক। গ্রেটা থানবার্গ এই মুহূর্তে একটি আলোচিত নাম। মাত্র ১৬ বছর বয়সী এই কিশোরী নিজেকে নিয়ে গেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ‘ক্লাইমেট প্রটেস্ট’ মার্চ আয়োজন করে তিনি বিশ্বের পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃত্বের সারিতে উঠে এসেছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর তাঁকে দেখেছি শত শত মানুষের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় মিছিল করতে। তাঁর আহ্বানে ১৮৫টি দেশের স্কুলছাত্ররা রাস্তায় নেমে এসেছিল। বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে। মরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। সাগর-মহাসাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে। এর কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। এই জ্বালানি ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না। তাই প্রতিবাদ। মনে আছে, নিশ্চয়ই এই কিশোরী আগস্টে নিউ ইয়র্কের পরিবেশ সম্মেলনে যোগ দিতে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ১৫ দিনের এই সমুদ্রযাত্রাকে বলা হয়েছিল ‘Carbon Neutral Transatlantic Crossing’। একটি ছোট্ট ইয়টে করে তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়াই আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে তিনি নিউ ইয়র্কে এসেছেন। এরপর এখান থেকে তিনি যাবেন চিলির সান্টিয়াগোতে, যোগ দেবেন  COP25 সম্মেলনে।
বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের কারণে উষ্ণতা বাড়ছে, যা কিনা এরই মধ্যে বিপত্সীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
Greta Maliza11 ইয়টে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেছেন সোলার পাওয়ার। তাঁর ইয়টে কোনো টয়লেট, কিচেন ও শাওয়ার ছিল না। সোলার পাওয়ার ব্যবহার করেছেন শুধু কমিউনিকেশনের জন্য। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার—বিশ্বের উষ্ণতা কমিয়ে আনা ও জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, গ্যাস) কমিয়ে আনার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা। গ্রেটা থানবার্গ  (Greta Thunberg) যখন নিউ ইয়র্ক ক্লাইমেট শীর্ষ সম্মেলনে বলেন, ‘ You have stolen my dreams, and my childhood with your empty words’, তখন বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে বিশ্বনেতাদের ব্যর্থতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। একজন কিশোরী, যে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে এই আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন, যখন সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে বলেন,  We will be watching you. This is all wrong. I should not be up here. I should be back in School, on the other side of the Ocean’,   তখন হলভর্তি মানুষ তাঁকে করতালি দিয়ে তাঁর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। অশ্রুভেজা কণ্ঠে তাঁর দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ পায় যখন তিনি বলে ওঠেন, ‘How dare you.’ গ্রেটা বলতে ভোলেননি অর্থ এবং শুধু অর্থের কারণেই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের উষ্ণতা হ্রাসের জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
গ্রেটা থানবার্গ মিথ্যা বলননি। জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন, বিপণনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থ-সম্পদ। সুতরাং তেল ও গ্যাস উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কম্পানিগুলো কোনো অবস্থায়ই চাইবে না তাদের উৎপাদনপ্রক্রিয়া বন্ধ হোক। তারা বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ওয়াশিংটনে লবিস্ট নিয়োগ করে। এই লবিস্টরা ওই সব কম্পানির পক্ষে কাজ করেন। সিরিয়াস পাঠকরা নিশ্চয়ই স্মরণ করতে পারেন, ‘Seven Sisters’-এর কথা। কারা এই সাত বোন? এই সাত বোন হচ্ছে সাতটি কম্পানি, যারা বিশ্বজুড়ে তেল উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এই সাতটি কম্পানি হচ্ছে— BP, Gulf Oil, Dutch Shell, Chevron, Exxon Mobil, Standard Oil, Texaco এগুলো সবই বেসরকারি তেল কম্পানি। এসব কম্পানি বিশ্ব তেল রিজার্ভের ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তেলের বড় রিজার্ভ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে, বিশ্ব রিজার্ভের ৪৯ শতাংশ। এরপর রয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় ২০ শতাংশ। উত্তর আমেরিকায় আছে ১৩ শতাংশ, আফ্রিকায় ৮ শতাংশ, ইউরো-এশিয়া জোনে ৭ শতাংশ। পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে যেখানে তেল রিজার্ভ রয়েছে, সেখানেই তৎপর হয়েছে এই সেভেন সিস্টার্স। তারা পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রনায়ককে তাদের ‘পে-রোলে’ ফেলে দয়। কোনো সরকারপ্রধান (যেমন—ইরানের মোসাদ্দেক) যদি তাদের বিরুদ্ধাচরণ করেন, তাঁদের সরিয়ে দিতেও তারা দ্বিধা বোধ করে না। মার্কিন প্রশাসনে, কংগ্রেসে তাদের প্রভাব অনেক বেশি। বলা হয়, তাদের প্রভাবের কারণেই ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের উষ্ণতা রোধে কপ-২১ চুক্তি স্বাক্ষর করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কপ-২১ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন। কপ-২১-এ (প্যারিস) বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা হবে বলে চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশ (১৭৪ দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) রাজি হয়েছিল। বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারলেই বিশ্বের উষ্ণতা হ্রাস পাবে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো আদৌ দায়ী নয়। কিন্তু এসব দেশই বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
শিল্পোন্নত ১০টি দেশ বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের ৬৭.৬ শতাংশ নিজেরা নিঃসরণ করে। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন। দুঃখজনক হচ্ছে, কপ-২১-এ যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষর করলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হয়ে কপ-২১ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। সারা বিশ্ব যেখানে এটা স্বীকার করে নিয়েছে এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি দায়ী, সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বৈজ্ঞানিক ও প্রমাণিত সত্যকে বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে সাগর-মহাসাগরের জলরাশি।
World Meteorological Organization (সিড়)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে—কার্বন নিঃসরণের মাত্রা অতীতের চেয়ে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সময়সীমায় ২০ শতাংশ হারে বেড়েছে। ১৯৯৩ সাল থেকে যেখানে সাগরের জলসীমার উচ্চতা বেড়েছে গড়ে ৩.২ মিলিমিটার, সেখানে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সময়সীমায় বেড়েছে পাঁচ মিলিমিটারের ওপর (এবিসি নিউজ, ২২ সেপ্টেম্বর)। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে বারবার ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। দ্বীপাঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো আতঙ্কের মধ্যে আছে। এ ক্ষেত্রে বড় রাষ্ট্রগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, যুক্তরাষ্ট্র তা পালন করছে না।
জাতিসংঘের ব্যর্থতা এখানেই যে বিশ্বের উষ্ণতা রোধে জাতিসংঘ সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সুতরাং ভয়টা এখানেই। কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ যে সত্য উচ্চারণ করেছেন, তা কতটুকু আবেদন রাখতে পারবে? চলতি সংখ্যা ইকোনমিস্টের কাভার স্টোরি
‘The Climate Issue’ (২১ সেপ্টেম্বর)। এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে কিভাবে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাময়িকীটি একটি তথ্য দিয়েছে। এতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে। ব্যক্তি পর্যায়ে এর পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রে ৫.৩ গিগাটন, মধ্যপ্রাচ্যে ২.৭ গিগাটন, ইউরোপে ৪.৯ গিগাটন, চীনে ৯.৮ গিগাটন, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ৫.১ গিগাটন, ভারতে ২.৫ গিগাটন ইত্যাদি (বিশ্বে গড় ৪.৬ গিগাটন, ২০১৭ সালের হিসাব)। বিকল্প জ্বালানির অভাব এবং না থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বেশি মাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। ‘নিশ্চয়ই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটা উপলব্ধি করেন। তাই তিনি যখন কপ-২১ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন, তাঁর বিবেচনায় এটা ছিল। তবে এটা ঠিক, বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন, গবেষণা ইত্যাদির দিকে তিনি নজর দিতে পারতেন। এখন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা শিল্পোন্নত দেশগুলো উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে যে ক্ষতি হবে, তা হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, সোলার বা বায়ু শক্তির প্রসার ঘটিয়ে তারা শক্তি বা জ্বালানির চাহিদা পূরণ করতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশসহ সাগরপারের দেশগুলো? অনেক দেশ এখন ঝুঁকির মধ্যে আছে।
প্যারিস কপ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে উন্নত দেশগুলো পরিবেশ রক্ষায় উন্নয়নশীল, বিশেষ করে সাগরপারের দেশগুলোকে সাহায্য করবে। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি গত চার বছরেও। বলা ভালো, উন্নত বিশ্বের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশ্ব জিডিপির ৭৫ শতাংশ আর তারা কার্বন নিঃসরণ করে ৬৭.৬ শতাংশ। বাংলাদেশ এসব উন্নত দেশের কার্বন নিঃসরণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। বাংলাদেশের উপকূলে প্রতিবছর ১৪ মিলিমিটার করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গত ২০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপাঞ্চলের মানুষ ঢাকায় আসতে বাধ্য হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে প্রতি সাতজনে একজন মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। বাংলাদেশ কোপেনহেগেন কপ সম্মেলনে (২০০৯) এসব উদ্বাস্তু মানুষকে  Universal Natural Person হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এ দাবি গ্রহণযোগ্য হয়নি। বাংলাদেশ জাতিসংঘে এ দাবি আবারও উত্থাপন করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় যে বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা নিশ্চিত করার দাবি জানাবে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে এই উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়টিও।
কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ খুব সাহস করেই কথা বলেছেন। তিনি তাঁর কৈশোর হারানোর কথা বলেছেন। তিনি স্কুলে যেতে চান, সে কথাও বলেছেন। এটা ঠিক, জাতিসংঘ একটা প্যানেল তৈরি করেছিল  Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC)| তাদের একাধিক প্রতিবেদনে আছে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি ও এর ভয়াবহতার কথা। কিন্তু জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করতে পারছে না জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে। চীন বড় অর্থনীতির দেশ। তারা সোলারসহ বিকল্প অর্থনীতির দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগটা অনেক কম। এককভাবে ডেনমার্ক কিংবা গ্রেটা থানবার্গ বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে পারবেন না। কিন্তু তাঁর সাহসী উচ্চারণ  ‘How dare you’ নিশ্চয়ই অনেক তরুণকে উৎসাহ জোগাবে। একটা সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। এই সচেতনতাই হাজারো গ্রেটা থানবার্গ তৈরি করবে এবং ধরিত্রীকে বাঁচাবে।
Daily Kalerkontho
29.09.2019

আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান ও কিছু মৌলিক প্রশ্ন

Image result for Anti Casino movement Dhaka


গেল সপ্তাহে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের মালিকানাধীন বেশে কয়েকটি ক্যাসিনোতে র‌্যাবের অভিযান ও বেশ কয়েকজন যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতারের পর যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে এর শেষ কোথায়? এই ক্যাসিনো পরিচালনা, সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার কিংবা বিদেশি মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় সাধারণ মানুষ অবাক হলেও এ নিয়ে ইতোমধ্যে ‘রাজনীতি’ শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে সাবেক বিএনপি সরকারের আমলে ক্লাবগুলোতে এই ক্যাসিনো চালু হয়েছিল। এর পেছনে সত্যতা যাই থাকুক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে দশ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তাহলে আওয়ামী লীগ এই দশ বছরে এই ক্যাসিনোগুলো চালাতে দিল কেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন এই ক্যাসিনোগুলো অবৈধ, এগুলো সরকারের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হতো না। প্রশ্নটা সেখানেই, কার বা কাদের নির্দেশে এই অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালিত হতো? ঢাকার মতিঝিল পাড়ায় একাধিক ক্লাবকে ঘিরে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালিত হতো। আরও আগে কেন এসব বন্ধের উদ্যোগ নিলেন না?

সরকার যে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে, তার রেশ ধরেই ওয়ান্ডারার্স, কলাবাগান ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। এরপর বন্ধ হয় ভিক্টোরিয়া ক্লাব, দিলকুশা ও আরামবাগ ক্লাব। অভিযান পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রামেও। দেরিতে হলেও সরকারের এই শুদ্ধি অভিযান প্রশংসা পাবার যোগ্য। এখানে যে প্রশ্নটি অনেকে করার চেষ্টা করেন, তা হচ্ছে শুধু যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে কেন? যে নামগুলো পত্রিকায় এসেছে, শুধু তারাই কি এসব জুয়া বা ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত? ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, মোল্লা মো. আবু কাওসার, একেএম মোমিনুল হক সাঈদ কিংবা জিকে শামীম কিংবা শফিকুল আলম ফিরোজ (কলাবাগান) যাদেরকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে, করতে চাইছেÑ তারা প্রায় সবাই যুবলীগের সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও আরও লোক জড়িত। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত। সরকার অনেক শক্ত অবস্থানে গেছে। সবার উচিত সরকারকে সহযোগিতা করা। আরও একটা কথা। কথা উঠেছে, গ্রেফতাররা সবাই ছিল যুবদলের সদস্য। এটা হতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জেনে শুনে তাহলে এদের যুবলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল কেন? এদের প্রথম যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন যুবলীগ সভাপতি অত্যন্ত উদ্ধত ভাষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমালোচনা করেছিলেন। তার ‘আঙুল চোষা’ তত্ত্ব নিয়ে একটি জনপ্রিয় সংবাদপত্র উপ-সম্পাদকীয় পর্যন্ত প্রকাশ করেছিল। যুবলীগ সভাপতি রাগান্বিত হয়ে যা বলেছেন, তা অশোভন। এটা বলা তার উচিত হয়নি। এ ধরনের বক্তব্য প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজদের সমর্থন করার শামিল।
ক্যাসিনো অভিযান নিয়ে আরও তিনটি কথা। এক. ফকিরাপুল ক্লাবের সভাপতি হচ্ছেন একজন সংসদ সদস্য। তিনি তা স্বীকারও করেছেন। তবে বলেছেন ওই ক্লাবে যে ক্যাসিনো চলে, তা তিনি জানতেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওই ক্লাবের ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত যুবলীগ নেতাকে যদি গ্রেফতার করা হয়, তাহলে ওই সংসদ সদস্যকেও কি একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায় না? তিনি তার দায় এড়াতে পারেন না। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য। দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি একটি ক্লাবের সভাপতি, সেই ক্লাবে জুয়ার আসর বসে, অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে, তিনি তা জানেন নাÑ এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। হতে পারেন তিনি সংসদ সদস্য। কিন্তু তিনিও সমান অপরাধী।
দুই. সারা দেশে যখন ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলছে, তখন চট্টগ্রামের একজন সংসদ সদস্যের বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ক্লাবের তাস খেলা বন্ধ করে শেষ লাভ হবে না। তাস খেলা বন্ধ করলে ছেলেরা রাস্তায় ছিনতাই করবে (প্রথম আলো ২২ সেপ্টেম্বর)। তার এই বক্তব্য কী জুয়া খেলাকে উৎসাহিত করল না? একজন সংসদ সদস্য, যিনি দেশের ভালো মন্দের জন্য আইন প্রণয়ন করবেন, আইন প্রণয়নে সংসদকে সহযোগিতা করবেন, তিনি কি এ ধরনের কথা বলতে পারেন? একজন সংসদ সদস্য যদি এ ধরনের কথা বলেন, তা কি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল না? প্রধানমন্ত্রী তো ‘ক্যাসিনো সম্রাট’দের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে সর্বমহল থেকে প্রশংসা পেয়েছেন। এখন তার দলীয় একজন এমপি অবস্থান নিলেন জুয়াড়িদের পক্ষে। এটা দুঃখজনক। ওই সংসদ সদস্য চট্টগ্রামে একটি ক্লাব চালান। পত্রিকায় দেখলাম পুলিশের এক পরিদর্শক নিজের ফেসবুকে পেজে লিখেছেন, ক্লাবের জুয়া খেলা থেকে ওই সংসদ সদস্যের ৫ বছরের আয় ১৮০ কোটি টাকা। থানার ওসিরা প্রতিদিন ক্লাব থেকে কত টাকা আয় করেন, তারও হিসাব আছে তাতে। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, তিনি দায়িত্ব নিয়েই এ কথা লিখেছেন। এর সত্যতা কতটুকু আমি জানি না। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এটা ভালো বলতে পারবে। তবে অভিযোগটি গুরুতর। এটাও অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
তিন. যুবলীগের এক নেতা ‘ঠিকাদার মোগল’ জিকে শামীম। সরকারের এই শুদ্ধি অভিযানে তার নিকেতনস্থ অফিসে পাওয়া গেছে ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর আর নগদ প্রায় ২ কোটি টাকা। ‘টাকার কুমির’ এই ঠিকাদারের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা আছে বলে সংবাদপত্রগুলো আমাদের জানাচ্ছে। তিনি রূপপুরের বালিশ কেলেঙ্কারির সঙ্গেও জড়িত। তার সম্পর্কে আরও যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। কয়েক হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারির কাজ তিনি পেয়েছেন। এসব কাজ পেতে গণর্পূত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে দিয়েছেন শত শত কোটি টাকা (সমকাল ২২ সেপ্টেম্বর)। একজন শামীম ব্যবসা করতেই পারেন। কিন্তু ব্যবসার নামে তিনি যে ‘ঘুষ বাণিজ্য’ করেছেন, তা যেকোনো সাধারণ মানুষকে অবাক করে দেবে। কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না
থাকলে, তিনি এভাবে অবৈধভাবে ঠিকাদারি বাগিয়ে নিতে পারতেন না।
প্রতিদিনই যখন এ ধরনের সংবাদ ছাপা হয়, তখন এক ‘ভিন্ন বাংলাদেশে’র ছবি ভেসে ওঠে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নামে এই যে দুর্নীতি, এই দুর্নীতি আমাদেরকে হতাশার মাঝে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশের মানুষ কি এই জন্য এত রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছিল? যে-ই দুর্নীতি করবে, তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সে যত ‘বড়ই’ হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে পারিবারিক দুর্নীতির অভিযোগে ওঠার পরই সরকার যুবলীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রিত ‘ক্যাসিনো সম্রাট’দের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগরের দুর্নীতির অভিযোগটি যেন ধামাচাপা পড়ে না যায়। সেখানে দুর্নীতি হয়েছে, কী হয়নি, এটা জানা দরকার। একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ গুরুতর। যারা অভিযোগটি এনেছিলেন, তারা এখনও আন্দোলন করছেন। সুতরাং বিশ^বিদ্যালয়ের স্বার্থেই এর তদন্ত হওয়া দরকার। ইউজিসি একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। দুদক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে পারে। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপসারিত হয়েছেন এ কারণেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যে শক্ত অবস্থানে গেছেন, এটা তার বড় প্রমাণ। তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ কাউকেই ছাড় দেননি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা উচিত। এ ধরনের শুদ্ধি অভিযান অনেকগুলো মেসেজ দেবে। এক. অবৈধ উপায়ে যারা অর্থ আয় করেন, তারা সতর্ক হবেন। আওয়ামী লীগের নাম করে যে দুর্নীতি করা যাবে না, এই ‘সত্যটি’ এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে। আওয়ামী লীগ করলেই সব কিছু ‘মাফ’ এটা বলা ও চিন্তা করার দিন এখন শেষ। দুই. যারা ঘুষ নেন ও ঘুষ দেন তারা উভয়েই অপরাধী। উভয়কেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউকের মতো প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান চালানো উচিত। এই সেক্টরগুলোতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। অতীতে যারা শীর্ষ পদগুলোতে ছিলেন, তাদের অর্থের উৎস খুঁজে বের করা উচিত। এ কাজে দুদককে ব্যাবহার করা যেতে পারে। তিন. টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি শামীমদের মতো টাকার কুমিরদের জন্ম দিয়েছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কীভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়, তা ভেবে দেখতে হবে। ই-টেন্ডার নিয়েও কথা আছে। ই-টেন্ডারও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারছে না। শামীমদের মতো লোকেরা অসৎ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলকে ব্যবহার করছে। তাদের কারও কারও সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠছে মন্ত্রীদের সঙ্গে। এই ‘সখ্যতা’ যেন অপরাধী বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা সৃষ্টি না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। চার. যারাই ছাত্রলীগ তথা যুবলীগের নেতৃত্বে আছেন বা থাকবেন, তাদের অতীত আমলনামা দেখা প্রয়োজন। যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজ যুবলীগ নেতাদের ট্রাইব্যুনালে বিচার করবেন। এতে করে তো স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না। বরং এটা আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়ার শামিল। দুর্নীতি হলে তা দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হবে। যুবলীগ চেয়ারম্যান নিজে কেন বিচার করবেন?
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানকে স্বাগত জানাই। একটি টাস্কফোর্সের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতিবাজদের কতটুকু শাস্তির আওতায় আনা যাবে বলা মুশকিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে সামাজিক আন্দোলনের একটি অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। যারা ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে দিব্যি ‘আরামে’ আছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হোক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। দুর্নীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের পক্ষে অন্যতম অন্তরায়। দুর্নীতিকে যদি আমরা উচ্ছেদ করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ যে এই অঞ্চলে অন্যতম শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই শুদ্ধি অভিযানের ফলে জনমানসে আওয়ামী লীগের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে
Daily Shomoyer Alo
29.09.2019

খোলা জানালা: এ কোন বাংলাদেশকে আমরা দেখছি?

ক্যাসিনো

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এ কোন বাংলাদেশ আমরা দেখছি? ক্যাসিনোতে টাকা, রাস্তায় টাকা, সিন্দুকের ভল্টে টাকা। লাখ লাখ নয়, কোটি কোটি। টাকা তো কাগজ! তাতে ভরসা নেই, তাই কিনে রাখা হয়েছে স্বর্ণ। কেউ নাকি জানত না মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো আছে! মতিঝিল আর ফকিরেরপুলের কাছাকাছি আছে একটি থানা। এই এলাকার আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব ওসির হাতে।
আছে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ডিসি, এডিসি, এসি, কত কী! কেউ জানল না- এখানে, এসব ক্লাবে জুয়ার আসর বসে রাতে। ২৪ ঘণ্টাই নাকি ক্যাসিনোতে জুয়ার আসর বসে। শত শত নষ্ট যুবক দিন-রাত পড়ে থাকে জুয়ার আড্ডায়। পুলিশ তা জানল না! র‌্যাব তা আগে জানল না! গোয়েন্দারা আগে জানল না! শুভঙ্করের মধ্যে কি কোনো ফাঁক আছে? এটা জাতি জানল প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর। তাহলে কি সবকিছু প্রধানমন্ত্রীকেই দেখতে হবে?
ঢাকায় ডিএমপির থানা তো অনেক। জনবলও অনেক। পুলিশের জন্য সুযোগ-সুবিধা অনেক বেড়েছে। তাহলে তাদের নাকের ডগায় বসে দিব্যি কিছু লোক, তারা আবার সরকারি ছত্রছায়ায় যুবলীগের সব সিনিয়র নেতা, তারা মাসের পর মাস এই জুয়ার ব্যবসা চালিয়ে গেলেন! আমরা কেউ তা জানলাম না। কী অদ্ভুত এই দেশ- এক প্রধানমন্ত্রীকে সব সামলাতে হয়।
দেরিতে হলেও র‌্যাবকে ধন্যবাদ দিতে হয়। তারা অভিযানে নেমেছেন। অপরাধীদের খুঁজে খুঁজে বের করছেন। গ্রেফতার করছেন। কিন্তু আমার মধ্যে একটা শঙ্কা কাজ করে- দু’দিন পর না আবার আমরা দেখব ওইসব ‘টাকার কুমির’ আর ‘ক্যাসিনোসম্রাট’ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! এ দেশেও জন্ম হয় শামীমদের, যারা বোধহয় ‘টাকার গাছ’ লাগিয়েছিলেন। ৩০০ কোটি টাকা ব্যাংকে, মায়ের নামে এফডিআর! টাকার গাছে ফল ধরছে! অবাক হয়ে শুনলাম একজন এমপির কথা- ‘জুয়া খেলতে না দিলে নাকি ছেলেরা রাস্তায় ছিনতাই করে’! কী যুক্তি? একজন এমপি, জনগণের তিনি প্রতিনিধি, যুক্তি দেখালেন জুয়া খেলার! পুলিশ আর র‌্যাব যখন ‘ক্যাসিনোসম্রাট’দের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে, তিনি তখন চট্টগ্রামে বসে অনেকটা বলতে চাইলেন, ক্লাবে জুয়া খেলা কোনো অপরাধ নয়!
এই বাংলাদেশই কি আমরা চেয়েছিলাম? একজন এমপি কি এ ধরনের কথা বলতে পারেন? একজন সংসদ সদস্য যখন এ ধরনের কথা বলেন, তখন কি তা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার শামিল নয়? প্রধানমন্ত্রী তো ‘ক্যাসিনোসম্রাট’দের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে সর্বমহল থেকে প্রশংসা পেয়েছেন। এখন তার দলীয় এক এমপি অবস্থান নিলেন জুয়াড়িদের পক্ষে! এটা দুঃখজনক। ওই সংসদ সদস্য চট্টগ্রামে একটি ক্লাব চালান।
পত্রিকায় দেখলাম পুলিশের পরিদর্শক সাইফ আমিন নিজের ফেসবুক পেজের ওয়ালে লিখেছেন, ক্লাবের জুয়া খেলা থেকে ওই সংসদ সদস্যের ৫ বছরের আয় ১৮০ কোটি টাকা। (একুশে পত্রিকা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯)! থানার ওসিরা প্রতিদিন ক্লাব থেকে কত টাকা আয় করেন তারও হিসাব আছে তাতে। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, তিনি দায়িত্ব নিয়েই এ কথা লিখেছেন। এর সত্যতা কতটুকু আমি জানি না। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এটা ভালো বলতে পারবে। ইতিমধ্যে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগটি গুরুতর। এটাও তদন্ত করা প্রয়োজন।
‘ঠিকাদার মোগল’ জি কে শামীম আওয়ামী-যুবলীগের একজন নেতা। সরকারের এ শুদ্ধি অভিযানে তার নিকেতন অফিসে পাওয়া গেছে ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর আর নগদ প্রায় ২ কোটি টাকা। ‘টাকার কুমির’ এই ঠিকাদারের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আছে বলে সংবাদপত্রগুলো জানাচ্ছে। তিনি রূপপুরের ‘বালিশ কেলেঙ্কারির’ সঙ্গেও জড়িত। তার সম্পর্কে আরও যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো।
কয়েক হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারির কাজ তিনি পেয়েছেন। এসব কাজ পেতে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে দিয়েছেন শত শত কোটি টাকা (সমকাল, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। একজন শামীম ব্যবসা করতেই পারেন। কিন্তু ব্যবসার নামে তিনি যে ‘ঘুষ বাণিজ্য’ করেছেন, তা যে কোনো সাধারণ মানুষকে অবাক করে দেবে। কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলে তিনি এভাবে অবৈধভাবে ঠিকাদারি বাগিয়ে নিতে পারতেন না।
প্রতিদিন যখন এ ধরনের সংবাদ ছাপা হয়, তখন এক ‘ভিন্ন বাংলাদেশের’ ছবি ভেসে ওঠে! রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার নামে এই যে দুর্নীতি, তা আমাদের হতাশার মাঝে ঠেলে দেয়। বাংলাদেশের মানুষ কি এজন্যই এত রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে? যিনিই দুর্নীতি করবেন, তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তিনি যত ‘বড়ই’ হোন না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে নন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে পারিবারিক দুর্নীতির অভিযোগে ওঠার পরই সরকার যুবলীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রিত ‘ক্যাসিনো সম্রাট’দের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগরের দুর্নীতির অভিযোগটি যেন ধামাচাপা পড়ে না যায়! সেখানে দুর্নীতি হয়েছে কী হয়নি, এটা জানা দরকার। একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ গুরুতর। যারা অভিযোগটি এনেছিলেন, তারা এখনও আন্দোলন করছেন।
সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই এর তদন্ত হওয়া দরকার। ইউজিসি একটি তদন্ত কমিটি করেছে; কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। দুদক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে পারে। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপসারিত হয়েছেন এ কারণেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যে শক্ত অবস্থানে গেছেন, এটা তার বড় প্রমাণ। তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ কাউকেই ছাড় দেননি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও এন্তার অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা উচিত।
এ ধরনের শুদ্ধি অভিযান অনেক মেসেজ দেবে। অবৈধ পন্থায় যারা অর্থ আয় করেন, তারা এখন সতর্ক হবেন। আওয়ামী লীগের নাম করে যে দুর্নীতি করা যাবে না, এই ‘সত্যটি’ এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে। আওয়ামী লীগ করলেই সবকিছু ‘মাফ’- এটা বলা ও চিন্তা করার দিন এখন শেষ। যারা ঘুষ নেন ও ঘুষ দেন তারা উভয়েই অপরাধী। উভয়কেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউকের মতো প্রতিষ্ঠানেও শুদ্ধি অভিযান চালানো উচিত। এ সেক্টরগুলোতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। অতীতে যারা শীর্ষ পদগুলোতে ছিলেন, তাদের অর্থের উৎস খুঁজে বের করা উচিত। এ কাজে দুদককে ব্যবহার করা যেতে পারে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি শামীমদের মতো ‘টাকার কুমির’দের জন্ম দিয়েছে। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কীভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়, তা ভেবে দেখতে হবে। ই-টেন্ডার নিয়েও কথা আছে। ই-টেন্ডারও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারছে না। শামীমদের মতো লোকেরা দলকে ব্যবহার করে। তার সঙ্গে মন্ত্রীদের কারও কারও সখ্য আছে।
এটা যেন তার বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা সৃষ্টি না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। যারাই ছাত্রলীগ তথা যুবলীগের নেতৃত্বে আছেন বা থাকবেন, তাদের অতীত আমলনামা দেখা প্রয়োজন। যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজ যুবলীগ নেতাদের ট্রাইব্যুনালে বিচার করবেন! এতে করে তো স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে না, বরং তা নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার শামিল। দুর্নীতি হলে প্রচলিত আইনে এর বিচার হবে। এজন্য দেশে আইন আছে। যুবলীগ চেয়ারম্যান নিজে কেন বিচার করবেন?
‘ক্যাসিনো সম্রাট’দের বিরুদ্ধে যখন সারা দেশে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, তখন ‘শিক্ষা সম্রাট’দের কী হবে? যুবলীগের নেতারা ক্যাসিনো বানিয়েছেন। আর আমাদের কিছু উপাচার্য নিজেরা নিজেদের ‘সম্রাট’ বানিয়েছেন! জাহাঙ্গীরনগরের উপাচার্য ছাত্রলীগের ছেলেদের ‘ঈদের সালামি’ দিয়েছিলেন ২ কোটি টাকা, যদিও তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। শিক্ষকরা তাকে কালো পতাকা দেখাচ্ছেন প্রতিদিন। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ‘জানোয়ার’ বলে গালি দিয়েছেন এমন সংবাদ গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে। সেখানকার শিক্ষকরা যে ১৬ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন তার ৩নং দফায় ভিসির বাসায় বিউটি পার্লার তৈরির অভিযোগ রয়েছে। গেল বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী কর্মচারী তার সন্তানের পিতৃত্ব দাবি করে ভিসির বাসার সামনে অনশন পর্যন্ত করেছিলেন। অথচ উপাচার্য দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পেয়েছেন। এক সময় ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এই ভিসি শুধু গোপালগঞ্জ বাড়ি হওয়ার কারণেই কি বারবার ভিসি হচ্ছেন?
নিজ বাসভবনের বর্ধিত অংশে প্রতিষ্ঠিত বিউটি পার্লারে তিনি নিজে সিরিয়াল দিচ্ছেন, এমন একটি ছবিও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে (ক্যাম্পাস লাইভ, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। সম্প্রতি শাবিপ্রবির উপাচার্যের বিরুদ্ধে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এই শ্বেতপত্রে তার বিরুদ্ধে ৫৩টি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে- আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, টিএ/ডিএসহ প্রতি সপ্তাহে পারিবারিক ও ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় যাওয়া, নিজে একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, ব্যক্তিগত আক্রোশে কিছু শিক্ষকের ‘আপগ্রেডেশন’ স্থগিত করা ইত্যাদি।
একটি জাতীয় দৈনিক উপাচার্যদের আমলনামা নিয়ে একটি বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল (প্রথম আলো) কিছুদিন আগে। আর বর্তমানে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে ইউজিসি (জাগো নিউজ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। এগুলোর মধ্যে আছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা, রোকেয়া ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কী দেখে তাদের মনোনয়ন দিয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়েছিল? তাদের আয়-সম্পত্তির হিসাব কি এনবিআর ক্ষতিয়ে দেখবে? যুবলীগ নেতাদের যদি আমলনামা নেয়া হয়, যদি তাদের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়, তাহলে অভিযুক্ত ভিসিদের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হবে না কেন?
দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। কাউকে তিনি ছাড় দেবেন না। একজন প্রধানমন্ত্রী কত সাহসী হলে নিজ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে র‌্যাবকে নির্দেশ দেন। অন্যায় আর দুর্নীতি যারা যারা করবে, তাদের কারও মাফ নেই। এ দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সর্বত্র পরিচালিত হোক। যারা ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে, দলের নাম ভাঙিয়ে দিব্যি আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন, তাদেরও আনা হোক আইনের আওতায়।
আওয়ামী লীগ এসব দুর্নীতিবাজকে ধারণ করতে পারে না। ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি- সবাই আজ অভিযোগের কাঠগড়ায়। ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে মালয়েশিয়ায় ‘দ্বিতীয় হোম’ বানাবেন, ঢাকার বাইরে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়ে ঢাকায় বসে গার্মেন্ট ব্যবসা করবেন, এনজিও চালাবেন, সকালের ফ্লাইটে ক্যাম্পাসে গিয়ে বিকালের ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরে আসবেন- এসবও অন্যায়। যুবলীগের নেতারা যদি অন্যায় করে থাকেন, এসব ভিসিও অন্যায় করেছেন। যুবলীগ নেতাদের ক্যাসিনো, আর ভিসিদের ‘নিজস্ব রাজত্ব’- এগুলোও একেকটি ‘ক্যাসিনো’- আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না, অন্তত অন্যায় আর দুর্নীতির প্রশ্নে উভয়েই সমান অপরাধী।
সংবিধানে সমঅধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই শুধু যুবলীগের নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড়া না করিয়ে দোষী সবার ক্ষেত্রে একই শাস্তি প্রযোজ্য হোক। ইতিহাস শেখ হাসিনাকে বারবার স্মরণ করবে, যদি তিনি দুর্নীতিবিরোধী অভিযান থেকে এক পাও সরে না আসেন। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সফল হোক, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার
Daily Jugantor
28.09.2019

মধ্যপ্রাচ্য কি চতুর্থ যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে

 

Image result for saudi oil attack


সৌদি আরবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনার ওপর নাটকীয় ড্রোন হামলার পর একটা আশঙ্কা তৈরি হয়ে হয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্য চতুর্থ আরেকটি যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে। ইয়েমেনের হুতিবিদ্রোহীদের দাবি, তারা এই ড্রোন হামলা চালিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের দাবি এর পেছনে আছে ইরান। এ নিয়ে চলছে বাগ্যুদ্ধ। ইরান এ ধরনের হামলার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে তাদের প্রোপাগান্ডা অব্যাহত রেখেছে। এখন পর্যন্ত কোনো নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে এটা নিশ্চিত করা যায়নি যে, এই ড্রোন হামলা কারা চালিয়েছে। হুতিদের ড্রোন হামলা চালানোর বিষয়টিকে একেবারে অস্বীকার করা যায় না। কেননা, ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরব জড়িয়ে গেছে অনেক আগে থেকে। সৌদি বিমান ইয়েমেনে হুতিবিদ্রোহীদের ওপর নিয়মিত বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। আরব বসন্তের রেশ ধরে সমগ্র আরব বিশে^ যে পরিবর্তনের ঢেউ জেগেছিল ২০১১ সালে, তার রেশ গিয়ে লেগেছিল ইয়েমেনেও। ওই সময় আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ তার ডেপুটি আবদুরাব্বু মনসুর হাদির কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন (২০১১)। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে রাজধানী সানা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন মনসুর হাদি। তিনি আশ্রয় নেন সৌদি আরবে। সেই থেকে সৌদি আরব ইয়েমেনি রাজধানী সানা নিয়ন্ত্রিত হুতিবিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। হুতিরা মূলত জাইদি শিয়া মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত। তাদের অর্থ ও অস্ত্রের উৎস হচ্ছে ইরান। ফলে এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে, হুতিবিদ্রোহীরা প্রতিশোধ নিতে সৌদি আরামকোর তেল স্থাপনায় (অনমধরম) হামলা চালিয়েছে। তবে স্পষ্টতই এটা বলতে হবে, হুতিদের নিজস্ব কোনো ড্রোন নেই। এই ড্রোন তাদের ইরান সরবরাহ করেছিল। এ ক্ষেত্রে ইরান হুতিদের দিয়ে একটা প্রক্সি ওয়ার শুরু করল কিনা এটাই দেখার বিষয়।

এখানে বলা ভালো, ২০০৩ সালে সমগ্র আরব বিশ্ব প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ করেছিল সর্বাত্মক যুদ্ধ। যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল ইরাকে। ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের কাছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র বা Weapons of Mans Destruction আছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ইরাকে হামলা হালিয়ে দেশটি দখল করে নিয়েছিল। সেই ছিল প্রথম যুদ্ধ। দ্বিতীয় যুদ্ধ বিশ^ প্রত্যক্ষ করেছিল লিবিয়ায় ২০১১ সালে। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে R2P অর্থাৎResponsibility to Protec তত্ত্ব ব্যবহার করে লিবিয়ায় বিমান হামলা চালিয়ে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের মতো লিবিয়ার গাদ্দাফিকেও উৎখাত করে। যুক্তি ছিল গাদ্দাফি সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। তাই সামরিক হস্তক্ষেপ জরুরি। এরপর সিরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় যুদ্ধ শুরু করেছিল সিরিয়ায় ২০১৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ইরাকে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে এই যুদ্ধ শুরু করেছিল। তবে ইরাক আর লিবিয়ার সঙ্গে পার্থক্য ছিল একটাইÑ সিরিয়ায় বাসার আল আসাদকে উৎখাত করা সম্ভব হয়নি। এখানে অবশ্য রাশিয়ার একটা যোগসূত্র আছে। রাশিয়া বাসার আল আসাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। রাশিয়ার বিমান সিরিয়ায় মোতায়েন করা হয় এবং এই বিমান ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের ওপর বোমাবর্ষণ করে ২০১৭ সালে তাদের সিরিয়া থেকে উৎখাত করে। তাই বাসার আল আসাদকে সাদ্দাম হোসেন কিংবা গাদ্দাফির মতো ভাগ্যবরণ করতে হয়নি। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ এখনো চলছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি ও ইরান-সৌদি আরব যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এলো এই ড্রোন হামলা। এই পরিস্থিতি কী যুক্তরাষ্ট্রকে আরেক দফা যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাবে?

সাম্প্রতিক সময়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ৫ জাতি ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যা Joint Comprehensive Plan of Action (JCPA) নামে পরিচিত। ওই চুক্তি বলে ইরান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা কোনো পারমাণবিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে না। ওই চুক্তির মধ্য দিয়ে ইরান সাময়িকভাবে তার সব পারমাণবিক কর্মসূচি ‘বন্ধ’ করে দিয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে সন্তুষ্ট ছিল না। ট্রাম্প নিজে একাধিকবার তার টুইট বার্তায় JCPA সমঝোতার সমালোচনা করেছিলেন এবং ২০১৮ সালের মে মাসে ট্রাম্প JCPA সহযোগিতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। যদিও এ সময়ে JCPA স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন ও জার্মানি থেকে বলা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র একতরফভাবে এই চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারে না। ২০১৮ সালের পর থেকেই ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। ২০১৯ সালে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। ২০১৯ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র আরব সাগরে বিমানবাহী জাহাজ আব্রাহাম লিংকন মোতায়েন করে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, ইরানকে চাপে রাখা। ওই সময় স্ট্রেইট অব হরমুজ প্রণালিতে দুটি তেলবাহী জাহাজে আক্রমণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র তখন অভিযোগ করেছিল, ইরানি বিপ্লবী বাহিনীর কমান্ডোরা ওই জাহাজে হামলা চালিয়েছে। জুন মাসে ইরান ইরানি সীমানায় যুক্তরাষ্ট্র একটি ড্রোন গুলি করে নামায়। পরে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র এক হাজার মেরিন সেনা মোতায়েন করে। এরপর থেকেই দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। এই রেশ ধরেই এলো সৌদি আরবের আরামকো তেল উৎপাদন কেন্দ্রে ড্রোন হামলা।

এই ড্রোন হামলায় সৌদি আরবের তেল উৎপাদন হ্রাস পাবে, এটাই স্বাভাবিক। আর এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের শঙ্কা বাড়িয়ে দেবে। সৌদি তেল সাধারণত এই ‘স্ট্রেইট অব হরমুজ’ প্রণালি ব্যবহার করে ইউরোপ, জাপান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। একটা তথ্য দিই। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে প্রতিদিন ১৪ লাখ ব্যারেল জ¦ালানি তেল পারস্য অঞ্চল থেকে আমদানি করেছে। আর এই আমদানিতে ব্যবহৃত হয়েছে স্ট্রেইট অব হরমুজ প্রণালি। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জ¦ালানি তেলের আমদানির ১৮ ভাগ আসে এই পথ থেকে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের একটা উৎকণ্ঠা থাকবেই। যুক্তরাষ্ট্র চায় স্ট্রেইট অব হরমুজ থেকে তেল আমদানিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হোক। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী যেকোনো সময়ে এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইরান একটি ফ্যাক্টর। ইরান অলিখিতভাবে এ অঞ্চলে বসবাসরত শিয়াদের নিয়ে একটা অ্যালায়েন্স গড়ে তুলেছে। সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন– এমনকি সৌদি আরবেও শিয়ারা রয়েছে। সৌদি আরবের ভয়, এই শিয়াদের নিয়ে। সৌদি রাজবংশ মনে করে, ইরান সৌদি শিয়া ধর্মাবলম্বীদের ব্যবহার করে খোদ সৌদি রাজবংশের পতন ডেকে আনতে পারে। এ জন্য ইরানকে নিয়ে সৌদি আরবের বড় ভয়, ইরান থেকে যেকোনো হামলা মোকাবিলায় সৌদি আরব ইতিমধ্যে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা অ্যালায়েন্স গড়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যকেও মোতায়েন করা হয়েছে। পাঠকদের জানিয়ে রাখি, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পঞ্চম ফ্লিট লেবাননে মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া কুয়েতে (ক্যাম্প বুয়েরিং, আলি আল সালেম, ক্যাম্প আরিফজান), কাতারে (আল উদেইদ, আস সালিয়া ক্যাম্প), আরব আমিরাতে (আল-দাফরা, জেবেল আলি পোর্ট, ফুজারিয়া ক্যাম্প) যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমানবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে।

ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য ‘যুদ্ধে’ এসব ঘাঁটিতে মোতায়েনকৃত বিমান ব্যবহার করা হবে। আল জাজিরা তাদের এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, কীভাবে ইরানকে ঘিরে রেখেছে মার্কিন ঘাঁটিগুলো। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ইরানের পাশে আছে চীন, রাশিয়া ও এই অঞ্চলের শিয়া নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন দেশের সরকার। একটা ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব-ইসরায়েলি লবি যদি ইরান আক্রমণ চালায় (?), তাহলে এই যুদ্ধ শুধু ইরানের সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা সমগ্র পারস্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। এ অঞ্চলের তেল উত্তোলন ব্যাহত হবে, যার প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়বে সমগ্র বিশে^। ইরাক আর সিরিয়ার পরিস্থিতির সঙ্গে ইরানের পরিস্থিতি মেলানো যাবে না। সিরিয়া কিংবা ইরাকে বিভিন্ন উপদল ছিল। গৃহযুদ্ধে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। কিন্তু ইরানে তেমনটি নেই। মার্কিনিদের বিরুদ্ধে সবাই মূলত এক। ইরান সরকারের প্লাস পয়েন্ট এটাই।

এখন কী হতে পারে ইরানে? ইরান সংকটে দুটো ফ্যাক্টর– মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলে নির্বাচন। ইসরায়েলে পার্লামেন্ট নির্বাচন চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নির্বাচনের পর সরকার গঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কেননা, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি পেয়েছে ৩১ আসন (মোট আসন ১২০)। মাত্র একটি আসন বেশি পেয়ে (৩২) এগিয়ে আছে ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি। সরকার গঠনে দরকার ৬১ আসন। এই ক্ষেত্রে সেখানে একটি জাতীয় সরকার গঠিত হতে পারে অথবা পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে ইরান আক্রমণ নিয়ে ইসরায়েলি নেতারা এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকবেন। অন্যদিকে, ২০২০ সালে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। ট্রাম্প এ মুহূর্তে ইরানের ব্যাপারে ‘যুদ্ধে’ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। এটা তার একদিকে ‘প্লাস পয়েন্ট’, অন্যদিকে ‘মাইনাস পয়েন্ট’ও। তবে ইরানের ব্যাপারে অর্থনৈতিক অবরোধ আরও কড়াকড়ি করার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে ট্রাম্প সৌদি আরব পাঠিয়েছেন। সেখানে পম্পেও এই ড্রোন আক্রমণের জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন এবং এ ঘটনাকে ‘act of war’ অর্থাৎ ‘এক ধরনের যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। পম্পেওর এই বক্তব্য স্পষ্ট– এক ধরনের হুঁশিয়ারি। যুক্তরাষ্ট্র এখন জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে ইরানের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি ব্যবস্থা আরোপ করতে চাইবে। ট্রাম্প যেখানে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার এবং যেখানে তালেবানদের সঙ্গে একটা সমঝোতায় যেতে চান, সেখানে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবেন কি না সেটা একটা প্রশ্ন। ইরানি প্রেসিডেন্ট চলতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। প্রেসিডেন্ট রুহানি পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে আর যোগ দিচ্ছেন না। এটাই প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, সম্পর্কের অবনতি তা কি শেষ পর্যন্ত দেশ দুটোকে একটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে? এর জবাব এ মুহূর্তে দেওয়া কঠিন। যেকোনো যুদ্ধে ‘স্ট্রেইট অব হরমুজ’ বা হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যেতে পারে (যেখান থেকে প্রতিদিন ২১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল বিভিন্ন গন্তব্যে যায়), যা খোদ ইরানের জন্যও ভালো কোনো খবর নয়। কেননা, ইরান তার ক্রেতাদের (বিশেষ করে চীন) জন্য তেল সরবরাহের একমাত্র পথ হচ্ছে এই হরমুজ প্রণালি। চীন, ইরান ও সৌদি তেলের ওপর নির্ভরশীল। চীনও চাইবে না পারস্য অঞ্চলে যুদ্ধ হোক, যাতে করে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রশ্নটা থাকলই, ড্রোন হামলা আদৌ যুদ্ধ শুরু করে দেবে কিনা?
Daily Desh Rupantor
24.09.2019

কোন পথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গেট

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে কোনো নেতিবাচক সংবাদ আমাকে কষ্ট দেয়। গত ১২-১৩ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর নিয়ে একের পর এক নেতিবাচক সংবাদের জন্ম হচ্ছে। একাধিক উপাচার্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অপসারিত হয়েছেন।
বিএনপির শাসনামলে যারা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের একজন অপসারিত হয়েছিলেন বিএনপিপন্থী একদল শিক্ষকের আন্দোলনের মুখে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আছে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে।
এই সরকারের আমলে প্রথমদিকে জাহাঙ্গীরনগর প্রথম একজন উপাচার্য পায়, যিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। তিনি অপসারিত হন আন্দোলনের মুখে। সেদিন তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছিল (মে ২০১২) এই ক্যাম্পাসেই। আর যিনি ওই কুশপুত্তলিকা দাহ করেছিলেন, তিনি বিএনপিপন্থী কোনো শিক্ষক ছিলেন না।
এরপর যিনি এলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। বিতর্কিত অনেক বক্তব্যের জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন বেশি। হিন্দু শিক্ষার্থীদের তিনি ‘হিন্দু রাজাকার’ বলে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েছিলেন। একপর্যায়ে আন্দোলনের মুখে তিনিও অপসারিত হন।
এরপর ২০১৪ সালে দায়িত্ব নেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এখন অব্দি তিনি ক্ষমতায় আছেন। প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে তিনি সর্বমহলে অভিনন্দিত হলেও তার নিয়োগে সবাই সেদিন অবাক হয়েছিলেন। কেননা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে তার আদৌ কোনো অবদান ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদে তিনি কোনোদিন নির্বাচন করেননি, ডিন কিংবা সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে তার কোনো প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাও ছিল না। যতদূর মনে পড়ে তিনি বিভাগের সভাপতিও ছিলেন না। কিন্তু তার আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক কেলেঙ্কারির যে জন্ম হল, অতীতে কখনও এমনটি হয়নি।
বিএনপির শাসনামলে যারা ছিলেন, কিংবা ২০০৯ সালের পর থেকে যে দু’জন উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ‘অন্যান্য’ অভিযোগ থাকলেও আর্থিক দুর্নীতি কিংবা আর্থিক কেলেঙ্কারির কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এমনকি সাবেক উপাচার্যের স্ত্রী কিংবা সন্তানরা কোনো ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এমন কোনো সংবাদও কাগজে প্রকাশিত হয়নি।
কিন্তু বর্তমান উপাচার্যের স্বামী ও সন্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে প্রকাশ্যে। আর অভিযোগ যারা এনেছেন, তারা সবাই সরকারি দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মী। সব অভিযোগই উপাচার্য অস্বীকার করেছেন।
উপাচার্যের কাছে চাঁদা দাবি করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এর রেশ এখনও রয়ে গেছে। চাঁদা দেয়ার প্রেক্ষাপটটি রচিত হয়েছিল ক’দিন আগে।
জাবির উন্নয়ন কাজের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার মাঝে প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ হয়েছিল ৪৫০ কোটি টাকা। জাহাঙ্গীরনগরে তৈরি হবে পাঁচটি ছাত্রাবাস। কিন্তু গোল বাধে দুটি সংবাদে।
প্রথমটিতে বলা হয়, ছাত্রাবাস নির্মাণ করতে গিয়ে ঠিকাদাররা ইতিমধ্যে ৫০০ গাছ কেটে ফেলেছেন। আর দ্বিতীয় সংবাদটি ছিল আরও ভয়াবহ- ঠিকাদারদের ‘কাজ’ নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ, খোদ উপাচার্য ও তার পরিবারের সদস্যরা নাকি তার নিজের বাসায় মিটিং করে ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মীদের মাঝে এই টাকা ভাগ করে দিয়েছেন। এর পেছনে সত্যতা কতটুকু আছে জানি না। কিন্তু একাধিক সংবাদপত্রে এ খবর ছাপা হয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের টাকা ভাগাভাগির সঙ্গে দুর্নীতির প্রশ্ন যেহেতু জড়িত, সেহেতু কেউই এটা স্বীকার করে না। উপাচার্য ও ঠিকাদাররাও এটা স্বীকার করেননি। তবে উপাচার্য এটা স্বীকার করেছেন যে, তার বাসায় তিনি ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে মিটিং করেছিলেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিয়ে তিনি মিটিং করতেই পারেন। কিন্তু টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি যখন ওঠে, তখন তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয় বৈকি। যারা টাকা নিয়েছেন, তারা প্রকাশ্যেই বলেছেন সে কথা। উপাচার্য তাদের টাকাটা দিয়েছেন, এ কথাও তারা বলেছেন।
আমার দুঃখ লাগে তখনই, যখন দেখি ছাত্ররা কেটে ফেলা গাছে কাফনের কাপড় জড়িয়ে ক্যাম্পাসে ‘শবযাত্রা’ করেছিল। রাতের বেলা পালাগানের আয়োজন করে স্লোগান তুলছিল ‘জাবিতে নাকি টাকার বাগান রয়েছে’। একটা ব্যানারও দেখলাম। তাতে লেখা ‘স্বৈরাচার্যের মাস্টার প্লানচ্যাট’! উপাচার্য আর স্বৈরাচার- দুটোকে এক করে ছাত্ররা শব্দ বানিয়েছে ‘স্বৈরাচার্য’।
কী লজ্জার কথা! একজন উপাচার্য স্বৈরাচার হবেন কেন? এ জন্যই কি বিশ্ববিদ্যালয়! আমার দুঃখ লাগে- এই বিশ্ববিদ্যালয়েই আমি আমার শ্রেষ্ঠ সময়গুলো পার করেছি। কী বিশ্ববিদ্যলয় রেখে যাচ্ছি আমরা!
সরকারকে ধন্যবাদ দিতেই হয়, ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে’ ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এ টাকা নিয়ে ‘নয়ছয়’ হবে, তা কাম্য নয়। উপাচার্য তার দায় এড়াতে পারেন না। শিক্ষকতা জীবনে অনেকদিন তো পার করলাম। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে আর উপাচার্যদের সম্পর্কে নানা কাহিনী যখন কাগজে ছাপা হয়, তখন শিক্ষক হিসেবে আমাদের মানমর্যাদা আর থাকে না।
একজন উপাচার্যের কাহিনী কাগজে ছাপা হয়েছিল, তিনি প্লেনে এসে সকাল-বিকাল অফিস করেন, মাসের বেশিরভাগ সময় ঢাকায়ই থাকেন! আরেকজন উপাচার্য নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল অবৈধ সন্তানের পিতৃত্বের! দেশে প্রায় ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি।
হেন কোনো উপাচার্য নেই, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ এনেছিলেন তার সহকর্মীরাই। যারা অভিযোগ এনেছিলেন তারা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক।
সম্প্রতি তারা আবারও একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন, আর তা ছাপাও হয়েছে সংবাদপত্রে। শিক্ষকরা প্রথম পর্যায়ের ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতি আর আত্মীয়করণের অভিযোগ তুলে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।
অভিযোগটি গুরুতর, সন্দেহ নেই তাতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ইউজিসি অভিযোগটি কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে নেবে, আমি নিশ্চিত করে তা বলতে পারব না। কিন্তু দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো বাছবিচার করা ঠিক নয়। শিক্ষকও যদি দুর্নীতি করেন, তাকেও সবার মতো আইনের আওতায় আনতে হবে। সংবিধান আমাদের সমদৃষ্টিতে দেখেছে। অর্থাৎ আইনের চোখে সবাই সমান।
একজন ডিআইজি মিজান যদি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করতে পারেন, একজন জেলার পার্থের কাছে যদি অবৈধভাবে অর্জিত ৭০ লাখ টাকা পাওয়া যায় এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে জাহাঙ্গীরনগরের ৪৫০ কোটি টাকার প্রকল্পে যদি আদৌ কোনো দুর্নীতি হয়ে থাকে, তার বিচার হবে না কেন?
আমি বিশ্বাস রাখতে চাই, এ ঘটনায় উপাচার্য নির্দোষ। তার নিজের সম্মান ও উপাচার্যের পদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সাময়িকভাবে তিনি উপাচার্য পদ থেকে অব্যাহতি নিতে পারেন। কারণ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি। তবে এ তদন্ত কমিটির ওপর আমি আস্থা রাখতে পারছি না। কেননা একাধিক উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও একটি ক্ষেত্রেও ইউজিসি কারও বিরুদ্ধে শাস্তির কোনো সুপারিশ করেনি।
আমার মনে আছে, রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দু’জন উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দুদক তাদের চিঠি দিয়ে ডেকেছিল। দুদকের ওই সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছিল। শিক্ষকরাও যে ‘ধোয়া তুলসী পাতা’ নন, তা দুদকের নোটিশ পাওয়ার পর প্রমাণিত হয়েছিল।
পাঠক স্মরণ করতে পারেন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ওই উপাচার্যের একজন সেখানে নিয়োগ বাণিজ্য করেছিলেন। অপর একজন প্রতিদিন ৭ হাজার টাকা করে নাশতার বিল করে ও তা উত্তোলন করে সংবাদ হয়েছিলেন। আজ জাহাঙ্গীরনগরে ২ কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে।
এর সঙ্গে ভিসির সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছেন স্বয়ং শিক্ষকরা। একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তাতে দুর্নীতির পুরো চিত্র পাওয়া নাও যেতে পারে। তাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা জরুরি।
গাছ কাটার অভিযোগ তো প্রমাণিত। উপাচার্য এর দায় এড়াবেন কীভাবে? বিশ্বব্যাপী গাছ লাগানোর ব্যাপারে যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে, সে ব্যাপারে কি উপাচার্য অবগত নন? পরিবেশ রক্ষায় গাছের প্রয়োজন অনেক বেশি। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে গাছের কোনো বিকল্প নেই। গাছ লাগানোর ব্যাপারে যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে, তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে।
নিউজিল্যান্ড সরকার ১০০ কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছে পরিবেশ রক্ষার জন্য (Educate Inspire Change, ১৯ আগস্ট ২০১৯)। দেশটি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চায়। এ জন্যই গাছ লাগানোর এই পরিকল্পনা। ফিলিপাইন নতুন একটি আইন প্রণয়ন করেছে, যাতে একজন শিক্ষার্থী ১০টি গাছ না লাগালে তাকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দেয়া যাবে না। ইতিমধ্যে আইনটি ফিলিপাইনের আইনসভায় পাসও হয়েছে (Insider, 29 মে ২০১৯)।
ভারতের দৃষ্টান্ত দেই। উষ্ণতা রোধে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে স্কুল শিক্ষার্থীরাসহ সবাই একদিনে ২২ কোটি গাছ লাগিয়েছে। অর্থাৎ উত্তর প্রদেশের মোট বাসিন্দা ২২ কোটি। সবাই একটি করে গাছ লাগিয়েছেন ১৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৮১টি জায়গায়, যার মধ্যে আছে ৬০ হাজার গ্রাম আর ৮৩ হাজার জঙ্গলের চিহ্নিত এলাকা।
এই তথ্যটি দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (USA Today, 9 আগস্ট ২০১৯)। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে তিনটি করে গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর আমরা কিনা ৫০০ গাছ কেটে ফেললাম! এই একটি ‘কাজের’ জন্যও তো ভিসি অভিযুক্ত হতে পারেন।
তবে নিঃসন্দেহে দুর্নীতির অভিযোগটি বড়। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন অভিযোগ করেছেন, সিডিউল ছিনতাই থেকে শুরু করে প্রকল্পের দুর্নীতি- সবখানে উপাচার্যের ছেলে ও স্বামী সরাসরি জড়িত (বার্তা ২৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯), সেখানে গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে।
ইউজিসির তদন্ত কমিটিরও উচিত হবে এ অভিযোগটি ‘বিবেচনায়’ নেয়া। তারা প্রয়োজনে সাদ্দাম হোসাইনের সঙ্গে কথাও বলতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের ঘটনা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে’ (বিডিনিউজ ২৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯)।
একজন সাবেক উপাচার্য যখন এ ধরনের কথা বলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উন্নয়নের নামে যে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। কীভাবে এ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা আনা যায়, তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভাবতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগরের এই দুর্নীতি নিয়ে যখন জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ নিজে স্বীকার করেন ‘২৫ লাখ টাকা ঈদ সালামি পেয়েছি’ (যুগান্তর, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯), তখন বর্তমান ছাত্র নেতৃত্ব তথা আগামী দিনের নেতৃত্ব নিয়ে আমি শঙ্কিত। কেমন নেতৃত্ব আমরা পেতে যাচ্ছি আগামী দিনে? যে ছাত্রনেতা ‘ক্যাম্পাস রাজনীতি’ করে ঈদ সালামি পান ২৫ লাখ টাকা, তাকে অথবা তাদেরকে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বে আনা ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে। এই নেতৃত্ব আমরা চাই না।
অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের জন্য আমার দুঃখ হয়। প্রধানমন্ত্রী তাকে যে সুযোগটি দিয়েছিলেন, তিনি সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলেন না। একজন নারী উপাচার্য হিসেবে তিনি একটি দৃষ্টান্ত রাখতে পারতেন। কিন্তু দুর্নীতির যে অভিযোগে তিনি ‘অভিযুক্ত’ হলেন, তা আগামী দিনে সমাজে তার অবস্থানকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে না।
জাহাঙ্গীরনগর বারবার উপাচার্যদের দ্বারা কলঙ্কিত হচ্ছে। কলঙ্কের অভিযোগ নিয়ে আবারও কি একজন উপাচার্যের ‘বিদায়ের’ পথ প্রশস্ত হচ্ছে, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন।
Daily Jugantor
21.09.2019