রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা


চলতি জুলাই মাসে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক তথা চীনের রাজনীতি আবারও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আলোচনায় এসেছে। চীন যখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ৯০তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে, ঠিক সেই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চীফ অফ স্টাফের চেয়ারম্যান এডমিরাল মুলেন চীন সফর করেছেন। এডমিরাল মুলেনের ওই সফর ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।  ওই সফরে এডমিরাল মুলেন চীনা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল চ্যান পিংদের সাথে বৈঠক, হাসিমুখে ফটোসেশনে অংশ নিয়েছেন বটে, কিন্তু স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মাঝে বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে। এডমিরাল মুলেন এমন এক সময় চীনে গেলেন যখন দক্ষিণ চীন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মহড়া নিয়ে বেইজিং ও ওয়াশিংটন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি একটি সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়, যা কীনা চীন ভালো চোখে দেখেনি এবং চীন এই যৌথ মহড়াকে ‘চূড়ান্ত অসংগত’ বলে মনে করছে। মুলেনের সফরের সময় জেনারেল পিংদের একটি মন্তব্যও এডমিরাল মুলেনকে একটি বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। জেনারেল পিংদে বলেছিলেন, সামরিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় কমানো উচিত। তিনি একথাও বলেন যে, ব্যয় কমিয়ে সেই অর্থ দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করা উচিত।  দক্ষিণ চীন সফরে তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ কিছু এলাকা রয়েছে, যা একই সাথে চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনও দাবি করছে। সুতরাং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ চীন খুব ভালো চোখে দেখেনি। ২০০৭ সালের পর এই প্রথম কোন ঊর্ধ্বতন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা বেইজিং সফর করলেন। কিন্তু সফর সফল হয়নি। তবে এডমিরাল মুলেন বেইজিং-এ স্বীকার করেছেন চীন এখন বিশ্বশক্তি। এটাই হচ্ছে মোদ্দাকথা।  চীন এখন বিশ্ব রাজনীতি তথা অর্থনীতিতে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। আর চীনকে এ পর্যায়ে উন্নীত করতে চীনা কম্পিউনিস্ট পার্টির ভূমিকাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। যেখানে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি ব্যর্থ হয়েছিল, সেখানে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি সফল হয়েছে। বলা ভালো চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম হয়েছিল ১৯২১ সালের ১ জুলাই, চীনের সাংহাই শহরে। যুগের পরিক্রমায় চীনা  কমিউনিস্ট পার্টিতেও পরিবর্তন এসেছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এখন আর ধ্রুপদী মার্কসবাদ অনুসরণ করে না। চীন এখনও রাষ্ট্রব্যবস্থায়  বহুদলীয় রাজনীতি শুরু করেনি। অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসলেও, কমিউনিস্ট পার্টির একক কর্তৃত্ব চীনা সমাজে এখনও বহাল রয়েছে। এ জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের মত চীন ভেঙ্গে যায়নি। এখনও টিকে আছে।  কিন্তু টিকে থাকতে পারেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন। দুটি বড় দেশের কমিউনিস্ট পার্টির মাঝে পার্থক্য এখানেই। তাই চীনা কমিউস্টি পার্টি নিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে যে আগ্রহ থাকবে, এটা বলাই বাহুল্য। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি যেমনি একদিন (১৯৩৪) লং মার্চের নেতৃত্ব দিয়ে বিপ্লবকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছিল, ঠিক তেমনি আজও স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় ‘নয়া চীন’কে নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রায় ৮ হাজার মাইলব্যাপী ওই লং মার্চে অংশ নিয়েছিল প্রায় ১ লক্ষ মানুষ। বিশ্ব ইতিহাসে সেটা ছিল এক বিরল ঘটনা। উচিয়াং, চিনশা, তাতু নদীর মতো প্রাকৃতিক বাঁধা, কিংবা জনমানবহীন  লাজি বিশাল জলাভূমি পার হতে বিপ্লবীরা সেদিন উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। আর আজও, সোভিয়েত ইউনিয়নের মত একটি বড় সমাজতান্ত্রিক দেশের অবর্তমানে সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি চীনকে একুশ শতকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।
কোন পথে এখন চীন? চীন কী একুশ শতকে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারবে? চীন সম্পর্কে এসব প্রশ্ন এখন উঠেছে। চীন যখন কমিউনিস্ট পার্টির ৯০ বছরের পূর্তি উত্সব পালন করছে, ঠিক সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৭৩-৭৭) হেনরি কিসিঞ্জার একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন চীন সম্পর্কে। কানাডার টরেন্টোতে আয়োজিত একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে কিসিঞ্জার বলেছেন, চলতি শতাব্দীতে চীন বিশ্বের ওপর একচ্ছত্র কর্তৃত্বের সুযোগ পাবে না। তার যুক্তি চীন অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সমস্যায় বেশি জর্জরিত থাকবে। ফলে তার পক্ষে বিশ্বের ওপর কর্তৃত্ব করার সুযোগ থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র আগামি ২৫ বছর বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে-এটাও মনে করেন কিসিঞ্জার। যদিও ওই বিতর্কে ইতিহাসবিদ নিয়াল ফার্গুসন এবং বেইজিংয়ের  সিঙহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডেভিড লি কিসিঞ্জারের সাথে একমত হননি।
চীন অনেক বদলে গেছে। এক সময় যে চীন ছিল কৃষিনির্ভর, দরিদ্রতা যেখানে ছিল প্রকট, বাড়িতে রঙিন টিভি ছিল যেখানে স্বপ্ন, সেই চীন আজ বিশ্বের অন্যতম শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। চীন বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বড় অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্র, জাপানের পরই চীনের অর্থনীতি। ইতোমধ্যে জাতীয় উত্পাদনের দিক থেকে জাপানকেও ছাড়িয়ে গেছে চীন। আর যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে ২০২০ সালে। উত্পাদনের দিক থেকে চীনকে বলা হয় সুপার পাওয়ার। বিশ্বের যত ফটোকপিয়ার, মাইক্রোওয়েভ ও জুতা তৈরি হয়, তার তিন ভাগের দুই ভাগ উত্পাদন করে চীন। সেই সাথে বিশ্বে উত্পাদিত মোবাইল ফোনের ৬০ ভাগ, ডিভিডির ৫৫ ভাগ, ডিজিটাল ক্যামেরার ৫০ ভাগ, শিশুদের খেলনার ৭৫ ভাগ ও ৩০ ভাগ পারসোনাল কম্পিউটার একা উত্পাদন করে চীন। সুতরাং এই চীনকে বিশ্ব উপেক্ষা করে কীভাবে? পরিসংখ্যান বলে চীনে বর্তমানে বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ২ ট্রিলিয়ন ডলার। ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের বড় বড় যে ৫০০টি বহুজাতিক কোম্পানির কথা উল্লেখ করেছে, তার মাঝে চীনের একারই রয়েছে ৩৭টি কোম্পানি। বিশ্বে যত জ্বালানি ব্যবহূত হয়, তার মাঝে শতকরা ১৬ ভাগ ব্যবহূত হয় চীনে।  জ্বালানি তেলের ব্যবহারের দিক থেকে চীনের অবস্থান তৃতীয়। প্রতিবছর কয়েক কোটি ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়।  ৩ লক্ষ ছাত্র প্রতিবছর বিদেশে পড়তে যায়। যেখানে ১৯৪৮ সালে শিক্ষার হার ছিল মাত্র ২০ ভাগ, সেখানে এখন শতকরা ১০০ ভাগই শিক্ষিত। ২১ কোটি শিশু প্রতিবছর প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হয়। চীন ইতোমধ্যে ২০ কোটি লোককে চরম দরিদ্রতা থেকে তুলে আনতে পেরেছে। তবে চীনে এখনও দরিদ্র মানুষ আছে। বিশ্বব্যাংক প্রতিদিন আয় ১ ডলার ২৫ সেন্ট হিসাব করে দরিদ্রের যে সীমারেখা টানছে, সেই হিসাবে চীনে এখনও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২১ কোটি। চীনে এখন নতুন নতুন তাক লাগানো শহর গড়ে উঠছে। আকাশছোঁয়া সব ভবনের ছবি টাইমস ছেপেছিল ২০০৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের সংখ্যায়। চীন বিশ্বের রূপান্তরযোগ্য জ্বালানির বিনিয়োগের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ‘সবুজ জ্বালানি’ (অর্থাত্ সৌরবিদ্যুত্) খাতে চীন গত বছর বিনিয়োগ করেছিল সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি ডলার, যা ছিল আগের বছরের তুলনায় শতকরা ৩৯ ভাগ বেশি। বিশ্ব জুড়ে গত বছর এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ২৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। চীন ২০২০ সালের দিকে এ খাত থেকে শতকরা ১৫ ভাগ বিদ্যুত্ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চায়। চীনের ‘সবুজ জ্বালানি’ প্রকল্প উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত। স্কুলগুলোতে শেখান হয় ‘গ্রীন লিভিং’-এর কথা। কোন কোন শহরে রাস্তার বিদ্যুত্-এর বাতি জ্বলে সৌর  বিদ্যুত্-এ। ১৯৪৯ সালের চীনের সাথে ২০১১ সালের চীনকে মেলান যাবে না। কৃষিনির্ভর একটি দেশ এখন পরিণত হয়েছে শিল্পোন্নত একটি দেশে। কিন্তু রাজনীতি? রাজনীতিতে কী পরিবর্তন এসেছে? সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তার চীন সফরের শেষ পর্যায়ে হংকং-এ এসে বলে ছিলেন তিনি তার জীবদ্দশায় দেখে যাবেন চীনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে চীনে পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র আদৌ প্রতিষ্ঠিত হবে- এ ব্যাপারে সকলেই সন্দিহান। কেননা গণতন্ত্রের জন্য চীন প্রস্তুত নয়। ১২০ কোটি লোকের দেশ চীন। চীনে বাস করে ৫৬ জাতির লোক। দেশের শতকরা ৯৪ ভাগ লোকই হান জাতির।২২ প্রদেশ, ৫টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নিয়ে আজকের চীন। এখানে পশ্চিমা ধাঁচের পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়। তাই বলে চীনকে এখন ধ্রুপদী একটি মার্কসবাদী রাষ্ট্রও বলা যাবে না। তারা অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। পুঁজিবাদের  বেশকিছু উপাদান (ব্যক্তিগত খাত, ইপিজেড, স্টক মার্কেট) এখন চীনে চালু রয়েছে। স্বাস্থ্যখাত পুরোপুরিভাবে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে এটা বলা যাবে না। চীন  এখন যৌথ  নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একদিকে যেমনি পাওয়া যায় ইউরোপের Social Demoeracy' ধারণা, ঠিক অন্যদিকে রয়েছে ল্যাতিন আমেরিকার Corporatism ও পূর্ব এশিয়ার Neo-Authorism-এর উপাদান। এই তিনটির সংমিশ্রণে নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে চীনে। এটাকে ঠিক মার্কসবাদও বলা যাবে না, আবার পুঁজিবাদও বলা যাবে না। এক সময় চীনে কনফুসিয়াসের ধ্যান-ধারণা নিষিদ্ধ ছিল। আজ চীন কনফুসিয়াসকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পূজা করে। কনফুসিয়াসের অনেক চিন্তাধারা চীন এখন গ্রহণ করেছে। বাজার এখন চীনের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। চীনা পণ্য এখন বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। চীনের বড় বিনিয়োগ এখন আফ্রিকাতে। গরবাচেভ যে ভুলটি করেছিলেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে, সেই ভুল করেননি চীনা নেতৃবৃন্দ। তারা চীনকে বদলে দিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তেমন কোন পরিবর্তন আনেননি। এখানে পরিবর্তন আসছে খুব ধীর গতিতে। আগে অত্যন্ত ক্ষমতাবান পালটব্যুরোর সদস্যরা অবসরে তেমন একটা যেতেন না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা থাকতেন পালটব্যুরোর সদস্য হয়ে। এখন ক্ষমতাবানদের অবসরে যেতে হয়। ২০১২ সালে অবসরে যাবেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও ও প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও। ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং হু জিনতাও-এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। সি জিনপিং চলতি বছরের প্রথমদিকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সংস্কারবাদী হিসাবেই তিনি পরিচিত। ধারণা করা হচ্ছে আজ থেকে ৩৪ বছর আগে চীনা সংস্কারের জনক দেং জিয়াও পিং যে  সংস্কারের সূচনা করেছিলেন, সেই ধারায় সি জিনপিংও একুশ শতকে চীনকে নেতৃত্ব দেবেন। এ জন্যই মাইকেল এলিয়ট  (Michael Elliott) লিখেছিলেন, `in this century the relative power of the u.s. is going to decline, and that of china is going to rise. That cake was backed long ago (The chinese century  Time, 22 january 2007)। মাইকেল এলিয়ট মিথ্যা বলেননি। চীন আজ একটি শক্তি। এই শক্তিকে অবহেলা করা যাবে না। আর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সার্থকথা এখানেই যে, তারা চীনকে আজ এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
এখন এডমিরাল মাইক মুলেন বেইজিং-এ এসে চীনকে বিশ্ব শক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন বটে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নীতি প্রণেতারা চীনের উত্থানকে খুব ভালো চোখে দেখছেন না। সম্প্রতি  New American Foundation  (ওয়াশিংটস্থ একটি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান) যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, এ ব্যাপারে একটি দীর্ঘস্থায়ী গবেষণা পরিচালনা করে। একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী চীনা কর্তৃত্বকে খর্ব করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উচিত রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। একই সাথে ইউরোপে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ সীমিত করা ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে রাশিয়ার স্বার্থকে (যাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ চিহ্নিত করেছেন zone of privileged interert'  হিসাবে) সম্মান করা ( Anatol lieven, us Rusian Relations and the rise of china, New American Foundation 11 july, 2011)। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চিন্তিত। এমনিতেই নানা ইস্যুতে (তিব্বত, তাইওয়ান, চীনা মুদ্রা, বাণিজ্য ইত্যাদি) চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। কোন কোন মহল থেকে ‘চীনকে ঘিরে ফেলার’  (Containment Theory) একটি নীতির কথাও বলা হচ্ছে। মুলেনের সফরের পর চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরো অবনতি ঘটলো, যখন প্রেসিডেন্ট ওবামা তিব্বতের বিতর্কিত নেতা দালাই লামার সাথে ওয়াশিংটনে দেখা করেন। চীন এই বৈঠকের নিন্দা করেছে এবং মন্তব্য করেছে যে, এই ঘটনা চীনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সামিল। সবমিলিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখন বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত একটি বিষয়। এই দু’টো দেশের মাঝে সম্পর্কের যদি আরো অবনতি ঘটে, তাহলে তা বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবেই।

দৈনিক ইত্তেফাক, |  বুধ, ২০ জুলাই ২০১১, ৫ শ্রাবণ ১৪১৮

লেখক: ড. তারেক শামসুর   রেহমান
অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
tsrahmanbd@yahoo.com
www.tsrahmanbd.blogspot.com

1 comments: