সিরিয়ায় কুর্দি অবস্থানের ওপর তুরস্কের বিমান হামলা ও সামরিক অভিযানের পর
তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে এবং দেশ দুটির মধ্যে
একটি সীমিত যুদ্ধের সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ। যুদ্ধ আদৌ হবে কি নাÑ এটা
ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু সিরিয়া থেকে আইএস উৎখাতের পর সেখানে শান্তি
প্রতিষ্ঠার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, ঠিক তেমনই একই সময়ে তুরস্কের সামরিক
আগ্রাসন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি নতুন করে নানা প্রশ্নের
জন্ম দিতে বাধ্য। যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক ন্যাটো জোটের সদস্য। দীর্ঘদিন
তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে
ন্যাটোভুক্ত এ দুটো দেশের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে তুরস্কের
প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের (জুলাই ২০১৬)
পর থেকে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রকে সন্দেহের চোখে দেখে আসছে। তুরস্ক মনে করে,
ওই ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের একটা ইন্ধন ছিল। এর পর
থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ওই ব্যর্থ
সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই এরদোগান রাশিয়ার দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়েন। ব্যর্থ
সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরদোগান ছুটে গিয়েছিলেন রাশিয়ায়। সোচিতে ২০১৭ সালে
দুই নেতা মিলিত হয়েছিলেন। একই বছর পুতিন তুরস্কও সফর করেছিলেন। সবচেয়ে যা
গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে রাশিয়া-তুরস্ক সামরিক চুক্তি। ওই চুক্তির বদৌলতে
রাশিয়া তুরস্কের কাছে এস-৪০০ মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও অত্যাধুনিক বিমান
বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে। ন্যাটোভুক্ত একটি দেশের রাশিয়ার সমরাস্ত্র ক্রয়
এই প্রথম। খুব স্বাভাবিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের এটা ভালো চোখে দেখার কথা
নয়। উপরন্তু রাশিয়ার সরকারি গ্যাস বিক্রি সংস্থা গেজপ্রম (Gazprom) এরই
মধ্যে তুরস্কের মধ্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহের ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষর
করেছে। গেজপ্রম কৃষ্ণসাগরের নিচ দিয়ে (Turkstream Project)এই গ্যাস তুরস্কে
সরবরাহ করবে, যা ২০১৯ সালে ইউরোপে যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশিয়ার
কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্তী শহর ক্রাসনোডর হয়েBlack Sea বা কৃষ্ণসাগরের নিচ দিয়ে
পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস তুরস্কের বন্দরনগর সামসুনে সরবরাহ করা হবে, পরে
যা পাইপলাইনের মাধ্যমে যাবে আংকারা পর্যন্ত। পাশাপাশি অপর একটি লাইনে গ্যাস
যাবে গ্রিসে। সেখান থেকে তা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর
জ্বালানি চাহিদা মেটাবে। এই দুই পাইপলাইনে ১৫ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন কিউবিক মিটার
গ্যাস সরবরাহ করা হবে। বোঝাই যায়, ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তার প্রশ্নে
(Turkstream Project)এর গুরুত্ব কত বেশি। রাশিয়া-তুরস্ক এই গ্যাস সমঝোতা,
তাই যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিস্টদের মনঃপূত নয়। তুরস্কের সঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতির পেছনে এটাও অন্যতম একটা কারণ।তুরস্কের সিরিয়ায় কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চল (আফরিন) সেনা অভিযানের পেছনে তারা
তাদের নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে বড় করে দেখছে। তুরস্কের অভ্যন্তরে
সাম্প্রতিকালে যেসব সন্ত্রাসবাদী কর্মকা- সংঘটিত হয়েছে, তা কুর্দি
সন্ত্রাসীদের কাজ বলে তুরস্কের অভিযোগ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কুর্দি অঞ্চল
মানবিজকে নিয়ে। মানবিজ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি শহর। এখানে
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশের অবস্থান রয়েছে, যারা সেখানে
‘উপদেষ্টা’ হিসেবে কর্মরত রয়েছে। তুরস্ক মানবিজ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের
সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের
সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোগেল সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে
জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আদৌ কোনো চিন্তাভাবনা
করছেন না। তিনি এটাও স্পষ্ট করেছেন, পেন্টাগন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক
ফোর্সকে তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে। এই ফোর্স তুরস্কের সেনাবাহিনীর
বিরুদ্ধে আফরিন শহর মুক্ত করার জন্য ‘যুদ্ধ’ করছে। ফলে সিরিয়া সংকট নতুন
একটি মোড় নিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে আফরিন অঞ্চল থেকে কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠী
ওয়াইপিজি উচ্ছেদ হলেও তারা পাল্টা লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। তুরস্কের সামরিক
আগ্রাসন সিরিয়ার শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও বিঘিœত করবে। জেনেভায় জাতিসংঘের
উদ্যোগে যে শান্তি আলোচনা চলে আসছিল, তা কোনো ফল বয়ে আনতে পারছিল না।
অন্যদিকে রাশিয়ার সোচিতে যে বিকল্প শান্তি আলোচনা চলছিল, তাতেও দেখা দিয়েছে
অনিশ্চয়তা। ২৯ জানুয়ারি সোচিতে যে শান্তি আলোচনা আহ্বান করা হয়েছিল,
সিরিয়ার বিরোধীপক্ষ তাতে যোগ না দেওয়ায় কার্যত সে উদ্যোগও এখন প্রশ্নবিদ্ধ
হয়েছে। ফলে একটা প্রশ্ন সংগত কারণেই উঠেছে যে, সিরিয়ার রাজনীতি এখন কোন
পথে? সিরিয়া থেকে আইএসের মতো জঙ্গিগোষ্ঠী একরকম উচ্ছেদ হয়েছে। বিশেষ করে
বছর দুয়েক আগে মার্কিন ও রাশিয়ার বিমান হামলার পর আইএস সিরিয়ায় দুর্বল হয়ে
যায়। তারা ২০১৪ সালের পর থেকে যেসব এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল
এবং যেসব এলাকায় তারা তথাকথিত একটি ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা করেছিল, ওই বিমান
হামলায় তা ধ্বংস হয়ে যায় এবং আইএস সিরিয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য
হয়। কিন্তু রাশিয়ার বিমান হামলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ ওঠেÑ রাশিয়ার
বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে আসাদবিরোধী বেশকিছু বিদ্রোহী গ্রুপ, যারা
আইএসের সঙ্গে জড়িত ছিল না। এই যখন পরিস্থিতি, তখন আফরিনে তুরস্ক সামরিক
আগ্রাসন চালিয়েছে। তুরস্ক তার সামরিক আগ্রাসনের জন্য যুক্তি দেখিয়েছে।
তুরস্ক বলছে, তারা শহরটিকে সন্ত্রাসীদের করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেবে
না। এই সামরিক আগ্রাসনের ঘটনা ন্যাটোভুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে
একধরনের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে। তুরস্কের সামরিক আগ্রাসনের এক দিন আগে
সিরিয়ার তুরস্ক সীমান্তবর্তী এলাকায় কুর্দিদের নিয়ে শক্তিশালী সীমান্তরক্ষী
বাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র
কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) নেতৃত্বেই ওই পরিকল্পনা করে।
পিকেকে তুরস্কে নিষিদ্ধ। ওয়াইপিজে হচ্ছে পিকেকের সামরিক শাখা। সাম্প্রতিক
সময়গুলোয় তুরস্কের অভ্যন্তরে যেসব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, তার পেছনে পিকেকের
হাত রয়েছে বলে তুরস্ক অভিযোগ করেছিল। আফরিনে তুরস্কের সামরিক অভিযানে
সিরিয়ার জটিল রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণ আরও বেশি জটিল হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কুর্দি ওয়াইপিজি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এ হামলা
ট্রাম্প প্রশাসনকে ন্যাটোভুক্ত তুরস্কের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। গেল
অক্টোবরে (২০১৭) সিরিয়ার রাকা শহর থেকে আইএসকে উৎখাতে ওয়াইপিজির সমর্থনে
যুক্তরাষ্ট্র সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু তুরস্ক
ওয়াইপিজি-যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতাকে ভালো চোখে নেয়নি। তুরস্কের ভয় ছিল, কুর্দি
বিদ্রোহীরা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের
অংশবিশেষ নিয়ে একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে! সিরিয়ার
কুর্দিরা বেশিরভাগই দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে। পিকেকের সশস্ত্র
শাখা ও ওয়াইপিজি বা পিপলস ডিফেন্স ইউনিট ২০১২ সালে ইউফ্রেটিস নদীর
পূর্বপারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই তুরস্ক একধরনের অস্বস্তিতে ছিল। বলা
ভালো, ১৯৮৪ সাল থেকেই পিকেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে গেরিলাযুদ্ধ চালিয়ে আসছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।অনেকের স্মরণ থাকার কথা, কুর্দি শহর কোবানিকে আইএসের হাত থেকে রক্ষা করার
জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালে সেখানে বিমান হামলা চালিয়েছিল। মার্কিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনের বক্তব্য যদি আমরা সত্য বলে ধরে নিই, তাহলে এটা
স্পষ্ট যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় তাদের উপস্থিতি রাখতে চায়। তারা সিরিয়ায় দুই
হাজার সামরিক উপদেষ্টা পাঠাতে চায়। আর তাই তারা ব্যবহার করতে চায়
ওয়াইপিজিকে। সমস্যাটা তৈরি হয়েছে এখানে। তুরস্কের এটা পছন্দ নয়। ওয়াইপিজি
যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে তা দেশটির (তুরস্ক) সার্বভৌমত্বের জন্য
হুমকিস্বরূপ। একসময় ওয়াইপিজির সঙ্গে রাশিয়ার ভালো সম্পর্ক ছিল। অভিযোগ আছে,
রাশিয়ার উপদেষ্টারা আফরিনে ওয়াইপিজির পক্ষে কাজ করত। কিন্তু ওয়াইপিজি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিতীয় ফ্রন্ট ওপেন করায় রাশিয়া কুর্দিদের ওপর
থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় এবং সর্বশেষ খবর অনুযায়ী আফরিনে তুরস্কের
সামরিক অভিযানের ব্যাপারে রাশিয়ার কোনো আপত্তি ছিল না। এখানে বৃহৎ শক্তি ও
আঞ্চলিক শক্তিগুলোর একটি ভূমিকা লক্ষ করার মতো। সিরিয়ার রাজনীতিকে কেন্দ্র
করে স্পষ্টই দুইটি পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে। এটা স্পষ্ট যে, রাশিয়ার কারণেই আসাদ
সরকার টিকে গেল। এখানে রাশিয়া-ইরান-সিরিয়া একটি পক্ষ। আর যুক্তরাষ্ট্র
আসাদবিরোধী। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান রাশিয়া-ইরান-সিরিয়া জোটের
বিরুদ্ধে। তুরস্ক তার জাতীয় স্বার্থের কারণেই রাশিয়া-ইরান-সিরিয়ার শিবিরে
অবস্থান করছে। তাহলে সিরিয়া সংকটের সমাধান হবে কোন পথে? সেখানে একটি সংবিধান প্রণয়ন করা
অত্যন্ত জরুরি। সেখানে আসাদকে রাখা বা না-রাখা নিয়ে একটি ‘ডিবেট’ আছে।
সিরিয়ায় আসাদবিরোধী অনেকগুলো ‘পক্ষ’ রয়েছে, যারা একদিকে আসাদ সরকারের
বিরুদ্ধেও ‘যুদ্ধ’ করছে, আবার ক্ষমতা দখলের জন্য নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষেও
লিপ্ত। দুটি বড় শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াও সিরিয়া সংকটে নিজেদের জড়িত
করেছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে জেনেভায় একটি শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কিন্তু ওই সম্মেলনে এখন অবধি একটি শান্তি ফরমুলা উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
একই সঙ্গে রাশিয়ার উদ্যোগে সোচিতেও আসাদবিরোধীদের নিয়ে একটি শান্তি সম্মেলন
আয়োজন করে আসছে রাশিয়া। কিন্তু সেখানেও কোনো সমাধান বের করা সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ সোচি বৈঠক বয়কট করেছে সিরিয়াবিরোধী পক্ষ, যাদের কেউ কেউ জেনেভা
সম্মেলনেও অংশ নিয়েছিল। জেনেভা সম্মেলনে যোগ দিতে বিরোধী দলগুলোর উদ্যোগে
একটি ‘হাই নেগোশিয়েশনস কমিটি’ (এইচএনসি) গঠিত হয়েছিল। কিন্তু কমিটির মধ্যেও
দ্বন্দ্ব আছে। এইচএনসি সৌদি আরব সমর্থিত। তবে কুর্দিদের প্রতিনিধিত্বের
প্রশ্নে এখানে দ্বন্দ্ব আছে। বস্তুত ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্ম হওয়া
এইচএনসির কোনো ভূমিকা নেই। তাহলে সমাধানটা হবে কীভাবে? সিরিয়ার পরিস্থিতি সত্যিকার অর্থেই জটিল হয়ে
পড়েছে। এখানে কার্যত দুটি বড় শক্তির অবস্থান পরস্পরবিরোধী। যুক্তরাষ্ট্র
স্পষ্টই কুর্দিদের নিয়ে সিরিয়ায় আসাদবিরোদী একটি ফ্রন্ট গড়ে তুলতে চায়।
অর্থাৎ আসাদবিরোধী একটি পক্ষকে সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় তার
অবস্থান ধরে রাখতে চায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখানে তুরস্কের সমর্থন না
পাওয়া। কুর্দিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহাবস্থান ও সমর্থন তুরস্ক ভালো
চোখে দেখছে না। যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে, সিরিয়ায় ইরানি
প্রভাব কমানো। এক্ষেত্রে সুন্নি ধর্মাবলম্বী তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের
ন্যাচারাল মিত্র হতে পারত; কিন্তু তা হয়নি। বরং তুরস্ক ও ইরান একধরনের
অ্যালায়েন্সে গেছে। রাশিয়া আইএসবিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে ছিল।
কিন্তু রাশিয়া চায় না আসাদ অপসারিত হোক। আসাদকে রেখেই রাশিয়া একধরনের
সমাধান চায়। এখানে তুরস্কের আপত্তি থাকলেও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে তুরস্ক আজ
রাশিয়ার মিত্র। রাশিয়া নিজ উদ্যোগে সিরিয়ায় একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করতে
চায়। সেজন্যই সোচিতে সিরিয়ার সব দল ও মতের প্রতিনিধিদের একটি সম্মেলন
আহ্বান করেছিল রাশিয়া, যাকে তারা বলছে ‘সিরিয়ান কংগ্রেস অব ন্যাশনাল
ডায়ালগ’। কিন্তু সেখানেও বিরোধ আছে। নানা মত ও পক্ষের প্রায় ১ হাজার ৫০০
প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানান হলেও একটা বড় অংশ এতে অংশ নেয়নি। সিরিয়ার
বিরোধী পক্ষ ‘সিরিয়ান নেগোসিয়েশন কমিশন’ ওই সম্মেলনে অংশ নেয়নি। সিরিয়া
সংকটের মূলে রয়েছে সব মত ও পথকে একটি কাঠামোয় আনা। সেখানে সুন্নি, শিয়া,
দুর্জ, আলাউট মতাবলম্বীসহ বিভিন্ন সামরিক গ্রুপও রয়েছে। আসাদ সমর্থকরাও
একটি পক্ষ। কিছু ইসলামিক গ্রুপও রয়েছে, যারা আইএসের বিরোধিতা করেছিল।
সবাইকে নিয়ে একটি সমাধান বের করা সহজ কাজ নয়। যদিও সোচিতে সবাই সিরিয়ার
অখ-তা রক্ষায় একমত হয়েছেন। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক ধারা ও নির্বাচনের
প্রশ্নে সবাই একমত হয়েছেন। তারপরও কথা থেকে যায়Ñ বড় বিরোধী দলের অবর্তমানে
ওই সমঝোতা আদৌ কাজ করবে কি না? এ মুহূর্তে বড় প্রশ্ন হচ্ছেÑ তুরস্ক মানবিজ আক্রমণ করবে কি না? মানবিজে
কুর্দিদের সঙ্গে আছে মার্কিন সেনা। যদিও এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। তুরস্ক যদি
মানবিজ আক্রমণ করে, তাহলে তা প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ওপর
আক্রমণের শামিল বলে বিবেচিত হবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এ ঝুঁকি
নেবেন, নাকি শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মানবিজ থেকে তার সেনাবাহিনী
প্রত্যাহার করে নেবেÑ এ মুহূর্তে তা স্পষ্ট নয়। এটা দেখার জন্য আমাদের আরও
কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।Daily Alokito Ba
04.02.2018
04.02.2018
0 comments:
Post a Comment