কী হতে যাচ্ছে আজ? বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘জিয়া
অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলার রায় এই দিন। এই রায় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে। প্রতিদিনই পত্রিকায়
তাঁদের বক্তব্য ছাপা হচ্ছে। টিভি টক শোতে প্রকাশ্যেই মন্তব্য করা হচ্ছে।
টিভি টক শোর যাঁরা সঞ্চালক তাঁরা বোধ করি জেনেশুনেই দুটি বড় দলের দুজন
নেতাকে আমন্ত্রণ জানান। নেতারা ঝগড়া করেন। আর জনগণ বিভ্রান্ত হয়।
নিঃসন্দেহে এটি একটি আলোচিত মামলা। এই মামলার রায়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর
করছে। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি এই
রায়ের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে। রায়ে কী হবে, কী হবে না—আমরা কেউ তা জানি
না। কিন্তু বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিংবা কোনো কোনো মন্ত্রী এরই মধ্যে মন্তব্য
করেছেন। একজন ছোট মন্ত্রী তো বলেই ফেলেছেন, আগামী ১৫ দিন পর খালেদা জিয়াকে
কারাগারে থাকতে হবে! সরকারের কোনো মন্ত্রী কি এ ধরনের কথা বলতে পারেন? রায়
দেবেন তো আদালত। সেই রায়ে কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ হতে পারে। কোনো পক্ষ খুশি
হতে পারে। এ নিয়ে আগাম মন্তব্য করা যায় না। এটি আদালত অবমাননার শামিল!
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই যে আমরা আদালতে বিচারাধীন একটি মামলা নিয়ে
প্রশ্ন করতেও দ্বিধা বোধ করি না। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
ওবায়দুল কাদের অনেক ম্যাচিউরড বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি
মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হবে কি হবে না—এটি আদালতের
এখতিয়ার। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও তথ্যের ভিত্তিতে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবেন। এখানে
সরকারের কোনো হাত নেই। আদালত কী রায় দেবেন, সেটি তো বিএনপি বলে দিচ্ছে! এর
আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার সাজা
পূর্বপরিকল্পিত! এটি নিয়েও ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, এই
রায় আগেভাগে জানলেন কিভাবে মির্জা ফখরুল!
স্পষ্টতই এই রায় ও খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য সাজা নিয়ে দুটি বড় দলই ‘রাজনীতি’ করছে। বিএনপি জনসমর্থন টানতে চেয়েছে সম্ভাব্য সাজার বিষয়টিকে সামনে এনে। আর আওয়ামী লীগ আগেভাগেই সতর্ক অবস্থানে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের কিংবা মন্ত্রীদের সতর্ক হয়ে কথাবার্তা বলা উচিত ছিল। আদালতের ওপর আমাদের আস্থা রাখাটা উচিত ছিল। আদালত একটি রায় দিলেই তা যে চূড়ান্ত, তা তো বলা যাবে না। বিএনপির জন্য সে সুযোগ আছে। আমাদের এমন কোনো কিছু করা উচিত নয়, যা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। একজন ছোট মন্ত্রী যখন রায় ঘোষণার আগেই রায় নিয়ে মন্তব্য করেন তখন বিএনপির উচিত ছিল তা আদালতের নজরে আনা। বিএনপি নেতারা এটি করেছেন বলে মনে হয় না। গয়েশ্বর রায়ের মতো একজন সিনিয়র নেতা যখন বলেন, ‘সরকারের আদিষ্ট হয়ে যদি আদালত থেকে নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত প্রকাশ পায়, তাহলে তখন থেকে এই সরকারের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবে।’ ‘সরকারের আদিষ্ট হয়ে’ রায় দেওয়া যায় কি? এ ধরনের বক্তব্য একজন সিনিয়র নেতার মুখ থেকে আশা করা যায় না। তাঁরা যদি এ ধরনের কথাবার্তা বলেন, তাহলে জুনিয়র নেতারা কিভাবে বলবেন? কী তারা শিখবেন? ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। থাকাটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবার বক্তব্য শোভন, গ্রহণযোগ্য এবং তা আদালতকে যেন প্রভাবিত না করে—এমনটিই হওয়া উচিত।
মামলাটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই মামলা হলেও ওই সরকারের আমলে দায়ের করা অনেক মামলা বর্তমান সরকার এগিয়ে নিয়ে যায়নি। তাই সুযোগ তৈরি হয়েছে বিএনপির জন্য কথা বলার। তবে বিএনপির দুটি সিদ্ধান্ত চলমান রাজনীতিতে আরো ঝড় তুলবে। বিএনপি বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছে গত মঙ্গলবার। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে সামনে রেখেই বিএনপি এই কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করল। দ্বিতীয়ত, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে খালেদা জিয়াকে ছাড়া ভোটে যাবে না বিএনপি। সংবাদ দুটি আমাদের চলমান রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছর নির্বাচনী বছর। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে কয়েকটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে সব দল, বিশেষ করে দুটি বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই আস্থার সম্পর্ক না থাকলে দেশে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হবে, যা কোনো দলের জন্যই কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। যেহেতু আমরা ধীরে ধীরে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, সেহেতু আমাদের এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়, যা উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে। বিএনপি ধরেই নিয়েছে খালেদা জিয়ার সাজা হবে! তাই তারা কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা বারবার বলে আসছি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় বিদেশিদের জড়িত না করাই মঙ্গল। সমস্যা আমাদের। সমাধান আমাদেরই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশিদের দ্বারস্থ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের ‘নাক গলানোর’ সুযোগ করে দেওয়া। গণতন্ত্রের জন্য এটা মঙ্গলজনক নয়। বিদেশিদের ‘প্রেসক্রিপশন’ মতো যদি আমরা চলি, তাহলে আমরা গণতন্ত্রকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, বৈরিতা থাকবেই। এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব নিরসনে বিদেশিদের ডাকা কেন? তাদের শরণাপন্ন হওয়া মানে তাদের সুযোগ করে দেওয়া। এটি আমাদের দুর্বলতা। আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির দুর্বলতা। আমাদের সমস্যা আমাদেরই মেটাতে হবে। আর সমস্যা সমাধানের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সংলাপ। সিনিয়র মন্ত্রীরা যখন বলেন বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূলকথা। এখন আস্থার সম্পর্কে যদি ঘাটতির সৃষ্টি হয়, তাহলে একমাত্র সংলাপের মাধ্যমেই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বিএনপির নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত (?) আমার মনে হয় চূড়ান্ত নয়। বিএনপির একটি সিদ্ধান্ত পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে বটে; কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বিএনপিকে আরো বিতর্কিত করতে পারে। নির্বাচন বয়কট কোনো সমাধান নয়, বরং সরকার যাতে একটি গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেয়, সে ব্যাপারে দলটিকে কাজ করতে হবে। সিভিল সোসাইটির সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে হবে। সব দলের সঙ্গে এ প্রশ্নে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। কিন্তু বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি। সরকার চার বছর পার করেছে। সুতরাং আগামী নির্বাচনও যদি বিএনপি বয়কট (?) করে, তার পরিণতি নিশ্চয় বিএনপি নেতারা অনুধাবন করবেন।
মূলকথা হচ্ছে, আমরা একটি ভালো জাতীয় নির্বাচন চাই। আর ভালো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সব দলের অংশগ্রহণ। ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য খুব ভালো খবর নয়। সরকারের জন্যও এটি কোনো ভালো সংবাদ বয়ে আনবে না। আরো একটি কথা। সিল মারা কিংবা ভোটকেন্দ্র দখলের যে সংস্কৃতি আমরা বারবার প্রত্যক্ষ করে আসছি কিংবা বিরোধী দলের প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার যে ‘রাজনীতি’ আমরা দেখেছি, এই প্রবণতা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব তাই অনেক বেশি। ইসিকে প্রমাণ করতে হবে তারা নির্বাচনের আগে ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ দেবে। নির্বাচনে মাস্তানতন্ত্র বন্ধ করবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। কোনোখানেই কোনো সহিংসতা হয়নি। সব দল এই নির্বাচন দুটির ফলাফল মেনে নিয়েছে। ফলে কিছুটা হলেও একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ইসি সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করবে—প্রশ্ন সেখানেই। আমরা বারবার বলে আসছি সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে নির্বাচন কমিশন ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকে। সংবিধানের ১১৮(৪) ধারা নিয়ে একটি ব্যাখ্যা আছে। এই ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে স্বাধীন’ এবং সংবিধানের ১২৬ ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হবে।’ এটিই হচ্ছে আসল কথা। নির্বাচনের তিন মাস আগে সব প্রশাসন চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে। অর্থাৎ জেলা প্রশাসক, এসপি, ওসিরা থাকেন নির্বাচন কমিশনের আওতায়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তা কি বলে? জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা থানার ওসিরা থাকেন জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায়। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করে মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন নয়। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে, আর জেলা প্রশাসকরা নিয়ন্ত্রিত হন মন্ত্রণালয় থেকে। এ ক্ষেত্রে প্রায় ক্ষেত্রেই সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
আরো একটি কথা। সংসদ বিলুপ্ত না করেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর অর্থ কী? সংসদ সদস্যরা নিজেদের অবস্থান ঠিক রেখেই প্রার্থী হবেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অর্থাৎ যিনি এখনো এমপি, তিনি প্রার্থী হবেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার একটি অভিযোগ থেকেই যাবে। স্থানীয় প্রশাসন একজন এমপিকে অস্বীকার করতে পারে না। এমপিকে তারা সমীহ করে। এমপি স্থানীয় রাজনীতির প্রধান ব্যক্তি। এমপির কথাকে গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন অন্য কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে! পৃথিবীর সব দেশে সাধারণত নিজেদের জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েই নির্বাচনটি হয়। ভারত এর বড় উদাহরণ। সংসদ বহাল রেখে কোনো নির্বাচনই হয় না। এটি অবশ্য ঠিক, ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকেন; কিন্তু তাঁর কোনো ‘নির্বাহী কর্তৃত্ব’ থাকে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংবিধানের এই ধারা নিয়ে বিতর্ক আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান পরস্পরবিরোধী।
চলতি বছরটি এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে থাকবে বারবার। দুটি বড় দলই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। এ ক্ষেত্রে জট কিভাবে খুলবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে যা জরুরি, তা হচ্ছে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই আস্থার সম্পর্ক এখন তলানিতে অবস্থান করছে। আস্থার সম্পর্কটি জরুরি এ কারণে যে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন অনেক অংশে দুই দল নির্ভর হয়ে পড়েছে। এক দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে, সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে থাকে। আওয়ামী লীগ বড় দল। ইউনিয়ন পর্যায়ে এই দলের সাংগঠনিক ভিত্তি আছে। অন্যদিকে বিএনপি আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। তৃতীয় শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টির একটি সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্ত আর সুবিধাবাদিতার রাজনীতির কারণে জাতীয় পার্টি একটি অঞ্চলভিত্তিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। পাঠক লক্ষ করলে দেখবেন, এই দলের জন্মের পর থেকে যতবার ভাঙনের মুখে পড়েছে, অন্য কোনো দল এতবার ভাঙনের মুখে পড়েনি। অতীতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান কিংবা কাজী জাফর আহমদ যাঁরাই দল থেকে (জাতীয় পার্টি) বেরিয়ে গেছেন, তাঁরা রাজনীতির প্রশ্নের চেয়ে সুবিধাবাদিতার কারণেই দল থেকে বেরিয়ে গেছেন। এ ক্ষেত্রে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মূলধারা ধরে রেখেছেন বটে; কিন্তু তাঁর অবর্তমানে দল কয় টুকরায় বিভক্ত হয়, সেটিই দেখার বিষয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিতে ভাঙন এসেছে। তবে তারা কেউই সুবিধা করতে পারেনি। আবদুর রাজ্জাকের মতো নেতা আওয়ামী লীগের বাইরে গিয়ে বাকশাল নিয়ে গঠিত হতে চেষ্টা করেছিলেন। পারেননি। মূলধারায় ফিরে এসেছিলেন। বিএনপির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ওবায়দুর রহমান কিংবা মান্নান ভূঁইয়া চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি। আর নাজমুল হুদা একবার বেরিয়ে গেছেন, আবার ফিরে এসেছেন, এখন আবার দলের বাইরে। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কিংবা কারিশমা কোনোটাই নেই। ফলে মুজিব কিংবা জিয়া পরিবারের বাইরে গিয়ে কেউই সফল হবেন না। আরো একটি কথা—আর তা হচ্ছে তৃতীয় শক্তি গড়ে ওঠার ব্যর্থতা। বারবার চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু সফলতা আসেনি। আমরা যদি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (১৯৯১) ফলাফল থেকে নবম জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুটি বড় দল নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে দল দুটির মধ্যে আস্থার সম্পর্ক থাকাটা জরুরি।
আজকের দিনটিকে ঘিরে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দুটি দলের নেতারাই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। আদালতের একটি সম্ভাব্য রায় নিয়ে কারোরই আগাম মন্তব্য করা সমীচীন নয়। এতে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়! আমরা চাই সব দল সহনশীলতা প্রদর্শন করবে। আদালতের ওপর আস্থা রাখবে এবং কোনো ধরনের সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেবে না। মনে রাখতে হবে, সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি। কোনো দলেরই নির্বাচনপ্রক্রিয়া বানচাল হয়—এমন কোনো কর্মসূচি নেওয়া উচিত নয়
Daily Kalerkontho
08.02.2018
স্পষ্টতই এই রায় ও খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য সাজা নিয়ে দুটি বড় দলই ‘রাজনীতি’ করছে। বিএনপি জনসমর্থন টানতে চেয়েছে সম্ভাব্য সাজার বিষয়টিকে সামনে এনে। আর আওয়ামী লীগ আগেভাগেই সতর্ক অবস্থানে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের কিংবা মন্ত্রীদের সতর্ক হয়ে কথাবার্তা বলা উচিত ছিল। আদালতের ওপর আমাদের আস্থা রাখাটা উচিত ছিল। আদালত একটি রায় দিলেই তা যে চূড়ান্ত, তা তো বলা যাবে না। বিএনপির জন্য সে সুযোগ আছে। আমাদের এমন কোনো কিছু করা উচিত নয়, যা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। একজন ছোট মন্ত্রী যখন রায় ঘোষণার আগেই রায় নিয়ে মন্তব্য করেন তখন বিএনপির উচিত ছিল তা আদালতের নজরে আনা। বিএনপি নেতারা এটি করেছেন বলে মনে হয় না। গয়েশ্বর রায়ের মতো একজন সিনিয়র নেতা যখন বলেন, ‘সরকারের আদিষ্ট হয়ে যদি আদালত থেকে নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত প্রকাশ পায়, তাহলে তখন থেকে এই সরকারের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবে।’ ‘সরকারের আদিষ্ট হয়ে’ রায় দেওয়া যায় কি? এ ধরনের বক্তব্য একজন সিনিয়র নেতার মুখ থেকে আশা করা যায় না। তাঁরা যদি এ ধরনের কথাবার্তা বলেন, তাহলে জুনিয়র নেতারা কিভাবে বলবেন? কী তারা শিখবেন? ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। থাকাটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবার বক্তব্য শোভন, গ্রহণযোগ্য এবং তা আদালতকে যেন প্রভাবিত না করে—এমনটিই হওয়া উচিত।
মামলাটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই মামলা হলেও ওই সরকারের আমলে দায়ের করা অনেক মামলা বর্তমান সরকার এগিয়ে নিয়ে যায়নি। তাই সুযোগ তৈরি হয়েছে বিএনপির জন্য কথা বলার। তবে বিএনপির দুটি সিদ্ধান্ত চলমান রাজনীতিতে আরো ঝড় তুলবে। বিএনপি বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছে গত মঙ্গলবার। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে সামনে রেখেই বিএনপি এই কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করল। দ্বিতীয়ত, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে খালেদা জিয়াকে ছাড়া ভোটে যাবে না বিএনপি। সংবাদ দুটি আমাদের চলমান রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলতি বছর নির্বাচনী বছর। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে কয়েকটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে সব দল, বিশেষ করে দুটি বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই আস্থার সম্পর্ক না থাকলে দেশে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হবে, যা কোনো দলের জন্যই কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। যেহেতু আমরা ধীরে ধীরে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, সেহেতু আমাদের এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়, যা উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে। বিএনপি ধরেই নিয়েছে খালেদা জিয়ার সাজা হবে! তাই তারা কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা বারবার বলে আসছি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় বিদেশিদের জড়িত না করাই মঙ্গল। সমস্যা আমাদের। সমাধান আমাদেরই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশিদের দ্বারস্থ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের ‘নাক গলানোর’ সুযোগ করে দেওয়া। গণতন্ত্রের জন্য এটা মঙ্গলজনক নয়। বিদেশিদের ‘প্রেসক্রিপশন’ মতো যদি আমরা চলি, তাহলে আমরা গণতন্ত্রকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, বৈরিতা থাকবেই। এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব নিরসনে বিদেশিদের ডাকা কেন? তাদের শরণাপন্ন হওয়া মানে তাদের সুযোগ করে দেওয়া। এটি আমাদের দুর্বলতা। আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির দুর্বলতা। আমাদের সমস্যা আমাদেরই মেটাতে হবে। আর সমস্যা সমাধানের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সংলাপ। সিনিয়র মন্ত্রীরা যখন বলেন বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূলকথা। এখন আস্থার সম্পর্কে যদি ঘাটতির সৃষ্টি হয়, তাহলে একমাত্র সংলাপের মাধ্যমেই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বিএনপির নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত (?) আমার মনে হয় চূড়ান্ত নয়। বিএনপির একটি সিদ্ধান্ত পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে বটে; কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বিএনপিকে আরো বিতর্কিত করতে পারে। নির্বাচন বয়কট কোনো সমাধান নয়, বরং সরকার যাতে একটি গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেয়, সে ব্যাপারে দলটিকে কাজ করতে হবে। সিভিল সোসাইটির সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে হবে। সব দলের সঙ্গে এ প্রশ্নে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। কিন্তু বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি। সরকার চার বছর পার করেছে। সুতরাং আগামী নির্বাচনও যদি বিএনপি বয়কট (?) করে, তার পরিণতি নিশ্চয় বিএনপি নেতারা অনুধাবন করবেন।
মূলকথা হচ্ছে, আমরা একটি ভালো জাতীয় নির্বাচন চাই। আর ভালো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সব দলের অংশগ্রহণ। ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য খুব ভালো খবর নয়। সরকারের জন্যও এটি কোনো ভালো সংবাদ বয়ে আনবে না। আরো একটি কথা। সিল মারা কিংবা ভোটকেন্দ্র দখলের যে সংস্কৃতি আমরা বারবার প্রত্যক্ষ করে আসছি কিংবা বিরোধী দলের প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার যে ‘রাজনীতি’ আমরা দেখেছি, এই প্রবণতা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব তাই অনেক বেশি। ইসিকে প্রমাণ করতে হবে তারা নির্বাচনের আগে ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ দেবে। নির্বাচনে মাস্তানতন্ত্র বন্ধ করবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। কোনোখানেই কোনো সহিংসতা হয়নি। সব দল এই নির্বাচন দুটির ফলাফল মেনে নিয়েছে। ফলে কিছুটা হলেও একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ইসি সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করবে—প্রশ্ন সেখানেই। আমরা বারবার বলে আসছি সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে নির্বাচন কমিশন ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকে। সংবিধানের ১১৮(৪) ধারা নিয়ে একটি ব্যাখ্যা আছে। এই ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে স্বাধীন’ এবং সংবিধানের ১২৬ ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হবে।’ এটিই হচ্ছে আসল কথা। নির্বাচনের তিন মাস আগে সব প্রশাসন চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে। অর্থাৎ জেলা প্রশাসক, এসপি, ওসিরা থাকেন নির্বাচন কমিশনের আওতায়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তা কি বলে? জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা থানার ওসিরা থাকেন জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায়। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করে মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন নয়। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে, আর জেলা প্রশাসকরা নিয়ন্ত্রিত হন মন্ত্রণালয় থেকে। এ ক্ষেত্রে প্রায় ক্ষেত্রেই সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রতিফলিত হয়।
আরো একটি কথা। সংসদ বিলুপ্ত না করেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর অর্থ কী? সংসদ সদস্যরা নিজেদের অবস্থান ঠিক রেখেই প্রার্থী হবেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অর্থাৎ যিনি এখনো এমপি, তিনি প্রার্থী হবেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার একটি অভিযোগ থেকেই যাবে। স্থানীয় প্রশাসন একজন এমপিকে অস্বীকার করতে পারে না। এমপিকে তারা সমীহ করে। এমপি স্থানীয় রাজনীতির প্রধান ব্যক্তি। এমপির কথাকে গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন অন্য কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে! পৃথিবীর সব দেশে সাধারণত নিজেদের জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েই নির্বাচনটি হয়। ভারত এর বড় উদাহরণ। সংসদ বহাল রেখে কোনো নির্বাচনই হয় না। এটি অবশ্য ঠিক, ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকেন; কিন্তু তাঁর কোনো ‘নির্বাহী কর্তৃত্ব’ থাকে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংবিধানের এই ধারা নিয়ে বিতর্ক আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান পরস্পরবিরোধী।
চলতি বছরটি এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে থাকবে বারবার। দুটি বড় দলই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। এ ক্ষেত্রে জট কিভাবে খুলবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে যা জরুরি, তা হচ্ছে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই আস্থার সম্পর্ক এখন তলানিতে অবস্থান করছে। আস্থার সম্পর্কটি জরুরি এ কারণে যে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন অনেক অংশে দুই দল নির্ভর হয়ে পড়েছে। এক দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে, সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে থাকে। আওয়ামী লীগ বড় দল। ইউনিয়ন পর্যায়ে এই দলের সাংগঠনিক ভিত্তি আছে। অন্যদিকে বিএনপি আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। তৃতীয় শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টির একটি সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্ত আর সুবিধাবাদিতার রাজনীতির কারণে জাতীয় পার্টি একটি অঞ্চলভিত্তিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। পাঠক লক্ষ করলে দেখবেন, এই দলের জন্মের পর থেকে যতবার ভাঙনের মুখে পড়েছে, অন্য কোনো দল এতবার ভাঙনের মুখে পড়েনি। অতীতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান কিংবা কাজী জাফর আহমদ যাঁরাই দল থেকে (জাতীয় পার্টি) বেরিয়ে গেছেন, তাঁরা রাজনীতির প্রশ্নের চেয়ে সুবিধাবাদিতার কারণেই দল থেকে বেরিয়ে গেছেন। এ ক্ষেত্রে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মূলধারা ধরে রেখেছেন বটে; কিন্তু তাঁর অবর্তমানে দল কয় টুকরায় বিভক্ত হয়, সেটিই দেখার বিষয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিতে ভাঙন এসেছে। তবে তারা কেউই সুবিধা করতে পারেনি। আবদুর রাজ্জাকের মতো নেতা আওয়ামী লীগের বাইরে গিয়ে বাকশাল নিয়ে গঠিত হতে চেষ্টা করেছিলেন। পারেননি। মূলধারায় ফিরে এসেছিলেন। বিএনপির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ওবায়দুর রহমান কিংবা মান্নান ভূঁইয়া চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হননি। আর নাজমুল হুদা একবার বেরিয়ে গেছেন, আবার ফিরে এসেছেন, এখন আবার দলের বাইরে। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কিংবা কারিশমা কোনোটাই নেই। ফলে মুজিব কিংবা জিয়া পরিবারের বাইরে গিয়ে কেউই সফল হবেন না। আরো একটি কথা—আর তা হচ্ছে তৃতীয় শক্তি গড়ে ওঠার ব্যর্থতা। বারবার চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু সফলতা আসেনি। আমরা যদি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (১৯৯১) ফলাফল থেকে নবম জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুটি বড় দল নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে দল দুটির মধ্যে আস্থার সম্পর্ক থাকাটা জরুরি।
আজকের দিনটিকে ঘিরে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দুটি দলের নেতারাই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। আদালতের একটি সম্ভাব্য রায় নিয়ে কারোরই আগাম মন্তব্য করা সমীচীন নয়। এতে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা কমে যায়! আমরা চাই সব দল সহনশীলতা প্রদর্শন করবে। আদালতের ওপর আস্থা রাখবে এবং কোনো ধরনের সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেবে না। মনে রাখতে হবে, সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি। কোনো দলেরই নির্বাচনপ্রক্রিয়া বানচাল হয়—এমন কোনো কর্মসূচি নেওয়া উচিত নয়
Daily Kalerkontho
08.02.2018
0 comments:
Post a Comment