শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর জোট হচ্ছে জি-২০। এ জোটের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো হচ্ছেÑ আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। বিশ্বের জিডিপির ৯০ শতাংশ এ দেশগুলোর হাতে এবং ৮০ শতাংশ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে জি-২০-এর দেশগুলো
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুুয়েনস আয়ারসে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর স্থান হিসেবে পরিচিত জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছে ২ ডিসেম্বর। বিশ্ব রাজনীতি যারা এখন নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা সবাই উপস্থিত ছিলেন বুয়েনস আয়ারসে। যেমন উল্লেখ করা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (যুক্তরাষ্ট্র), চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো, জার্মান চ্যান্সেলর মর্কেল, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র কথা। শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর জোট হচ্ছে জি-২০। এ জোটের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো হচ্ছেÑ আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। বিশ্বের জিডিপির ৯০ শতাংশ এ দেশগুলোর হাতে এবং ৮০ শতাংশ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে জি-২০-এর দেশগুলো। জি-২০ যে বিশ্ব রাজনীতির জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ, সে ব্যাপারে আরও কিছু তথ্য দেওয়া যায়। যেমনÑ ৬৫ শতাংশ বিশ্বের জনগোষ্ঠী এ ১৯টি দেশে বসাবস করে। এরা কার্বন নিঃসরণ করে বিশ্বে যত কার্বন নিঃসরণ হয় তার ৭৯ ভাগ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জি-২০ দেশগুলোর মোট জিডিপির পরিমাণ ৭৫ হাজার ৩৯৩ বিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির পরিমাণ ১৯ হাজার ৪৮৫ মিলিয়ন ডলার, চীনের ১২ হাজার ১৪ মিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে কম ২৯৪ মিলিয়ন ডলার দক্ষিণ আফ্রিকার। বিশ্ব অর্থনীতিতে এ দেশগুলোর অবদান অনেকটা এ রকমÑ চীন ১৭.৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ১৫.৫ শতাংশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ১৬.৭ শতাংশ। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে রপ্তানি করেছিল ২ হাজার ৫৬০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আর আমদানি করেছিল ২ হাজার ৮০৬ মিলিয়ন ডলার। একই সময় চীন রপ্তানি করেছিল ২ হাজার ২১৩ মিলিয়ন ডলার, আর আমদানি করেছিল ২ হাজার ১৪৮ মিলিয়ন ডলার। সুতরাং এ ধরনের একটি অর্থনৈতিক জোট যখন একটি সম্মেলনে মিলিত হয়, তখন তার গুরুত্ব থাকে অনেক বেশি। তাই সারা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল বুয়েনস আয়ারস সম্মেলনের দিকে। এ সম্মেলনটি আরও অনেক কারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একদিকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ, আজভ (অুড়া) সাগরে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের তিনটি যুদ্ধ জাহাজ জব্দ ও ট্রাম্প কর্তৃক পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকার বাতিল, ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত অগ্রগতির প্রেক্ষিতে এ শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে সংগত কারণেই একটা প্রশ্ন ছিল, এ শীর্ষ সম্মেলন থেকে বিশ্ব কী পেল? এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পুরো বিশ্বটাকেই এক ধরনের বদলে দিতে চাচ্ছেন। অভ্যন্তরীণভাবে তিনি নানা সমস্যার সম্মুখীন। আর আন্তর্জাতিকভাবেও তিনি একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করে চলেছেন। চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে তিনি বড় ধরনের ‘বিতর্কের’ সৃষ্টি করেছিলেন। ফলে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল। জানুয়ারিতে তা কার্যকর হওয়ার কথা। এই শুল্ক ও পাল্টা শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে এক ধরনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ এর সম্ভাবনার জন্ম হয়েছিল। ফলে একটি ট্রাম্প-শি জিন পিং বৈঠক অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। এখন এ বৈঠকটি হলো বটে; কিন্তু তাতে লাভ কী হলো?
বুয়েনস আয়ারসে একটি সমঝোতা হয়েছে বটে; কিন্তু সেই সমঝোতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বুয়েনস আয়ারসে ট্রাম্প ও শি ঐকমত্য পৌঁছেছেন যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আগামী তিন মাস নতুন করে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। জি-২০ সম্মেলনের আগে তৃতীয়বারের মতো চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। চীনের আরও প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হবে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী তিন মাসে যদি শুল্ক কমানোর ব্যাপারে কোনো সমঝোতা না হয়, তখন কী হবে? হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কোনো সমঝোতা না হলে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এখন অবশ্য চীন কৃষি, জ্বালানি, শিল্পসহ বিভিন্ন পণ্যের একটি ‘উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণ কিনতে রাজি হয়েছে। তবে এটা খোলাসা করা হয়নি যে, চীন কী পরিমাণ পণ্য কিনবে। ট্রাম্প সরকার অভিযোগ করে আসছিল, যুক্তরাষ্ট্র তার বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশ উন্মুক্ত করে দিলেও চীনের বাজারে মার্কিন পণ্য প্রবেশ করতে পারছে না। চীনের এ আচরণ ন্যায়সংগত নয়। গত জুলাই থেকেই ২৫০ মিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। চীনও ১১০ বিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে পাল্টা প্রতিশোধ নেয়। চলতি বছর একটা বড় সময়জুড়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। এ নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কর্মকর্তারা দফায় দফায় মিটিং করলেও কোনো সমাধান তাতে হয়নি। এখন বুয়েনস আয়ারসে শীর্ষ বৈঠকের পর ট্রাম্প অনেকটা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেছেন, একটা দুর্দান্ত বৈঠক হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জন্য অনেক ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। আর এর প্রত্যুত্তরে চীনা বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ‘এর ফলে শুধুই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষই উপকৃত হতে চলেছেন তা নয়, এতে ভালো হবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিরও। এখন দেখার পালা, আগামী তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক আলোচনায় অগ্রগতি কতটুকু হয়। এখানে বলা ভালো, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চীনের অনুকূলে। অর্থাৎ চীন যুক্তরাষ্ট্রে বেশি রপ্তানি করে, সেই তুলনায় আমদানি করে কম। পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনে রপ্তানি করেছে ৯৩ হাজার ৩৬৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অথচ আমদানি করেছে চীন থেকে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩১.৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ ৯ মাসে মোট ঘাটতি ৩ লাখ ১ হাজার ৩৬৮.২ মিলিয়ন ডলার। এ ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য যাচ্ছে কম। চীনা পণ্য বেশি আসছে যুক্তরাষ্ট্রে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। ২০১৭ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭৬.৪ মিলিয়ন ডলার (যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি করেছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৯৩.৬ মিলিয়ন, আমদানি করেছিল ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৭০ মিলিয়ন)। ২০১৬ সালেও ঘাটতি ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৬.৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৮.৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১৪ সালের ঘাটতি ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮১৭.৭ মিলিয়ন ডলার (United States Census, Foreign Trade)। ট্রাম্প ব্যক্তিগত জীবনে ব্যবসায়ী। তিনি জানেন, এ বাণিজ্য ঘাটতির অর্থ কী? বাণিজ্য ঘাটতি কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এজন্যই ট্রাম্প চাচ্ছেন চীনে বেশি রপ্তানি বাজার উন্মুক্ত করা, যাতে ঘাটতি কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বড় ঋণ রয়েছে চীনের কাছে। অর্থাৎ চীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিল, নোট আর বন্ড কিনে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করছে। এর পরিমাণ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১.১৫ ট্রিলিয়ন ডলার। মোট ৬.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের মাঝে চীনা ঋণের পরিমাণ শতকরা ১৮ ভাগ। চীনের পাশাপাশি জাপান, ব্রাজিল, আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য থেকেও যুক্তরাষ্ট্র ঋণ নেয়। চীনের পরে জাপানের ঋণ, যার পরিমাণ ১.০৩ ট্রিলিয়ন ডলার, ব্রাজিলের ৩১৭ মিলিয়ন, আয়ারল্যান্ডের ২৯০ মিলিয়ন আর যুক্তরাজ্যের ২৭৬ মিলিয়ন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের চীনের প্রতি নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই এ নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা থাকবে। এটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না। এজন্যই চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধে আমরাও আক্রান্ত হব। ট্রাম্প বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নীতিতেও পরিবর্তন আনতে চান। কিন্তু কাজটি সহজ নয়।
বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন আর বিশ্ব আসরে একক শক্তি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে চীন দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে বিশ্ব আসরে দাঁড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে রাশিয়াও বিশ্ব আসরে আগের সোভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থানে যেতে চায়। এমন এক পরিস্থিতিতে চীন-রাশিয়া এক ধরনের ঐক্য গড়ে তুলছে। এ ঐক্য যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে চীনের সাহায্য ও সহযোগিতার। উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ব্যবহার করেছিল। সিঙ্গাপুরে ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার পেছনে চীনের সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। কিন্তু বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব ছাড়াও দক্ষিণ চীন সাগর তথা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে কর্তৃত্বের প্রশ্নে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে দ্বন্দ্ব আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার নৌকর্তৃত্ব বাড়িয়ে চীনকে ঘিরে ফেলার একটি স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছেÑ এমন কথাও বলেন কেউ কেউ। ফলে একুশ শতকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন দিকে যায়, সেদিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের।
আপাতত ৯০ দিনের জন্য কিছুটা স্বস্তি এসেছে বটে; কিন্তু সমস্যা আছে অনেক। সাইবার নিরাপত্তা কিংবা মেধাস্বত্ব আইন চীন মানছে না, এ ধরনের অভিযোগ মার্কিন প্রশাসনের অনেক দিনের। এর কী হবে? বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উরংঢ়ঁঃব-ংবঃঃষবসবহঃ প্রক্রিয়া নিয়ে ট্রাম্পের আপত্তি রয়েছে। যদি বাণিজ্য বিরোধ নিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা Dispute-settlement-এর মাধ্যমে এর সমাধান করে থাকে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া খুবই দীর্ঘস্থায়ী। আর এজন্যই ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আইনে পরিবর্তনের কথা বলেছেন। ফলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলই। সুতরাং একটা সমঝোতা হয়েছে বটে; কিন্তু তা রেখে গেছে নানা প্রশ্ন। এজন্যই যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ম্যাগাজিন The Economist মন্তব্য করেছে এভাবে After the weekends G-20 truce, businesses were quick to breath right of relief. But this war is not over yet. এটাই হচ্ছে মোদ্দাকথা আপাতত স্বস্তি এসেছে; কিন্তু ‘যুদ্ধ’ এখনও শেষ হয়নি। হ
বুয়েনস আয়ারসে একটি সমঝোতা হয়েছে বটে; কিন্তু সেই সমঝোতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বুয়েনস আয়ারসে ট্রাম্প ও শি ঐকমত্য পৌঁছেছেন যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আগামী তিন মাস নতুন করে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। জি-২০ সম্মেলনের আগে তৃতীয়বারের মতো চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। চীনের আরও প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হবে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী তিন মাসে যদি শুল্ক কমানোর ব্যাপারে কোনো সমঝোতা না হয়, তখন কী হবে? হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কোনো সমঝোতা না হলে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হবে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এখন অবশ্য চীন কৃষি, জ্বালানি, শিল্পসহ বিভিন্ন পণ্যের একটি ‘উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণ কিনতে রাজি হয়েছে। তবে এটা খোলাসা করা হয়নি যে, চীন কী পরিমাণ পণ্য কিনবে। ট্রাম্প সরকার অভিযোগ করে আসছিল, যুক্তরাষ্ট্র তার বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশ উন্মুক্ত করে দিলেও চীনের বাজারে মার্কিন পণ্য প্রবেশ করতে পারছে না। চীনের এ আচরণ ন্যায়সংগত নয়। গত জুলাই থেকেই ২৫০ মিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। চীনও ১১০ বিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে পাল্টা প্রতিশোধ নেয়। চলতি বছর একটা বড় সময়জুড়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। এ নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কর্মকর্তারা দফায় দফায় মিটিং করলেও কোনো সমাধান তাতে হয়নি। এখন বুয়েনস আয়ারসে শীর্ষ বৈঠকের পর ট্রাম্প অনেকটা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেছেন, একটা দুর্দান্ত বৈঠক হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জন্য অনেক ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। আর এর প্রত্যুত্তরে চীনা বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, ‘এর ফলে শুধুই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষই উপকৃত হতে চলেছেন তা নয়, এতে ভালো হবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিরও। এখন দেখার পালা, আগামী তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক আলোচনায় অগ্রগতি কতটুকু হয়। এখানে বলা ভালো, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চীনের অনুকূলে। অর্থাৎ চীন যুক্তরাষ্ট্রে বেশি রপ্তানি করে, সেই তুলনায় আমদানি করে কম। পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীনে রপ্তানি করেছে ৯৩ হাজার ৩৬৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অথচ আমদানি করেছে চীন থেকে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩১.৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ ৯ মাসে মোট ঘাটতি ৩ লাখ ১ হাজার ৩৬৮.২ মিলিয়ন ডলার। এ ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য যাচ্ছে কম। চীনা পণ্য বেশি আসছে যুক্তরাষ্ট্রে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। ২০১৭ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭৬.৪ মিলিয়ন ডলার (যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি করেছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৯৩.৬ মিলিয়ন, আমদানি করেছিল ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৭০ মিলিয়ন)। ২০১৬ সালেও ঘাটতি ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৬.৫ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৮.৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১৪ সালের ঘাটতি ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮১৭.৭ মিলিয়ন ডলার (United States Census, Foreign Trade)। ট্রাম্প ব্যক্তিগত জীবনে ব্যবসায়ী। তিনি জানেন, এ বাণিজ্য ঘাটতির অর্থ কী? বাণিজ্য ঘাটতি কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এজন্যই ট্রাম্প চাচ্ছেন চীনে বেশি রপ্তানি বাজার উন্মুক্ত করা, যাতে ঘাটতি কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বড় ঋণ রয়েছে চীনের কাছে। অর্থাৎ চীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিল, নোট আর বন্ড কিনে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করছে। এর পরিমাণ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১.১৫ ট্রিলিয়ন ডলার। মোট ৬.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের মাঝে চীনা ঋণের পরিমাণ শতকরা ১৮ ভাগ। চীনের পাশাপাশি জাপান, ব্রাজিল, আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য থেকেও যুক্তরাষ্ট্র ঋণ নেয়। চীনের পরে জাপানের ঋণ, যার পরিমাণ ১.০৩ ট্রিলিয়ন ডলার, ব্রাজিলের ৩১৭ মিলিয়ন, আয়ারল্যান্ডের ২৯০ মিলিয়ন আর যুক্তরাজ্যের ২৭৬ মিলিয়ন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের চীনের প্রতি নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই এ নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা থাকবে। এটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না। এজন্যই চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধে আমরাও আক্রান্ত হব। ট্রাম্প বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নীতিতেও পরিবর্তন আনতে চান। কিন্তু কাজটি সহজ নয়।
বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন আর বিশ্ব আসরে একক শক্তি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে চীন দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে বিশ্ব আসরে দাঁড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে রাশিয়াও বিশ্ব আসরে আগের সোভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থানে যেতে চায়। এমন এক পরিস্থিতিতে চীন-রাশিয়া এক ধরনের ঐক্য গড়ে তুলছে। এ ঐক্য যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে চীনের সাহায্য ও সহযোগিতার। উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ব্যবহার করেছিল। সিঙ্গাপুরে ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার পেছনে চীনের সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। কিন্তু বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব ছাড়াও দক্ষিণ চীন সাগর তথা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে কর্তৃত্বের প্রশ্নে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে দ্বন্দ্ব আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার নৌকর্তৃত্ব বাড়িয়ে চীনকে ঘিরে ফেলার একটি স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছেÑ এমন কথাও বলেন কেউ কেউ। ফলে একুশ শতকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন দিকে যায়, সেদিকে দৃষ্টি থাকবে অনেকের।
আপাতত ৯০ দিনের জন্য কিছুটা স্বস্তি এসেছে বটে; কিন্তু সমস্যা আছে অনেক। সাইবার নিরাপত্তা কিংবা মেধাস্বত্ব আইন চীন মানছে না, এ ধরনের অভিযোগ মার্কিন প্রশাসনের অনেক দিনের। এর কী হবে? বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উরংঢ়ঁঃব-ংবঃঃষবসবহঃ প্রক্রিয়া নিয়ে ট্রাম্পের আপত্তি রয়েছে। যদি বাণিজ্য বিরোধ নিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা Dispute-settlement-এর মাধ্যমে এর সমাধান করে থাকে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া খুবই দীর্ঘস্থায়ী। আর এজন্যই ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আইনে পরিবর্তনের কথা বলেছেন। ফলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলই। সুতরাং একটা সমঝোতা হয়েছে বটে; কিন্তু তা রেখে গেছে নানা প্রশ্ন। এজন্যই যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ম্যাগাজিন The Economist মন্তব্য করেছে এভাবে After the weekends G-20 truce, businesses were quick to breath right of relief. But this war is not over yet. এটাই হচ্ছে মোদ্দাকথা আপাতত স্বস্তি এসেছে; কিন্তু ‘যুদ্ধ’ এখনও শেষ হয়নি। হ
অসাধারণ।
ReplyDelete