শুধু প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ানোই নয়, বরং ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য
নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে একধরনের বিবাদে জড়িয়ে গেছে। অনেক ইউরোপিয়ান
ইউনিয়নের পণ্যের ওপর (ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি) যুক্তরাষ্ট্র
অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে এটা নিয়ে একধরনের বিবাদ এরই মধ্যে তৈরি
হয়েছে ইউরোপে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এই সফরে ব্রিটেনেও গিয়েছিলেন।
ব্রিটেনে তিনি বড় ধরনের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তার বাণিজ্য নীতি ও অভিবাসন
নীতি তাকে ব্রিটেনে বিতর্কিত করেছে। অনেকের মনে থাকার কথা, বেশকিছু দিন আগে
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প লন্ডনে অনাকাক্সিক্ষত।
সাদিক খানের এই বক্তব্যের জন্য কি না জানি না, লন্ডনে ব্যাপক
নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে ট্রাম্পের এই ইউরোপিয়ান দেশগুলো
সফরের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে আগামীকালের পুতিনের সঙ্গে তার শীর্ষ বৈঠক। এই
বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা বিশ্ব। সিঙ্গাপুরে কিম জং উনের সঙ্গে শীর্ষ
বৈঠকের পর হেলসিংকি বৈঠকটি (ট্রাম্প-পুতিন) যে-কোনো বিবেচনায় যথেষ্ট
গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বিভিন্ন ইস্যুতে দেশ দুটি পরস্পরবিরোধী একটা অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (২০১৬) রাশিয়ার পরোক্ষ হস্তক্ষেপ, সিরিয়ায় আসাদের পক্ষাবলম্বন ইত্যাদি কারণে দেশ দুটির মধ্যে বড় ধরনের আস্থাহীনতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ক্ষুদ্র আকারের পরমাণু বোমা তৈরি করার, যা কি না বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দেওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ব্রিটেন প্রথমে ২৩ রুশ কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল। অভিযোগ ছিল, ব্রিটেনে বসবাসরত একসময়ের রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য সার্গেই স্ক্রিপালকে হত্যার! স্ক্রিপাল ছিলেন ডবল এজেন্ট। তিনি রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করলেও একই সঙ্গে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকেও তথ্য সরবরাহ করতেন। তাই স্ক্রিপালকে যখন নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালানো হয়, তখন অভিযোগ ওঠে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। তারা সবাই মিলে ১৩৯ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া বহিষ্কার করে ১৫০ পশ্চিমা কূটনীতিককে, আর মাঝে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনের কূটনীতিকরাও ছিলেন। এই বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে নতুন করে দুই দেশের মাঝে (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, এর মধ্য দিয়ে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল আজ থেকে ২৭ বছর আগে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। একটা সময় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ইউরোপে প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তির মাঝে একধরনের ‘যুদ্ধের’ সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল। দীর্ঘ সময় ওই পরিস্থিতি বহাল ছিল, যা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যেখানে দুই পরাশক্তির কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এক্ষেত্রে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১২২ দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। এখন ৫০টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করলেই ৯০ দিন পর এটি কার্যকর হবে। তবে এই চুক্তি বয়কট করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে সাত দশকের প্রচেষ্টার পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে বৈশ্বিক ওই চুক্তিটি হয়েছিল। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ দেশের আলোচকরা ১০ পাতার চুক্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন। চুক্তির পক্ষে পড়েছিল ১২২টি ভোট। একটি ভোট পড়েছে বিপক্ষে। দেশটি হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। সিঙ্গাপুর ভোটদানে বিরত ছিল। পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ছিল না। এখন ট্রাম্প-পুতিন আলোচনায় এ প্রশ্নটি উঠবে। ঠড়ী হবংি আমাদের জানাচ্ছে, (৫ জুলাই) শীর্ষ বৈঠক ঘবি ঝঃধৎঃ চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণে দুপক্ষ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ২০১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ওই চুক্তিতে দুপক্ষের পারমাণবিক অস্ত্র পরিদর্শনের সুযোগ ছিল। যদিও ওই চুক্তিটি ২০২১ সাল পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে। তবে তা আরও ৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ আছে। কিন্তু ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, ওই চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে ছিল এবং তিনি আর তা নবায়ন করবেন না। ফলে ট্রাম্প-পুতিন আলোচনায় চুক্তি নিয়ে দুপক্ষ আদৌ কোনো সমঝোতায় উপনীত হবে কি না, সে প্রশ্ন থাকলই।
পারমাণবিক অস্ত্রের পাশাপাশি সিরিয়া ও ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একধরনের মতপার্থক্য রয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণেই আসাদ সরকার টিকে যায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের মনঃপূত নয়। যুক্তরাষ্ট্র আসাদ সরকারের পতন চেয়ে আসছে এবং আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের সমর্থন করছে। এর বাইরে রয়েছে ইউক্রেন পরিস্থিতি। ইউক্রেন নিয়ে দুপক্ষের মাঝে একধরনের ঠান্ডা লড়াই চলছে। ইউক্রেনে ইয়ানোকোভিচ সরকারের পতন ঘটেছিল ২০১৪ সালে। অভিযোগ আছে, ইয়ানোকোভিচ, যিনি ছিলেন মস্কোঘেঁষা, তার পতন তথা উৎখাতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় ভূমিকা ছিল। রাশিয়া এখন পূর্ব ইউক্রেনে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করছে এবং উইক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট পেট্রো প্রোসেনকাকে উৎখাতের উদ্যোগ নিতে পারে। একই সঙ্গে চীন-রাশিয়া সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি ট্রাম্পের জন্য চিন্তার কারণ। সার্গেই স্ক্রিপালের হত্যার ঘটনায় পশ্চিমাবিশ্ব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, চীন তার সমালোচনা করেছিল। চীন কোনো মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেনি সত্য; কিন্তু নৈতিকভাবে রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।
রুশ-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি কারও জন্যই কোনো ভালো খবর নয়। প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সুতরাং পুতিনকে আস্থায় নিয়েই বিশ্বে স্থিতিশীলতা আসবে। পারমাণবিক ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। আস্থাহীনতার সম্পর্ক বৃদ্ধি পেলে তা বিশ্বে উত্তেজনা ছড়াবে মাত্র। স্নায়ুযুদ্ধ বিশ্বে কোনো মঙ্গল ডেকে আনেনি। সুতরাং নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হলে তা-ও কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্রাম্পকে নিয়ে। তিনি একধরনের আগ্রাসী নীতি নিয়ে চলতে পছন্দ করেন। ট্রাম্প-উন (উত্তর কোরিয়ার নেতা) শীর্ষ বৈঠক আয়োজনে চীনের একটি বড় ভূমিকা থাকলেও চীনের সঙ্গে একধরনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধে’ তিনি জড়িয়ে গেছেন। কানাডা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গেও তিনি একই ধরনের আচরণ করছেন। এক্ষেত্রে তিনি খুব স্বাভাবিকভাবেই মস্কোকে কাছে পেতে চাইবেন। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উদ্যোগ যদি তিনি না নেন, যদি মস্কোর সঙ্গে একধরনের সহাবস্থানে না যান (সিরিয়া, ইউক্রেন ও পারমাণবিক অস্ত্র প্রশ্নে), তাহলে দু’পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বাড়বেই। এর ফলে চীন-রাশিয়া ঐক্য আরও শক্তিশালী হবে এবং স্নায়ুযুদ্ধ-২ এর সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
Daily Alokito Bangladesh
15.07.2018
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বিভিন্ন ইস্যুতে দেশ দুটি পরস্পরবিরোধী একটা অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (২০১৬) রাশিয়ার পরোক্ষ হস্তক্ষেপ, সিরিয়ায় আসাদের পক্ষাবলম্বন ইত্যাদি কারণে দেশ দুটির মধ্যে বড় ধরনের আস্থাহীনতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ক্ষুদ্র আকারের পরমাণু বোমা তৈরি করার, যা কি না বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দেওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ব্রিটেন প্রথমে ২৩ রুশ কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল। অভিযোগ ছিল, ব্রিটেনে বসবাসরত একসময়ের রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য সার্গেই স্ক্রিপালকে হত্যার! স্ক্রিপাল ছিলেন ডবল এজেন্ট। তিনি রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করলেও একই সঙ্গে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকেও তথ্য সরবরাহ করতেন। তাই স্ক্রিপালকে যখন নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করে হত্যা করার প্রচেষ্টা চালানো হয়, তখন অভিযোগ ওঠে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে। ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। তারা সবাই মিলে ১৩৯ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া বহিষ্কার করে ১৫০ পশ্চিমা কূটনীতিককে, আর মাঝে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনের কূটনীতিকরাও ছিলেন। এই বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে নতুন করে দুই দেশের মাঝে (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, এর মধ্য দিয়ে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল আজ থেকে ২৭ বছর আগে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। একটা সময় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ইউরোপে প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তির মাঝে একধরনের ‘যুদ্ধের’ সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল। দীর্ঘ সময় ওই পরিস্থিতি বহাল ছিল, যা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যেখানে দুই পরাশক্তির কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এক্ষেত্রে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১২২ দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। এখন ৫০টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করলেই ৯০ দিন পর এটি কার্যকর হবে। তবে এই চুক্তি বয়কট করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে সাত দশকের প্রচেষ্টার পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে বৈশ্বিক ওই চুক্তিটি হয়েছিল। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ দেশের আলোচকরা ১০ পাতার চুক্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন। চুক্তির পক্ষে পড়েছিল ১২২টি ভোট। একটি ভোট পড়েছে বিপক্ষে। দেশটি হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। সিঙ্গাপুর ভোটদানে বিরত ছিল। পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ছিল না। এখন ট্রাম্প-পুতিন আলোচনায় এ প্রশ্নটি উঠবে। ঠড়ী হবংি আমাদের জানাচ্ছে, (৫ জুলাই) শীর্ষ বৈঠক ঘবি ঝঃধৎঃ চুক্তি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণে দুপক্ষ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ২০১১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ওই চুক্তিতে দুপক্ষের পারমাণবিক অস্ত্র পরিদর্শনের সুযোগ ছিল। যদিও ওই চুক্তিটি ২০২১ সাল পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে। তবে তা আরও ৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ আছে। কিন্তু ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, ওই চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে ছিল এবং তিনি আর তা নবায়ন করবেন না। ফলে ট্রাম্প-পুতিন আলোচনায় চুক্তি নিয়ে দুপক্ষ আদৌ কোনো সমঝোতায় উপনীত হবে কি না, সে প্রশ্ন থাকলই।
পারমাণবিক অস্ত্রের পাশাপাশি সিরিয়া ও ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একধরনের মতপার্থক্য রয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণেই আসাদ সরকার টিকে যায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের মনঃপূত নয়। যুক্তরাষ্ট্র আসাদ সরকারের পতন চেয়ে আসছে এবং আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের সমর্থন করছে। এর বাইরে রয়েছে ইউক্রেন পরিস্থিতি। ইউক্রেন নিয়ে দুপক্ষের মাঝে একধরনের ঠান্ডা লড়াই চলছে। ইউক্রেনে ইয়ানোকোভিচ সরকারের পতন ঘটেছিল ২০১৪ সালে। অভিযোগ আছে, ইয়ানোকোভিচ, যিনি ছিলেন মস্কোঘেঁষা, তার পতন তথা উৎখাতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় ভূমিকা ছিল। রাশিয়া এখন পূর্ব ইউক্রেনে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করছে এবং উইক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট পেট্রো প্রোসেনকাকে উৎখাতের উদ্যোগ নিতে পারে। একই সঙ্গে চীন-রাশিয়া সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি ট্রাম্পের জন্য চিন্তার কারণ। সার্গেই স্ক্রিপালের হত্যার ঘটনায় পশ্চিমাবিশ্ব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, চীন তার সমালোচনা করেছিল। চীন কোনো মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেনি সত্য; কিন্তু নৈতিকভাবে রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল।
রুশ-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি কারও জন্যই কোনো ভালো খবর নয়। প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্ষমতায় থাকবেন ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সুতরাং পুতিনকে আস্থায় নিয়েই বিশ্বে স্থিতিশীলতা আসবে। পারমাণবিক ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। আস্থাহীনতার সম্পর্ক বৃদ্ধি পেলে তা বিশ্বে উত্তেজনা ছড়াবে মাত্র। স্নায়ুযুদ্ধ বিশ্বে কোনো মঙ্গল ডেকে আনেনি। সুতরাং নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হলে তা-ও কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্রাম্পকে নিয়ে। তিনি একধরনের আগ্রাসী নীতি নিয়ে চলতে পছন্দ করেন। ট্রাম্প-উন (উত্তর কোরিয়ার নেতা) শীর্ষ বৈঠক আয়োজনে চীনের একটি বড় ভূমিকা থাকলেও চীনের সঙ্গে একধরনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধে’ তিনি জড়িয়ে গেছেন। কানাডা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গেও তিনি একই ধরনের আচরণ করছেন। এক্ষেত্রে তিনি খুব স্বাভাবিকভাবেই মস্কোকে কাছে পেতে চাইবেন। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উদ্যোগ যদি তিনি না নেন, যদি মস্কোর সঙ্গে একধরনের সহাবস্থানে না যান (সিরিয়া, ইউক্রেন ও পারমাণবিক অস্ত্র প্রশ্নে), তাহলে দু’পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বাড়বেই। এর ফলে চীন-রাশিয়া ঐক্য আরও শক্তিশালী হবে এবং স্নায়ুযুদ্ধ-২ এর সম্ভাবনা আরও বাড়বে।
Daily Alokito Bangladesh
15.07.2018
0 comments:
Post a Comment