জাতিসংঘের
মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের
বাংলাদেশ সফরের পর যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে এই সফরে
বাংলাদেশ কী পেল? এই দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশে এসেছিলেন
রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিজ চোখে দেখার জন্য। তাঁরা দুজনই একসঙ্গে রোহিঙ্গাদের
অবস্থা নিজ চোখে দেখেছেন। কথা বলেছেন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। গুতেরেস নিজে
বিশ্ব কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ সৃষ্টির আহ্বান
জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অধিকার দিতে, তাদের
স্বাধীনভাবে নিজ দেশে চলাফেরার সুযোগ দিতে, তাদের সম্পত্তির অধিকার দিতে,
সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ দিতে হবে। তাঁর মতে,
রোহিঙ্গারা এমন একটি সম্প্রদায়, যারা বিশ্বে বৈষম্যের শিকার। সংবাদ
সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। একই সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট
জিম ইয়ং কিম রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ৪৮ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার কথাও
ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের বক্তব্য রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে
ফেরত যেতে আদৌ কোনো সহায়তা করবে কি না? এরই মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিল,
তার অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক নয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্পষ্টতই কয়েকটি বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এক. রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি কিভাবে নিশ্চিত হবে এখন? দুই. রোহিঙ্গারা নিজ দেশে কতটুকু নিরাপদ? তিন. রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে পারবে কি না? চার. রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তাদের জীবন-জীবিকার কী হবে? মিয়ানমারের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক ও পরবর্তী সময়ে ‘বাস্তুচ্যুত রাখাইনের বাসিন্দাদের প্রত্যাবাসন’ সংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাতে নাগরিকত্বের বিষয়টি আদৌ নেই। মিয়ানমার এদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। রোহিঙ্গা নামেও আপত্তি রয়েছে তাদের। এমনকি কফি আনান কমিশনের রিপোর্টেও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। মিয়ানমার এদের ‘বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ করে!
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় ও ডকুমেন্টে কোথাও রোহিঙ্গা শব্দটি নেই। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকলেও নাগরিকত্বের প্রশ্নে তাদের অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছে। এসব কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি উঠেছে, তা হচ্ছে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা আদৌ ফেরত যেতে চাইবে কি না?
মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের এটা একটা বড় দুর্বলতা। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি। দ্বিতীয় প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ—নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কিভাবে? নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। অনেকে তার স্ত্রী, স্বামী, সন্তানকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা করতে দেখেছে। অনেক দেরিতে হলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীপ্রধান ‘সীমিত হত্যাকাণ্ডের’ কথা স্বীকার করেছেন। তাদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। এখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের নিজ বাসভূম থেকে উত্খাত করেছে, রোহিঙ্গারা তাদের বিশ্বাস করবে না। এরই মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁরা সুস্পষ্ট করেই বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। রোহিঙ্গারা এ ধরনের বক্তব্যে উৎসাহিত হবে নিঃসন্দেহে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে না। এ ধরনের বক্তব্য রোহিঙ্গাদের এ দেশে থেকে যেতে উৎসাহ জোগাতে পারে। তৃতীয় প্রশ্নটিকেও আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। রোহিঙ্গারা কি আদৌ নিজ বাসভূমে ফেরত যেতে পারবে? এর সরাসরি জবাব হচ্ছে ‘না’। যে চুক্তি হয়েছে, তাতে মিয়ানমার দুটি ক্যাম্প করবে। প্রথমটি অভ্যর্থনা ক্যাম্প, দ্বিতীয়টি অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্প। অর্থাৎ যারা বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবে, তাদের প্রথমে অভ্যর্থনা ক্যাম্পে রাখা হবে। এরপর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। এখানেই সমস্যাটা তৈরি হবে। এই ক্যাম্পে তারা বছরের পর বছর থেকে যেতে বাধ্য হবে। এটা এক ধরনের ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’। এখানে রেখেই তথাকথিত যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি হবে।
শঙ্কা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ভাগ্য ফিলিস্তিনিদের মতো হতে পারে! পাঠক স্মরণ করতে পারেন, ফিলিস্তিনিরা নিজ বাসভূম থেকে উত্খাত হয়ে বছরের পর বছর, জেনারেশনের পর জেনারেশন থেকে যাচ্ছে ক্যাম্পে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পাঠক, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ যুগে ‘হোমল্যান্ড’গুলোর কথা স্মরণ করতে পারেন। বর্ণবাদ যুগের অবসানের আগে কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে সাতটি হোমল্যান্ডে রাখা হয়েছিল। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের অবস্থা অনেকটা হোমল্যান্ডগুলোতে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী অথবা ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর মতো হতে পারে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নীতি এটাই—রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করা। আন্তর্জাতিক ‘চাপ’-এর কারণে তারা রোহিঙ্গাদের নিতে চাচ্ছে বটে; কিন্তু বাস্তবতা বলে তারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করে নিতে চাইছে না। উপরন্তু তারা কোনো দিনই তাদের নিজ নিজ বসতবাড়িতে ফেরত নেবে না। কেননা ওই সব বসতবাড়ির আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। রাখাইনে কয়েক শ গ্রামে রোহিঙ্গাদের বসতবাটি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সব গ্রাম এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘লিজ’ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে থাকতে পারছে না। রোহিঙ্গারা কোনো মতেই অন্যত্র থাকতে চাইবে না। বংশপরম্পরায় তারা নিজ বাসভূমে বসবাস করে আসছিল। জমিজমা চাষ করে আসছিল। কেউ কেউ ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। এখন তাদের যদি অন্যত্র রাখা হয়, তারা তা মানতে চাইবে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এটা একটা অন্যতম সমস্যা। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে এসব প্রশ্নের জবাব থাকা বাঞ্ছনীয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ খুব শক্ত অবস্থানে গেছে, এটা আমার মনে হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং পরবর্তী সময়ের কার্যক্রম বলে দেয়, বাংলাদেশ একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার কোনো কৌশল অবলম্বন করেনি। জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হয়েছে। জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান একটি ঘৃণিত অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। এরই মধ্যে বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কঙ্গো, সাইবেরিয়া কিংবা রুয়ান্ডায় যাঁরা জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে জড়িত ছিলেন, সেই সেনা কর্মকর্তাদের বিচার হয়েছে। রায়ও দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সেনা কর্মকর্তাকে মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ তাঁদের বিচারের দাবি করতে পারত। তাহলে অন্তত মিয়ানমার সরকার একটা ‘চাপ’-এর মুখে থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একটি ‘সফট ডিপ্লোম্যাসি’র আশ্রয় নিয়েছে। ২৫ আগস্টের (২০১৭) রোহিঙ্গা গণহত্যা ও রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও বাংলাদেশ নিকট-প্রতিবেশী, বিশেষ করে চীন ও ভারতের ‘সাহায্য’ নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার ব্যাপারে বড় কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ অব্দি চীন নিজ উদ্যোগে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সেই প্রস্তাব অনুসরণ করেই মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। আগস্টের পর থেকে সংকটের গভীরতা বাড়লেও, অতিসম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনে গিয়েছিলেন। তিনি রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেননি। এমনকি ওই সব দেশের সাহায্যও চাননি। অথচ প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক ভালো। এ দেশগুলোকে দিয়ে আমরা মিয়ানমারের ওপর ‘প্রভাব’ খাটাতে পারতাম।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পক্ষে। কিছুদিন আগে ঢাকা ঘুরে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে। তিনিও বলেছেন, ভারত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। কিন্তু জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উরসুলা মুয়েলার গেল এপ্রিলে বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি অনুকূল নয়। তাঁর এই বক্তব্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে ভিন্ন মেসেজ পৌঁছে দিতে পারে। তারা ‘জোর করে’ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চাইবে না। এমনকি বাংলাদেশ যেখানে আট হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল, সেখানে মিয়ানমার জানিয়েছে, তারা মাত্র ৩৮৩ জনকে গ্রহণ করবে। এর অর্থ পরিষ্কার, মিয়ানমার অন্য রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। তাহলে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ কোথায় আশ্রয় দেবে? ভাসানচরে কিছু বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার স্থান হবে বটে; কিন্তু বাকিরা থেকে যাবে বৃহত্তর কক্সবাজার এলাকায়। রেডক্রস ও জাতিসংঘের কর্মকর্তার বক্তব্য প্রকারান্তরে রোহিঙ্গাদের উৎসাহ জোগাতে পারে বাংলাদেশে থেকে যেতে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী উ উইন মাইয়াত আই। প্রথমে তিনি কুতুপালং ক্যাম্পে যান। রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করে এরপর ঢাকায় এসে দেখা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। রোহিঙ্গাদের তিনি ‘সব কিছু ভুলে’ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বলেছেন, তাদের জন্য নতুন নতুন গ্রাম তৈরি করা হবে। রোহিঙ্গাদের NVC বা National Varification Card দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। কিন্তু এই কার্ড নাগরিকত্বের পরিচয় বহন করে না। ফলে প্রশ্ন থাকলই। রোহিঙ্গারা শেষ অব্দি নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে কি না?
গুতেরেস ও কিম বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। গুতেরেস নিজে এখন সাধারণ পরিষদে একটি রিপোর্ট দেবেন। তিনি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে ‘চাপ’ দেওয়ার কথা বলেছেন বটে; কিন্তু সেটি কিভাবে সম্ভব? জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিকার অর্থেই কঠিন হবে। ‘চাপ’ প্রয়োগ করার একটি পথ হচ্ছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ। চীন ও রাশিয়া এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইবে না। উত্তর কোরিয়া ও ইরানের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়েছিল, মিয়ানমারের ক্ষেত্রে তেমনটি না-ও হতে পারে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত সমর্থন করবে বলেও মনে হয় না। মিয়ানমারে চীন ও রাশিয়ার যেমনি ‘স্বার্থ’ রয়েছে, ঠিক তেমনি যুক্তরাষ্ট্রেরও স্বার্থ রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা দু-দুবার মিয়ানমার সফর করেছিলেন। মার্কিন ব্যবসায়ীরা এখন মিয়ানমারে তৎপর। তারা কোনো অবস্থাতেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের পক্ষে থাকবে না। তারা বিশাল বিনিয়োগ নিয়ে সেখানে যাচ্ছে। চীন রাখাইন উপকূলে গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলন করছে এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে তা নিয়ে যাচ্ছে ইউনান প্রদেশে। সুতরাং চীন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যাতে মিয়ানমারের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার বিষয়টি একটি প্রশ্নের মধ্যে থেকে যেতে পারে। তবে নিঃসন্দেহে গুতেরেস ও কিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে। আমাদের এখন বিশ্ব আসরে দূতিয়ালি বাড়াতে হবে। শীর্ষস্থানীয় মিয়ানমারের জেনারেলদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের দাবি জানাতে হবে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। মিয়ানমার যে কালক্ষেপণ করছে, তা বিশ্ব আসরে তুলে ধরতে হবে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসছে। এই অধিবেশনে বাংলাদেশ একটি ‘শক্ত’ অবস্থানে যেতে পারে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমাদের অবস্থান এখন অনেক শক্তিশালী। এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিক আসরে একটি শক্ত কূটনৈতিক অবস্থান তৈরি করা।
Daily Kalerkontho
08.07.2018
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্পষ্টতই কয়েকটি বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এক. রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি কিভাবে নিশ্চিত হবে এখন? দুই. রোহিঙ্গারা নিজ দেশে কতটুকু নিরাপদ? তিন. রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে পারবে কি না? চার. রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তাদের জীবন-জীবিকার কী হবে? মিয়ানমারের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক ও পরবর্তী সময়ে ‘বাস্তুচ্যুত রাখাইনের বাসিন্দাদের প্রত্যাবাসন’ সংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাতে নাগরিকত্বের বিষয়টি আদৌ নেই। মিয়ানমার এদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। রোহিঙ্গা নামেও আপত্তি রয়েছে তাদের। এমনকি কফি আনান কমিশনের রিপোর্টেও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। মিয়ানমার এদের ‘বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ করে!
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় ও ডকুমেন্টে কোথাও রোহিঙ্গা শব্দটি নেই। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকলেও নাগরিকত্বের প্রশ্নে তাদের অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছে। এসব কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি উঠেছে, তা হচ্ছে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া রোহিঙ্গারা আদৌ ফেরত যেতে চাইবে কি না?
মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের এটা একটা বড় দুর্বলতা। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি। দ্বিতীয় প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ—নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কিভাবে? নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। অনেকে তার স্ত্রী, স্বামী, সন্তানকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা করতে দেখেছে। অনেক দেরিতে হলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীপ্রধান ‘সীমিত হত্যাকাণ্ডের’ কথা স্বীকার করেছেন। তাদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। এখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের নিজ বাসভূম থেকে উত্খাত করেছে, রোহিঙ্গারা তাদের বিশ্বাস করবে না। এরই মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁরা সুস্পষ্ট করেই বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। রোহিঙ্গারা এ ধরনের বক্তব্যে উৎসাহিত হবে নিঃসন্দেহে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে না। এ ধরনের বক্তব্য রোহিঙ্গাদের এ দেশে থেকে যেতে উৎসাহ জোগাতে পারে। তৃতীয় প্রশ্নটিকেও আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। রোহিঙ্গারা কি আদৌ নিজ বাসভূমে ফেরত যেতে পারবে? এর সরাসরি জবাব হচ্ছে ‘না’। যে চুক্তি হয়েছে, তাতে মিয়ানমার দুটি ক্যাম্প করবে। প্রথমটি অভ্যর্থনা ক্যাম্প, দ্বিতীয়টি অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্প। অর্থাৎ যারা বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবে, তাদের প্রথমে অভ্যর্থনা ক্যাম্পে রাখা হবে। এরপর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। এখানেই সমস্যাটা তৈরি হবে। এই ক্যাম্পে তারা বছরের পর বছর থেকে যেতে বাধ্য হবে। এটা এক ধরনের ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’। এখানে রেখেই তথাকথিত যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি হবে।
শঙ্কা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ভাগ্য ফিলিস্তিনিদের মতো হতে পারে! পাঠক স্মরণ করতে পারেন, ফিলিস্তিনিরা নিজ বাসভূম থেকে উত্খাত হয়ে বছরের পর বছর, জেনারেশনের পর জেনারেশন থেকে যাচ্ছে ক্যাম্পে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পাঠক, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ যুগে ‘হোমল্যান্ড’গুলোর কথা স্মরণ করতে পারেন। বর্ণবাদ যুগের অবসানের আগে কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে সাতটি হোমল্যান্ডে রাখা হয়েছিল। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের অবস্থা অনেকটা হোমল্যান্ডগুলোতে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী অথবা ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর মতো হতে পারে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নীতি এটাই—রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করা। আন্তর্জাতিক ‘চাপ’-এর কারণে তারা রোহিঙ্গাদের নিতে চাচ্ছে বটে; কিন্তু বাস্তবতা বলে তারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করে নিতে চাইছে না। উপরন্তু তারা কোনো দিনই তাদের নিজ নিজ বসতবাড়িতে ফেরত নেবে না। কেননা ওই সব বসতবাড়ির আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। রাখাইনে কয়েক শ গ্রামে রোহিঙ্গাদের বসতবাটি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সব গ্রাম এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘লিজ’ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে থাকতে পারছে না। রোহিঙ্গারা কোনো মতেই অন্যত্র থাকতে চাইবে না। বংশপরম্পরায় তারা নিজ বাসভূমে বসবাস করে আসছিল। জমিজমা চাষ করে আসছিল। কেউ কেউ ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। এখন তাদের যদি অন্যত্র রাখা হয়, তারা তা মানতে চাইবে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এটা একটা অন্যতম সমস্যা। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে এসব প্রশ্নের জবাব থাকা বাঞ্ছনীয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ খুব শক্ত অবস্থানে গেছে, এটা আমার মনে হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং পরবর্তী সময়ের কার্যক্রম বলে দেয়, বাংলাদেশ একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার কোনো কৌশল অবলম্বন করেনি। জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হয়েছে। জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান একটি ঘৃণিত অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। এরই মধ্যে বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কঙ্গো, সাইবেরিয়া কিংবা রুয়ান্ডায় যাঁরা জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে জড়িত ছিলেন, সেই সেনা কর্মকর্তাদের বিচার হয়েছে। রায়ও দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সেনা কর্মকর্তাকে মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ তাঁদের বিচারের দাবি করতে পারত। তাহলে অন্তত মিয়ানমার সরকার একটা ‘চাপ’-এর মুখে থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একটি ‘সফট ডিপ্লোম্যাসি’র আশ্রয় নিয়েছে। ২৫ আগস্টের (২০১৭) রোহিঙ্গা গণহত্যা ও রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও বাংলাদেশ নিকট-প্রতিবেশী, বিশেষ করে চীন ও ভারতের ‘সাহায্য’ নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার ব্যাপারে বড় কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ অব্দি চীন নিজ উদ্যোগে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সেই প্রস্তাব অনুসরণ করেই মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। আগস্টের পর থেকে সংকটের গভীরতা বাড়লেও, অতিসম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনে গিয়েছিলেন। তিনি রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেননি। এমনকি ওই সব দেশের সাহায্যও চাননি। অথচ প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক ভালো। এ দেশগুলোকে দিয়ে আমরা মিয়ানমারের ওপর ‘প্রভাব’ খাটাতে পারতাম।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পক্ষে। কিছুদিন আগে ঢাকা ঘুরে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে। তিনিও বলেছেন, ভারত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। কিন্তু জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উরসুলা মুয়েলার গেল এপ্রিলে বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি অনুকূল নয়। তাঁর এই বক্তব্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে ভিন্ন মেসেজ পৌঁছে দিতে পারে। তারা ‘জোর করে’ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চাইবে না। এমনকি বাংলাদেশ যেখানে আট হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল, সেখানে মিয়ানমার জানিয়েছে, তারা মাত্র ৩৮৩ জনকে গ্রহণ করবে। এর অর্থ পরিষ্কার, মিয়ানমার অন্য রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। তাহলে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ কোথায় আশ্রয় দেবে? ভাসানচরে কিছু বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার স্থান হবে বটে; কিন্তু বাকিরা থেকে যাবে বৃহত্তর কক্সবাজার এলাকায়। রেডক্রস ও জাতিসংঘের কর্মকর্তার বক্তব্য প্রকারান্তরে রোহিঙ্গাদের উৎসাহ জোগাতে পারে বাংলাদেশে থেকে যেতে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী উ উইন মাইয়াত আই। প্রথমে তিনি কুতুপালং ক্যাম্পে যান। রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করে এরপর ঢাকায় এসে দেখা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। রোহিঙ্গাদের তিনি ‘সব কিছু ভুলে’ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বলেছেন, তাদের জন্য নতুন নতুন গ্রাম তৈরি করা হবে। রোহিঙ্গাদের NVC বা National Varification Card দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। কিন্তু এই কার্ড নাগরিকত্বের পরিচয় বহন করে না। ফলে প্রশ্ন থাকলই। রোহিঙ্গারা শেষ অব্দি নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে কি না?
গুতেরেস ও কিম বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। গুতেরেস নিজে এখন সাধারণ পরিষদে একটি রিপোর্ট দেবেন। তিনি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে ‘চাপ’ দেওয়ার কথা বলেছেন বটে; কিন্তু সেটি কিভাবে সম্ভব? জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিকার অর্থেই কঠিন হবে। ‘চাপ’ প্রয়োগ করার একটি পথ হচ্ছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ। চীন ও রাশিয়া এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইবে না। উত্তর কোরিয়া ও ইরানের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়েছিল, মিয়ানমারের ক্ষেত্রে তেমনটি না-ও হতে পারে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত সমর্থন করবে বলেও মনে হয় না। মিয়ানমারে চীন ও রাশিয়ার যেমনি ‘স্বার্থ’ রয়েছে, ঠিক তেমনি যুক্তরাষ্ট্রেরও স্বার্থ রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা দু-দুবার মিয়ানমার সফর করেছিলেন। মার্কিন ব্যবসায়ীরা এখন মিয়ানমারে তৎপর। তারা কোনো অবস্থাতেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের পক্ষে থাকবে না। তারা বিশাল বিনিয়োগ নিয়ে সেখানে যাচ্ছে। চীন রাখাইন উপকূলে গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলন করছে এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে তা নিয়ে যাচ্ছে ইউনান প্রদেশে। সুতরাং চীন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যাতে মিয়ানমারের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার বিষয়টি একটি প্রশ্নের মধ্যে থেকে যেতে পারে। তবে নিঃসন্দেহে গুতেরেস ও কিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে। আমাদের এখন বিশ্ব আসরে দূতিয়ালি বাড়াতে হবে। শীর্ষস্থানীয় মিয়ানমারের জেনারেলদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের দাবি জানাতে হবে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। মিয়ানমার যে কালক্ষেপণ করছে, তা বিশ্ব আসরে তুলে ধরতে হবে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসছে। এই অধিবেশনে বাংলাদেশ একটি ‘শক্ত’ অবস্থানে যেতে পারে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমাদের অবস্থান এখন অনেক শক্তিশালী। এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিক আসরে একটি শক্ত কূটনৈতিক অবস্থান তৈরি করা।
Daily Kalerkontho
08.07.2018
0 comments:
Post a Comment