শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার
করেছেন যে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ
হয়েছিল। তার এই বক্তব্য হেলসিঙ্কিতে দেওয়া তার বক্তব্যের ঠিক উল্টো। ১৬
জুলাই হেলসিঙ্কিতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক বৈঠকটি তিনি
করেন, তারপর পুতিনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, মার্কিন
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (২০১৬) রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কোনো কারণ তিনি দেখেন
না। অর্থাৎ সরাসরি নাকচ করে দেওয়া। এমনকি পুতিনও সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন,
তার দেশ মার্কিন নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু ট্রাম্প যখন
পুতিনের সুরে কথা বললেন, তখন একটা বড় বিতর্কের জন্ম দেয় যুক্তরাষ্ট্রে। খোদ
রিপাবলিকান শিবিরেও তার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করা হয়। শুধু তা-ই নয়,
এফবিআইও ১২ জন রুশ গোয়েন্দাকে চিহ্নিত করেছে, যারা ওই নির্বাচনে প্রভাব
খাটানোর চেষ্টা করেছিল। এরই মধ্যে মারিয়া বুটিনা নামে একজন রুশ গোয়েন্দাকে
গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বুটিনা ছাত্র ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। তবে তার
সঙ্গে মস্কোর রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এবং বুটিনা তাদের
পক্ষ হয়ে ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছিলেন।
বুটিনার গ্রেপ্তার ও এফবিআই কর্তৃক ১৩ জন গোয়েন্দাকে চিহ্নিত করার পর পুরো
দৃশ্যপট বদলে যায়। হেলসিঙ্কি থেকে ওয়াশিংটনে ফিরে আসার পর ট্রাম্প তার
বক্তব্যে পরিবর্তন আনেন। এখন তিনি বলছেন, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো
যে মতামত দিয়েছে তা তিনি গ্রহণ করেছেন। কেন তিনি এর আগের বক্তব্যে রুশ
হস্তক্ষেপ না করার কথা বলেছিলেন, তারও একটি ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। তিনি
বলেছেন, আমার বাক্যে আমি ‘উড’ শব্দটি ব্যবহার করেছি, যা আসলে ‘উডনট’ হবে।
বাক্যটি হওয়া উচিত ছিল ‘আই উন্ট সি এনি রিজন হোয়াই ইট উডনট বি রাশিয়া (আমি
এটি রাশিয়া না হওয়ার কোনো কারণ দেখি না)। বাক্যে দুটি নেগেটিভ হবে।’
কিন্তু ট্রাম্পের এই ‘ব্যাখ্যা’ কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে বলা মুশকিল। কেননা রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট কোনো শিবিরেই ট্রাম্পের হেলসিঙ্কিতে রাশিয়ার পক্ষে দেওয়া বক্তব্য গ্রহণ করেনি। একান্তে পুতিন ও ট্রাম্প কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, তারও কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। ফলে মার্কিন কংগ্রেস এখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে তলব করেছেন এর ব্যাখ্যা দিতে। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলেছেন, ট্রাম্পের আগের বক্তব্যে যদি ভুল থেকে থাকে, তাহলে সে কথা স্বীকার করতে ট্রাম্পের দেড় দিন লাগার কথা নয়। তাছাড়া একবার নয়, একই সংবাদ সম্মেলনে তিনি একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থনের বদলে রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করেছেন।
স্পষ্টতই ট্রাম্পের এই ‘ইউটার্ন’ তাকে বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এতে রুশ-মার্কিন ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও শীর্ষ বৈঠকটির পর পুতিন ও ট্রাম্প যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ‘অতীতকে এক পাশে ঠেলে একত্রে হাঁটার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’ কিন্তু দুই দেশের মাঝে সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, সে ব্যাপারে প্রশ্ন আছে অনেক। অনেকগুলো ইস্যু রয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার স্বার্থ পরস্পরবিরোধী, সে ব্যাপারে দুই নেতা কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেননি। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখন তদন্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান রবার্ট মুয়েলাবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল ১২ রুশ গোয়েন্দ কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত করেছে। এমনকি এসব তদন্তে ট্রাম্প নিজেও জড়িয়ে যেতে পারেন! অনেকের স্মরণ থাকার কথা, ২০১৬ সালের নভেম্বরের আগে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের জন্য রুশ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেটা নিয়ে তখন বিতর্ক কম হয়নি। পুতিনের ব্যাপারে খোদ রিপাবলিকান শিবিরেও বড় আপত্তি রয়েছে। কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর এই বৈঠকটি বাতিলেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ও পুতিন দুজনই স্বীকার করেছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো ধরনের রুশ হস্তক্ষেপ হয়নি। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন যদি সত্যি হয়, তাহলে এই শীর্ষ বৈঠক আদৌ কোনো ফল বয়ে আনবে না। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার ব্যাপারে ট্রাম্পের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কেননা পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জার্মানি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জার্মানি পুরোপুরিভাবে রাশিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জার্মানি রাশিয়ার গ্যাস ক্রয় করে রাশিয়াকে ধনী দেশে পরিণত করছে। এর পরপরই তিনি পুতিনের সঙ্গে দেখা করে পুতিনের প্রশংসা করলেন। ট্রাম্প তার ইউরোপ সফরে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। ন্যাটোর প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি স্নায়ুযুদ্ধকালীন ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। ফলে পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকটি নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।
এটা অনেকেই স্বীকার করেন যে, পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কারণে এই দুই বৃহৎ শক্তির মাঝে ন্যূনতম একধরনের ‘সমঝোতা’ প্রয়োজন। এই ‘সমঝোতা’ যদি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে বিশ্বে উত্তেজনা বাড়বে বৈ কমবে না। প্রথমত, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের সঙ্গে চীনসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর একধরনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। এমনকি কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গেও একধরনের বিবাদে জড়িয়ে গেছেন তিনি। সর্বশেষ জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শিল্পোন্নত অন্য দেশগুলোর বিরোধ আমরা লক্ষ করেছি। এক্ষেত্রে রাশিয়ার সহযোগিতা তার প্রয়োজন। রাশিয়া বড় অর্থনীতির দেশ নয়; কিন্তু তারপরও রাশিয়া একটি ‘শক্তি’। রাশিয়ার সঙ্গে যে-কোনো ‘সমঝোতা’ ট্রাম্পকে তার একাকিত্ব অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, সিরীয় সংকট। এটা সবাই জানেন, রাশিয়ার বিমান হামলার পরপরই সিরিয়ার পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। আইএসের সেখানে পতন ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পরও সেখানে আইএসের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু সিরিয়ায় রুশ বিমান হামলার পর আইএস তাদের তথাকথিত ‘জিহাদি রাষ্ট্র’ এর রাজধানী রাকা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাই বলে সিরিয়ার সংকটে সমাধান হয়েছে, এটা বলা যাবে না। আসাদবিরোধী কিছু কিছু ইসলামিক জঙ্গি সেখানে এখনও তৎপর। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সিরিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সেখানে একটি ‘রাজনৈতিক অর্ডার’ প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। না হলে সিরিয়ায় সংকট থেকে যাবে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হলে এক পর্যায়ে ইরানও নিউট্রাল হয়ে যাবে। সিরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট সমাধানের যে-কোনো উদ্যোগে ইরানকে সম্পৃক্ত করাও প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাশিয়াকে আস্থায় নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তৃতীয়ত, রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের পর ইউক্রেনে যে সংকটের জন্ম হয়েছিল, তা আজও রয়ে গেছে। পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার মদদে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখানে ‘ক্রিমিয়া মডেল’ অনুসরণ করতে চায়। অর্থাৎ এখানে গণভোট হবে, আর তাতে মানুষ রাশিয়ার পক্ষে সংযুক্তির পক্ষে রায় দেবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি রয়েছে সেখানে। ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে একধরনের ‘ছায়াযুদ্ধ’ চলছে। অনেকেই এটা জানেন, যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিক। ইউক্রেন (এমনকি জর্জিয়াও) যদি ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে সেখানে ন্যাটোর তথা যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য মোতায়েন করা হবে। তখন রাশিয়া থাকবে একধরনের স্নায়ুবিক চাপে। ন্যাটোর পূর্বমুখী যে সম্প্রসারণ, তাতে ইউক্রেনের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া ইউক্রেনের ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তি কখনও মেনে নেবে না। ফলে ইউক্রেন নিয়ে সংকট থেকে যাচ্ছে। ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়াকে আস্থায় নিতে হবে। চতুর্থত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক সমঝোতা বাতিল করেছেন। এর মধ্য দিয়ে ইরানকে পারমাণবিক শক্তি অর্জনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তটি ছিল ভুল। এতে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে বৈ কমবে না।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুটি দেশ। দেশ দুটির মাঝে আস্থার সম্পর্ক থাকা দরকার। ইতিহাস বলে অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি স্থিতিশীল বিশ্ব উপহার দেওয়ার জন্য বারবার বৈঠক করেছে। পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা কমিয়ে আনার জন্য একাধিক চুক্তির স্বাক্ষর করেছে দেশ দুটি। দুই দেশের মাঝে ১৯৪৩ সালের বৈঠকটি ছিল প্রথম। ওই বছরের নভেম্বরে ইরানের তেহরানে বৈঠক করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল। ওই বৈঠকে হিটলারের বিরুদ্ধে মিত্র জোটের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টায় আবার তারা একত্রিত হয়েছিলেন। এবার রুজভেল্টের বদলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড স্টেটিনিয়াস। ওই বৈঠকে মুক্ত ইউরোপ ঘোষণায় তারা স্বাক্ষর করেছিলেন। ১৯৪৫ সালের ২ আগস্ট তৃতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি ও সোভিয়েত নেতা স্ট্যালিনের মাঝে। কিন্তু ওই ‘সমঝোতা’ টিকে থাকেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এক ধরনের প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিতে লিপ্ত হয়। একদিকে পশ্চিম ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বাজার অর্থনীতি নির্ভর গণতন্ত্র বিকশিত হয়, অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। দীর্ঘ ৪৬ বছর এ ‘প্রতিযোগিতা’ বজায় ছিল। এক্ষেত্রে গরবাচেভ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ক্ষমতায় এসে ১৯৮৮ সালে ওয়ারশ’ সামরিক জোট ভেঙে দিয়েছিলেন সমাজতন্ত্রের প্রসার তথা রক্ষার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ’ সামরিক জোট গঠিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯১১ সালের ডিসেম্বরে সমাজতন্ত্রের পতন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলেও ন্যাটোর কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়নি। বরং পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ এখন ন্যাটোর সদস্য ও ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ ঘটেছে। ফলে আস্থার সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল সেখান থেকেই। গেল ১৬ জুলাই ট্রাম্প প্রথমবারের মতো পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকটি সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের অ্যাপ্রোচে ভুল ছিল। ট্রাম্প ভুলে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’ কত শক্তিশালী। এই ‘ডিপ স্টেট’ মূলত সাংবিধানিক শক্তির বাইরে গিয়ে (কংগ্রেস, প্রেসিডেন্সি) আলাদাভাবে প্রশাসনে প্রভাব খাটায়। তারা সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক সময় প্রেসিডেন্ট তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন না। দেখা গেল, ট্রাম্প যখন পুতিনের পক্ষাবলম্বন করে হেলসিঙ্কিতে বক্তব্য রাখলেন, তখন ‘ডিপ স্টেট’ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিল। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তো রিপোর্ট ছিলই যে, নির্বাচনে একটা হস্তক্ষেপ ছিল! ওই সময় মার্কিনি পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদও ছাপা হয়েছিল। ওই সময়ও ট্রাম্প এই অভিযোগ নাকচ করেছিলেন। ওই সময় এমন সংবাদও পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল যে, পুতিন চাচ্ছেন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসুক। এর পেছনে যুক্তি ছিল যে, রাশিয়ায় ট্রাম্পের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যবসায়ী মানুষ ট্রাম্প। তিনি জানেন কীভাবে নিজের স্বার্থ আদায় করে নিতে হয়।
তবে ট্রাম্প বিতর্কিত হয়েছেন আরও একটি কারণে। তিনি মিথ্যা কথা বলেন। গেল ৪৬৬ দিনে ট্রাম্প ৩ হাজারবার মিথ্যা কথা বলেছেন। (সিএনএন, ৯ মে ২০১৮)। একজন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে এ ধরনের কথাবার্তা শোভন নয় এবং প্রেসিডেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে থাকে। এখন ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি সামনে আনল এফবিআই। ধারণা করছি, গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য খুব সুখের হবে না।
Daily Alokito Bangladesh
22.07.2018
কিন্তু ট্রাম্পের এই ‘ব্যাখ্যা’ কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে বলা মুশকিল। কেননা রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট কোনো শিবিরেই ট্রাম্পের হেলসিঙ্কিতে রাশিয়ার পক্ষে দেওয়া বক্তব্য গ্রহণ করেনি। একান্তে পুতিন ও ট্রাম্প কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, তারও কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। ফলে মার্কিন কংগ্রেস এখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে তলব করেছেন এর ব্যাখ্যা দিতে। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলেছেন, ট্রাম্পের আগের বক্তব্যে যদি ভুল থেকে থাকে, তাহলে সে কথা স্বীকার করতে ট্রাম্পের দেড় দিন লাগার কথা নয়। তাছাড়া একবার নয়, একই সংবাদ সম্মেলনে তিনি একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থনের বদলে রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করেছেন।
স্পষ্টতই ট্রাম্পের এই ‘ইউটার্ন’ তাকে বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এতে রুশ-মার্কিন ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও শীর্ষ বৈঠকটির পর পুতিন ও ট্রাম্প যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ‘অতীতকে এক পাশে ঠেলে একত্রে হাঁটার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’ কিন্তু দুই দেশের মাঝে সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, সে ব্যাপারে প্রশ্ন আছে অনেক। অনেকগুলো ইস্যু রয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার স্বার্থ পরস্পরবিরোধী, সে ব্যাপারে দুই নেতা কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেননি। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখন তদন্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান রবার্ট মুয়েলাবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল ১২ রুশ গোয়েন্দ কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত করেছে। এমনকি এসব তদন্তে ট্রাম্প নিজেও জড়িয়ে যেতে পারেন! অনেকের স্মরণ থাকার কথা, ২০১৬ সালের নভেম্বরের আগে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের জন্য রুশ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেটা নিয়ে তখন বিতর্ক কম হয়নি। পুতিনের ব্যাপারে খোদ রিপাবলিকান শিবিরেও বড় আপত্তি রয়েছে। কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর এই বৈঠকটি বাতিলেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ও পুতিন দুজনই স্বীকার করেছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো ধরনের রুশ হস্তক্ষেপ হয়নি। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন যদি সত্যি হয়, তাহলে এই শীর্ষ বৈঠক আদৌ কোনো ফল বয়ে আনবে না। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার ব্যাপারে ট্রাম্পের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কেননা পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জার্মানি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জার্মানি পুরোপুরিভাবে রাশিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জার্মানি রাশিয়ার গ্যাস ক্রয় করে রাশিয়াকে ধনী দেশে পরিণত করছে। এর পরপরই তিনি পুতিনের সঙ্গে দেখা করে পুতিনের প্রশংসা করলেন। ট্রাম্প তার ইউরোপ সফরে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। ন্যাটোর প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি স্নায়ুযুদ্ধকালীন ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। ফলে পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকটি নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।
এটা অনেকেই স্বীকার করেন যে, পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কারণে এই দুই বৃহৎ শক্তির মাঝে ন্যূনতম একধরনের ‘সমঝোতা’ প্রয়োজন। এই ‘সমঝোতা’ যদি প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে বিশ্বে উত্তেজনা বাড়বে বৈ কমবে না। প্রথমত, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের সঙ্গে চীনসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর একধরনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। এমনকি কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গেও একধরনের বিবাদে জড়িয়ে গেছেন তিনি। সর্বশেষ জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শিল্পোন্নত অন্য দেশগুলোর বিরোধ আমরা লক্ষ করেছি। এক্ষেত্রে রাশিয়ার সহযোগিতা তার প্রয়োজন। রাশিয়া বড় অর্থনীতির দেশ নয়; কিন্তু তারপরও রাশিয়া একটি ‘শক্তি’। রাশিয়ার সঙ্গে যে-কোনো ‘সমঝোতা’ ট্রাম্পকে তার একাকিত্ব অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, সিরীয় সংকট। এটা সবাই জানেন, রাশিয়ার বিমান হামলার পরপরই সিরিয়ার পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। আইএসের সেখানে পতন ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পরও সেখানে আইএসের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু সিরিয়ায় রুশ বিমান হামলার পর আইএস তাদের তথাকথিত ‘জিহাদি রাষ্ট্র’ এর রাজধানী রাকা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাই বলে সিরিয়ার সংকটে সমাধান হয়েছে, এটা বলা যাবে না। আসাদবিরোধী কিছু কিছু ইসলামিক জঙ্গি সেখানে এখনও তৎপর। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সিরিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সেখানে একটি ‘রাজনৈতিক অর্ডার’ প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। না হলে সিরিয়ায় সংকট থেকে যাবে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হলে এক পর্যায়ে ইরানও নিউট্রাল হয়ে যাবে। সিরিয়ায় রাজনৈতিক সংকট সমাধানের যে-কোনো উদ্যোগে ইরানকে সম্পৃক্ত করাও প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাশিয়াকে আস্থায় নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তৃতীয়ত, রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের পর ইউক্রেনে যে সংকটের জন্ম হয়েছিল, তা আজও রয়ে গেছে। পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার মদদে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখানে ‘ক্রিমিয়া মডেল’ অনুসরণ করতে চায়। অর্থাৎ এখানে গণভোট হবে, আর তাতে মানুষ রাশিয়ার পক্ষে সংযুক্তির পক্ষে রায় দেবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি রয়েছে সেখানে। ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে একধরনের ‘ছায়াযুদ্ধ’ চলছে। অনেকেই এটা জানেন, যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিক। ইউক্রেন (এমনকি জর্জিয়াও) যদি ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে সেখানে ন্যাটোর তথা যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য মোতায়েন করা হবে। তখন রাশিয়া থাকবে একধরনের স্নায়ুবিক চাপে। ন্যাটোর পূর্বমুখী যে সম্প্রসারণ, তাতে ইউক্রেনের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া ইউক্রেনের ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তি কখনও মেনে নেবে না। ফলে ইউক্রেন নিয়ে সংকট থেকে যাচ্ছে। ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়াকে আস্থায় নিতে হবে। চতুর্থত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক সমঝোতা বাতিল করেছেন। এর মধ্য দিয়ে ইরানকে পারমাণবিক শক্তি অর্জনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তটি ছিল ভুল। এতে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে বৈ কমবে না।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুটি দেশ। দেশ দুটির মাঝে আস্থার সম্পর্ক থাকা দরকার। ইতিহাস বলে অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি স্থিতিশীল বিশ্ব উপহার দেওয়ার জন্য বারবার বৈঠক করেছে। পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা কমিয়ে আনার জন্য একাধিক চুক্তির স্বাক্ষর করেছে দেশ দুটি। দুই দেশের মাঝে ১৯৪৩ সালের বৈঠকটি ছিল প্রথম। ওই বছরের নভেম্বরে ইরানের তেহরানে বৈঠক করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট, সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল। ওই বৈঠকে হিটলারের বিরুদ্ধে মিত্র জোটের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টায় আবার তারা একত্রিত হয়েছিলেন। এবার রুজভেল্টের বদলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড স্টেটিনিয়াস। ওই বৈঠকে মুক্ত ইউরোপ ঘোষণায় তারা স্বাক্ষর করেছিলেন। ১৯৪৫ সালের ২ আগস্ট তৃতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি ও সোভিয়েত নেতা স্ট্যালিনের মাঝে। কিন্তু ওই ‘সমঝোতা’ টিকে থাকেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এক ধরনের প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিতে লিপ্ত হয়। একদিকে পশ্চিম ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বাজার অর্থনীতি নির্ভর গণতন্ত্র বিকশিত হয়, অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। দীর্ঘ ৪৬ বছর এ ‘প্রতিযোগিতা’ বজায় ছিল। এক্ষেত্রে গরবাচেভ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ক্ষমতায় এসে ১৯৮৮ সালে ওয়ারশ’ সামরিক জোট ভেঙে দিয়েছিলেন সমাজতন্ত্রের প্রসার তথা রক্ষার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ’ সামরিক জোট গঠিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯১১ সালের ডিসেম্বরে সমাজতন্ত্রের পতন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলেও ন্যাটোর কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়নি। বরং পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ এখন ন্যাটোর সদস্য ও ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ ঘটেছে। ফলে আস্থার সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল সেখান থেকেই। গেল ১৬ জুলাই ট্রাম্প প্রথমবারের মতো পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকটি সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের অ্যাপ্রোচে ভুল ছিল। ট্রাম্প ভুলে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’ কত শক্তিশালী। এই ‘ডিপ স্টেট’ মূলত সাংবিধানিক শক্তির বাইরে গিয়ে (কংগ্রেস, প্রেসিডেন্সি) আলাদাভাবে প্রশাসনে প্রভাব খাটায়। তারা সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক সময় প্রেসিডেন্ট তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন না। দেখা গেল, ট্রাম্প যখন পুতিনের পক্ষাবলম্বন করে হেলসিঙ্কিতে বক্তব্য রাখলেন, তখন ‘ডিপ স্টেট’ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিল। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তো রিপোর্ট ছিলই যে, নির্বাচনে একটা হস্তক্ষেপ ছিল! ওই সময় মার্কিনি পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদও ছাপা হয়েছিল। ওই সময়ও ট্রাম্প এই অভিযোগ নাকচ করেছিলেন। ওই সময় এমন সংবাদও পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল যে, পুতিন চাচ্ছেন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসুক। এর পেছনে যুক্তি ছিল যে, রাশিয়ায় ট্রাম্পের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যবসায়ী মানুষ ট্রাম্প। তিনি জানেন কীভাবে নিজের স্বার্থ আদায় করে নিতে হয়।
তবে ট্রাম্প বিতর্কিত হয়েছেন আরও একটি কারণে। তিনি মিথ্যা কথা বলেন। গেল ৪৬৬ দিনে ট্রাম্প ৩ হাজারবার মিথ্যা কথা বলেছেন। (সিএনএন, ৯ মে ২০১৮)। একজন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে এ ধরনের কথাবার্তা শোভন নয় এবং প্রেসিডেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে থাকে। এখন ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি সামনে আনল এফবিআই। ধারণা করছি, গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য খুব সুখের হবে না।
Daily Alokito Bangladesh
22.07.2018
ধন্যবাদ স্যার|
ReplyDeleteরাশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার আরেকটি কারণ হতে পারে, রাশিয়াই ট্রাম্পের পেছনে বিনিয়োগ করেছে এমন।কেননা ট্রাম্প ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে,ওদিকে তেল বেচে লাভবান হচ্ছে রাশিয়া, আমরা জানি যাহা ইরানের জন্য খারাপ তাহাই রাশিয়ার জন্য ভালো।
ReplyDeleteআবার পুতিনের চাল এটাও হতে পারে যাতে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কর সাথে কিছুদিন সম্পর্ক খারাপ করে, এই সুযোগে রাশিয়া ব্যালিস্টিক মিসাইল গুলো বেচে নিলো তুরষ্কের কাছে।কেননা রাশিয়া অর্থনীতিতে অস্ত্র বিক্রয় বিশাল প্রভাব বিস্তার করে সেটা আমরা সকলেই জানি।
মূলত পুতিনের হাতের পুতুলের মতই কাজ করছে ট্রাম্প।