মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রেক্স টিলারসনকে বরখাস্ত করেছেন। একইসঙ্গে সিআইএ প্রধান মাইক পম্পিওকে
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বিভিন্ন
আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে রেক্স টিলারসনের
মতবিরোধের খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। বিশেষ করে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার
ব্যাপারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত ছিলেন না টিলারসন। এখন
টিলারসনের বিদায় এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে কট্টরপন্থী ব্যক্তি হিসেবে
পরিচিত মাইক পম্পিওর নিয়োগ অনেক প্রশ্নের জন্ম দেবে। পম্পিও এমন এক সময়
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন যখন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং
উনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ট্রাম্পের একটি সাক্ষাৎকারের সম্ভাবনা তৈরি
হয়েছে। শুধু তাই নয়, পেন্টাগনের পক্ষ থেকে পরমাণু বোমার আকার ক্ষুদ্র করে
আধুনিকায়নের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল গত মাসে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে,
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এখন কোন দিকে পরিচালিত হবে?
ট্রাম্প একাধিক ‘টুইট’ করেছেন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ‘রকেটম্যান’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। এমনকি ইরানের সঙ্গেও তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬ জাতি যে সমঝোতা হয়েছিল, তা মানতেও অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে তার আপত্তি রয়েছে। এমনকি রাশিয়া ও চীনের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারেও তিনি সন্দিহান। সুতরাং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু কর্মসূচি যে নতুন করে সাজাবেন, সেটাই ছিল স্বাভাবিক। এমনকি তিনি পেন্টাগনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে একটি সামরিক প্যারেড আয়োজন করার। এটা ছিল একটা শোডাউন। নিদেনপক্ষে উত্তর কোরিয়া, ইরান আর রাশিয়ার প্রতি একটি পরোক্ষ চ্যালেঞ্জ! এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রকে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ স্নায়ুযুদ্ধকালীন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব’ বিরাজ করত, সেই মানসিকতায় আবার ফিরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র। এ মানসিকতা আবার নতুন করে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দেবে।
স্নায়ুযুদ্ধে অবসান হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। একটা সময় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ইউরোপে প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তির মাঝে এক ধরনের ‘যুদ্ধের’ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ওই পরিস্থিতি বহাল ছিল, যা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে উত্তেজনা হ্রাসে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুই পরাশক্তির কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে ভোর হওয়ার আগে ‘ট্রিনিটি’ নামের বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। পরবর্তী সময়ে ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ দুই বোমা জাপানের আত্মসমর্পণ এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানকে ত্বরান্বিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে ১৯৪৯ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৫২ সালে ব্রিটেন, ১৯৬০ সালে ফ্রান্স এবং ১৯৬৪ সালে চীন পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায় নাম উঠিয়েছিল। পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ১৯৬৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আংশিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন কৌশলগত অস্ত্র সীমিতকরণ আলোচনা (সল্ট) শুরু করে। ১৯৭০ সালের মার্চে নতুন করে আর কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের যাতে বিস্তার না ঘটে, সে লক্ষ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৯ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সল্ট-২ চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পারমাণবিক অস্ত্রের বিলোপসাধনে দেশ দুটির প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে জর্জ বুশ ও মিখাইল গরবাচেভ কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস চুক্তি (স্ট্রাট) স্বাক্ষর করেন। ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় স্ট্রাট-২ চুক্তি। ওই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা হয়। ১৯৯৫ সালে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিকে (এনপিটি) ২৫ বছরের জন্য স্থায়ী রূপ দিতে জাতিসংঘে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এখানে আরও একটি কথা বলা প্রয়োজন। ভারত ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো এবং ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো, পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে আর উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সালে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর ক্লাবে যোগ দেয়। এর বাইরে ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। যদিও ইসরাইলের এ ব্যাপারে কোনো স্বীকারোক্তি নেই। বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সর্বশেষ যে তথ্য (২০১৭) আমরা পাই তাতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৬৮০০, রাশিয়ার কাছে ৭০০০, যুক্তরাজ্যের কাছে ২১৫, ফ্রান্সের কাছে ৩০০, চীনের কাছে ২৭০, ভারতের কাছে ১২০-১৩০, পাকিস্তানের কাছে ১৩০-১৪০, উত্তর কোরিয়ার কাছে ১০-২০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। উল্লেখ্য, একটি ওয়ারহেড একাধিক পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করতে পারে। আরও একটি কথা। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১২২টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। এখন ৫০টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করলেই ৯০ দিন পর এটি কার্যকর হবে। তবে এ চুক্তি বয়কট করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে সাত দশকের প্রচেষ্টার পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে বৈশ্বিক ওই চুক্তিটি হয়েছিল। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ দেশের আলোচকরা ১০ পাতার চুক্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন। চুক্তির পক্ষে পড়েছিল ১২২টি ভোট। একটি ভোট পড়েছে বিপক্ষে। দেশটি হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। সিঙ্গাপুর ভোটদানে বিরত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরাইল- এই ৯টি পরমাণু শক্তিধর দেশ কোনো আলোচনায় ও ভোটাভুটিতে ছিল না। জাপানও আলোচনা বয়কট করে।
এখন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নতুন করে ছোট ছোট পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত এবং সিআইএ প্রধান পম্পিওর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তি বিশ্বে আবারও পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রতিযোগিতাকে উসকে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তে চীন ও রাশিয়া তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মস্কো মনে করে মার্কিন পরিকল্পনা সংঘাতপূর্ণ ও যুদ্ধের উসকানিমূলক। এ ধরনের পরিকল্পনা রাশিয়াবিরোধী বলেও মনে করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর চীন মনে করে- ‘শান্তি ও উন্নয়নে অপরিহার্য বৈশ্বিক প্রবণতা বজায় রাখা দরকার। এর বিরুদ্ধে না গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্রের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তা অনুসরণ করে চলা। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধকালীন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসবে।’ চীনকে অযৌক্তিকভাবে পরমাণু হুমকি মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে চীনের নীতি সবসময়ই আত্মরক্ষামূলক- চীনের এটাই বক্তব্য। অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি স্পষ্টভাবেই পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধী আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। পরমাণু বোমার
ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে বেশি নির্ভরশীল সে দিকটাই তুলে
ধরেছে দেশটির নিউক্লিয়ার পোস্টার রিভিউ। এনপিটি লঙ্ঘনকারী এ পদক্ষেপ মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।
এখন যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ ছোট ছোট পারমাণবিক বোমা বানানোর সিদ্ধান্ত কি একুশ শতকের তৃতীয় দশকে নতুন করে একধরনের পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্ম দেবে? এ মুহূর্তে হয়তো এটা আঁচ করা যাবে না। কিন্তু নিশ্চিত করেই বলা যায়- চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া এর পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণ করবে। উত্তর কোরিয়া অনেক দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত পাল্লার পারমাণবিক হামলার কথা বলে আসছে। এখন এই সম্ভাবনা আরও বাড়ল। ২৪ জানুয়ারি ‘দ্য নেশন’ পত্রিকায় অ্যালিস স্টেটারের একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, পৃথিবীর ৮০টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। আর সেনা মোতায়েন করা আছে ১ লাখ ৩৮ হাজার। অন্যদিকে ৯টি দেশে রাশিয়ার ২৬ থেকে ৪০টি ঘাঁটি রয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী রাশিয়া কম্বোডিয়ার ৩টি সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার জন্য কম্বোডিয়া সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে। পাঠক, সিরিয়ার পরিস্থিতি স্মরণ করতে পারেন। সিরিয়ায় কুর্দি অঞ্চলে একসময় রাশিয়ার ঘাঁটি ছিল। পরবর্তী সময়ে তুরস্কের সামরিক আগ্রাসনের আগেই সেই ঘাঁটি প্রত্যাহার করে নেয় রাশিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি এখনও আছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান ঘাঁটি আছে। সিরিয়ার তারতাস ও লাতকিয়া সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে রাশিয়ার নৌবাহিনী। ফলে পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এক ধরনের ‘প্রতিযোগিতায়’ লিপ্ত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার- দেশ দুটি তাদের প্রভাব বাড়াতে চায়। এর বাইরে রয়েছে চীন ও ভারত। চীনকে টক্কর দিতে আফ্রিকায় (সিসিলি) সেনা ঘাঁটি গড়ছে ভারত। জিবুতিতে রয়েছে চীনা ঘাঁটি। আন্তর্জাতিক পরিসরে, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের স্বার্থ অভিন্ন। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া এক ধরনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ঘুরেফিরে সেই স্নায়ুযুদ্ধকালীন মানসিকতায় ফিরে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপ্তি বাড়াচ্ছে। এই মানসিকতা আরও স্পষ্ট হবে আগামীতে। ছোট পারমাণবিক বোমা বানানোর সিদ্ধান্ত এরকমই একটি সিদ্ধান্ত, যার মধ্য দিয়ে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতার সম্পর্ক আরও বাড়বে। উল্লেখ্য, আকারে ছোট ও কম ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বোমার শক্তি ২০ কিলোটনের মতো। এ বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ভয়াবহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জাপানের নাগাসাকি শহরে এ ধরনের বিস্ফোরণে ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আর তাতেই ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি হচ্ছে, ‘যতই সীমিত হোক না কেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার যে গ্রহণযোগ্য নয়, তা রাশিয়াকে অনুধাবন করাতে এই কৌশল কাজে দেবে।’ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ ‘কৌশল’ আদৌ কোনো কাজ দেবে বলে মনে হয় না। বরং এই ‘কৌশল’ নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের
জন্ম দেবে, যার আলামত আমরা এরই মধ্যে পেতে
শুরু করেছি।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন পম্পিওর মতো একজন কট্টরবাদী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে তার কঠোর মনোভাবের কথা সবাই জানে। টিলারসন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার পক্ষপাতী ছিলেন। এখন ট্রাম্প-কিম জং উন বৈঠক আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কিনা, সেটাও একটা প্রশ্ন। কারণ উত্তর কোরিয়া এ আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তা এখন থমকে আছে। ট্রাম্প প্রশাসন স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলছে, যা কিনা এক ধরনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধের’ সূচনা করতে পারে। চীন এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর বিরুদ্ধে দেশটি আলাদা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এখন পম্পিও কীভাবে এ ইস্যুগুলোকে ‘অ্যাড্রেস’ করবেন, তিনি ট্রাম্পকে কী উপদেশ দেবেন, সেটাই দেখার বিষয়। ওবামা প্রশাসনের আমলে বিশ্বে এক ধরনের স্থিতাবস্থা বিরাজ ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত এক বছরে বিশ্বে নতুন করে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হয়েছে। এখন দেখার পালা পম্পিওর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তি এটিকে
আরও উস্কে দেয় কিনা। সিনেট পম্পিওর নিযুক্তি
কনফার্ম করবে।
Daily Jugantor
16.03.2018
ট্রাম্প একাধিক ‘টুইট’ করেছেন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ‘রকেটম্যান’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। এমনকি ইরানের সঙ্গেও তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬ জাতি যে সমঝোতা হয়েছিল, তা মানতেও অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে তার আপত্তি রয়েছে। এমনকি রাশিয়া ও চীনের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারেও তিনি সন্দিহান। সুতরাং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু কর্মসূচি যে নতুন করে সাজাবেন, সেটাই ছিল স্বাভাবিক। এমনকি তিনি পেন্টাগনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ওয়াশিংটনে একটি সামরিক প্যারেড আয়োজন করার। এটা ছিল একটা শোডাউন। নিদেনপক্ষে উত্তর কোরিয়া, ইরান আর রাশিয়ার প্রতি একটি পরোক্ষ চ্যালেঞ্জ! এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রকে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ স্নায়ুযুদ্ধকালীন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব’ বিরাজ করত, সেই মানসিকতায় আবার ফিরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র। এ মানসিকতা আবার নতুন করে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দেবে।
স্নায়ুযুদ্ধে অবসান হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২৭ বছর আগে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। একটা সময় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ইউরোপে প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দুই পরাশক্তির মাঝে এক ধরনের ‘যুদ্ধের’ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ওই পরিস্থিতি বহাল ছিল, যা ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে স্নায়ুযুদ্ধ হিসেবে। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে উত্তেজনা হ্রাসে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুই পরাশক্তির কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, তা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে ভোর হওয়ার আগে ‘ট্রিনিটি’ নামের বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। পরবর্তী সময়ে ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ দুই বোমা জাপানের আত্মসমর্পণ এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানকে ত্বরান্বিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে ১৯৪৯ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯৫২ সালে ব্রিটেন, ১৯৬০ সালে ফ্রান্স এবং ১৯৬৪ সালে চীন পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায় নাম উঠিয়েছিল। পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ১৯৬৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে আংশিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন কৌশলগত অস্ত্র সীমিতকরণ আলোচনা (সল্ট) শুরু করে। ১৯৭০ সালের মার্চে নতুন করে আর কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের যাতে বিস্তার না ঘটে, সে লক্ষ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৯ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সল্ট-২ চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পারমাণবিক অস্ত্রের বিলোপসাধনে দেশ দুটির প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে জর্জ বুশ ও মিখাইল গরবাচেভ কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস চুক্তি (স্ট্রাট) স্বাক্ষর করেন। ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় স্ট্রাট-২ চুক্তি। ওই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা হয়। ১৯৯৫ সালে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিকে (এনপিটি) ২৫ বছরের জন্য স্থায়ী রূপ দিতে জাতিসংঘে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এখানে আরও একটি কথা বলা প্রয়োজন। ভারত ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো এবং ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো, পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে আর উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সালে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর ক্লাবে যোগ দেয়। এর বাইরে ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। যদিও ইসরাইলের এ ব্যাপারে কোনো স্বীকারোক্তি নেই। বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের সর্বশেষ যে তথ্য (২০১৭) আমরা পাই তাতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৬৮০০, রাশিয়ার কাছে ৭০০০, যুক্তরাজ্যের কাছে ২১৫, ফ্রান্সের কাছে ৩০০, চীনের কাছে ২৭০, ভারতের কাছে ১২০-১৩০, পাকিস্তানের কাছে ১৩০-১৪০, উত্তর কোরিয়ার কাছে ১০-২০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। উল্লেখ্য, একটি ওয়ারহেড একাধিক পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করতে পারে। আরও একটি কথা। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১২২টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। এখন ৫০টি দেশ চুক্তিটি অনুমোদন করলেই ৯০ দিন পর এটি কার্যকর হবে। তবে এ চুক্তি বয়কট করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে সাত দশকের প্রচেষ্টার পর প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করতে বৈশ্বিক ওই চুক্তিটি হয়েছিল। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ দেশের আলোচকরা ১০ পাতার চুক্তিটি চূড়ান্ত করেছিলেন। চুক্তির পক্ষে পড়েছিল ১২২টি ভোট। একটি ভোট পড়েছে বিপক্ষে। দেশটি হচ্ছে নেদারল্যান্ডস। সিঙ্গাপুর ভোটদানে বিরত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরাইল- এই ৯টি পরমাণু শক্তিধর দেশ কোনো আলোচনায় ও ভোটাভুটিতে ছিল না। জাপানও আলোচনা বয়কট করে।
এখন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নতুন করে ছোট ছোট পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত এবং সিআইএ প্রধান পম্পিওর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তি বিশ্বে আবারও পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রতিযোগিতাকে উসকে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তে চীন ও রাশিয়া তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। মস্কো মনে করে মার্কিন পরিকল্পনা সংঘাতপূর্ণ ও যুদ্ধের উসকানিমূলক। এ ধরনের পরিকল্পনা রাশিয়াবিরোধী বলেও মনে করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর চীন মনে করে- ‘শান্তি ও উন্নয়নে অপরিহার্য বৈশ্বিক প্রবণতা বজায় রাখা দরকার। এর বিরুদ্ধে না গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্রের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তা অনুসরণ করে চলা। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধকালীন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসবে।’ চীনকে অযৌক্তিকভাবে পরমাণু হুমকি মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে চীনের নীতি সবসময়ই আত্মরক্ষামূলক- চীনের এটাই বক্তব্য। অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি স্পষ্টভাবেই পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধী আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। পরমাণু বোমার
ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে বেশি নির্ভরশীল সে দিকটাই তুলে
ধরেছে দেশটির নিউক্লিয়ার পোস্টার রিভিউ। এনপিটি লঙ্ঘনকারী এ পদক্ষেপ মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।
এখন যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ ছোট ছোট পারমাণবিক বোমা বানানোর সিদ্ধান্ত কি একুশ শতকের তৃতীয় দশকে নতুন করে একধরনের পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্ম দেবে? এ মুহূর্তে হয়তো এটা আঁচ করা যাবে না। কিন্তু নিশ্চিত করেই বলা যায়- চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া এর পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণ করবে। উত্তর কোরিয়া অনেক দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত পাল্লার পারমাণবিক হামলার কথা বলে আসছে। এখন এই সম্ভাবনা আরও বাড়ল। ২৪ জানুয়ারি ‘দ্য নেশন’ পত্রিকায় অ্যালিস স্টেটারের একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, পৃথিবীর ৮০টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। আর সেনা মোতায়েন করা আছে ১ লাখ ৩৮ হাজার। অন্যদিকে ৯টি দেশে রাশিয়ার ২৬ থেকে ৪০টি ঘাঁটি রয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী রাশিয়া কম্বোডিয়ার ৩টি সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার জন্য কম্বোডিয়া সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে। পাঠক, সিরিয়ার পরিস্থিতি স্মরণ করতে পারেন। সিরিয়ায় কুর্দি অঞ্চলে একসময় রাশিয়ার ঘাঁটি ছিল। পরবর্তী সময়ে তুরস্কের সামরিক আগ্রাসনের আগেই সেই ঘাঁটি প্রত্যাহার করে নেয় রাশিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি এখনও আছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান ঘাঁটি আছে। সিরিয়ার তারতাস ও লাতকিয়া সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে রাশিয়ার নৌবাহিনী। ফলে পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এক ধরনের ‘প্রতিযোগিতায়’ লিপ্ত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার- দেশ দুটি তাদের প্রভাব বাড়াতে চায়। এর বাইরে রয়েছে চীন ও ভারত। চীনকে টক্কর দিতে আফ্রিকায় (সিসিলি) সেনা ঘাঁটি গড়ছে ভারত। জিবুতিতে রয়েছে চীনা ঘাঁটি। আন্তর্জাতিক পরিসরে, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের স্বার্থ অভিন্ন। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া এক ধরনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ঘুরেফিরে সেই স্নায়ুযুদ্ধকালীন মানসিকতায় ফিরে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপ্তি বাড়াচ্ছে। এই মানসিকতা আরও স্পষ্ট হবে আগামীতে। ছোট পারমাণবিক বোমা বানানোর সিদ্ধান্ত এরকমই একটি সিদ্ধান্ত, যার মধ্য দিয়ে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতার সম্পর্ক আরও বাড়বে। উল্লেখ্য, আকারে ছোট ও কম ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বোমার শক্তি ২০ কিলোটনের মতো। এ বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ভয়াবহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জাপানের নাগাসাকি শহরে এ ধরনের বিস্ফোরণে ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আর তাতেই ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি হচ্ছে, ‘যতই সীমিত হোক না কেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার যে গ্রহণযোগ্য নয়, তা রাশিয়াকে অনুধাবন করাতে এই কৌশল কাজে দেবে।’ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ ‘কৌশল’ আদৌ কোনো কাজ দেবে বলে মনে হয় না। বরং এই ‘কৌশল’ নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের
জন্ম দেবে, যার আলামত আমরা এরই মধ্যে পেতে
শুরু করেছি।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন পম্পিওর মতো একজন কট্টরবাদী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে তার কঠোর মনোভাবের কথা সবাই জানে। টিলারসন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার পক্ষপাতী ছিলেন। এখন ট্রাম্প-কিম জং উন বৈঠক আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কিনা, সেটাও একটা প্রশ্ন। কারণ উত্তর কোরিয়া এ আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তা এখন থমকে আছে। ট্রাম্প প্রশাসন স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলছে, যা কিনা এক ধরনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধের’ সূচনা করতে পারে। চীন এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর বিরুদ্ধে দেশটি আলাদা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এখন পম্পিও কীভাবে এ ইস্যুগুলোকে ‘অ্যাড্রেস’ করবেন, তিনি ট্রাম্পকে কী উপদেশ দেবেন, সেটাই দেখার বিষয়। ওবামা প্রশাসনের আমলে বিশ্বে এক ধরনের স্থিতাবস্থা বিরাজ ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত এক বছরে বিশ্বে নতুন করে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হয়েছে। এখন দেখার পালা পম্পিওর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তি এটিকে
আরও উস্কে দেয় কিনা। সিনেট পম্পিওর নিযুক্তি
কনফার্ম করবে।
Daily Jugantor
16.03.2018
0 comments:
Post a Comment