সংবাদপত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের খসড়া ইশতে হারছাপা হয়ে। উক্ত ইশতেহারে বেশ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা আলোর দাবি রাখে। জাতয়ি ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় নিবাচনকে সামনে রেখে এই ইশতেহার প্রকাশ করলো। সাধারণত প্রতিটি রাজনৈতিকদল বা জোট নির্বাচনের আগে কিছু কিছু প্রতিশ্রুতি দেয় যা ইশতেহারে উল্লেখ থাকে। একাদশ জাতীয় নিবার্চনের প্রাক্কালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং যা খসড়া ইশতেহারে উল্লেখ করেছে তা অনেকটা এরকম :
১.সরকারি চাকরিতে বয়স সীমা তুলে দেয়া ২.প্রতিবন্ধী কোটা চালু করা ৩. বেকার ভাতা ৪. পিত্রসসি জেএসসি বাতিল ও পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ৫. মাদ্রাসা শিক্ষাথীর্দের কারিগরী শিক্ষা দিয়ে বিদেশে প্রেরণ ৬. দুর্নীতির বিচারে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন,৭. পর পর দু’মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না ৮. সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা। ৯. তিস্তা ও রোহিঙ্গা সমস্যার আলোচনার মাধ্যমে সমাধান ১০. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ১১. ন্যায়পাল নিয়োগ ১২. নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোটার পরিবর্তে শতকরা ২০ ভাগ মনোনয়নের ব্যবস্থা ১৩. প্রবাসীদের ভোটাধিকার ১৪. শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ১৫. কৃষি ভর্তুকি বাড়িয়ে সার ও বীজ সহজলভ্য করা। এর বাইরে আরও কয়েকেটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যা অত্যন্ত সাধারণ মানের।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হবার পর সাধারণ মানুষের পাশে এই জোটের ব্যাপারে আগ্রহ বেড়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে একটা প্রত্যাশা থাকবেই যে জোট ক্ষমতায় গেলে তাদের জন্য কী কী করবে। ক্ষমতায় গেলে তাদের পররাষ্ট্র নীতি কী হবে কিংবা অর্থনীতি কী হবে? সে ব্যাপারেও অনেকের আগ্রহ থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের খসড়া ইশতেহারে আগামীর বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই। ইশতেহারে সব সাধারণ কথাবার্তা বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে শুধু এক জায়গায় বলা হয়েছে তিস্তা ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। এর মাধ্যমে নতুনত্ব কী পেলাম আমরা? সরকার তো তিস্তার পানি বণ্টনে ভারতের সাথে ও রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা চালিয়ে আসছে। তাহলে সরকারের সাথে ঐক্যফ্রন্টের পার্থক্য থাকলো কোথায়? পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যু দুটোই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের ‘অ্যাপ্রোজ’ কী হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা থাকা উচিত ছিলো। সম্পর্ক, চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইত্যাদি বিষয়গুলো আমাদের জাতীয় স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু একটি বাক্যও লেখা নেই এ সংক্রান্ত বিষয়ে। অর্থনীতি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি হচ্ছে বলা হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে আমাদের কোন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া প্রয়োজন। সে ব্যাপারে মহাপরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। আমাদের এক বিশাল তরুণ প্রজন্ম রয়েছে। এই তরুণ প্রজন্ম একটি শক্তি। এই তরুণ প্রজন্মকে আমরা শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশে রফতানি করতে পারি। জাপানে ও ইউরোপে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে। এ দেশগুলোতে এখন তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখতে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করবে। আমরা তাদের ‘অভাব’ পূরণ করতে পারি। কিন্তু সে জন্য যা প্রয়োজন তা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ার উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলো বেকার সৃষ্টি করছে। এরা জাতীয় উন্নয়নের কোনো সমাধান রাখতে পারছে না। বিশেষ বিশেষ খাতকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আইটি খাতে বিদেশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। নার্সিং পেশায় চাহিদা বিদেশে ব্যাপক।
মেডিকেল টেকনোলজিস্টও দরকার। এই খাতগুলো উপেক্ষিত। প্রতিটি জেলায় প্রতিটি কলেজকে টেকনোলজি কলেজে ধীরে ধীরে উন্নিত করতে হবে। বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে সাধারণ শিক্ষার পরিবর্তে প্রযুক্তিগত বিদ্যা, বায়োটেকনোলজি, কৃষি, আইটি এসব বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ভেঙে প্রতিটি বিভাগে একটি করে টেকনিকাল বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সাধারণ শিক্ষা আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। দক্ষ জনশক্তিও তৈরি করতে পারছে না। সুতরাং ঐক্যফ্রন্ট একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা জাতিকে জানাতে পারতো। কিন্তু ইশতেহারে তা নেই।
তবে এটা ঠিক ইশতেহারে কিছু ভালো কথাও আছে। দুটার্মের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না-এটি ভালো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট দুটার্মের বেশি থাকতে পারেন না। এমনটি ইউরোপের অনেক দেশে দল হেরে গেলে দলের নেতা যিনি নেতৃত্ব থাকে কিংবা যার নেতৃত্বে দল নির্বাচনে যায়, দল হেরে গেলে তিনি নেতৃত্ব ছেড়ে দিবেন। দৃষ্টান্ত ব্রিটেনের পার্লামেন্টারি সিস্টেম। দুটার্মের বেশি কেউ ক্ষমতায় থাকলে, ক্ষমতা এককেন্দ্রিক হয়ে যায়। চাকরিতে (সরকারি) বয়সসীমা তুলে দেয়ার ঘোষণাও ভালো। প্রচলিত ব্যবস্থায় পিএসসির মাধ্যমে যারা নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশ^ বদলে যাচ্ছে। বিষয় ভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি না থাকায় আমরা অন্য দেশের সাথে নেগোসিয়েশনে আমাদের স্বার্থ আমরা আদায় করতে পারি না। তাই সচিবালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ক্যাডার খাতের বাইরে গিয়ে বেসরকারি থাত থেকে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা অনুসরণ করে। মোদি সরকারও ভারতে এট চালু করেছেন। নারীদের সংরক্ষিত কোটা না রাখার প্রস্তাবও ভালো (পশ্চিমবঙ্গ কিংবা নরডিক দেশগুলোর দৃষ্টিান্ত আমরা অনুসরণ করতে পারি। তবে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে বিরোধী দলের সাথে একটা আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা। এ জন্য সংসদে প্রধান বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার, একাধিক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানর পদ দেয়া যেতে পারে।
0 comments:
Post a Comment