আগামী
২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য
একটি বড় ধরনের মার্চ অনুষ্ঠিত হবে- যাকে উদ্যোক্তারা নামকরণ করেছেন
‘কাইমেট চেঞ্জ মার্চ’। উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের
অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এই অধিবেশনে বিশ্বের প্রায় ১৯৬টি দেশের রাষ্ট্র তথা
সরকারপ্রধানরা যোগ দেবেন। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে যে বড় ধরনের হুমকির
মুখে এই মানব প্রজাতি, এ ব্যাপারে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই
হচ্ছে এ রোড মার্চের উদ্দেশ্য। বলা হচ্ছে, প্রায় দু’লাখ মানুষ এই রোড
মার্চে অংশ নেবে। চলতি সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি
যে প্রাধান্য পাবে, তা বলাই বাহুল্য। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিসে জলবায়ু
পরিবর্তন সংক্রান্ত ‘কপ’ সম্মেলনে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা। জলবায়ু
পরিবর্তনের বিষয়টি এখন বহুল আলোচিত। এ নিয়ে প্রতি বছরই পৃথিবীর কোথাও না
কোথাও শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত এসব সম্মেলনকে
অভিহিত করা হচ্ছে ‘কপ’ বা ‘কমিটি অব দ্য পার্টিজ’ হিসেবে। কিন্তু কোনো
সিদ্ধান্তই তারা নিতে পারছেন না শুধু শিল্পোন্নত দেশগুলোর অসহযোগিতার
কারণে। জাতিসংঘের ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন কাইমেট চেঞ্জ’-এর
রিপোর্টে বারবার একটি ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিশ্বের
উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে সাগর-মহাসাগরের পানি। বন্যা, জলচ্ছ্বাস
বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে আমরা, এই মানব প্রজাতি অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়াচ্ছি।
জাতিসংঘের ওই বিশেষজ্ঞ প্যানেল বলছে, একুশ শতকের মধ্যভাগে বিশ্বের
তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
সীমাবদ্ধ রাখার যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে
না। ফলে বিশ্ব এ শতাব্দীতেই বড় ধরনের দুর্যোগের মধ্যে পড়বে। বিশ্বের
তাপমাত্রা যদি ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যায়, তাহলে গ্রিনল্যান্ড ও
এন্টার্কটিকার সব বরফ গলে যাবে। তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ২৩ ফুট।
চিন্তা করা যায় কী ভয়াবহ বিপর্যয় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে! বিশ্বের
নেতৃবৃন্দ যে বিষয়টি জানেন না, তা নয়। তারা জানেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বড়
বড় শিল্পগোষ্ঠীর চাপে কোনো সরকারই বায়ুম-লে যে গ্রিন হাউস গ্যাস উদগিরণ
হচ্ছে, তা কমাতে পারছে না। এসব শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন
আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলো যেসব
প্রতিনিধি সেখানে পাঠায়, এতে তারা অংশ নেন। লবিং করেন। সিদ্ধান্ত নিতে
প্রভাব খাটান। এদিকে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি শঙ্কার কথা আমাদের
জানিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবি। বাংলাদেশ এই জলবায়ু
পরিবর্তনে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এডিপির রিপোর্টে সে কথা উল্লেখ করা
হয়েছে। এডিবি জানিয়েছে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ১
দশমিক ৮ শতাংশ করে কম হতে পারে। চলতি শতাব্দী শেষে এই ক্ষতি হতে পারে
প্রায় ৯ শতাংশ। আর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়তে পারে ৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি
সেলসিয়াস। এডিবির ওই রিপোর্টে দক্ষিণ এশিয়ার অপর দুটি দেশ নেপাল ও
মালদ্বীপের ক্ষতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট ঢাকায় এডিপির ওই
রিপোর্টটি উপস্থাপন করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের যে
ক্ষতি হবে, তা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। শুধু এডিপির রিপোর্টেই নয়, বরং
জাতিসংঘের রিপোর্টেও এ ক্ষতির দিকটি উল্লেখ করা হয়েছে একাধিকবার। প্রতি
বছরই জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত যে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়- যা কপ বা
কমিটি অব দ্য পার্টিস নামে পরিচিত, সেখানেও বাংলাদেশের পরিবেশগত সমস্যার
কথা উঠে আসে। বাংলাদেশের যারাই পরিবেশমন্ত্রী থাকেন, তারা তা করে কপ
সম্মেলনে যান। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ইতোমধ্যে নাসা আরও একটি আশঙ্কার কথা
জানিয়েছে। নাসা আশঙ্কা করছে, গ্রিনল্যান্ডে যে বরফ জমা রয়েছে, তা যদি
উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে গলে যায়- তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৭ মিটার বৃদ্ধি
পাবে। তাই কার্বন ডাই-অক্সাইড হ্রাসের কথা বলছে নাসা। আল গোর তার একটি
প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, বিশ্বের বৃহত্তম বন্দরগুলোয় ইতোমধ্যে ৪ কোটি
মানুষ মারাত্মক প্লাবনের হুমকির মুখে আছে। আল গোর বিশ্বের ১০৭ বিশিষ্ট
ব্যক্তিকে নিয়ে (বাংলাদেশের সাবেক বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও ছিলেন ওই
দ্রলে) গিয়েছিলেন এন্টার্কটিকায় শুধু জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য। কিন্তু বিশ্ব
সম্প্রদায় এখনো নীরব। প্রতি বছরই কপ সম্মেলনে ভালো ভালো কথা বলা হয়।
কোপেনহেগেন থেকে ডারবান সম্মেলন- বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্ব কার্বন
নিঃসরণ কমাতে একটি চুক্তি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। এ সংক্রান্ত আলোচনা
শুরু হয়েছে অনেক আগে এবং ২০২০ সাল থেকে ওই চুক্তিটি কার্যকর হবে। তবে একটি
গ্রিন ফান্ড গঠনের ব্যাপারে শিল্পোন্নত দেশগুলো রাজি হয়েছে। ওই ফান্ডের
পরিমাণ হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার। ৪০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে এই ফান্ড যাত্রা শুরু
করছে। বিশ্বব্যাংক এই ফান্ডের ব্যবস্থাপনার তদারক করছে। বাংলাদেশ ওই ফান্ড
থেকে অর্থ পেয়েছে। কপের ডারবান সম্মেলনের পর (২০১১) যে প্রশ্নটি আমার
কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে প্রতি বছর এ ধরনের সম্মেলন করে শেষ
পর্যন্ত কী বিশ্বের উষ্ণতা রোধ করা সম্ভব হবে? বাংলাদেশের সাবেক
পরিবেশমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ঢাকায় ফিরে এসে তিনি কিছুটা হতাশা
ব্যক্ত করেছিলেন। তাই কপ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবেই। ইতোমধ্যে জাপান,
কানাডা ও রাশিয়া কিয়োটা-পরবর্তী আলোচনা থেকে বেরিয়ে গেছে। সুতরাং বোঝাই
যায়, এক ধরনের হতাশা এসে গেছে। আসলে বিশ্বের দেশগুলো এখন বিভিন্ন গ্রুপে
বিভক্ত হয়ে গেছে। বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে একেক গ্রুপের একেক এজেন্ডা।
উন্নত বিশ্ব কিংবা উন্নয়নশীল বিশ্বের যে দাবি, এর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য
রয়েছে। আবার উন্নয়নশীল বিশ্বও একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। ধনী দেশগুলো এনেক্স
১-এ অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের জিডিপির শতকরা ৭৫ ভাগ এই দেশগুলোর। অথচ লোকসংখ্যা
মাত্র বিশ্বের ১৯ শতাংশ। কিন্তু কার্বন নিঃসরণ করে সবচেয়ে বেশি- শতকরা ৫১
ভাগ। অন্যদিকে গ্রুপ ৭৭-এর দেশগুলো (মোট ১৩০টি দেশ) বিশ্বের জনসংখ্যার ৭৬
শতাংশ, জিডিপির মাত্র ১৯ শতাংশ। কিন্তু কার্বন উদগিরণ করে ৪২ শতাংশ। আবার
সাগরপাড়ের দেশগুলো- যারা বিশ্বের জনসংখ্যা, জিডিপি ও কার্বন নিঃসরণ করে
মাত্র ১ শতাংশ, তাদের দাবি ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ
বর্তমান অবস্থার চেয়ে শতকরা ৮৫ ভাগ কমিয়ে আনার। বনাঞ্চলভুক্ত দেশগুলো- যারা
‘রেইন ফরেস্ট কোয়ালিশন’ হিসেবে পরিচিত, তারা বিশ্ব জনগোষ্ঠীর ১৯ শতাংশের
প্রতিনিধিত্ব করে। জিডিপির মাত্র ৩ শতাংশ তাদের এবং মাত্র ৪ শতাংশ কার্বন
নিঃসরণ করে। যুক্তরাষ্ট্র একা কার্বন নিঃসরণ করে ২০ শতাংশ। জিডিপির ৩০
শতাংশ তাদের। অথচ জনসংখ্যা মাত্র বিশ্বের ৫ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত
দেশগুলো বিশ্ব জিডিপির ২৫ শতাংশ ও জনসংখ্যার ৮ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
কিন্তু কার্বন নিঃসরণ করে ১৫ শতাংশ। চীনকে নিয়ে সমস্যা এখন অনেক। চীন একা
কার্বন নিঃসরণ করে ২১ শতাংশ। বিশ্ব জনসংখ্যার ২০ শতাংশই চীনা নাগরিক।
জিডিপির ৬ শতাংশ তাদের। প্রতিটি গ্রুপের অবস্থান ভিন্ন। সবাই নিজস্ব
দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কার্বন নিঃসরণের হার কমাতে চায়। জাতিসংঘ এটিকে বলছে
কার্বন ঘনত্ব। অর্থাৎ দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা মোট আয়ের (জিডিপি)
অনুপাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড উদগিরণের হারকে কার্বন ঘনত্ব বা গ্রিন হাউস
গ্যাসের ঘনত্ব বলা হয়। উন্নয়নশীল বিশ্ব মনে করে, এই হার মাথাপিছু জনসংখ্যা
ধরে করা উচিত। কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হার কমানো উচিত। এটি
মোটামুটিভাবে সবাই মেনে নিয়েছেন। কিন্তু কে কতটুকু কমাবে, এ প্রশ্নের কোনো
সমাধান হয়নি। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন (ভারতও) বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূষণ
ছড়ায়। এ কারণে এই দুটো দেশের কাছ থেকে ‘কমিটমেন্ট’ আশা করেছিল বিশ্ব।
কিন্তু তা হয়নি। চীন প্রস্তাব করেছিল, ২০০৫ সালের কার্বন ঘনত্বের চেয়ে
দেশটি ২০২০ সালে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কমাবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ছিল,
তারা ১৭ শতাংশ কমাবে। কিন্তু চীন ও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবে রাজি
হয়নি। এখানে বলা ভালো, চীনের কার্বন ঘনত্ব ২ দশমিক ৮৫ টন এবং ভারতের ১
দশমিক ৮ টন। চীন ও ভারত দুটি দেশই বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে এই
শতাব্দীতে। বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা হরিন্দর কোহলির মতে, আগামী ৩০ বছরে ভারত
বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। মাথাপিছু আয় তখন ৯৪০ থেকে
বেড়ে ২২ হাজার ডলারে উন্নীত হবে। ২০০৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত অবদান
রাখত মাত্র ২ শতংশ, ৩০ বছর পর রাখবে ১৭ শতংশ। তবে এটি ধরে রাখতে হলে
অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে হবে ৮ থেকে ৯ শতংশ। এ কারণেই ভারতকে নিয়ে ভয়-
তাদের কার্বন ঘনত্ব বাড়বে। কেননা প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে শিল্প প্রতিষ্ঠান
চালু রাখতে হবে। এতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়বে। পাঠকদের এখানে স্মরণ
করিয়ে দিতে চাই, ১৯৯৭ সালে কিয়োটো সম্মেলনে ১৬০টি দেশ অংশ নিয়েছিল এবং
সেখানে যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৯০ সালের কার্বন
ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রার চেয়ে ৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ৭ শতাংশ, জাপান ৬
শতাংশ হ্রাস করার কথা। তাছাড়া সার্বিকভাবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ গ্যাস নিঃসরণ
হ্রাসের আইনগত বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল সব দেশকে
২০০৮-১২ সালের মধ্যে গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।
তৎকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর কিয়োটো চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও
পরে বুশ প্রশাসন ওই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে কিয়োটো
চুক্তি কাগজ-কলমে থেকে গিয়েছিল। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে যে কয়টি
দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের উপকূলে প্রতি
বছর ১৪ মিলিমিটার করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গত ২০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা
বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় উপকূলের মানুষ
অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি ৭ জনে ১ জন আগামীতে
উদ্বাস্তু হবে। ১৭ শতাংশ এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। বাংলাদেশ
কোপেনহেগেন সম্মেলনে পরিবেশগত উদ্বাস্তুদের টহরাবৎংধষ ঘধঃঁৎধষ চবৎংড়হ
হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। সর্বশেষ
দোহা সম্মেলনেও বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফাস্ট স্টার্ট ফান্ডে মাত্র পাওয়া
গেছে আড়াই মিলিয়ন ডলার (২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার)। বাংলাদেশ সেখানে থেকে
পেয়েছে ১৩০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাংলাদেশে আইলার কারণে যে জলাবদ্ধতার
সৃষ্টি হয়েছিল, তা দূর হয়নি। সার্ক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঐক্যবদ্ধভাবে
দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যাগুলো আমরা তুলে ধরব। কিন্তু ডারবানে তা হয়নি।
বাংলাদেশ ও ভারত একই ফোরামে ছিল না। একটি আইনি বাধ্যবাধকতার কথাও বলা
হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্পর্কেও কোনো
সমঝোতা হয়নি। কপ সম্মেলনে আসলেই বড় বড় কথা বলা হয়। কয়েক টন কার্বন নিঃসরণ
করে সম্মেলন ‘অনেক আশার কথা শুনিয়ে’ শেষ হয় বটে, কিন্তু সেক্ষেত্রে অগ্রগতি
হয় খুব কমই। আগে সমস্যা ছিল উন্নত বিশ্ব নিয়ে। এখন চীন ও ভারত একটি
সমস্যা। তাদের যুক্তি, নিঃসরণের পরিমান হ্রাস করলে তাদের অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। এতে বাড়বে দরিদ্রতা। এই যুক্তি ফেলে দেওয়ার নয়। ফলে
কপ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেলই। আগামী ডিসেম্বর (১-১২ ডিসেম্বর) পেরুর
রাজধানী লিমায় কপ-২১ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কপ-১৮ (ডারবান) সম্মেলনের পর
দোহায় কপ-১৯ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হবে
কপ-২২ সম্মেলন। কিন্তু এতে আমাদের প্রাপ্তি কী? শুধু ‘অংশগ্রহণ’ ছাড়া
আমাদের কোনো প্রাপ্তি নেই। আল গোর নিজে তার প্রবন্ধে বাংলাদেশের কথা
উল্লেখ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বাড়লে ২০৫০
সাল নাগাদ ২ থেকে আড়াই কোটি বাংলাদেশিকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করতে হবে।
এর অর্থ প্রচুর মানুষ হারাবে তাদের বসতি, তাদের পেশা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা
বাড়া মানে কেবল বন্যা নয়, এর মানে নোনাপানির আগ্রাসন। সেই সঙ্গে ধানের
আবাদ ধ্বংস হয়ে যাওয়া। ২ কোটি কৃষক, জেলে পেশা হারিয়ে শহরে, বিশেষ করে ঢাকা
শহরে এসে নতুন নতুন বস্তি গড়ে তুলবেন। রিকশা চালানোর জীবন বেছে নেবেন।
সৃষ্টি হবে একটি শ্রেণির- যারা শহরে মানুষের ভাষায় ‘জলবায়ু উদবাস্তু’। এই
‘জলবায়ু উদবাস্তু’দের নিয়ে রাজনীতি হবে! বিদেশে অর্থ সাহায্য চাওয়া হবে।
ইতোমধ্যে অর্থ সাহায্য পাওয়া গেছে। কিন্তু ওই অর্থ সাহায্য বিতরণ নিয়ে
বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। স্বয়ং বর্তমান পরিবেশমন্ত্রী প্রশ্ন
তুলেছেন স্বচ্ছতা নিয়ে। তিনি বলেছেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ
যাচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এ অর্থ ঠিকমতো খরচ হচ্ছে কি না, তা
মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা পরিবেশন মন্ত্রণালয়ের নেই (২০ আগস্ট)। দুর্নীতি এখানে
ভর করেছে। যারা সত্যিকার অর্থেই জলবায়ু উদবাস্তু, তারা এই সাহায্য পাচ্ছেন
না। তাই এডিবির রিপোর্টে প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হলেও এ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার
কোনো কারণ নেই। জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমলে দরিদ্রতা বাড়বে। বাড়বে রাজনৈতিক
অস্থিতিশীলতা। একটি ‘ভালো সরকারের’ জন্য তা কোনো ভালো খবর নয়।
Daily Amder Somoy
14.09.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment