পাকিস্তানে 'গণতন্ত্র' কি শেষ পর্যন্ত রক্ষা পাবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ১৬ মাসের মাথায় নির্বাচিত সরকারকে পদত্যাগে 'বাধ্য' করা সেনাবাহিনী প্রধানের সমঝোতার জন্য ৪৮ ঘণ্টার 'হুমকি'র পর বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, পাকিস্তান সরকার বড় ধরনের একটি 'বিপদ' কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। যেখানে অতীতে দুটি বড় দল, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও মুসলিম লীগের মধ্যে বৈরিতা বার বার সরকারের পতন ঘটিয়েছিল, এবারে দেখা গেল এ দুই বড় শক্তি 'সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা'র প্রশ্নে এক হয়েছে। ফলে ইমরান খানের তেহরিকে ইনসাফ ও ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরির আওয়ামী তেহরিকের ইসলামাবাদ ঘেরাও অভিযান সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি। সংসদে ইমরান খানের দলের ৩৪ জন এমপি পদত্যাগ করলেও তা গৃহীত হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত তার দল সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যেতে রাজি হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী তেহরিকও কিছুটা রণেভঙ্গ দিয়েছে। ফলে আপাতত মনে হচ্ছে, নওয়াজ শরিফের সরকার রক্ষা পেয়েছে। তবে এ 'সঙ্কট' বেশ কিছু প্রশ্ন রেখে গেছে, যা পাকিস্তানের গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক. সেনাবাহিনী এখনও একটি ফ্যাক্টর এবং সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ আগামীতে আবারও আলোচনায় আসবেন। দুই. পাকিস্তানের রাজনীতিতে পিপিপি ও মুসলিম লীগের মধ্যে 'সমঝোতা' যে কোনো সঙ্কট মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট। তিন. জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতাচ্যুত হলেও পর্দার অন্তরালে থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন। চার. তেহরিকে ইনসাফ ও আওয়ামী তেহরিক নামে দুটি দলের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সেনাবাহিনী এদের ব্যবহার করেছে। পাঁচ. নির্বাচনের প্রায় ১৬ মাস পর নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে ইমরান খান তার দলকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলেন না, বরং তিনি নিজেকেও বিতর্কিত করলেন। কেননা যদি সত্যিকার অর্থেই জালিয়াতির অভিযোগ থাকত, তাহলে নির্বাচনের পরপরই এ অভিযোগটি আনা উচিত ছিল। সেটা হয়নি। এমনকি বড় দল বা নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত দল পিপিপিও এ অভিযোগ কখনও তোলেনি। ছয়. পাকিস্তানে একটি তৃতীয় শক্তির কথা উঠেছে। অর্থাৎ মুসলিম লীগ ও পিপিপির বাইরে একটি তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় বসানো। কিন্তু তা এ মুহূর্তে সফল হয়নি। সাত. এ মুহূর্তে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা প্রাধান্য পেল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তা কতদিনের জন্য? আপাতত নওয়াজ শরিফ টিকে গেলেন বটে; কিন্তু নিঃসন্দেহে এ সঙ্কট থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন। বলা ভালো, গেল বছরের ১১ মের নির্বাচনে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ বিজয়ী হওয়ার পর ৪ জুন (২০১৩) তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর আগে দুই-দুইবার তিনি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু একবারও তিনি টার্ম পূরণ করতে পারেননি। ১৯৯০ ও ১৯৯৭ দুই-দুইবারই তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন; কিন্তু পাকিস্তানের অন্যতম 'রাজনৈতিক শক্তি' সেনাবাহিনীর কাছে তিনি কখনোই গ্রহণযোগ্য শক্তি ছিলেন না। ১৯৯৩ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খান তাকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও পেছনে ছিল সেনাবাহিনী। আর ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর সেনাপ্রধানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পরিণতিতে তিনি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। কিন্তু এবার? তিনি কী পারবেন তার পাঁচ বছরের টার্ম পূরণ করতে? এ প্রশ্নের জবাব এ মুহূর্তে দেয়া কঠিন। তবে সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের সঙ্গে তার সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হয়, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। জেনারেল রাহিলকে নিয়ে তারও ভয় অনেক। গেল (২০১৩) নভেম্বরেই জেনারেল রাহিল নয়া সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন। একজন নয়া সেনাপ্রধান পাকিস্তানের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে নওয়াজ শরিফের সম্পর্ক কেমন হয়, সে ব্যাপারটার প্রতিই তাই দৃষ্টি থাকবে অনেকের। নওয়াজ শরিফের জন্যও এটা একটা কঠিন পরীক্ষা। তার আস্থাভাজন জেনারেল তিনি খুব কমই পাবেন সেনাবাহিনীতে। দুইজন পূর্ণ জেনারেল ও ২১ জন লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মধ্যে তিনি রাহিলকে বেছে নিয়েছিলেন। এখন রাহিলই তাকে চোখ রাঙাল। কিয়ানির মতোই একজন পাঞ্জাবি জেনারেল যে পাক সেনাবাহিনীর স্বার্থ দেখবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তাই এমন কথা এরই মধ্যে চাউর হয়ে গেছে যে, নয়া সেনাপ্রধান অথবা সেনাবাহিনী যা চাইবে এর বাইরে যেতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের মধ্যকার সম্পর্কের ওপর আগামীতে প্রভাব বিস্তার করবে, তা হচ্ছে পাকিস্তানপন্থী তালেবানদের সঙ্গে সরকারের সংলাপ ও সংলাপের ভবিষ্যৎ, ভারতের সঙ্গে নওয়াজ শরিফের সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ, ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রী এখন যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন, সেনাবাহিনীর স্বার্থ যাতে বিঘি্নত না হয়, সেটা বিবেচনায় নিয়েই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। এক্ষেত্রে সরাসরি বিবাদে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। সিভিল প্রশাসনকে ক্ষমতায় রেখেই সেনাবাহিনী তাদের প্রভাব অব্যাহত রাখবে।
২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচন পাকিস্তানের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পাকিস্তানের ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো একটি সরকার তার টার্ম শেষ হওয়ার পরই ওই নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ওই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল। পাকিস্তানে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবিধানের ২০তম সংশোধনী এনে সেখানে পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। সাবেক বিচারপতি মির হাজার খান খোগো এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দেন। তারা সাফল্যের সঙ্গে এ সংসদ নির্বাচন (১৪তম) পরিচালনা করলেও পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে রেখে গেছেন নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে যে জঙ্গিবাদ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে এখন প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে, সরকার এ জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে এখন কী পদক্ষেপ নেবে? তিনটি প্রধান জঙ্গি সংগঠনের কথা বলা যায়, যাদের কর্মকান্ড আজ আন্তর্জাতিক পরিসরেও ব্যাপক সমালোচিত- তেহরিকে তালেবান, লস্কর-ই-তৈয়্যেবা ও জইসই মোহাম্মদ। এর মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়্যেবা ও জয়সই মোহাম্মদ পাকিস্তানের বাইরে ভারতে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে হামলার জন্য এ দুই জঙ্গি সংগঠনকে দায়ী করা হয়। এ দুটি সংগঠনের তৎপরতার কারণে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নত হয়নি। অন্যদিকে তেহরিকে তালেবান বেশি মাত্রায় আফগানিস্তানের তালেবানদের দ্বারা প্রভাবিত। তারা পাকিস্তানের ভেতরই তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ইসলামবিরোধী রাজনীতিকদের হত্যা, জনসভায় আত্মঘাতী বোমা হামলা তাদের অন্যতম কর্মকান্ড। নির্বাচনের আগে নওয়াজ শরিফ ও ইমরান খান তাদের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব করেছিলেন। এ সংলাপ আদৌ অনুষ্ঠিত হয় কিনা, সেটা বড় প্রশ্ন এখন।
একইসঙ্গে পাকিস্তানের অত্যন্ত ক্ষমতাধর বিচার বিভাগ, বিশেষ করে সাবেক প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মোহাম্মদ চৌধুরীর মতো ভূমিকা বর্তমান প্রধান বিচারপতি নেন কিনা তা লক্ষ্য রাখার বিষয়। সাম্প্রতিক সাবেক প্রধান বিচারপতির ভূমিকা, বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির ক্ষমতা হারানো, মকদুম শাহাবুদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন অযোগ্য ঘোষণা ইত্যাদি ঘটনায় প্রধান বিচারপতি তথা বিচার বিভাগের ভূমিকা তখন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। এ বিচার বিভাগের কারণেই সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ বেশ কিছুদিন গৃহবন্দি ছিলেন। নির্বাচনে তার প্রার্থিতা অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিল। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তাই বিচার বিভাগকে Activist Judges হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়। পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মন্তব্য করেছেন, বিচারপতি ইফতেখার চৌধুরী অবসর নিলেও উচ্চ আদালতে যেসব সিনিয়র বিচারপতি রয়েছেন, তারা বিচারপতি চৌধুরীর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিসহ নানা জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে যেতে পারেন। নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রয়েছে। সেই মামলা পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। এক্ষেত্রে হঠাৎ করেই বিচার বিভাগ এ ধরনের বিচার কার্যক্রম শুরু করবে না। সম্ভবত তারা অপেক্ষা করবে আরও কিছুদিনের জন্য। পর্দার অন্তরালে থেকে সেনাবাহিনী কী কলকাঠি নাড়ায়, সেটাও দেখার বিষয়। অনেকেই বিশ্বাস করেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিচার বিভাগের একটা 'সখ্য' রয়েছে। তবে নওয়াজ শরিফের মূল সমস্যা হচ্ছে অর্থনীতি। পাকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা খুবই শোচনীয়। প্রায় ১৮০ মিলিয়ন, অর্থাৎ ১৮ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটির প্রবৃদ্ধির হার মাত্র তিন ভাগ। বৈদেশিক রিজার্ভে যা আছে, তা দিয়ে মাত্র দুই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সাম্প্রতিক রেমিট্যান্সের প্রবাহও কম। বাজেট ঘাটতির হার শতকরা আট ভাগ। বেকার সমস্যা প্রবল। বিনিয়োগের পরিস্থিতিও আশাব্যঞ্জক নয়। জাতিসংঘের HDR (Human Development Report) অনুযায়ী ১৮৬টি দেশের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৬-এ। বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলক বিচারে পাকিস্তানের চেয়ে ভালো। বয়স্কদের মধ্যে শতকরা ৫৫ ভাগই অশিক্ষিত। পাখতুনখোয়া প্রদেশ কিংবা FATA এলাকায় শিশু, বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের স্কুলে না যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। এমনকি দাঙ্গাবিক্ষুব্ধ করাচি শহরের চারভাগের একভাগ শিশু স্কুলে যায় না। তবে পাঞ্জাব প্রদেশে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। আইএমএফের সঙ্গে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি নিয়ে আলোচনা আটকে আছে। সরকারের জন্য এটা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, তা এখন মানতে বাধ্য হবে সরকার। বিনিয়োগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিদ্যুৎ ঘাটতি। ১৫ বছর আগেও পাকিস্তান ছিল বিদ্যুতে সারপ্লাস। তখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের পরিস্থিতিকে মেলান যাবে না। বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার পাকিস্তানে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, অসমতা ইত্যাদি নানা সমস্যা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থাকে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় নিয়ে গেছে। এদিকে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নয়া সরকারকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে। পাকিস্তান-ইরান গ্যাস পাইপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচন্ড আপত্তি রয়েছে। পাকিস্তান তার জ্বালানি সঙ্কট মেটাতে ইরান থেকে গ্যাস আমদানি করা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তাতে আপত্তি রয়েছে। এমনিতেই পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে অব্যাহত ড্রোন বিমান হামলা এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি করেছে। বিগত সরকার ওই ড্রোন বিমান হামলা বন্ধের ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। নয়া সরকারের জন্য বিষয়টি হবে বেশ স্পর্শকাতর। কেননা ওই ড্রোন হামলা পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী একটি জনমত তৈরি করেছে। নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় ইমরান খান ড্রোন বিমান গুলি করে ফেলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভারতের সঙ্গেও সম্পর্কের তেমন উন্নতি হয়নি। গেল বছর পাকিস্তানের কারাগারে একজন ভারতীয় বন্দির মৃত্যুকে (যিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর এজেন্ট ছিলেন) কেন্দ্র করে এ সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছিল। একই সঙ্গে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এখন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য চিন্তার অন্যতম কারণ। বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশে উন্নয়ন ঘটলেও খোদ বেলুচিস্তানে এর ছোঁয়া লাগেনি। বরং বেলুচিস্তানের অভিযোগ রয়েছে, সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের জাতীয় নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। বেলুচিস্তানে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম হয়েছে, যারা স্বাধীন বেলুচ রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা করছে। ওই বেলুচিস্তানের ভবিষ্যৎ এখন নানা প্রশ্নের মুখে। সাম্প্রতিক বেলুচিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। বেলুচিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ইরানি প্রদেশ সিসতান বেলুচিস্তানের। অন্যদিকে বেলুচিস্তানের গাওদারে রয়েছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর। চীন এ বন্দরটি নির্মাণ করে দিয়েছে। ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গাওদারের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। এমনকি সিসতান বেলুচিস্তানের সঙ্গে একত্রিত হয়ে অদূর ভবিষ্যতে একটি গ্রেটার বেলুচিস্তান রাষ্ট্র গঠন বিচিত্র কিছু নয়। ভারত মহাসাগরে জ্বালানি সরবরাহ লাইন নিশ্চিত রাখা কিংবা তেহরানের কেন্দ্রীয় সরকারকে 'চাপে' রাখার কাজে এ বেলুচিস্তান আগামী দিনে বাইরের শক্তির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। অনেকেরই মনে থাকার কথা, বেলুচিস্তানের গভীর মরুভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমান ঘাঁটি ছিল। ২০১২ সালে পাকিস্তানের আপত্তির মুখে যুক্তরাষ্ট্র এ ঘাঁটিটি বন্ধ করে দেয়। সুতরাং সরকার বেলুচিস্তানের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়, সে ব্যাপারে লক্ষ থাকবে অনেকের। অব্যাহত জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকিস্তানে বিদেশি বিনিয়োগ নেই। সরকারের আয় কমে গেছে। রেমিট্যান্সের প্রবাহও কম। এখন নয়া সরকারের দায়িত্ব হবে বিদেশিদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। একটি তরুণ প্রজন্মের জন্ম হয়েছে পাকিস্তানে। মোট ভোটারের তিনভাগের একভাগ হচ্ছে এ তরুণ প্রজন্ম। ইমরান খান হচ্ছেন এ তারুণ্যের প্রতীক। যদিও তার বয়স ৬২, তথাপি ওই তরুণদের নিয়েই এক 'নয়া পাকিস্তানের' গল্প শুনিয়েছিলেন ইমরান খান। তিনি যাদের নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন, তাদের বেশিরভাগের বয়স ৩৫-এর নিচে। এ তরুণ সমাজকে নিয়ে এখন কাজ করতে হবে নয়া সরকারকে।
আপাতত পাকিস্তান পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনোরকম মন্তব্য করা দুরূহ। কেন না, আন্দোলনকারীরা ক্ষণে ক্ষণে সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে তারা এর শেষ দেখতে চায়। এখন দেখার বিষয়_শেষাবধি কী হয়? নওয়াজ শরিফের ভাগ্যে ও তার গণতন্ত্রেরই বা কী হয়।
Daily Alokito Bangladesh
02.09.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment