সোশ্যাল
মিডিয়ায় একজন অস্ত্রবাজের ছবি ছাপা হয়েছে, যিনি একটি পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এখন। এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে আমাকেও
প্রশ্ন করেছেন। তাহলে সমাজ কোথায় যাচ্ছে- যেখানে একজন অস্ত্রবাজকে আমরা
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি! যখন তিনি শিক্ষক, তখন তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণ
নেননি। যখন ছাত্র ছিলেন, তখন তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। যদিও তিনি
তা স্বীকার করেন না। অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, এটা ফটোশপের কাজ
কারবার। কাট অ্যান্ড পেস্টের কথাও বলেছেন। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে?
ছাত্রলীগের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার নেতাদের কেউ কেউ গণমাধ্যমে
জানিয়েছেন, তিনি আমন্ত্রিত হয়ে একটি বনভোজনে গিয়েছিলেন, আর সেখানেই ওই
ছবিটি তোলা হয়। এতে করে স্পষ্ট হয়, ছবিটির সত্যতা আছে। তবে এটাও সত্য, তার
নিজের কিছু শত্র“ ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে, যারা এটি গণমাধ্যম তথা সোশ্যাল
মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে।
এই ছবি ছাপা হওয়ায় অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এক. তিনি নিজেই শুধু বিতর্কিত হলেন না, বরং পুরো শিক্ষক সমাজকে তিনি জাতির
কাছে বিতর্কিত করলেন। এই দায়ভার তাকে নিতেই হবে। নতুবা এ বিতর্ক চলতেই
থাকবে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আরও বিতর্কিত হয়ে পড়বে। আমার ছাত্রতুল্য
ওই শিক্ষককে আমি অনুরোধ করব শিক্ষা ছুটিতে যাওয়ার, যাতে করে নতুন বিতর্ক আর
সৃষ্টি না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাতে
পারে। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে।দুই.
এর দায়ভার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঘাড়েও বর্তায়। উপাচার্য
মহোদয় নিজে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি এখন আর আওয়ামী যুবলীগের
প্রেসিডিয়াম সদস্য নন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ থাকা পর্যন্ত
ছিলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিনি
প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে পদত্যাগ করেছিলেন, এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে
পারি। উপাচার্য হিসেবে তিনি যখন দায়িত্ব পালন করেন, তখন রাজনৈতিক আনুগত্যটা
বিবেচনায় নিয়েছিলেন, এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আছে। সেই বিবেচনায় তিনি ওই
অস্ত্রবাজকে, যিনি একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন, তার নিজ
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি দিয়েছিলেন- এ অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আছে।
ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয়ও
ভালো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, কলেজের
শিক্ষকদের অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে নিয়োগ (প্রকাশনা ও পদোন্নতির শর্ত
পূরণ না করা) ইত্যাদি এন্তার অভিযোগ তার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করেছে। একটা নতুন
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে ধরনের একাডেমিক পরিবেশ দরকার, তা তিনি নিশ্চিত
করেছেন, এটা দিব্যি দিয়ে বলতে পারব না। এখন অস্ত্রবাজ শিক্ষক তার
বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়ায় খুব সঙ্গত কারণেই মানুষ বলতে শুরু করবে, শিক্ষক
নিয়োগের প্রক্রিয়া সেখানে সুষ্ঠু হয়নি। রাজনৈতিক বিবেচনা সেখানে প্রাধান্য
পেয়েছে বেশি।তিন. একজন সিনিয়র সাংবাদিক আমাকে জানিয়েছেন, এ ধরনের প্রায়
৩০ জন অস্ত্রবাজ শিক্ষক বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তারাও
অস্ত্রের ট্রেনিং নিয়েছিলেন বলে তিনি আমাকে অবহিত করেছেন। তিনি একটি ইংরেজি
দৈনিকের বিশেষ প্রতিনিধি এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে রিপোর্ট করেন।
সুতরাং তার প্রাপ্ত তথ্যে কোনো ঘাটতি আছে, এটা আমার মনে হয়নি। যদি তথ্যটি
সত্য হয়ে থাকে (?), তা আমাদের জন্য আরেক দুশ্চিন্তার কারণ।চার. ওই
ছবিটি প্রকাশ পাওয়ার পেছনে কাজ করছে ইবির ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব। এ
অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রায় প্রতিটি পেশাতেই আছে এবং একজন কর্তৃক অপরজনকে ঘায়েল
করার নগ্ন প্রতিযোগিতা আমরা বারবার প্রত্যক্ষ করি। এ ক্ষেত্রেও এমনটি
হয়েছে। দ্বন্দ্বটা রাজনৈতিক হওয়া ভালো। কিন্তু সেটা যদি ব্যক্তি চরিত্রকে
স্পর্শ করে, তা শুধু যে সংগঠনের জন্যই খারাপ সংবাদ তা নয়, বরং তা সমাজ তথা
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্যও একটি খারাপ দৃষ্টান্ত। ওই ঘটনায় যিনি প্রশিক্ষক
ছিলেন এবং যিনি ছাত্রলীগের ইবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়কদের একজন, তাকে
সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু শুধু বহিষ্কারই কি সবকিছু? এতে করে
সংগঠনের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হল, তা এখন কাটিয়ে ওঠা যাবে কীভাবে?পাঁচ.
ওই ঘটনা আমাদের দেখিয়ে দিল শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতিমালায়
পরিবর্তন আনতে হবে। এখন শিক্ষক নিয়োগ হয় রাজনৈতিক বিবেচনায় ও উপাচার্যের
পছন্দের তালিকা অনুযায়ী। ভালো রেজাল্ট করেও শুধু দলীয় প্রার্থী না হওয়ায়
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাননি এ সংখ্যা শত শত। অন্যদিকে নিয়োগ পাওয়া তরুণ
শিক্ষকদের পাঠদানের সক্ষমতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়,
আরেকটি বড় অভিযোগ হচ্ছে, তরুণ শিক্ষকরা নিয়োগ পেয়ে আর ক্লাস নিতে কোনো
আগ্রহ দেখান না। এ ধরনের একটি সংবাদ সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত
হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এখানেই যে, একজন শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন কি-না তা
দেখার কেউ নেই। উপাচার্য মহোদয়রা এ কাজটি কখনোই করেন না। সিনিয়র শিক্ষকরাও
কখনোই এটি করেন না, কারণ এতে করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদের
নির্বাচনে ভোট হারাতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভোটার রিক্রুট হয়, শিক্ষক
রিক্রুট হয় না।ছয়. আমি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, শিক্ষক নিয়োগের
ক্ষেত্রে বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তন করে তিন পদ্ধতিতে এই রিক্রুট সম্পন্ন
করতে হবে। পিএসসির মতো একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন
করতে হবে। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ৩৫। আরও দুটি চালু হবে।
ফলে এ দায়িত্বটি উপাচার্যদের হাতে থাকায় রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পায়
বেশি। একটি কমিশন থাকলে নিরপেক্ষ ও ভালো শিক্ষক নিয়োগের সম্ভাবনা বেশি
থাকে। মঞ্জুরি কমিশনের হাতেও এ নিয়োগের বিষয়টি দেয়া যেতে পারে। তিনভাবে এ
নিয়োগ সম্পন্ন হবে। এক. প্রার্থীর অতীত রেজাল্ট। দুই. লিখিত পরীক্ষা। তিন.
ডেমো অর্থাৎ তিনি পড়াতে পারেন কি-না তা যাচাই করা। একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল এ
কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং চূড়ান্ত প্রার্থীদের নিয়োগ দেবে। এ ব্যবস্থা
থাকলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে এরকমটি হতো না।সাত. ১৯৭৩
সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও বেশকিছু পরিবর্তন দরকার। তথাকথিত স্বাধীনতার
নামে এ আইনের অপব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকরা স্বাধীনতা ভোগ করবেন, এটা
ঠিক আছে। কিন্তু তথাকথিত স্বাধীনতার নামে তিনি দুজায়গায় চাকরি করবেন,
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি সময় দেবেন, এটা হতে দেয়া যাবে না। যেসব
শিক্ষক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজনেস স্কুলের সঙ্গে জড়িত, তারা
প্রতিদিন কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেলা ৩টা পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
ক্লাস নিচ্ছেন। ফলে তার নিজ প্রতিষ্ঠানে তার ছাত্ররা তাকে সময়মতো পায় না। এ
ক্ষেত্রে আইনটি আরও সুস্পষ্ট করা দরকার। যেহেতু এর সঙ্গে অর্থপ্রাপ্তির
একটি বিষয় আছে, সেহেতু তরুণ শিক্ষকরা টাকার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
দিকে ঝুঁকবেন। এটা বন্ধ করা যাবে না। এজন্য আইনটি আরও স্পষ্ট করা দরকার।
শিক্ষকদের জন্য আলাদা পে-স্কেল থাকাটাও জরুরি।একসময় শিক্ষকতা ছিল মহান
পেশা। এখন এটা আর আছে কি-না জানি না। ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকতার ওপর আমার আর
আস্থা নেই। এটাকে এখন আর পেশা হিসেবে দেখা হচ্ছে না, দেখা হচ্ছে একটা চাকরি
হিসেবে। কিন্তু আমাদের যারা শিক্ষক ছিলেন, তাদের অনেকেই এটাকে কখনও চাকরি
হিসেবে নেননি। নিয়েছিলেন মহান পেশা হিসেবে। আজ ওই অস্ত্রবাজকে দেখে আমার
আস্থার জায়গাটা আর থাকে না। যদিও একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে পুরো শিক্ষক
সমাজকে আমি দায়ী করতে পারব না। করাটা ঠিকও হবে না। কিন্তু একটা দাগ তো পড়ল!
আমার ধারণা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত ৫ থেকে ৭ বছরে যারা শিক্ষক
হিসেবে রিক্রুট হয়েছেন, তাদের অনেকের অতীতই অন্ধকার। ফেসবুকে দেখলাম,
জাহাঙ্গীরনগরের এক অ্যাকটিভিস্ট লিখেছে, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ হলে
অস্ত্রবাজরা জায়গা নেবেই। এর পেছনে সত্যতা কতটুকু আছে বলতে পারব না। তবে
অভিযোগ আছে। শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, আমি জানি না। কিন্তু এর
দায়ভার কি তিনি অস্বীকার করতে পারবেন?আওয়ামী লীগ সবসময়ই
বিএনপি-জামায়াতের অতীত ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। টিভিতে প্রাইম টাইমে
একটি অনুষ্ঠান হয়, যেখানে বলা হয় বিএনপির কর্মীরা অতীতে কোথায় কোথায়
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছিল। পত্রিকায় দেখলাম, আওয়ামী লীগের উদ্যোগে
বিএনপি-জামায়াতি নৃশংসতার ভিডিও যাচ্ছে জাতিসংঘে (১০ সেপ্টেম্বর)।
জাতিসংঘের মূল অধিবেশন শুরু হচ্ছে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে। শোনা যাচ্ছে, ওই
অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধির কাছে তুলে দেয়া হবে এ
ভিডিও। বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ ঘটনায় পাপুয়া নিউগিনির প্রতিনিধির কী
বলার বা জানার আছে, আমি জানি না। কিন্তু এটা বুঝতে পারি, এতে করে বড়
দলগুলোর মাঝে বৈরিতা আরও বাড়বে। এখন তারা যদি আরেকটা ভিডিওচিত্র তৈরি করে,
তাতে অস্ত্রবাজ ওই শিক্ষকের ছবি যদি থাকে, তাহলে কেমন হবে? নিশ্চয়ই সরকার
বিব্রত হবে। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। সমাজে খারাপ লোক আছে প্রতিটি সেক্টরে।
সবাই ধোয়া তুলসীপাতা নন। শিক্ষকতায় খারাপ লোক থাকতেই পারে। এজন্য সরকারকে
দোষ দেয়াও ঠিক হবে না। হয়তো ওই রিক্রুটটি সঠিক ছিল না। এখন আইনের বিধানমতে
আইনশৃংখলা বাহিনী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়,
তাহলে কারও কিছু বলার থাকবে না। এ সিদ্ধান্তটি নেয়ার আগে স্বয়ং ওই ব্যক্তি
নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যাতে সব বিতর্কের অবসান ঘটেআরও একটা কথা-
শিক্ষাঙ্গন সবার, সব দলমত অনুসারী সব শিক্ষকের। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়।
খুব স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থকরা ভিসি হবেন। অর্থমন্ত্রী
আবুল মাল আবদুল মুহিত ড. আবুল বারকাতের প্রসঙ্গে একটি কথা বলেছেন- আওয়ামী
লীগে অনেক ইনটেলেকচ্যুয়াল জায়গাটি আছে। তাদের দেখতে হয়। সহজ বাংলায় এর অর্থ
হচ্ছে, আওয়ামী লীগে অনেক বুদ্ধিজীবী আছে। সবাইকেই সুযোগ দিতে হবে। শুধু ড.
আবুল বারকাতকে দিলেই চলবে না! প্রশ্নটা এখানেই। যাদেরই সুযোগ দিচ্ছেন,
তাদের সবার মেধা ও যোগ্যতা কি আছে? ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। যাদের উপাচার্য
পদে, পিএসসিতে, মঞ্জুরি কমিশনে বসানো হয়েছে, তাদের অনেকের কর্মকাণ্ডই নানা
প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কাহিনী একসময়
সংবাদপত্রের নিত্য সংবাদ ছিল। তিনি এখন নেই বটে, কিন্তু বাকিরাও কম যান না।
প্রশ্ন সেখানে নয়। এ আমলে একজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ভিসি হবেন, তাতে আপত্তি
নেই। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে শুধু আওয়ামী লীগের মতাদর্শের শিক্ষকদের
বিবেচনায় নেয়া হবে, এটা মানতে কষ্ট হয়। আমি অনেক ভালো ছাত্রকে চিনি ও জানি,
যারা ছাত্র অবস্থাতে গবেষণা প্রবন্ধ লিখে সবার দৃষ্টি কেড়েছে। শুধু
ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে
শিক্ষকতা করার সুযোগ তারা পায়নি। এখন একজন অস্ত্রবাজের ঘটনা দেখিয়ে দিল
ক্যাম্পাসে এরকম আরও অনেক অস্ত্রবাজ লুকিয়ে থাকতে পারে শিক্ষকতার আড়ালে!
শিক্ষামন্ত্রী ভালো মানুষ। তিনি কি একটি তদন্তের উদ্যোগ নেবেন? তিনি কি
খতিয়ে দেখবেন শিক্ষক নিয়োগে ত্র“টি হয়েছে কোথায়? এটা মঞ্জুরি কমিশন করতে
পারে। একটি কমিটি গঠন করে বিষয়টি তলিয়ে দেখতে পারে। কিন্তু আজাদ চৌধুরীর
সদিচ্ছা থাকলেও তিনি এটা পারবেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে অনুমতি দেবে
না। ফলে অযোগ্যরা থেকেই যাবেন ক্যাম্পাসগুলোতে।যখন এ নিবন্ধটি তৈরি
করছি, তখন পর্যন্ত আমি নিশ্চিত নই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আদৌ কোনো তদন্ত
কমিটি গঠন করেছে কি-না। উপাচার্য মহোদয়ের ইচ্ছা থাকলেও তিনি পারবেন না।
আমাদের এ বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। আর ভয়টা এখানেই। আগামী দিনগুলোতে আমরা
কেমন ক্যাম্পাস পাব? একজন অস্ত্রবাজ যখন শিক্ষক হন, তখন তিনি একজন
অস্ত্রবাজকেই তৈরি করবেন। আর একজন ভালো শিক্ষক একজন ভালো ছাত্রই তৈরি
করবেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, ভালো শিক্ষকের বড় অভাব ক্যাম্পাসগুলোতে। আজ যিনি
শিক্ষক হয়ে ক্লাসে যান না, রাজনীতি করেন; তিনি তো তার রাজনীতির মতাদর্শের
ছাত্রছাত্রীদেরই প্রমোট করবেন। আর উপাচার্য মহোদয়রা যখন ভোটের রাজনীতির
কারণে তরুণ শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, তখন ওই শিক্ষকরা আর একাডেমিক
জগতে বিচরণ করে না। এটাই বাস্তবতা। অস্ত্রবাজ শিক্ষকের ছবি দেখে আমি কষ্ট
পেয়েছি। কিন্তু এই কষ্ট আমাকে শক্তি জোগাবে না।
Daily JUGANTOR
16.09.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment