আগামী
২৫ নভেম্বর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন
অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সার্কের চার্টারে প্রতি এক বছর পর পর শীর্ষ
সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সার্কের ২৯ বছরের ইতিহাসে সম্মেলন হয়েছে
১৭টি। সর্বশেষ ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১১
নভেম্বর মালদ্বীপের পর্যটন শহর আদ্দু সিটিতে। পরবর্তী সম্মেলন শ্রীলঙ্কায়
২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শ্রীলঙ্কা সরকারের অপারগতার কারণে
নেপাল পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক হয়। তবে যে প্রশ্নটি ইতোমধ্যেই
বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে, তা হচ্ছে সার্ক কি তার গুরুত্ব হারিয়েছে?
সার্কের ২৯ বছরের ইতিহাসে বড় কোনো অর্জন নেই। ভারত সার্কের মধ্যে বড় দেশ।
কিন্তু ভারতের একটি কর্তৃত্ববাদী আচরণ সার্কের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও কোনো বড় ধরনের অগ্রগতি নেই। ভারত ও বাংলাদেশ আরেকটি
আঞ্চলিক জোট বিসিআইএম-এর ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে ও সে লক্ষ্যে কাজ করছে।
ফলে সার্ক গৌণ হয়ে পড়ছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় যে
সংগঠনটির জন্ম তার বয়স প্রায় ২৯ বছর। এই ২৯ বছরে মোট ১৭টি সম্মেলন করেছে
সার্ক। ২০১৪ সালে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে নেপালে। এই যে
১৭টি সম্মেলন তাতে অর্জন কতুটুকু? ২০ দফা ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে আদ্দু
শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছিল। কিন্তু মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশের লাভ ওই শীর্ষ
সম্মেলন থেকে তেমন কিছুই হয়নি। মালদ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ধরনের ঝুঁকির
মাঝে রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেই বলা হচ্ছে বিশ্বের উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে, তা
যদি রোধ করা সম্ভব না হয়, তাহলে এ শতাব্দীর শেষের দিকে দেশটি সাগরের বুকে
হারিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট
মোহাম্মদ নাশিদ সমুদ্রের নিচে কেবিনেট মিটিং পর্যন্ত করেছিলেন, যা গোটা
বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। কিন্তু আদ্দু সিটিতে যখন শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা
হয়, তখন মালদ্বীপের ওই ভূমিকার সঙ্গে দেশটির আগের ভূমিকাকে আমি মেলাতে পারি
না। কেননা ৮টি দেশের সরকার তথা রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনে অংশ নেয়া ও
তাদের সঙ্গে আসা শত শত সরকারি কর্মচারী তথা গণমাধ্যম কর্মীদের বিমানে আসা ও
যাতায়াতের জন্য তখন যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছিল তা দেশটির জন্য ভালো
নয়। এমনকি তা ছিল জলবায়ু পরিবর্তনে মালদ্বীপের অবস্থানের পরিপন্থী। পাঠক
আপনাদের ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত COP ১৫ (15th Conference of the
pouties)-এর কথা একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। কিয়োটো প্রটোকল-পরবর্তী জলবায়ু
সম্মেলনগুলো জাতিসংঘ কর্তৃক COP নামে অভিহিত করা হয়। উন্নত ও অনুন্নত
দেশগুলো আগামীতে কি পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ কমাবে সে লক্ষেই COP সম্মেলনগুলো
হচ্ছে (গেল বছরে দোহায় অনুষ্ঠিত COP ১৯ এ কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি)।
এটা এখন স্বীকৃতি যে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের ফলে বিশ্বের উষ্ণতা
বাড়ছে। কোপেনহেগেন সম্মেলনে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১৫ হাজার প্রতিনিধি
অংশ নিয়েছিলেন। খরচ হয়েছিল ১২২ মিলিয়ন ডলার (সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের
থাকা-খাওয়ার খরচ আলাদা)। মজার ব্যাপার, হাজার হাজার প্রতিনিধি গিয়েছিলেন
কার্বনের নিঃসরণ কমাতে একটি চুক্তি করতে। কিন্তু তাদের আনা-নেয়া, গাড়ি
ব্যবহার করে তারা নিজেরাই বায়ুমণ্ডলে ১২ দিনে ৪০ হাজার ৫০০ টন কার্বন
ছড়িয়েছেন। এই তথ্যটি জাতিসংঘের এবং এটি টাইম সাময়িকীতে ২০০৯ সালের ৮
ডিসেম্বর ছাপা হয়েছিল। আদ্দু সিটিতে প্রতিনিধিরা কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ
করেছেন বা মালদ্বীপ সম্মেলন আয়োজনের পেছনে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে তার
পুরো হিসাব আমার কাছে জানা নেই। কোনো সাংবাদিকের লেখনীতেও আমি তা পাইনি।
শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই নয়, বিশ্বব্যাপী যেখানে অর্থনীতিতে মন্দাভাব বিরাজ
করছে, সেখানে এ ধরনের শীর্ষ সম্মেলন ও ‘ফটোসেশন’ করার মধ্যে কোনো ধরনের
যৌক্তিকতা আছে বলে আমার মনে হয় না। কাঠমান্ডু সম্মেলনের ক্ষেত্রেও একই কথা
প্রযোজ্য। অতীতের প্রতিটি সম্মেলনের মতো আদ্দু সম্মেলনেও ২০ দফার একটি
ঘোষণা ছিল। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া যেসব সমস্যার সম্মুখীন, সে ব্যাপারে
সুস্পষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা ওই ঘোষণাপত্রে ছিল না। কোনো সুস্পষ্ট
কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়নি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সময় যখন এ ধরনের
একটি সম্মেলন হয়, তখন আমাদের প্রত্যাশা থাকে মন্দা মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার
দেশগুলো যৌথভাবে একটি কর্মসূচি নেবে। কিন্তু কোনো কর্মসূচির কথা উল্লেখ
নেই ২০ দফায়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতি ভালো নয়।
বাংলাদেশের রফতানি আয় কমছে ৩৯ ভাগ। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ২৩ ভাগ। সরকারি
হিসাব অনুযায়ী সরকার গেল জুলাই মাস পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে
হাজার হাজার কোটি টাকা। ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। এই চিত্র নেপাল,
শ্রীলঙ্কা কিংবা মালদ্বীপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মালদ্বীপের একমাত্র আয়
পর্যটন খাত। তাতে মন্দার কারণে ধস নেমেছে। এখন করণীয় কী, সে ব্যাপারে
সিদ্ধান্ত নেয়া যেত, কিন্তু তা নেয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, একটি দক্ষিণ এশীয়
ইউনিয়ন গড়ার লক্ষ্যে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট’ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। যেখানে
১৯৫৭ সালে যাত্রা শুরু করা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইসি থেকে) এখন ভেঙে যাওয়ার
মুখে সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়ন গড়ার। গ্রিস ও
ইতালির অর্থনৈতিক সংকট প্রমাণ করেছে, ছোট ও বড় অর্থনীতি নিয়ে গড়া ঐক্য
সাময়িক, দীর্ঘস্থায়ী হয় না। জার্মানি ও ফ্রান্স আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের
বিভক্তির কথা বলছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ
প্রশ্নের মুখে থাকবেই। ভারত বড় অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের
ব্যাংকিং গ্রুপ সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে ভারত হবে বিশ্বের
বৃহত্তম অর্থনীতি। ওই সময় ভারতের জিডিপির (ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে) পরিমাণ
গিয়ে দাঁড়াবে ৮৫ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন ডলার। চীন থাকবে দ্বিতীয় অবস্থানে।
মানুষের মাথাপিছু আয় হবে ৫৩ হাজার ডলার। এমনকি বর্তমান অবস্থা দিয়েও যদি
বিচার করি, তাহলেও ভারতের অর্থনীতির সঙ্গে ভুটান বা নেপালের অর্থনীতিকে
মেলানো যাবে না। বিশাল একটি পার্থক্য রয়ে গেছে। বড় অর্থনীতি ছোট অর্থনীতিকে
গ্রাস করে। ফলে রাজনৈতিক ঐক্য এক ধরনের অর্থনৈতিক আধিপত্যে পরিণত হয়,
যেমনটি হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে। তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ
করে হিমালয়ের হিমবাহগুলো যে গলে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে কী কর্মসূচি নেয়া যায়,
তার কোনো উল্লেখ নেই। হিমালয়ের গাঙ্গোত্রি হিমবাহ গত ৩০ বছরে ১.৫
কিলেমিটার দূরে সরে গেছে। হিমালয়ে উষ্ণতা বাড়ছে। অন্যদিকে সমুদ্রের পানি এক
মিটার বাড়লে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রগর্ভে বিলীন
হয়ে যাবে। ২০ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে বড় শহরগুলোতে আশ্রয় নেবে।
মালদ্বীপের কথা উল্লেখ নেইবা করলাম। এ ক্ষেত্রে করণীয় কি? আদ্দু ঘোষণায়
কোনো কর্মসূচির কথা বলা হয়নি। অথচ এ অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মালদ্বীপ
বা বাংলাদেশ আদৌ দায়ী নয়। বাংলাদেশ বছরে কার্বন নিঃসরণ করে মাত্র ০.২ টন।
কিন্তু ভারত করে অনেক বেশি। জলবায়ু আলোচনায় বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান এক
নয়। ভারত উন্নয়নশীল বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশের গ্রুপে (ব্রাজিল, চীনসহ)
অন্তর্ভুক্ত। মূলত ভারতের কারণেই এ অঞ্চলে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে
কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে গঠিত
গ্রুপে তার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে। এই দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে
কার্বন নিঃসরণ ৮৫ ভাগ কমাতে চায়। ভারতের অবস্থান এটা নয়। চতুর্থ, দরিদ্রতা এ
অঞ্চলের বড় সমস্যা। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ৩০ ভাগ এখনো অতিদরিদ্র। ভারতে
২০০৪ সালে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ২৭ দশমিক ৫ ভাগ, ২০১২ সালে তা বেড়েছে
৩৭ দশমিক ০২ ভাগে। প্রতিদিন ভারতে ৫ হাজার শিশু মারা যায় অপুষ্টি আর
দরিদ্রতার কারণে। ভারতে কোনো কোনো রাজ্যে দরিদ্রতা অনেক বেশি। ১৯৯১ সালের
কলম্বোর সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দরিদ্রতা দূরীকরণের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন
করা হয়েছিল। ১৯৯২ সালে কমিশনের রিপোর্ট গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ
এশিয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমেনি। কমিশন সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমানোর
কথা বললেও ভারত এবং পাকিস্তান ব্যয় বরাদ্দ কমায়নি। ওই রিপোর্ট কাগজ-কলমেই
থেকে গেছে। পঞ্চম, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য সম্পর্ক
বাড়েনি। এ অঞ্চলের দেশগুলোর বাণিজ্যের একটা ক্ষুদ্র অংশ পরিচালিত হয়
নিজেদের মধ্যে। বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়েনি। দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের
বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। বাংলাদেশি পণ্য রফতানির তুলনায় আমদানি বেড়েছে প্রায় ৮
গুণ। একমাত্র শ্রীলঙ্কা ছাড়া প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য
ঘাটতি রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে
বেশি। অথচ সার্কের এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই। ষষ্ঠ, ভারত বড় অর্থনীতির
দেশ হওয়ায় এ অঞ্চলে দেশটি এক ধরনের অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে, যা
আঞ্চলিক সহযোগিতার পথে প্রধান অন্তরায়। সপ্তম, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে
অতীতে ভিসামুক্ত যাতায়াতের প্রস্তাব করা হলেও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত
হয়নি। অথচ শেঙেন চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপ যাতায়াত অবাধ করেছে (সব দেশ অবিশ্যি
তাতে রাজি হয়নি। ২৭টির মাঝে ১৫টি দেশ শেঙেন চুক্তি স্বাক্ষর করে)। অষ্টম,
আদ্দু ঘোষণায় সাফটা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল (২০০৬ সাল
থেকে কার্যকর)। কিন্তু ভারতের নানাবিধ শুল্ক বাধার কারণে সাফটা পূর্ণ
কার্যকর হচ্ছে না। ভারত অনেক পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের ঘোষণা দিলেও
সেখানে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। অনেক পণ্যই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উৎপাদন
করে না। এমনকি নিগেটিভ লিস্টের কারণেও অনেক পণ্যের ভারতের প্রবেশাধিকার
সীমিত। নবম, দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় সমস্যা জ্বালানি সংকট। বাংলাদেশ কিংবা
শ্রীলঙ্কার মতো দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। আদ্দু ঘোষণায় বিদ্যুতের বাজার
খোঁজার জন্য একটি সমীক্ষা চালানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ
উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও বিতরণ ব্যবস্থার ওপরই নির্ভর করছে বিদ্যুৎ সংকট
সমাধানের একমাত্র পথ। নেপাল ও ভুটানে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা
রয়েছে। কিন্তু এই দুটি দেশ থেকে বিদ্যুৎ আনতে হলে বাংলাদেশকে ভারতের মর্জির
ওপর নির্ভর করতে হবে। আর ভারত বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে দেখে। সার্ক শীর্ষ
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের সপ্তকোসি হাই ড্যাম থেকে ১
হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই বাঁধটি বাংলাদেশের
ঠাকুরগাঁও থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে নেপালের অভ্যন্তরে নির্মিত হবে।
সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে ভালো। কিন্তু ভারতের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ আনতে হবে।
সমস্যাটা এখানেই। ভারত নিজে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন
করছে। কিন্তু ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে ভারতের আপত্তি রয়েছে। ভারতের বৈদেশিক
নীতিতে বহুপাক্ষিকতা নেই, যা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে। ফলে বিদ্যুতের বিতরণ
নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। দশম, সার্ক ফুড ব্যাংক, বীজ ব্যাংক, দুর্যোগ
মোকাবিলায় ও সন্ত্রাস দমনে সমন্বিত প্রচেষ্টার যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল
তা ভালো। তবে আগামী দিনগুলোই বলবে এ ব্যাপারে সার্কের সফলতা কতটুকু। সীমিত
পর্যায়ে হলেও সার্কের সফলতা কিছুটা রয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সার্ককে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। চীনকে সার্কের
কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা যেতে
পারে। আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত না হলেও সার্কের সদস্য। এটা
সম্ভব হয়েছে শুধু ভারতের কারণে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে চীন খুব বেশি
দূরে নয়। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকেও চীন খুব বেশি দূরে নয়। চীন নিকট
প্রতিবেশী। এখন চীন সার্কের সদস্য হলে বিশ্ব আসরে সার্কের গ্রহণযোগ্যতা
বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে সার্কের নামের পরিবর্তন হতে পারে। অতীতে বিমসটেকও
পরিবর্তিত হয়ে BBIMSTEC (Bay of Bengol Initiative for Multi Sectoral
Technical and Economic Cooperation) হয়েছে। বিসিআইএম-এ চীন রয়েছে। ভারতও
আছে। তাই সার্কের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হলে ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে। নেপাল
শীর্ষ সম্মেলনে মোদি যোগ দেবেন। তিনি ভারতের নয়া প্রধানমন্ত্রী। দক্ষিণ
এশিয়ার ব্যাপারে তার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা আছে। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি ভুটান
ও নেপাল সফর করেছেন। সুতরাং বোঝাই যায় মোদির পররাষ্ট্র নীতিতে দক্ষিণ
এশিয়ার দেশগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু অর্থনৈতিক
আধিপত্যের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কাছে
তিনি গ্রহণযোগ্য হবেন না। আরো একটা কথা। আল কায়েদার নেতা জাওয়াহিরির একটি
টেপ প্রচারিত হয়েছে গেল সপ্তাহে। সেখানে তিনি ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে
জিহাদের কথা বলেছেন। এটা ভারত ও বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ। ভারত কোনো
কোনো রাজ্যে রেড এলার্ট জারি করেছিল। এখন সার্কের আওতায় সন্ত্রাসবাদ
মোকাবিলায় গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় তথা যৌথ কর্মসূচি নেয়া প্রয়োজন। নেপাল
শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি প্রাধান্য পাবে, এটাই আমরা আশা করছি। বাংলাদেশও এ
ব্যাপারে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারে। তাই সার্কের ১৮তম শীর্ষ
সম্মেলন নিয়ে সবার একটা আগ্রহ থাকছেই।
Daily Manobkontho
09.09.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment