২৩
সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশন বসছে। এবারের অধিবেশনের একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান
কি মুন অধিবেশন শুরুর আগে জলবায়ু পরিবর্তনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে
বিবেচনায় নিয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য বিশ্বের নেতাদের প্রতি
আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে বলা প্রয়োজন, বেশ ক'বছর ধরে জাতিসংঘের উদ্যোগে
জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলন (যা 'কপ' নামে পরিচিত)
অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু শিল্পোন্নত দেশগুলোর ব্যর্থতার কারণে কোনো
সমঝোতায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে
পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন যে
ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, তা অতি সম্প্রতি প্রকাশিত দুটো রিপোর্ট থেকে বোঝা
যায়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুমন্ডলে ৩৯৬
পিপিপি (গ্যাসের একক) কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর
তুলনায় অন্তত ৩ পিপিপি বেশি, অন্যদিকে অতি সম্প্রতি পাক-ভারত-বাংলাদেশ
উপমহাদেশে যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তাতে এক কাশ্মীরেই পানির নিচে চলে গেছে
৩০০ গ্রাম। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় 'মহাসেন'
বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে আঘাত করেছিল।
বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর
টর্নেডো এখন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী
অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি বড় বড় শহরগুলোও আক্রান্ত হচ্ছে। সারা বিশ্বই আজ পরিবেশ
বিপর্যয়ের মুখে। বায়ুম-লে গ্রিনহাউস গ্যাস, বিশেষ করে
কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী। ফলে
সাগর, মহাসাগরে জন্ম হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের, যা একসময় প্রবল বেগে আছড়ে পড়ছে
উপকূলে। ধ্বংস করে দিচ্ছে জনপদ। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উপকূলবর্তী গ্রাম, ছোট
ছোট শহর। 'মহাসেন' ছিল সেরকম একটি ঘূর্ণিঝড়। এর আগে আমরা 'সিডর' ও 'আইলার'
সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম
আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। ইংরেজি বর্ণমালার ক্রম অনুসারে নামকরণের সুযোগ
পায় ভারত উপমহাসাগরভুক্ত আটটি দেশ। প্রতিটি দেশকে চারটি করে নাম পাঠাতে হয়।
এর মধ্য থেকে একটি নাম বেছে নেয়া হয়। এক সময়ের শ্রীলঙ্কার রাজা মহাসেন
ধ্বংস করেছিলেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বহু মন্দির। সে কারণে ধ্বংসাত্মক ঝড়ের
নাম রাখা হয়েছিল ধ্বংসের প্রতীক সেই রাজা 'মহাসেন' এর নামে। এদিকে এ অঞ্চলে
পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হবে থাইল্যান্ডের দেয়া নামে। আর এর নাম হবে
ফাইলিন। 'মহাসেন'-এর পর এখন 'ফাইলিন'-এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি অতি বন্যা, অসময়ে বন্যা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
যারা নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠ করেন, তারা জানেন সীমান্তের ওপর থেকে নেমে আসা
বিপুল পানির স্রোত বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত করে দিয়েছে। দেশের
প্রায় ১৭টি জেলা এ বন্যায় আক্রান্ত। হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
বন্যায়। অকাল বন্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এ জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্বে উষ্ণতা
বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে হিমালয়ে। সেখানে বরফ গলছে
অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। আমাদের দেশের আবহাওয়াতেও পরিবর্তন আসছে। অসময়ে
বৃষ্টি প্রমাণ করে, পরিবেশ কীভাবে বদলে যাচ্ছে। যে সময়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা
সে সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না। শীতের ব্যাপ্তি কমছে। মনে আছে, গেল শীত আসতে
আসতেই চলে গেল। ফলে কৃষিতে সমস্যা হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে
বাংলাদেশের মানুষ লড়াকু। 'সিডর' ও 'আইলার' পর তারা বুঝে গেছে, এ ঘূর্ণিঝড়
আর জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গেই তাদের বসবাস করতে হবে। লোনা পানি তাদের জীবনযাত্রার
মান হুমকির মুখে ঠেলে দিলেও এ লোনা পানির সঙ্গে 'যুদ্ধ' করেই তারা বেঁচে
আছে। প্রকৃতিই তাদের শিখিয়েছে কীভাবে সব ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে
বেঁচে থাকতে হয়। আগের চেয়েও উপকূল এলাকার মানুষ আজ অনেক সচেতন
সারা
বিশ্ব জানে, বিশ্বের উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী দিনে বাংলাদেশ
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের উপকূলে প্রতি বছর ১৪ মিলিমিটার
করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। ২০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮
সেন্টিমিটার। সমুদ্রের পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে প্রতি সাতজনে একজন
উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। এরা হচ্ছে জলবায়ু উদ্বাস্তু। আগামীতে বাংলাদেশের ১৭
ভাগ এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। বিশ্ববাসী জলবায়ু উদ্বাস্তুর সঙ্গে
প্রথম পরিচিত হয় ২০০৫ সালে, যখন বাংলাদেশে ভোলার চরাঞ্চল থেকে ৫ লাখ মানুষ
অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ক্রিস্টিয়ান পেনেনটি (ঈযৎরংঃরধহ চবহবহঃর)
তার সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ 'ঞৎড়ঢ়রপ ড়ভ ঈযড়ড়ংব : ঈষরসধঃব পযধহমব ধহফ ঃযব ঘব
িএবড়মৎধঢ়যু ড়ভ ঠরড়ষবহপব (২০১১)'-এ উল্লেখ করেছেন সে কথা। পেনেনটি আরও
উল্লেখ করেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যেই ২২ মিলিয়ন অর্থাৎ ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ
বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল থেকে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হবে। আইপিসিসির
রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের কথা। অনেকের মনে থাকার কথা,
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর পরিবেশের ব্যাপারে বিশ্ব
জনমতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ২০১২ সালের জানুয়ারিতে এন্টার্কটিকায়
গিয়েছিলেন। আমাদের পরিবেশমন্ত্রীকেও তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেখানে।
সেটা ঠিক আছে। কেননা বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে গেলে যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে
তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ পর পর দু'বার বন্যা ও
পরবর্তীকালে 'সিডর'-এর আঘাতের সম্মুখীন হয়। এরপর ২০০৯ সালের মে মাসে আঘাত
করে 'আইলা'। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে ব্যাপক খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি দেখা দেয়।
দেশে খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যায়। অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
'সিডর'-এর পর বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি বারবার বিশ্বসভায় আলোচিত
হচ্ছে। সিডরের ক্ষতি গোর্কির চেয়েও বেশি। মানুষ কম মারা গেলেও সিডরের
অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ব্যাপক। সিডরে ৩০টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল ৯টি জেলা। ২০০ উপজেলার ১ হাজার ৮৭১টি ইউনিয়ন
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯ লাখ ২৮ হাজার ২৬৫ পরিবারের ৮৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৬ জন
সিডরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। মারা গিয়েছিল ৩ হাজার ৩০০-এর বেশি। তবে
অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ব্যাপক। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার
কোটি টাকা। 'সিডর' ও 'আইলা'র পর 'মহাসেন' বাংলাদেশে আঘাত করেছিল। এতে কী
পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব আমরা পাব না কোনো দিনই। 'সিডর' ও 'আইলা'র
আঘাত আমরা এখনও পরিপূর্ণভাবে কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আইলার আঘাতের পর খুলনার
দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছায় যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা দূর করা সম্ভব
হয়নি। জলাবদ্ধতা কোথাও কোথাও ১ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত। আইলায় ৮০ ভাগ
ফলদ ও বনজ গাছ মরে গিয়েছিল। দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে আজ নোনা জলের আগ্রাসন। সুপেয়
পানির বড় অভাব ওইসব অঞ্চলে। এরপর 'মহাসেন' আমাদের আবারও ক্ষতিগ্রস্ত করে
গেল। আর এখন অকাল বন্যা।
আমাদের মন্ত্রী, সচিব কিংবা পরিবেশ
মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বিদেশ সফর ও সম্মেলনে অংশ নিতে ভালোবাসেন।
কানকুন, ডারবান, কাতার কিংবা তারও আগে কোপেনহেগেনে (কপ সম্মেলন) আমাদের
পরিবেশমন্ত্রী গেছেন। আমাদের কয়েকজন সংসদ সদস্য কোপেনহেগেনে প্লাকার্ড ও
ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিশ্ব জনমত আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। আমরা পরিবেশ
রক্ষায় ফাস্ট স্টার্ট ফান্ডে পাওয়া টাকার (বাংলাদেশের জন্য ১৩০ মিলিয়ন
ডলার) ব্যাপারে উৎসাহী। আরও টাকা চাই। সেটা হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু 'তিতাসকে
হত্যা' করে আমরা নিজেরাই (এর জন্য বিদেশিরা দায়ী নয়) যে বাজে দৃষ্টান্ত
স্থাপন করেছিলাম তার কী হবে? বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০১২ সালের ২৯
জানুয়ারি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহার করা হবে। এজন্য বছরে ৪ মিলিয়ন টন
কয়লা আমদানি করতে হবে। বিদ্যুৎ আমাদের দরকার- সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু কয়লা
পুড়িয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং তাতে যে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে, তা কী
আমরা বিবেচনায় নিয়েছি? না, নিইনি। ভারতীয় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ারের সঙ্গে
একটি চুক্তি হয়েছে বটে; কিন্তু পরিবেশের প্রভাব নিরূপণের জন্য ইআইএ
সমীক্ষা-তা করা হয়নি। রামপালের গৌরম্ভর কৈকরদশকাঠি ও সাতমারী মৌজায় ১
হাজার ৮৪৭ একর জমিতে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হবে, যা সুন্দরবন থেকে
মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে। কয়লা পোড়ানো হলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, সালফার,
নাইট্রিক এসিড বায়ুম-লে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এতে করে এসিড বৃষ্টি হবে।
পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। সুন্দরবনের গাছ, উদ্ভিদ মরে যাবে। পশু-পাখির প্রজনন
বাধাগ্রস্ত হবে। ধ্বংস হয়ে যাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। এ বিদ্যুৎ
কেন্দ্রটি কী অন্যত্র স্থানান্তরিত করা যেত না? আমাদের গর্ব এ সুন্দরবন। এর
মধ্যে সুন্দরবনকে গ্লোবাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এমন কিছু
করতে পারি না, যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম এ প্যারাবনের অস্তিত্ব হুমকির
সৃষ্টি করে। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে সুন্দরবনের অস্তিত্ব
হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
সংরক্ষণ সংক্রান্ত ইউনেস্কো কনভেশন লঙ্ঘন করেছি। মাননীয় মন্ত্রী, এ
ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? বর্তমান পরিবেশমন্ত্রী নতুন। আগে যিনি মন্ত্রী
ছিলেন, তিনি এখন নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন যে সরকার গঠিত
হয়েছে, সেই সরকারে তিনি জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) থেকে মন্ত্রী। পরিবেশ বিষয়ে
তার অভিজ্ঞতা নেই। 'কপ' সম্মেলনগুলোতে তিনি অংশ নেননি। তবে ফাস্ট স্টার্ট
ফান্ডে প্রাপ্ত টাকা নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি মুখ
খুলেছেন। বলেছেন, এ ফান্ডের ওপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রাপ্ত টাকা নিয়ে
যে দুর্নীতি হয়েছে, এটা সত্য। দেখা গেছে, যারা কোনোদিন পরিবেশ নিয়ে কাজ
করেননি, তারাও টাকা পেয়েছেন। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে টাকা বরাদ্দ দেয়া
হয়েছে, এমন অভিযোগও উঠেছে। ফলে জলবায়ু ফান্ড থেকে যারা সত্যিকার অর্থে
ভুক্তভোগী, তারা টাকা পাননি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত
এবং যাদের জন্যই ফান্ড এসেছিল, তারা কোনো সাহায্য পাননি।
বাংলাদেশ
এককভাবে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনরোধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে না।
বাংলাদেশ এককভাবে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ও, তা সামগ্রিকভাবে বিশ্বের
উষ্ণতা রোধ করতে খুব একটা প্রভাব রাখবে না। এজন্য বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল
বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্তর্জাতিক আসরে জলবায়ু
পরিবর্তনের ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায়
বিদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। কিন্তু এ সাহায্যের ওপর নির্ভর
করা ঠিক নয়। পরিবেশ বিপর্যয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। অতি
সম্প্রতি যে বন্যা হলো, আবার আমাদের সে কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিল। 'সিডর' ও
'আইলা'র আঘাতে আমাদের যা ক্ষতি হয়েছিল, সেই ক্ষতি সারাতে সরকারের বড়সড়
উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ১ হাজার ২৬৮
কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হলেও এখানেও 'রাজনীতি' ঢুকে গেছে। দলীয় বিবেচনায়
টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। (কালের কণ্ঠ ২৭ মে)। ভাবতে অবাক লাগে, যেসব এনজিও
জলবায়ু নিয়ে কাজ করেনি, যাদের কোনো অভিজ্ঞতাও নেই, শুধু দলীয় বিবেচনায়
তাদের নামে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। জলবায়ু তহবিলের অর্থ যাওয়া উচিত ওইসব
অঞ্চলে যেখানে ঘূর্ণিঝড়, বন্যার আঘাত বেশি আর মানুষ 'যুদ্ধ' করে সেখানে
বেঁচে থাকে। অথচ দেখা গেছে, জলবায়ুর জন্য বরাদ্দকৃত টাকা দেয়া হয়েছে
ময়মনসিংহ পৌরসভাকে, মানিকগঞ্জের একটি প্রকল্পে কিংবা নীলফামারী তিস্তা
বহুমুখী সমাজ কল্যাণ সংস্থাকে। সিরাজগঞ্জের প্রগতি সংস্থাও পেয়েছে থোক
বরাদ্দ। অথচ এমন প্রতিষ্ঠানের একটিরও জলবায়ু সংক্রান্ত কাজের কোনো
অভিজ্ঞতাই নেই।
জলবায়ু তহবিলের টাকা বরাদ্দেও যদি 'রাজনীতি' ঢুকে
যায়, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু থাকতে পারে না। পত্রিকায় প্রকাশিত
সংবাদ অনুযায়ী দেখা যায়, বরাদ্দ পাওয়া এনজিওগুলোর সঙ্গে সরকারি দলের নেতা ও
কর্মীরা জড়িত। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে
বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্নীতি যদি এখানেও স্পর্শ করে, তাহলে জলবায়ু ফান্ডে আর
সাহায্য পাওয়া যাবে না। সচেতন হওয়ার সময় তাই এখনই।
জাতিসংঘের
অধিবেশনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ধারণা করছি, তিনি বিশ্ববাসীকে জানাবেন
বাংলাদেশ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে বিশ্ববাসীর সমর্থন
রয়েছে। এখন যা দরকার, তা হচ্ছে অভ্যন্তরীণভাবে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি। আগামী
বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে বিশ্বের উষ্ণতারোধ সংক্রান্ত কপ-২২ সম্মেলনে একটি
চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা। বাংলাদেশের উচিত ওই সম্মেলনে জোরালো যুক্তি
উপস্থাপন করা।
Daily ALOKITO BANGLADESH
19.09.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলার মত একটি তথ্যবহুল, চিন্তাদীপ্ত লেখা। স্যারকে ধন্যবাদ।
ReplyDelete