করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার শেষ নেই। এই ভাইরাসটি যে বিশ্বকে কতটুকু ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, তা সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। এই ভাইরাসটি এখন এক আতঙ্কের নাম। চীনে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লেও সারা বিশ্বই আজ আতঙ্কগ্রস্ত। এই ভাইরাসটি যে শুধু চীনের স্বাস্থ্যসেবাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে তেমনটি নয়, বরং বিশ্ববাণিজ্য, অর্থনীতি, এমনকি কূটনৈতিক পর্যায়েও বড় ধরনের বিপত্তি ডেকে এনেছে। কার্যত চীন আজ বিশ্ব থেকে এক রকম বিচ্ছিন্ন। চীনে মানুষ যেতে পারছে না। চীন থেকে এরই মধ্যে যারা বের হয়ে আসতে পেরেছে, তারা পড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। যারা চীন সফরে গিয়ে ফিরে আসতে পেরেছে, তারা এখন অন্য দেশে ঢুকতে পারছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ভিসা বাতিলও করা হয়েছে। চীন আজ অর্থনীতি তো বটেই, তবে একাধিক সেক্টরে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সেই চীনও করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছে, এটা বলা যাবে না।
আমাদের জন্য চিন্তার কারণ এটাই। বিশ্বব্যবস্থা যে আজ কত বড় ঝুঁকির মুখে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর বড় প্রমাণ। আমরা এটাকে বলছি অপ্রচলিত নিরাপত্তা ঝুঁকি। নিরাপত্তার ধারণা ব্যাপক। একসময় পারমাণবিক শক্তিকে নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে মনে করা হতো। যে কারণে দেখা যায় বিংশ শতাব্দীতে শক্তিধর দেশগুলো কখনো চায়নি অন্য কোনো দেশ পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হোক। কেননা তারা মনে করত, নিউক্লিয়ার ক্লাবের বাইরে কোনো দেশ যদি পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়, তাহলে তা তাদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই নিরাপত্তা ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকেই এই নিরাপত্তা ধারণায় পরিবর্তন আসতে থাকে। তখন ‘মানবিক নিরাপত্তা’ বা Human Security-র বিষয়টি সামনে চলে আসে এবং ‘মানবিক নিরাপত্তা’কে নিরাপত্তা ঝুঁকির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আশির দশকে দেখা গেল, বিশ্ব মূলত ধনী ও গরিব এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে আছে। দেখা গেল, বিশ্বের জনগোষ্ঠীর মাত্র ২৫ শতাংশ বাস করে উত্তরের ধ5নী দেশগুলোতে, আর ৭৫ শতাংশ মানুষ বাস করে দক্ষিণের গরিব দেশগুলোতে। ধনী দেশগুলোতে ৫০ কোটি মানুষের নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বার্ষিক আয় ছিল ২০ হাজার ডলার, আর দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের গড় আয় ছিল ৫০০ ডলারের নিচে। বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ বিশ্ব সম্পদের মাত্র ১.৪ শতাংশ সম্পদ ভোগ করত। কিন্তু একই সংখ্যক ধনী ভোগ করত ৮২.৭ শতাংশ সম্পদ। এই বৈষম্য একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করেছিল। ‘স্টকহোম ইনিশিয়েটিভ অন গ্লোবাল সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স’ তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, নিরাপত্তাহীনতা মূলত সৃষ্টি হয় অনুন্নয়ন, পরিবেশগত বিপর্যয়, জনসংখ্যার আধিক্য এবং গণতন্ত্র বিকাশে ব্যর্থতার কারণে। আর ১৯৯৫ সালে ‘কমিশন অন গ্লোবাল গভর্ন্যান্স তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল—The concept of global security must be broadened from the traditional focus on the security of states to include the security of people and the security on the planet। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। নিরাপত্তার ধারণা ব্যাপক। এই নিরাপত্তা শুধু বহিঃশত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করাই বোঝায় না। এই নিরাপত্তা হচ্ছে জনগণের নিরাপত্তা, এই গ্রহের নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা যে শুধু পারমাণবিক যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বিঘ্নিত হতে পারে তা নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্য দিয়ে এই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
তাই সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা ধারণায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মানবিক নিরাপত্তার পাশাপাশি নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রাধান্য পেয়েছে পরিবেশগত নিরাপত্তা অথবা জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত নিরাপত্তা, ব্যক্তি নিরাপত্তা, গোষ্ঠী নিরাপত্তা, রাজনৈতিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদি। পাঠকমাত্রই জানেন, পরিবেশগত সমস্যা সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যবস্থাকে একটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অতিরিক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে করে সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের পরিবেশগত সমস্যা। পরিবেশগত সমস্যা কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায় একটি চুক্তিতে (কপ-২১) উপনীতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে ওই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে পরিবেশগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে। আর এতে করে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে আছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো। অথচ বাংলাদেশ কোনোভাবেই এই সমস্যার জন্য দায়ী নয়। এখন পরিবেশগত সমস্যার পাশাপাশি যুক্ত হলো করোনাভাইরাসের প্রসঙ্গটি, অর্থাৎ স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ঝুঁকি।
পাঠক প্লেগ মহামারি কিংবা ইবোলা মহামারির কথা কি স্মরণ করতে পারেন? ইতিহাসে আছে প্লেগ মহামারির কথা, যা চিহ্নিত হয়ে আছে Black Death হিসেবে। এই ‘ব্ল্যাক ডেথ’ ইউরো এশিয়া জোনে ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সময়টা ১৩৪৭ থেকে ১৩৫১ সাল পর্যন্ত। এই সময় প্লেগ রোগ প্রতিরোধের তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি—এটা স্বাভাবিক। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের মতো দেশে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা আমরা জানি। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল ১৯৯৪ সালে। যদিও তাতে ব্যাপক মৃত্যুর খবর আমরা পাইনি। মাত্র ছয় বছর আগের কথা। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা নামে একটি মহামারি রোগ সেখানে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। আমার মনে আছে, আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রে। গিংকোতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে, যা খোদ যুক্তরাষ্ট্রে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশেষজ্ঞ ওই এলাকায় গবেষণার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি সেখানেই ইবোলায় আক্রান্ত হন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে মারা যান। তাঁর ফিরে আসার পর ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। কয়েক হাজার মানুষ ইবোলায় মারা গিয়েছিল। আরেকটি ভয়াবহ রোগ সার্স (SARS) বা Severe Acute Respiratory Syndrome। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই রোগটি ছড়িয়ে পড়েছিল ২০০২ সালের নভেম্বরে। এই রোগের উৎপত্তি ছিল চীনের ওয়ানদংয়ে। এটা এক ধরনের ফ্লু। খুব দ্রুত এই রোগটি ওয়ানদং থেকে সাংহাই ও বেইজিংয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ওই সময়। সেখান থেকে ছড়িয়ে যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এই রোগের প্রার্দুভাবের কারণে চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছিল। ট্যুরিজম ব্যবসায় ধস নেমেছিল। ধস নেমেছিল রপ্তানি খাতেও। ওই সময় চীনের প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশ কমে গিয়েছিল, আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবৃদ্ধি কমেছিল ০.৫ শতাংশ। একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট আমাদের জানাচ্ছে, সার্সের কারণে ওই সময় চীনের ক্ষতি হয়েছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার, আর অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, এতে করে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়েছিল ৩০ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার (DW, ২২ জানুয়ারি ২০২০)। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও একই ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দেশটি। যদিও এই মুহূর্তে এটা বলা যাচ্ছে না, কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হবে দেশটি।
অনেক দেশের সঙ্গে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা এসেছে। চীন থেকে ওই সব দেশে কাঁচামাল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। (যেমন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের কাঁচামালের জন্য ব্যবসায়ীরা চীনের ওপর নির্ভরশীল। এখন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বিকল্প খুঁজছেন)। চীনের উৎপাদনপ্রক্রিয়ায়ও ধস নেমেছে। অনেক শহর এখন জনশূন্য। মানুষ ঘর ছেড়ে বেরোতে পারছে না। ছবিও ছাপা হয়েছে। তাতে দেখা যায় রাস্তাঘাট পরিত্যক্ত। এই পরিস্থিতি থেকে চীন কবে নাগাদ বের হয়ে আসতে পারবে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। তবে চীনের অর্থনীতি যে এর মধ্য দিয়ে বড় বিপদে পড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনাভাইরাসের কারণে চীনের মহাপরিকল্পনা ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এর আওতায় বিভিন্ন দেশকে চীন যে ঋণ দেয়, তা এখন বাধাগ্রস্ত হবে। ঋণপ্রবাহে স্থবিরতা আসবে। চীন থেকে মানুষের চলাচল কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে মানুষের চীনে যাতায়াত এখন কমে আসবে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চীনের রপ্তানি, সেই সঙ্গে চীনের অর্থনীতিও। চীনা বিশেষজ্ঞদের এখন বিদেশে যাতায়াত সীমিত হয়ে আসছে। অনেক দেশ এখন চীনা বিশেষজ্ঞদের ‘গ্রহণ’ করতে এক ধরনের অস্বস্তিতে থাকবে। এখানে আরো একটি বিষয়, সার্স কিংবা করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে চীন। পশ্চিমা বিশ্ব কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে কম। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বড় অর্থনীতি। ১৪.১৪০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি চীনকে শুধু বিশ্ব আসরে তার অবস্থানকেই (বিশ্বে দ্বিতীয়) শক্তিশালী করেনি, বরং বিশ্বে চীনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। চীন প্রযুক্তি খাতে অনেক উন্নয়ন সাধন করেছে। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক না কেন, এই রোগ নির্ণয়, এই খাতে গবেষণা, রোগ নির্মূলে কার্যকর ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে চীন পিছিয়ে আছে—এটা বলতেই হবে। এখন চীন এদিকে দৃষ্টি দেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
করোনাভাইরাস যে শুধু চীনেই একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করল তেমনটি নয়। বরং তা বিশ্বব্যবস্থাকেও আঘাত হেনেছে। করোনাভাইরাস প্রমাণ করল পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতার চেয়ে এই ভাইরাসের ঝুঁকি কম নয়। আমরা এটাকেই বলছি অপ্রচলিত নিরাপত্তা ঝুঁকি। প্রচলিত নিরাপত্তা ঝুঁকির চেয়েও এই ঝুঁকি অনেক বেশি। করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। সার্স (২০০২-২০০৩), মের্স (২০১২), ইবোলা (২০১৪), এইচওয়ান এন ওয়ান (২০০৯) ফ্লু, জিকাভাইরাসে (২০১৫) আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ মারা গিয়েছিল। ফলে ধারণা করছি, আমরা আগামী দিনে এ ধরনের অনেক নতুন মহামারি রোগের সংস্পর্শে আসব। এ ধরনের অনেক রোগ, যার প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি, যা আমাদের জননিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে। বাংলাদেশ প্রচুর জনসংখ্যা আধিক্য দেশ। এখানে যেকোনো ধরনের মহামারি আমাদের নিরাপত্তাকে বিঘ্ন ঘটাবে। তাই এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন
Do you understand there is a 12 word sentence you can tell your partner... that will induce deep emotions of love and impulsive attraction for you deep within his heart?
ReplyDeleteThat's because hidden in these 12 words is a "secret signal" that fuels a man's instinct to love, adore and care for you with all his heart...
12 Words Will Trigger A Man's Desire Impulse
This instinct is so hardwired into a man's brain that it will drive him to work harder than before to to be the best lover he can be.
In fact, fueling this dominant instinct is so important to achieving the best possible relationship with your man that as soon as you send your man a "Secret Signal"...
...You will immediately notice him open his heart and mind for you in a way he never experienced before and he will identify you as the one and only woman in the universe who has ever truly understood him.