কেউ একজন একটি ভিডিও ‘আপলোড’ করেছে ফেইসবুকে। তাতে দেখা যায়, একটি শহরের রাস্তা। দিনের বেলা। কিন্তু কোনো লোক চলাচল নেই।
নেই কোনো যানবাহন। মনে হচ্ছে শহরটি পরিত্যক্ত। ভিডিওতে আছে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক, একটি ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে সিলগালা করে দিচ্ছে, যাতে করে ফ্ল্যাটে বসবাসকারী মানুষ বের হতে না পারে। একই ভিডিওর আরেকটি দৃশ্য একজন মানুষ পড়ে আছে রাস্তায়, মৃত, কেউ তার দিকে তাকাচ্ছে না, কাছেও যাচ্ছে না। এই শহরটির নাম উহান। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী। শহরটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। মারা গেছে সরকারি হিসাবে প্রায় বারো শ’র কাছাকাছি। কিন্তু ধারণা করা হয়, মারা গেছে কয়েক হাজার।
এই উহান শহরকে বলা হতো ‘শিকাগো অব দ্য ইস্ট’। চীনের কয়েকটি শিল্পোন্নত শহরের একটি। গাড়ি শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই উহান শহর। প্রায় ৫০০ কারখানা রয়েছে এখানে, যেখানে সব ধরনের গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। এক সময়ের কর্মচাঞ্চল্যে ভরা এই উহান শহর এখন মৃত। কারখানাগুলো বন্ধ। স্কুল-কলেজ বন্ধ। মানুষ ঘরবদ্ধ। বাইরে বেড়ানোর কোনো অনুমতি নেই।
করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে বিশ্বের যোগাযোগ একরকম বন্ধ। বিমান চীনে আসছে না। চীন থেকে কোনো বিমান বাইরেও যাচ্ছে না। এ কোন চীনকে আমরা দেখছি? যে চীন বিশ^কে বদলে দিয়েছে, প্রযুক্তিবিদ্যায় চীনের উত্থান সারা বিশ^কে নাড়া দিয়েছে এবং চীনকে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতিতে পরিণত করেছে, এ কেমন চীন এখন? যে চীন চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, সেই চীন কেন করোনাভাইরাসকে শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না? কেন চীন এই ভাইরাসে আক্রান্ত কয়েক হাজার মানুষকে, যাদের বেঁচে থাকার আর কোনো সম্ভাবনা নেই, মেরে ফেলার অনুমতি চাইছে আদালতের কাছে? রোগ নিরাময়ে চীনের কাছে কি কোনো ওষুধ নেই? কেন চীন ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বড় বিনিয়োগ করল না? করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাব কি চীনের বিরুদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র?
গেল অক্টোবর চীন তার বিপ্লবের ৭০ বছর পার করেছে। এই ৭০ বছরে চীনের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। এই ৭০ বছরে চীন ১৬.৬ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে আনতে পেরেছে। কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি খাতে চীনের অগ্রগতি সারা বিশ্বকে অবাক করেছে এবং চীন বিশ্বের কাছে একটি মডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছে (পাঠক, আমার লেখা ‘প্রথম চীন বিপ্লবের ৭০ বছর’ পড়ে দেখতে পারেন)। সেই চীনের একি হাল? মাত্র ১০ দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি করে চীন বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল। কিন্তু সার্সের পর করোনাভাইরাসের মতো একটি ভাইরাস যে চীনে আঘাত করতে পারে, তা চীনের স্বাস্থ্য বিভাগ বিবেচনায় নিল না কেন? এটা কি শুধুই ব্যর্থতা? বলতে দ্বিধা নেই চীনের এই করোনাভাইরাস বিশ্ব-বাণিজ্যে বড় ধরনের আঘাত হানতে যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইলেকট্রিক কার টেসলা যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এই গাড়ির জন্য মানুষ টেসলার দিকে বেশি করে ঝুঁকছে। সরকার এ গাড়ির জন্য কর মওকুফ করেছে। এই টেসলা গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন হয় উহানে। উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে টেসলার যন্ত্রাংশ এখন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে সরবরাহ ব্যাহত হবে। এতে করে সুবিধা পাবে অন্যান্য গাড়ির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। অ্যাপলের আইফোন সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত আছি। এই আইফোন তৈরি হয় উহানে। চীনে আইফোন উৎপাদিত হলেও তা চীনে বিক্রি হয় না, বিক্রি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। স্টারবাকস কফি সম্পর্কে আমরা নিশ্চয়ই অবগত। এই স্টারবাকস কফির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনে। এই ব্যবসায়ও এখন বড় ধরনের ধস নেমেছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথাটা এ জন্যই এসেছে যে, চীনের অর্থনীতিকে একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়ে কারা লাভবান হচ্ছে?
করোনাভাইরাসের কারণে চীনের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। চীনের রপ্তানি খাতে এখন শ্লথ গতি আসবে। চীন তার ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশে^র উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এক কাতারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছিল। এটা একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ। এর মাধ্যমে বিশ্বে চীনের গ্রহণযোগ্যতা একদিকে যেমনি বৃদ্ধি পাবে, ঠিক তেমনি অন্যদিকে হ্রাস পাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব করার প্রবণতা। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’র সমর্থনকারীরা এর সঙ্গে চীনের বর্তমান পরিস্থিতিকে মেলাতে পারেন এবং এক ধরনের ‘ষড়যন্ত্র’ আবিষ্কার করতে পারেন!
নিঃসন্দেহে চীন এই মুহূর্তে একটি বিশ্বশক্তি। চীন বিশ্বেযে পরিবর্তন ডেকে এনেছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব অনেক অংশেই খর্ব হয়েছে। আমরা কিছু তথ্য দিয়ে বিষয়টি বোঝাতে চেষ্টা করব। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে, যা মার্কিন স্ট্র্যাটেজিস্টদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। (পাঠক, সদ্য প্রকাশিত আমার বই ‘চীন বিপ্লবের ৭০ বছর’ পড়ে দেখতে পারেন)। এটা সত্য এই মুহূর্তে জিডিপিতে চীন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছে। সাধারণ নিয়মে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি যেখানে ১৯.৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার, সেখানে চীনের জিডিপি ১২.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্বে চীনের অবস্থান দ্বিতীয় (কিন্তু ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে জিডিপি-পিপিপিতে চীনের অবস্থান শীর্ষে, ২৯.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্বিতীয় ২২.২ ট্রিলিয়ন ডলার)। অর্থনীতিবিদরা যে প্রাক্কলন করেছেন, তাতে সাধারণ নিয়মে জিডিপিতে ২০৫০ সালে চীন শীর্ষে অবস্থান করবে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হবে দ্বিতীয়। ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব বজায় থাকবে (২৪.৮ ট্রিলিয়ন ডলার, চীনের ২২.১ ট্রিলিয়ন ডলার)।
কিন্তু ২০৫০ সালে এই দৃশ্যপট বদলে যাবে। ৫৮.৫ ট্রিলিয়ন ডলার (পিপিপি) নিয়ে চীন থাকবে শীর্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হবে তিন নম্বরে, ৩৪.১ ট্রিলিয়ন ডলার (ভারত ২ নম্বরে, ৪৪.১ ট্রিলিয়ন ডলার)। সুতরাং চীনের অর্থনীতি যে পশ্চিমাদের কাছে টার্গেট হবে, তা বলাই বাহুল্য। চীনের ‘রেয়ার আর্থ’ নামে দুটি বিরল মৃত্তিকা উপাদান রয়েছে, যা বিশ্বের কোনো দেশের নেই। এ দুটি উপাদান হচ্ছে বিরল মৃত্তিকা উপাদান বা এলআরইই ও ভারী বিরল মৃত্তিকা উপাদান বা এইচআরইই। ইটারিয়াস এবং স্ক্যান্ডিয়ামের একত্রিতভাবে বিরল মৃত্তিকা উপাদান হিসেবে পরিচিত। এগুলো খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহৃত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা খাত এবং উদীয়মান ও সম্ভাব্য প্রযুক্তির কাছে তাদের তাৎপর্য অনেক। বাজারের বেশিরভাগ অংশের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ দুর্লভ মৃত্তিকা উপাদানগুলোকে ভূ-রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা দিয়েছে। যেভাবেই হোক যুক্তরাষ্ট্র এই বিরল মৃত্তিকার ওপর চীনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ কমাতে চাইবে। ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’টি এ কারণেই প্রাসঙ্গিক।
করোনাভাইরাসের কারণে আজ যে চীনেরই ক্ষতি হলো, তেমনটি নয়, বরং দেখা যাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এর একটা প্রভাব পড়বে। যেসব দেশের সঙ্গে চীনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে প্রতিটি দেশে এর প্রভাব পড়বে। বিশ্ব জিডিপির পাঁচ ভাগের এক ভাগ চীনের। চীন বিশ্বের অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ। চীনা পণ্যের ওপর, চীনা কাঁচামালের ওপর অনেক দেশ নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো দেশও তার গার্মেন্ট শিল্পের কাঁচামালের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। এখন সেই সরবরাহে যদি বিঘ্ন ঘটে, তাহলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে বিপর্যয় আসতে বাধ্য। বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। গত এক মাসের ওপরে চীনের উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটেছে, রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও আঘাত হানবে। আমরা একটা পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করব যে, চীনের রপ্তানি খাত কীভাবে বিশ^ অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।
একটা ভাইরাস (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যার নামকরণ করেছে কভিড-১৯) যে কত বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, নভেল করোনাভাইরাস এর বড় প্রমাণ। শিল্পোন্নত দেশগুলো এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারবে। তাদের সেই প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ? বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টর এর মোকাবিলা কীভাবে করবে, সে ব্যাপারে দ্রুত একটি টাস্কফোর্স গঠন করা জরুরি। করোনাভাইরাসকে একটি সাধারণ রোগ বা ভাইরাসজনিত রোগ ভাবলে আমরা ভুল করব। এর মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজার দাঁড়িয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে। আর এই ভাইরাস চীনের পর আঘাত হেনেছে সিঙ্গাপুরেও। ফলে এই ভাইরাসটি একটি জৈব মারণাস্ত্র, কৃত্রিমভাবে জর্জিয়ার এক ল্যাবে এটি তৈরি করা হয়েছে, যা শুধু এশিয়ার মানুষদেরই আক্রান্ত করতে পারে এই ধারণাটি শক্তিশালী হবে এখন।
Desh Rupantor
16.2.2020
Do this hack to drop 2lb of fat in 8 hours
ReplyDeleteWell over 160,000 women and men are trying a simple and secret "liquid hack" to burn 1-2 lbs every night as they sleep.
It's simple and it works all the time.
Here's how to do it yourself:
1) Grab a glass and fill it up with water half the way
2) Proceed to learn this awesome HACK
you'll become 1-2 lbs thinner as soon as tomorrow!