রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ট্রাম্প, না বাইডেন




ট্রাম্প, না বাইডেন

কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? ডোনাল্ড ট্রাম্প, না জো বাইডেন? আগামী ৩ নভেম্বর সেখানে নির্বাচন। নয়া প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেবেন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। এরই মধ্যে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় পার্টিরই জাতীয় কনভেনশনে দলীয় প্রার্থিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে, বাইরের কোনো শক্তি নির্বাচনে আদৌ কোনো প্রভাব বিস্তার করবে কি না এটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার জন্ম হয়েছে। ট্রাম্প ও বাইডেন পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন, যা সংবাদপত্রে ছাপাও হচ্ছে। অতীতের কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমনটি দেখা যায়নি। নির্বাচনের তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই দুই দলের সমর্থকরা সহিসংসতায় লিপ্ত হচ্ছে। ২৯ আগস্ট অরেগনের পোর্টল্যান্ডে একটি বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ট্রাম্পপন্থী একটি মিছিলের কর্মীদের সংঘর্ষ হলে গুলিতে একজন নিহত হন। গত ২৫ মে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড পুলিশ কর্তৃক নিহত হওয়ার পর সারা যুক্তরাষ্ট্রেই এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। আর এর সর্বশেষ ঘটনা ঘটে অরেগনে।

এই ঘটনার জন্য বাইডেন দায়ী করেছেন ট্রাম্পকে। বলেছেন, ‘বেপরোয়াভাবে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন ট্রাম্প।’ ট্রাম্প নিজে পোর্টল্যান্ডে কৃষ্ণাঙ্গদের জমায়েতের বিরুদ্ধে পাল্টা জমায়েতের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর এ জন্য পোর্টল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক মেয়র টেড হোয়েলার দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। এদিকে জনপ্রিয় নিউজ ম্যাগাজিন ইকোনমিস্ট এক জনমত জরিপ প্রকাশ করেছে। জরিপে বলা হয়, ইলেকটোরাল কলেজের ৮৮ শতাংশ পেতে পারেন বাইডেন। ২৯ আগস্টের জরিপে দেখা যায়, জো বাইডেন পাবেন ইলেকটোরাল ভোটের ৩৪৭টি আর ট্রাম্প পাবেন ১৯১টি। মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। জিততে হলে পেতে হবে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট। ৫০টি ভোটের মধ্যে কোনো কোনো স্টেটে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা বেশি, কোনোটায় আবার কম। তবে সব জরিপের ফলাফলই যে শেষ পর্যন্ত ‘সত্য’ হয়, তা বলা যাবে না। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জনমত জরিপ শেষ পর্যন্ত সত্য হয়নি। ওই সময় জনমত জরিপে হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত Battleground States-এর (মোট ছয়টি) ভোটেই ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে বলা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাস ২৩১ বছরের, ১৭৮৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত (স্বাধীনতা ঘোষণা ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই)। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৮৯-১৭৯৭)। তিনি ছিলেন ফেডারেলিস্ট পার্টির মনোনীত প্রার্থী। জর্জ অ্যাডামসও ছিলেন ফেডারেলিস্ট পার্টির প্রার্থী (১৭৯৭-১৮০১)। কিন্তু তৃতীয় প্রেসিডেন্টের (থমাস জেফারসন, ১৮০১-১৮০৯) শাসনামল থেকে ১৮২৯ সাল পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান পার্টি একসঙ্গে একক প্রার্থী হিসেবে চার টার্মে ক্ষমতায় ছিল। সপ্তম প্রেসিডেন্ট এন্ডু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) সময় থেকেই ডেমোক্রেটিক পার্টি আলাদাভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। রিপাবলিকান পার্টির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্রাহাম লিংকন (১৬তম প্রেসিডেন্ট, ১৮৬১-১৮৬৫)। সেই থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দুটি বড় দল ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রথম দিকে অবশ্য তৃতীয় একটি দল উইগ পার্টির অস্তিত্ব ছিল। উইগ পার্টির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন (নবম প্রেসিডেন্ট, ১৮৪১); যদিও নির্বাচিত হওয়ার পরও তিনি ক্ষমতা পরিচালনা করতে পারেননি। ট্রাম্প হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট।

প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই কিছু কিছু ‘ইস্যু’ প্রাধান্য পায়, যা ভোটারদের প্রভাবিত করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ভোটাররা ভোট দেন; কিন্তু যিনি বিজয়ী হন, তিনি ওই স্টেটের প্রতিটি ইলেকটোরাল কলেজের সব ভোট পেয়েছেন বলে গণ্য করা হয়। যদিও এবারে ‘ইস্যু’ আছে, বিশেষ করে বর্ণবাদ, শ্বেতাঙ্গ ‘সুপ্রিমেসি’, ১১.১ শতাংশ বেকার সমস্যা, কভিড-১৯ রোধে ব্যর্থতা, উৎপাদন খাতে ধস ও ব্যাপক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি, তথা দক্ষিণ চীন সাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষ ও স্নায়ুযুদ্ধ-২-এর সূচনা—সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে ভোটাররা তাঁকে দ্বিতীয় ট্রার্মের জন্য বেছে নেবেন কি না এটা একটা বড় প্রশ্ন।

Kalerkontho

9.9.2020

0 comments:

Post a Comment