রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি কোন পথে

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি এখন কোন পথে? একদিকে সিরিয়া-ইরাক থেকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের উৎখাত, ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর মৃত্যু এবং সর্বশেষ ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক জেরুজালেমে মার্কিনি দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে পরিপূর্ণভাবে বদলে দিয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সারা বিশ্বে একটা মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস, যারা গাজা নিয়ন্ত্রণ করে তারা গণঅভ্যুত্থান বা ইন্তিফাদার (তৃতীয়) ডাক দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেডিশনাল মিত্র, ইউরোপের দেশগুলোও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। এই ইস্যুতে উত্তপ্ত হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতি। এখানে বলা ভালো, পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে মনে করে। ১৯৮০ সালে ইসরায়েল এক আইনবলে পুরো জেরুজালেমকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রই ইসরায়েলের এই ঘোষণাকে মেনে নেয়নি। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘে গৃহীত এক সিদ্ধান্তের (৪৭৮নং সিদ্ধান্ত, ১৯৮০) সমালোচনা করা হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নিয়েছিল। সেই থেকে ইসরায়েল এই অঞ্চলটি তাদের দখলে রেখেছে। এখানে রয়েছে পবিত্র আল আকসা মসজিদ। স্পষ্টতই ট্রাম্পের দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত এ অঞ্চলের রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করবে। বেশ কিছুদিন ধরেই এ অঞ্চলে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। কাতারের সঙ্গে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের যে বিরোধ, তারও কোনো সমাধান হয়নি। এই বিরোধ কোনো বড় ধরনের সংকটের জন্ম না দিলেও এই বিরোধের জের ধরে এ অঞ্চলে উত্তেজনা আছে। সিরিয়া-ইরাক থেকে আইএস বিতাড়িত হলেও পুরো মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব কমে গেছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আইএস জঙ্গিরা ছড়িয়ে পড়েছে এবং তারা আগামীতে বড় ধরনের সংবাদের জন্ম দিতে পারে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক ভূমিকা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরবের ইয়েমেনবিরোধী ভূমিকা এবং দীর্ঘযুদ্ধে তার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ‘আরব বসন্তের’ রেশ ধরে সেখানে আলী আবদুল্লাহ সালেহ সরকারের পতন ঘটেছিল ২০১১ সালে। সালেহ ১৯৭৮ সালের পর থেকে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু তার পতনে সেখানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ হয়নি, যা প্রত্যাশিত ছিল। বরং সেখানে হুথি বিদ্রোহী গ্রুপের জন্ম হয়েছিল, যারা বাধ্য করেছিল সালেহ-পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে রাজধানী সানা ছেড়ে যেতে। ইয়েমেনে কার্যত কোনো সরকার নেই। হুথি বিদ্রোহীরা, যাদের ইরান সমর্থন করে তারাই এখন রাজধানী নিয়ন্ত্রণ করছে। এখানে ইয়েমেনের ইতিহাস নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। আজকের যে ইয়েমেন তা এক সময় দুভাগে বিভক্ত ছিল। উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেন। উত্তর ইয়েমেন ট্রেডিশনালি স্বাধীন। ধরা হয়, উত্তর ইয়েমেন স্বাধীন হয়েছে ১৯১৮ সালের ১ নভেম্বর (আর দক্ষিণ ইয়েমেন স্বাধীন হয় ১৯৬৭ সালের ৩০ নভেম্বর)। দুই ইয়েমেনের মধ্যেই বৈরিতা ও যুদ্ধের ইতিহাসও আছে। আজকের ইয়েমেনের যে পরিস্থিতি, তার সঙ্গে অতীত ইতিহাসের একটা যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৬২ সালে উত্তর ইয়েমেনের শাসক ইমাম আহমেদ বিন ইয়াহিয়া মারা গেলে তার ছেলে ক্ষমতাসীন হন। কিন্তু সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করতে চাইলে সেখানে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। ওই গৃহযুদ্ধে সৌদি আরব, ব্রিটেন ও জর্ডান ক্ষমতাসীনদের পক্ষে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে মিসরের সেনাবাহিনী অবস্থান নেয় সেনাবাহিনীর পক্ষে। মিসর সেখানে সেনাবাহিনীও পাঠায় ১৯৬২ সালে। দীর্ঘ ৬ বছরের গৃহযুদ্ধের পর বিদ্রোহী সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং ইয়েমেন আরব রিপাবলিক (উত্তর ইয়েমেন) হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করে। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন আবদুল্লাহ আল সাল্লাল। এর পর ক্ষমতাসীন হন আলী আবদুল্লাহ সালেহ। অন্যদিকে দক্ষিণ ইয়েমেনে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনীতির সমর্থকদের প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৯৬৭ সালের ৩০ নভেম্বর তথাকথিত মার্কসবাদীরা সেখানে ক্ষমতাসীন হন এবং নিজেদের পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক হিসেবে ঘোষণা করেন। সমাজতান্ত্রিক মডেলে গড়া সমাজব্যবস্থায় পার্টিপ্রধানই ছিলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। প্রথমে আবদুল ফাত্তাহ ইসমাইল ও পরে আলী নাসির মোহাম্মদ ক্ষমতা পরিচালনা করেন। শেষের দিকে ক্ষমতা পান আলী সালিম আল বাইদেহ। দুই ইয়েমেনের মধ্যে সম্পর্ক কখনো উষ্ণ ছিল না। ১৯৭২ সালে দুই ইয়েমেন যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। উত্তর ইয়েমেনের অভিযোগ ছিল, দক্ষিণ ইয়েমেন বিদেশি শক্তির প্ররোচনায় তাদের দেশটি দখল করতে চায়। তাদের স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল সৌদি আরবের দিকে। তার পরও দুই ইয়েমেন ১৯৯০ সালের ২২ মে একত্রিত হয়। একত্রীকরণের পর আলী আবদুল্লাহ সালেহ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন আর দক্ষিণ ইয়েমেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আলী সালিম বাইদেহ যুক্ত ইয়েমেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। সেই থেকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের আগ পর্যন্ত সালেহ এককভাবে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছিলেন। ২০১১ সালের আরব বসন্তের ঢেউ এসে লাগে ইয়েমেনেও। আন্দোলনের মুখে ২০১১ সালের নভেম্বরে সালেহ সৌদি আরব পালিয়ে যান। এর আগে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্্দ রাব্বু মনসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। হাদি পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হলেও সেখানে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা সমাধানে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি সৌদি আরবে পালিয়ে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে সৌদি আরব হুথি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ কার্যত দেশটিকে একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভক্ত করে রেখেছে। রাজধানী সানা মূলত নিয়ন্ত্রণ করে হুথি বিদ্রেহী গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিল। একটা অংশ নিয়ন্ত্রণ করে হাদি সরকার ও তার সমর্থকরা। আল কায়েদা সমর্থিত আনসার আল সারিয়ার নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে একটা বড় অংশ। আবার আইএসের নিয়ন্ত্রণাধীনও রয়েছে একটি এলাকা। ২০১৫ সালের পর থেকেই কার্যত ইয়েমেনে কোনো সরকার নেই। হুথি ও হাদি সরকার পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। ২০১৫ সালের পর থেকে এখন অবধি সৌদি বিমান বাহিনী হুথি অবস্থানের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখে আসছে। ইয়েমেনের সংকটকে কেন্দ্র করে হুথিদের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। হুথিরা মূলত শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। বলা হয়, ইয়েমেনের জাইদি গোত্রভুক্ত হচ্ছে এই হুথিরা। তবে তাদের সঙ্গে সুন্নিরাও যোগ দিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। ২০১১ সালের নভেম্বরের আন্দোলনের মুখে আলী আবদুল্লাহ সালেহ পদত্যাগ করেছিলেন। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্্দ রাব্বু মনসুর হাদি। পরে ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ঐকমত্যের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। ইয়েমেনে বিভিন্ন দল ও গোত্রের মধ্যে ‘ন্যাশনাল ডায়ালগ কনফারেন্স’-এর ব্যানারে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে এলেও একটি সংবিধান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। হাদি ঐকমত্যের প্রার্থী হলেও তিনিও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। হাদি সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে রাজধানী সানা দখল করে নিয়েছিলেন সালেহ ও তার বাহিনী। দুঃখজনক হলেও সত্য, হুথি বিদ্রোহীদের হাতে শেষ পর্যন্ত সালেহর মৃত্যু হলো। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তিনি হঠাৎ করেই বর্তমান মিত্র হুথিদের ত্যাগ করে প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি ও সৌদি জোটের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিল সৌদি জোট ও প্রেসিডেন্ট আব্্দ রাব্বু মনসুর হাদি স্বয়ং। কিন্তু হুথি বিদ্রোহীরা এটা পছন্দ করেনি। তারা এটাকে আখ্যায়িত করেছিল এক ধরনের ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে। ইয়েমেনের এই সংকটের সঙ্গে ট্রেডিশনালি সৌদি-ইরান দ্বন্দ্বের একটা যোগসূত্র আছে। সৌদি আরবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের উত্থান ও সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি সামরিক জোট গঠনের পরপরই সৌদি-ইরান দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এ অঞ্চলের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই দ্বন্দ্বের জন্ম। সৌদি আরবের অভিযোগে ইরান ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে, যা সৌদি আরবের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। এ কারণেই দু’বছর ধরে সৌদি বিমান ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহী ঘাঁটির ওপর অনবরত বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। পাঠক লক্ষ করে থাকবেন, সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস যখন তার সব ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পতনের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখন লেবানন আর ইয়েমেনকে ঘিরে সৌদি রাজতন্ত্র ও ইরানি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র এক অশুভ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। প্রতিযোগিতা হচ্ছে এই এলাকা কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তা নিয়ে। সৌদি আরব লেবানন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল যে, লেবানন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। লেবাননের ইরান সমর্থিত শিয়া হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা সৌদি আরবে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। একজন সৌদি মন্ত্রী থামের আল সাবহান আল আরাবিয়া টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছিলেন, হিজবুল্লাহ এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত, যা সৌদি আরবকে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। ক’দিন আগে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি নিরাপত্তার অজুহাতে সৌদি আরব পালিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে হারিরি আবার লেবানন ফিরে গিয়েছিলেন। স্পষ্টতই হারিরির অভিযোগটি ছিল হিজবুল্লাহর দিকে, যাদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে ইরান। তিনি পদত্যাগ করে পরে পদত্যাগ প্রত্যাহারও করে নিয়েছিলেন। পর্যবেক্ষকরা লক্ষ করে আসছেন, এ অঞ্চলের রাজনীতির উত্থান-পতনে সৌদি আরব ও ইরান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। সৌদি আরব ইয়েমেনে হাদি সরকার, লেবাননে প্রধানমন্ত্রী হারিরি, সিরিয়ার দামেস্কে বিভিন্ন উপদল এবং ইরাকে সরকারের সঙ্গে যারা জোটে আছে, তাদের সমর্থন জুগিয়ে আসছে। অন্যদিকে ইরান ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের, লেবাননে হিজবুল্লাহকে, সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদকে, বাগদাদে শিয়া গোষ্ঠীকে সমর্থন জুগিয়ে আসছে। সৌদি আরব ও ইরানের অবস্থান পরস্পরবিরেধী। সৌদি আরব ও ইরানের দ্বন্দ্বের কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম এখন ৬৪ দশমিক ৩২ ডলার। এই দাম আরও বাড়তে পারে। এই যখন পরিস্থিতি, ঠিক তখনই এলো সাবেক ইয়েমেনি প্রেসিডন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর মৃত্যুর খবর। এর মধ্য দিয়ে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে ইয়েমেনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষ। সালেহ হত্যার বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তার নির্বাসিত ছেলে আহমেদ আলী সালেহ। তিনি বর্তমানে আরব আমিরাতে বসবাস করছেন। মৃত্যুর একদিন আগে সালেহ সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে ইয়েমেনে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখন সেখানে অনিশ্চয়তা এলো। সৌদি আরবের ভূমিকা অগামীতে আরও আলোচনায় থাকবে। বলা হচ্ছে, ট্রাম্প জেরুজালেমে মার্কিনি দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার পেছনে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সমর্থন আছে। প্রিন্স সালমান পূর্ব জেরুজালেমের পরিবর্তে অন্য একটি স্থানে ফিলিস্তিনের রাজধানী নির্মাণের প্রস্তাব করেছেনÑ এমন একটি সংবাদও পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। যদিও সৌদি সরকারি ভাষ্যে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। তাই ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকা যখন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, ঠিক তখনই সৌদি আরব-ইসরায়েল সখ্য (?) নতুন একটি মেরুকরণের জন্ম দিতে পারে। সঙ্গত কারণেই মধ্যপ্রাচ্যর রাজনীতি, এর মেরুকরণ, ইসরায়েলের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় আগামীতে বারবার আলোচিত হতে থাকবে।
Daily Amader Somoy
18.12.2017

0 comments:

Post a Comment