প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি অপসারিত হবেন?
তারেক শামসুর রেহমান
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসিত হয়েছেন। নিম্নকক্ষের এই সিদ্ধান্ত কি উচ্চকক্ষ সিনেটেও অনুমোদিত হবে? উভয় কক্ষ যদি ট্রাম্পকে অভিশংসিত করে, একমাত্র তখনই তাঁকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা যায়। কিন্তু তা আদৌ সম্ভব হবে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন এখন। প্রতিনিধি পরিষদে তাঁকে দুই অভিযোগে অভিযুক্ত করে অভিশংসিত করা হয়েছে। প্রথম অভিযোগটি ছিল ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দ্বিতীয়টি বিচারকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি। ভোটাভুটিতে দেখা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্নে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন ২৩০ জন আর পক্ষে ছিলেন ১৯৭ জন সদস্য। অন্যদিকে কংগ্রেসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন ২২৯ জন আর পক্ষে ১৯৮ জন। ৪৩৫ জন সদস্য নিয়ে প্রতিনিধিসভা গঠিত। এর মধ্যে ডেমোক্রেটিক দলীয় সদস্যসংখ্যা ২৩৩ আর রিপাবলিকান দলীয় সদস্যসংখ্যা ১৯৭। একজন রয়েছেন নিরপেক্ষ আর চারটি আসন খালি রয়েছে। অন্যদিকে সিনেট সদস্য হচ্ছেন ১০০ জন। এর মধ্যে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩ আর ডেমোক্র্যাটদের ৪৭। এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিনিধিসভায় যে ভোটাভুটি হয়েছে, তা হয়েছে অনেকটা পার্টি লাইনে। অর্থাৎ রিপাবলিকানরা চাইছেন ট্রাম্প যাতে অপসারিত না হন। আর সে কারণে তাঁদের অবস্থান ছিল ট্রাম্পের পক্ষে। আর ডেমোক্র্যাটরা যেহেতু ট্রাম্পের অভিশংসন চাচ্ছেন, সেহেতু তাঁরা অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে মার্কিন রাজনীতি, বিশেষ করে ট্রাম্পকে অভিশংসনকে কেন্দ্র করে যে রাজনীতি, তাতে বিভক্ত হয়ে গেছে মার্কিন কংগ্রেস। সিনেটের ভোটাভুটিতেও এর প্রতিফলন ঘটবে। অর্থাৎ রিপাবলিকানরা চাইবেন না ট্রাম্প অপসারিত হন। ফলে তাঁরা অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন না। সুতরাং প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প অভিশংসিত হলেও সিনেটে অভিশংসিত হওয়ার আশঙ্কা ক্ষীণ। এ মাসেই সিনেটে ভোটাভুটি হবে। সংবিধানে উভয় কক্ষকে অধিকার দেওয়া হয়েছে কিভাবে একজন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করা যাবে। যেমন—আর্টিকল ১, সেকশন ২, ক্লজ ৫-এ বলা আছে, 'The House of Representatives...shall have the sole power of Impeachment.' আবার আর্টিকল ১, সেকশন ৩, ক্লজ ৬ ও ৭-এ বলা আছে, 'The senate shall have the sole power to try all Impeachment.' এখানে পার্থক্য হলো, যখন সিনেটে অভিশংসনের জন্য ভোটাভুটি হবে তখন প্রধান বিচারপতি সিনেটে সভাপতিত্ব করবেন। সংবিধানের আর্টিকল ২, সেকশন ৪-এ উল্লেখ আছে, একজন প্রেসিডেন্ট যদি রাষ্ট্রদ্রোহ বা বিশ্বাসঘাতকতার মতো কাজ করেন, যদি ঘুষ গ্রহণ করেন, যদি ঘোরতর কোনো অপরাধ, সংবিধান লঙ্ঘন কিংবা বিধিবহির্ভূত কাজ করে থাকেন, তাহলে তাঁকে ‘ইমপিচ’ বা অভিশংসন করা যাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের অনেক কর্মকাণ্ড ট্রাম্পকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে যখন নানা অভিযোগ আসতে থাকে এবং কংগ্রেস যখন এর অনুসন্ধান করতে শুরু করে তখন ট্রাম্প তদন্তপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান। সাক্ষ্য দিতে তাঁর স্টাফদের বাধা দেন। তথ্য-প্রমাণ ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেন বা দেন। এটি তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ, যে অভিযোগে প্রতিনিধিসভা তাঁকে অভিশংসিত করেছে। দ্বিতীয় আরেকটি অভিযোগ, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের একটি গ্যাস কম্পানির দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে চাপ দেওয়া। এই অভিযোগেও তিনি অভিশংসিত হয়েছেন প্রতিনিধিসভায়। মার্কিন মিডিয়ায় কয়েক মাস ধরে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এই দুটি অভিযোগের পেছনে সত্যতা পাওয়া গেছে। ইউক্রেনে যিনি যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তিনিও স্বীকার করেছেন ট্রাম্প ‘বাইডেন ইস্যুতে’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ওপর প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করেছিলেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, জো বাইডেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন (২০০৯-২০১৭) তখন তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেন ইউক্রেনের একটি গ্যাস কম্পানি বুরিসমা হোল্ডিংয়ে মাসিক ৫০ হাজার ডলারে কর্মরত ছিলেন। এই কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন মিকোলা জ্লোচেভিস্ক (Mykola Zlochevsky) ২০০২ সালে। জ্লোচেভিস্ক ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানোকোভিচের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু ইয়ানোকোভিচের পতনের পর তাঁর সঙ্গে জ্লোচেভিস্কও দেশত্যাগ করেন। অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে এখন জ্লোচেভিস্কর বিরুদ্ধে ইউক্রেনে তদন্ত চলছে। হান্টার বাইডেন ওই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন, যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নেয় (২০১৪)। অভিযোগ উঠেছে, হান্টার বাইডেনকে বুরিসমা রিক্রুট করেছিল, যাতে ওই সময়ের মার্কিন প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটানো যায়। ট্রাম্প নিজে স্বীকার করেছেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনিস্ককে ফোন করে হান্টার বাইডেন ও তাঁর বাবা জো বাইডেনের ব্যাপারে তদন্ত করার অনুরোধ করেছিলেন। ফলে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। একজন প্রতিযোগী, যিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে অন্য একটি রাষ্ট্রের প্রধানকে তদন্ত করতে অনুরোধ করা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, বরং অনৈতিকও বটে।
একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের অভিযোগ উঠা কিংবা এক কক্ষে তাঁকে অভিশংসিত করা কোনো ভালো খবর নয়। সিনেটে তাঁকে যদি অভিশংসন না-ও করে, তার পরও এটি তাঁর নৈতিক পরাজয়। এই ‘পরাজয়’ নিয়ে ট্রাম্প কত দূর যেতে পারবেন, এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। কেননা ট্রাম্পকে যাঁরা চেনেন ও জানেন তাঁরা দেখেছেন ট্রাম্প কখনো এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে নেন না। তিনি যা ভালো বোঝেন, তা-ই করেন। তাঁর বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। এটিকে তিনি বলেছিলেন ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। তাঁকে প্রতিনিধি পরিষদে ‘ইমপিচ’ করার প্রক্রিয়াকে তিনি ‘অভ্যুত্থানের একটি উদ্যোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। তিনি পুরো প্রক্রিয়াটিকে ভুয়া বলে দাবি করেছেন। তিনি পেলোসির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন এই বলে যে পেলোসি প্রতিনিধি পরিষদকে সম্মানজনক আইনসভা থেকে ‘দলীয় নির্যাতনের পক্ষপাতদুষ্ট চেম্বারে’ পরিণত করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষায়, এই অভিশংসনপ্রক্রিয়া অবৈধ, দলীয় আনুগত্য থেকে করা অভ্যুত্থানের উদ্যোগ, যেটি ভোটে চরমভাবে ব্যর্থ হবে। তিনি অভিশংসনের এই প্রক্রিয়াকে অষ্টাদশ শতকে ম্যাসাচুসেটসের সালেম শহরে গণহিস্টিরিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ওই সময় বহু মানুষকে ডাইনি অপবাদে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প এই অভিশংসনপ্রক্রিয়াকে ‘ভুয়া’ বললেন, মার্কিন গণমাধ্যমে এর প্রশংসা করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, মার্কিন সংসদের নিম্নকক্ষে ইন্টেলিজেন্স কমিটি যে ‘ইমপিচমেন্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে, তাতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মারাত্মক কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি জাতীয় নিরাপত্তার তোয়াক্কা করেননি এবং সংসদের কার্যকলাপে বাধা দিতে অভূতপূর্ব অভিযান চালিয়েছেন। তবে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত ‘পাস’ হলেও এতে সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। আরো একটি প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠেছে—প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্তের কাগজপত্র স্পিকার পেলোসি কবে নাগাদ সিনেটে পাঠাবেন? বলা হচ্ছে, সিনেটে অভিশংসনের পক্ষে যদি সমর্থক না থাকে, তাহলে তিনি কাগজপত্র পাঠাতে দেরি করতে পারেন। সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা বেশি। তাঁরা অভিশংসনের পক্ষে ভোট না-ও দিতে পারেন। আইন অনুযায়ী উচ্চকক্ষে অর্থাৎ সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রস্তাবের পক্ষে গেলে তবেই প্রেসিডেন্টের অভিশংসন সম্ভব। উচ্চকক্ষে সে সম্ভাবনা নেই বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব উঠাই লজ্জার। দেশটির ইতিহাসে ট্রাম্প হচ্ছেন তৃতীয় প্রেসিডেন্ট, যাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনল কংগ্রেস অর্থাৎ পার্লামেন্ট। একমাত্র কংগ্রেসই কোনো প্রেসিডেন্টকে ‘ইমপিচ’ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন এন্ড্রু জনসন (ডেমোক্র্যাট, ১৮৬৫-১৮৬৯)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হয় ১৮৬৮ সালে। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তিনি প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু সিনেটে এক ভোটের অভাবে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়নি। রিচার্ড নিক্সন ছিলেন রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট (১৯৫৯-১৯৭৪)। নিক্সনের বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৭২ সালে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে। ওয়াশিংটন ডিসিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির সদর দপ্তরে গুপ্তচর যন্ত্র দিয়ে নজরদারি করেছিল নিক্সন শিবির। তদন্তে বেরিয়ে আসে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড নজরদারি করতে আড়িপাতা যন্ত্র বসিয়েছিলেন রিপাবলিকান শিবির তথা নিক্সনের সহকারীরা। নিক্সন প্রায় দুই বছর ওই ঘটনা চাপা দিয়ে রাখতে পারলেও শেষ পর্যন্ত আর পারেননি। ১৯৭৪ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু করে কংগ্রেসের হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি। চূড়ান্ত ভোটাভুটির আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। ধারণা করা হয়, পদত্যাগ না করলে তিনি অভিশংসিত হতেন। অভিশংসনের ইতিহাসে এর পরের নাম ছিল ক্লিনটনের। যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট (ডেমোক্র্যাট, ১৯৯৩-২০০১)। ১৯৯৮ সালে হোয়াইট হাউসের ইন্টার্ন মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি তদন্তকাজে বাধা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রতিনিধি পরিষদের ভোটাভুটিতে অভিশংসিত হন ক্লিনটন। কিন্তু সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পার পেয়ে যান তিনি। এ কারণে তিনি পদত্যাগও করেননি। আজকে ট্রাম্পের অবস্থা অনেকটা সে রকম। প্রতিনিধি পরিষদে তিনি অভিশংসিত হয়েছেন। কিন্তু সিনেটে তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এখানে তিনি পার পেয়ে যেতে পারেন। পরিস্থিতি যেদিকেই যাক না কেন, অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের ‘নৈতিক পরাজয়’ হয়েছে। তিনি নিজের মতো করে ক্ষমতা পরিচালনা করেন। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি আইনের তোয়াক্কা করেন না। সিনেটের ভোটাভুটিতে তিনি পার পেয়ে গেলেও নির্বাচনে তিনি ইমেজ সংকটের মুখে পড়তে পারেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ট্রাম্প আবারও প্রার্থী হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, তা ভোটাররা কতটুকু আমলে নেবে, সেটিই হচ্ছে মূল বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসিত হয়েছেন। নিম্নকক্ষের এই সিদ্ধান্ত কি উচ্চকক্ষ সিনেটেও অনুমোদিত হবে? উভয় কক্ষ যদি ট্রাম্পকে অভিশংসিত করে, একমাত্র তখনই তাঁকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা যায়। কিন্তু তা আদৌ সম্ভব হবে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন এখন। প্রতিনিধি পরিষদে তাঁকে দুই অভিযোগে অভিযুক্ত করে অভিশংসিত করা হয়েছে। প্রথম অভিযোগটি ছিল ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দ্বিতীয়টি বিচারকাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি। ভোটাভুটিতে দেখা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্নে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন ২৩০ জন আর পক্ষে ছিলেন ১৯৭ জন সদস্য। অন্যদিকে কংগ্রেসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন ২২৯ জন আর পক্ষে ১৯৮ জন। ৪৩৫ জন সদস্য নিয়ে প্রতিনিধিসভা গঠিত। এর মধ্যে ডেমোক্রেটিক দলীয় সদস্যসংখ্যা ২৩৩ আর রিপাবলিকান দলীয় সদস্যসংখ্যা ১৯৭। একজন রয়েছেন নিরপেক্ষ আর চারটি আসন খালি রয়েছে। অন্যদিকে সিনেট সদস্য হচ্ছেন ১০০ জন। এর মধ্যে রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩ আর ডেমোক্র্যাটদের ৪৭। এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিনিধিসভায় যে ভোটাভুটি হয়েছে, তা হয়েছে অনেকটা পার্টি লাইনে। অর্থাৎ রিপাবলিকানরা চাইছেন ট্রাম্প যাতে অপসারিত না হন। আর সে কারণে তাঁদের অবস্থান ছিল ট্রাম্পের পক্ষে। আর ডেমোক্র্যাটরা যেহেতু ট্রাম্পের অভিশংসন চাচ্ছেন, সেহেতু তাঁরা অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফলে মার্কিন রাজনীতি, বিশেষ করে ট্রাম্পকে অভিশংসনকে কেন্দ্র করে যে রাজনীতি, তাতে বিভক্ত হয়ে গেছে মার্কিন কংগ্রেস। সিনেটের ভোটাভুটিতেও এর প্রতিফলন ঘটবে। অর্থাৎ রিপাবলিকানরা চাইবেন না ট্রাম্প অপসারিত হন। ফলে তাঁরা অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন না। সুতরাং প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প অভিশংসিত হলেও সিনেটে অভিশংসিত হওয়ার আশঙ্কা ক্ষীণ। এ মাসেই সিনেটে ভোটাভুটি হবে। সংবিধানে উভয় কক্ষকে অধিকার দেওয়া হয়েছে কিভাবে একজন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করা যাবে। যেমন—আর্টিকল ১, সেকশন ২, ক্লজ ৫-এ বলা আছে, 'The House of Representatives...shall have the sole power of Impeachment.' আবার আর্টিকল ১, সেকশন ৩, ক্লজ ৬ ও ৭-এ বলা আছে, 'The senate shall have the sole power to try all Impeachment.' এখানে পার্থক্য হলো, যখন সিনেটে অভিশংসনের জন্য ভোটাভুটি হবে তখন প্রধান বিচারপতি সিনেটে সভাপতিত্ব করবেন। সংবিধানের আর্টিকল ২, সেকশন ৪-এ উল্লেখ আছে, একজন প্রেসিডেন্ট যদি রাষ্ট্রদ্রোহ বা বিশ্বাসঘাতকতার মতো কাজ করেন, যদি ঘুষ গ্রহণ করেন, যদি ঘোরতর কোনো অপরাধ, সংবিধান লঙ্ঘন কিংবা বিধিবহির্ভূত কাজ করে থাকেন, তাহলে তাঁকে ‘ইমপিচ’ বা অভিশংসন করা যাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের অনেক কর্মকাণ্ড ট্রাম্পকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে যখন নানা অভিযোগ আসতে থাকে এবং কংগ্রেস যখন এর অনুসন্ধান করতে শুরু করে তখন ট্রাম্প তদন্তপ্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান। সাক্ষ্য দিতে তাঁর স্টাফদের বাধা দেন। তথ্য-প্রমাণ ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেন বা দেন। এটি তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ, যে অভিযোগে প্রতিনিধিসভা তাঁকে অভিশংসিত করেছে। দ্বিতীয় আরেকটি অভিযোগ, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের একটি গ্যাস কম্পানির দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে চাপ দেওয়া। এই অভিযোগেও তিনি অভিশংসিত হয়েছেন প্রতিনিধিসভায়। মার্কিন মিডিয়ায় কয়েক মাস ধরে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এই দুটি অভিযোগের পেছনে সত্যতা পাওয়া গেছে। ইউক্রেনে যিনি যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তিনিও স্বীকার করেছেন ট্রাম্প ‘বাইডেন ইস্যুতে’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ওপর প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করেছিলেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, জো বাইডেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন (২০০৯-২০১৭) তখন তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেন ইউক্রেনের একটি গ্যাস কম্পানি বুরিসমা হোল্ডিংয়ে মাসিক ৫০ হাজার ডলারে কর্মরত ছিলেন। এই কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন মিকোলা জ্লোচেভিস্ক (Mykola Zlochevsky) ২০০২ সালে। জ্লোচেভিস্ক ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানোকোভিচের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু ইয়ানোকোভিচের পতনের পর তাঁর সঙ্গে জ্লোচেভিস্কও দেশত্যাগ করেন। অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে এখন জ্লোচেভিস্কর বিরুদ্ধে ইউক্রেনে তদন্ত চলছে। হান্টার বাইডেন ওই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন, যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নেয় (২০১৪)। অভিযোগ উঠেছে, হান্টার বাইডেনকে বুরিসমা রিক্রুট করেছিল, যাতে ওই সময়ের মার্কিন প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটানো যায়। ট্রাম্প নিজে স্বীকার করেছেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনিস্ককে ফোন করে হান্টার বাইডেন ও তাঁর বাবা জো বাইডেনের ব্যাপারে তদন্ত করার অনুরোধ করেছিলেন। ফলে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। একজন প্রতিযোগী, যিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে অন্য একটি রাষ্ট্রের প্রধানকে তদন্ত করতে অনুরোধ করা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, বরং অনৈতিকও বটে।
একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের অভিযোগ উঠা কিংবা এক কক্ষে তাঁকে অভিশংসিত করা কোনো ভালো খবর নয়। সিনেটে তাঁকে যদি অভিশংসন না-ও করে, তার পরও এটি তাঁর নৈতিক পরাজয়। এই ‘পরাজয়’ নিয়ে ট্রাম্প কত দূর যেতে পারবেন, এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। কেননা ট্রাম্পকে যাঁরা চেনেন ও জানেন তাঁরা দেখেছেন ট্রাম্প কখনো এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে নেন না। তিনি যা ভালো বোঝেন, তা-ই করেন। তাঁর বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। এটিকে তিনি বলেছিলেন ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। তাঁকে প্রতিনিধি পরিষদে ‘ইমপিচ’ করার প্রক্রিয়াকে তিনি ‘অভ্যুত্থানের একটি উদ্যোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। তিনি পুরো প্রক্রিয়াটিকে ভুয়া বলে দাবি করেছেন। তিনি পেলোসির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন এই বলে যে পেলোসি প্রতিনিধি পরিষদকে সম্মানজনক আইনসভা থেকে ‘দলীয় নির্যাতনের পক্ষপাতদুষ্ট চেম্বারে’ পরিণত করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষায়, এই অভিশংসনপ্রক্রিয়া অবৈধ, দলীয় আনুগত্য থেকে করা অভ্যুত্থানের উদ্যোগ, যেটি ভোটে চরমভাবে ব্যর্থ হবে। তিনি অভিশংসনের এই প্রক্রিয়াকে অষ্টাদশ শতকে ম্যাসাচুসেটসের সালেম শহরে গণহিস্টিরিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ওই সময় বহু মানুষকে ডাইনি অপবাদে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প এই অভিশংসনপ্রক্রিয়াকে ‘ভুয়া’ বললেন, মার্কিন গণমাধ্যমে এর প্রশংসা করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, মার্কিন সংসদের নিম্নকক্ষে ইন্টেলিজেন্স কমিটি যে ‘ইমপিচমেন্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে, তাতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মারাত্মক কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি জাতীয় নিরাপত্তার তোয়াক্কা করেননি এবং সংসদের কার্যকলাপে বাধা দিতে অভূতপূর্ব অভিযান চালিয়েছেন। তবে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত ‘পাস’ হলেও এতে সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। আরো একটি প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠেছে—প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্তের কাগজপত্র স্পিকার পেলোসি কবে নাগাদ সিনেটে পাঠাবেন? বলা হচ্ছে, সিনেটে অভিশংসনের পক্ষে যদি সমর্থক না থাকে, তাহলে তিনি কাগজপত্র পাঠাতে দেরি করতে পারেন। সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যা বেশি। তাঁরা অভিশংসনের পক্ষে ভোট না-ও দিতে পারেন। আইন অনুযায়ী উচ্চকক্ষে অর্থাৎ সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রস্তাবের পক্ষে গেলে তবেই প্রেসিডেন্টের অভিশংসন সম্ভব। উচ্চকক্ষে সে সম্ভাবনা নেই বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব উঠাই লজ্জার। দেশটির ইতিহাসে ট্রাম্প হচ্ছেন তৃতীয় প্রেসিডেন্ট, যাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনল কংগ্রেস অর্থাৎ পার্লামেন্ট। একমাত্র কংগ্রেসই কোনো প্রেসিডেন্টকে ‘ইমপিচ’ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন এন্ড্রু জনসন (ডেমোক্র্যাট, ১৮৬৫-১৮৬৯)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হয় ১৮৬৮ সালে। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তিনি প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু সিনেটে এক ভোটের অভাবে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়নি। রিচার্ড নিক্সন ছিলেন রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট (১৯৫৯-১৯৭৪)। নিক্সনের বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৭২ সালে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে। ওয়াশিংটন ডিসিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির সদর দপ্তরে গুপ্তচর যন্ত্র দিয়ে নজরদারি করেছিল নিক্সন শিবির। তদন্তে বেরিয়ে আসে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড নজরদারি করতে আড়িপাতা যন্ত্র বসিয়েছিলেন রিপাবলিকান শিবির তথা নিক্সনের সহকারীরা। নিক্সন প্রায় দুই বছর ওই ঘটনা চাপা দিয়ে রাখতে পারলেও শেষ পর্যন্ত আর পারেননি। ১৯৭৪ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু করে কংগ্রেসের হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি। চূড়ান্ত ভোটাভুটির আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। ধারণা করা হয়, পদত্যাগ না করলে তিনি অভিশংসিত হতেন। অভিশংসনের ইতিহাসে এর পরের নাম ছিল ক্লিনটনের। যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট (ডেমোক্র্যাট, ১৯৯৩-২০০১)। ১৯৯৮ সালে হোয়াইট হাউসের ইন্টার্ন মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি তদন্তকাজে বাধা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রতিনিধি পরিষদের ভোটাভুটিতে অভিশংসিত হন ক্লিনটন। কিন্তু সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পার পেয়ে যান তিনি। এ কারণে তিনি পদত্যাগও করেননি। আজকে ট্রাম্পের অবস্থা অনেকটা সে রকম। প্রতিনিধি পরিষদে তিনি অভিশংসিত হয়েছেন। কিন্তু সিনেটে তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এখানে তিনি পার পেয়ে যেতে পারেন। পরিস্থিতি যেদিকেই যাক না কেন, অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের ‘নৈতিক পরাজয়’ হয়েছে। তিনি নিজের মতো করে ক্ষমতা পরিচালনা করেন। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি আইনের তোয়াক্কা করেন না। সিনেটের ভোটাভুটিতে তিনি পার পেয়ে গেলেও নির্বাচনে তিনি ইমেজ সংকটের মুখে পড়তে পারেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ট্রাম্প আবারও প্রার্থী হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, তা ভোটাররা কতটুকু আমলে নেবে, সেটিই হচ্ছে মূল বিষয়।
Daily Kalerkontho
04.01.2020
0 comments:
Post a Comment