রোহিঙ্গাদের ওপর ২০১৭ সালে যে গণহত্যা ও নির্যাতন চালানো হয়েছিল, এ ব্যাপারে 'ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস' বা আইসিজে একটি রায় দিয়েছেন। এই রায়ের সঙ্গে অনেক প্রশ্ন এখন জড়িত। এই রায় অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই; কিন্তু বড় প্রশ্ন, এই রায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কতটুকু সহায়ক হবে? দ্বিতীয়ত, এই রায়ের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা যে সুরক্ষার অধিকারী, তা স্বীকৃত হলো। কিন্তু এতে করে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমারের যে দৃষ্টিভঙ্গি, তাতে আদৌ কোনো পরিবর্তন আসবে কি? তৃতীয়ত- রায়ে বলা আছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা চার মাস অন্তর অন্তর আদালতকে জানাতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের ফেরত ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিতে পারে সু চি সরকার? চতুর্থত, চীনা প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরের সময় রাখাইনে চীনা বিনিয়োগের ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাস রাখাইনে। চীনা বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ কী?
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ই আইসিজের সদস্য। জাতিসংঘ সনদের ৯৩ ধারায় জাতিসংঘের সদস্য প্রতিটি দেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইসিজের সদস্য। আর ৯৪ ধারা মতে, আইসিজের রায় মানতে প্রতিটি দেশ বাধ্য। এর অর্থ হচ্ছে, আইসিজে যে রায়টি দিল, তা এখন উভয় দেশই মানতে বাধ্য। গত ১০ ডিসেম্বর হেগে এ ব্যাপারে শুনানি শুরু হলে গাম্বিয়া প্রথমে বক্তব্য পেশ করেছিল। আদালতের শুনানিতে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবু বকর তামবাদো মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জেনোসাইডের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছিলেন। তিনি হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন অং সান সু চি। সংবাদপত্রের ভাষায় তিনি ছিলেন ভাবলেশহীন। পরে তিনি ও তার সঙ্গীরা বক্তব্য দেন। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন হয়েছিল। এরপর রায়টি এলো। বলা ভালো, গাম্বিয়া আইসিজেতে যে মামলা দায়ের করেছে, তাতে বলা হয়েছে- সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে মিয়ানমার জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন (১৯৪৮) লঙ্ঘন করেছে। ৪৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে নথি সংযুক্ত করে বলা হয়েছে, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সামাজিক ভিত্তি ধ্বংস করেছে। হত্যা ও ধর্ষণও করেছে। মিয়ানমার সব ধরনের অভিযোগে অস্বীকার করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ৪৪৪ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়- হত্যা, গণধর্ষণ, শারীরিক লাঞ্ছনার ব্যাপক প্রমাণ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যাবিষয়ক বিচারের আওতায় পড়ে। শীর্ষ স্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করে তদন্ত ও বিচারের কথা বলা হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে। মিয়ানমার সরকার ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনকেও বানোয়াট বলেছিল। এখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নিয়েও কথা বলা দরকার। রোম স্ট্যাটিটিউট অনুযায়ী তা গঠিত হয় ২০০২ সালে। ১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই ইতালির রাজধানী রোমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠনের লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ১২২টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। রোম স্ট্যাটিটিউটে চারটি অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আক্রমণ সংক্রান্ত অপরাধ। মিয়ানমার রোম স্ট্যাটিটিউটে স্বাক্ষর করেনি। তবে আইসিজেতে স্বাক্ষর করেছে। রোম স্ট্যাটিটিউটে স্বাক্ষর না করায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের গণহত্যাকারীদের বিচার করা যাবে কিনা, এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন।
আইসিজে সাধারণত দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করে থাকে। যেমন বলা যেতে পারে, ক্যামেরুন বনাম নাইজেরিয়ার মধ্যকার বিরোধ কিংবা ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ার মধ্যকার বিরোধের মীমাংসা করেছিল আইসিজে। আইসিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে (২২ মে ১৯৪৭) ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত আইসিজেতে ১৭৭টি মামলার শুনানি হয়েছে ও রায় দিয়েছে। আইসিজে জাতিসংঘের একটি সংস্থা ও সংস্থাটির যে কোনো সিদ্ধান্ত মানতে সদস্যভুক্ত দেশগুলো বাধ্য। গাম্বিয়া যে মামলা করেছে তাতে আদালতের কাছে চারটি আদেশ চাওয়া হয়েছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার চাওয়া হয়নি। আইসিজের রায়ে এই দাবিগুলোর অনেকটাই ফুটে উঠেছে। গণহত্যা ও ধর্ষণের বিচারের এখতিয়ার আইসিসির। ইতিহাস বলে, আইসিসি ইতোমধ্যে ৪৪ জন দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়েছে এবং ৩৬ ব্যক্তির নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। আইসিসি যাদের 'গণহত্যা' ও 'যুদ্ধাপরাধের' বিচার করেছে, তারা মূলত কঙ্গো, উগান্ডা, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, দারফুর-সুদান, কেনিয়া, মালি, আইভরি কোস্ট ও বুরুন্ডির নাগরিক।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ই আইসিজের সদস্য। জাতিসংঘ সনদের ৯৩ ধারায় জাতিসংঘের সদস্য প্রতিটি দেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইসিজের সদস্য। আর ৯৪ ধারা মতে, আইসিজের রায় মানতে প্রতিটি দেশ বাধ্য। এর অর্থ হচ্ছে, আইসিজে যে রায়টি দিল, তা এখন উভয় দেশই মানতে বাধ্য। গত ১০ ডিসেম্বর হেগে এ ব্যাপারে শুনানি শুরু হলে গাম্বিয়া প্রথমে বক্তব্য পেশ করেছিল। আদালতের শুনানিতে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবু বকর তামবাদো মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জেনোসাইডের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছিলেন। তিনি হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন অং সান সু চি। সংবাদপত্রের ভাষায় তিনি ছিলেন ভাবলেশহীন। পরে তিনি ও তার সঙ্গীরা বক্তব্য দেন। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন হয়েছিল। এরপর রায়টি এলো। বলা ভালো, গাম্বিয়া আইসিজেতে যে মামলা দায়ের করেছে, তাতে বলা হয়েছে- সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে মিয়ানমার জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন (১৯৪৮) লঙ্ঘন করেছে। ৪৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে নথি সংযুক্ত করে বলা হয়েছে, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সামাজিক ভিত্তি ধ্বংস করেছে। হত্যা ও ধর্ষণও করেছে। মিয়ানমার সব ধরনের অভিযোগে অস্বীকার করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ৪৪৪ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়- হত্যা, গণধর্ষণ, শারীরিক লাঞ্ছনার ব্যাপক প্রমাণ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যাবিষয়ক বিচারের আওতায় পড়ে। শীর্ষ স্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করে তদন্ত ও বিচারের কথা বলা হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে। মিয়ানমার সরকার ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনকেও বানোয়াট বলেছিল। এখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নিয়েও কথা বলা দরকার। রোম স্ট্যাটিটিউট অনুযায়ী তা গঠিত হয় ২০০২ সালে। ১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই ইতালির রাজধানী রোমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠনের লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ১২২টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। রোম স্ট্যাটিটিউটে চারটি অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আক্রমণ সংক্রান্ত অপরাধ। মিয়ানমার রোম স্ট্যাটিটিউটে স্বাক্ষর করেনি। তবে আইসিজেতে স্বাক্ষর করেছে। রোম স্ট্যাটিটিউটে স্বাক্ষর না করায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের গণহত্যাকারীদের বিচার করা যাবে কিনা, এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন।
আইসিজে সাধারণত দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করে থাকে। যেমন বলা যেতে পারে, ক্যামেরুন বনাম নাইজেরিয়ার মধ্যকার বিরোধ কিংবা ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ার মধ্যকার বিরোধের মীমাংসা করেছিল আইসিজে। আইসিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে (২২ মে ১৯৪৭) ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত আইসিজেতে ১৭৭টি মামলার শুনানি হয়েছে ও রায় দিয়েছে। আইসিজে জাতিসংঘের একটি সংস্থা ও সংস্থাটির যে কোনো সিদ্ধান্ত মানতে সদস্যভুক্ত দেশগুলো বাধ্য। গাম্বিয়া যে মামলা করেছে তাতে আদালতের কাছে চারটি আদেশ চাওয়া হয়েছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার চাওয়া হয়নি। আইসিজের রায়ে এই দাবিগুলোর অনেকটাই ফুটে উঠেছে। গণহত্যা ও ধর্ষণের বিচারের এখতিয়ার আইসিসির। ইতিহাস বলে, আইসিসি ইতোমধ্যে ৪৪ জন দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়েছে এবং ৩৬ ব্যক্তির নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। আইসিসি যাদের 'গণহত্যা' ও 'যুদ্ধাপরাধের' বিচার করেছে, তারা মূলত কঙ্গো, উগান্ডা, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, দারফুর-সুদান, কেনিয়া, মালি, আইভরি কোস্ট ও বুরুন্ডির নাগরিক।
গাম্বিয়া আইসিজেতে যে মামলা করেছিল, এ ব্যাপারে মিয়ানমারের আপত্তি কিংবা মিয়ানমার প্রথমদিকে তা প্রত্যাখ্যান করলেও আমরা বসনিয়া, হারজেগোভিনায় গণহত্যার দায়ে যে মামলা হয়েছিল, তার দৃষ্টান্ত দিতে পারি। বসনিয়ার মুসলমান, যারা বসনিয়াক হিসেবে পরিচিত, একসময় সাবেক যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল। বসনিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যার জন্য সার্বিয়ার খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী সার্বদের দায়ী করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আইসিজেতে অভিযোগ দায়ের করা হলে (বসনিয়ার পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগ) ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আইসিজে তাদের রায়ে ১৯৯৫ সালের ১৩ জুলাই সেব্রানিসকার হত্যাকাণ্ডকে 'গণহত্যা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তবে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে আইসিজে দায়ী করেননি। আইসিজে তাদের রায়ে বলেছেন, সার্বিয়া ওই গণহত্যা এড়াতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু তারা তা নেয়নি। এমনকি যারা যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছিল, তাদের শাস্তি দিতেও পারেনি। সেব্রানিসকার প্রায় ৮ হাজার মুসলমান নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করেছিল সার্বিয়ার আধা মিলিশিয়া বাহিনী। ওই সময় মুসলমানদের রক্ষায় সেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ছিল। সার্বরা তাদেরকে সেখান থেকে উৎখাত করে সেব্রানিসকায় গণহত্যা চালায় (নিউইয়র্ক টাইমস, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। এখন গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় যে রায়টি এলো, তাতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার কথা বলা হলেও গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচারের কথা বলা হয়নি। অভিযুক্তদের বিচারের জন্য যেতে হবে আইসিসি বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে।
এটা ঠিক, এই রায়ের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের একটা নৈতিক পরাজয় ঘটল। কিন্তু এই রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে এই মুহূর্তে কোনো সম্ভাবনা তৈরি করবে না। এটি একটি ভিন্ন বিষয়। এর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি জড়িত। ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী মিয়ানমার এদের (রোহিঙ্গা মুসলমান) নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করে আসছে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে বলেও মনে হয় না। উপরন্তু মিয়ানমার গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ সেনা কমান্ডারদের বিচার করবে- এটাও মনে হয় না। যদিও অং সান সু চি আবারও বলেছেন, দোষীদের 'শাস্তি' দিতে তাদের আরও কিছু সময় দরকার। ফিনান্সিয়াল টাইমসে লিখিত এক প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন (মিয়ানমার টাইমস, ২৪ জানুয়ারি ২০২০)। মিয়ানমার সরকার এর আগে যে তথাকথিত একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করেছিল, কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে- নিরাপত্তা বাহিনী খুব সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ করে থাকতে পারে; কিন্তু তারা রাখাইনে কোনো গণহত্যা চালায়নি। সুতরাং একটা প্রশ্ন থাকলই, যারা রাখাইনে গণহত্যা চালিয়েছিল, তাদের আদৌ বিচার হবে কিনা? মিয়ানমারের একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, চীন এখনও মিয়ানমারকে সমর্থক করে যাচ্ছে। হেগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায়টি দেওয়ার এক সপ্তাহ আগে চীনা প্রেসিডেন্ট মিয়ানমার সফর করে গেছেন। বলা হচ্ছে, চীন-মিয়ানমার সম্পর্কের ৭০ বছর পালন উপলক্ষে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মিয়ানমার গিয়েছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার যখন অভিযুক্ত এবং একটি রায় অপেক্ষমাণ, তখন এই সফর অনেক বিতর্কের অবতারণা করবে মাত্র। মিয়ানমার সরকারের প্রতি চীনের সমর্থনের এটাই শেষ বহিঃপ্রকাশ।
মিয়ানমারে চীনা স্বার্থ সবচেয়ে বেশি। ১৯৮৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীন মিয়ানমারে বিনিয়োগ করেছে ২০.২৪ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় মিয়ানমারে যত বিনিয়োগ এসেছে, চীনের বিনিয়োগ ছিল সবচেয়ে বেশি। চীন মিয়ানমারের পাওয়ার সেক্টরে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে। মোট বিনিয়োগের ৫৭ শতাংশ এই সেক্টরে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর পরের অবস্থান তেল ও গ্যাস সেক্টরে, বিনিয়োগের পরিমাণ ১৮ শতাংশ। মিয়ানমার চীনের সীমান্তবর্তী দেশ। এ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বন্ধনটা ঐতিহাসিক। একজন গবেষক ও লেখক মাউং আউং মাইও চীন-মিয়ানমার সম্পর্ককে উল্লেখ করেছেন 'চধঁশ-চযধ'ি হিসেবে। 'চধঁশ-চযধ'ি বার্মিজ শব্দ। এর মধ্য দিয়ে জাতিগোষ্ঠীভাবে দু'দেশের মধ্যে যে মিল আছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। দু'দেশের সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে বার্মিজ নেতারা অতীতেও এই শব্দ ব্যবহার করেছেন। ভারত মহাসাগরে চীনের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে। চীনের 'জ্বালানি ক্ষুধা' নিশ্চিত করার স্বার্থে দেশটি ভারত মহাসাগরে নির্বিঘ্নে তার জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়। এ কারণেই বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে কিয়াউকপিউতে (রাখাইন) সমুদ্রবন্দরটি চীন নির্মাণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে চীনের স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মিয়ানমার একটি অংশ। খুব সঙ্গত কারণেই রোহিঙ্গা ইস্যুটি চীনের কাছে প্রাধান্য পায়নি কখনও। একসময় চীন একটি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চেয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের অসহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে কোনো জট খোলেনি। আইসিজে একটি রায় দিলেন; কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য তা কোনো ভালো সংবাদ বয়ে আনবে কি?
এটা ঠিক, এই রায়ের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের একটা নৈতিক পরাজয় ঘটল। কিন্তু এই রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে এই মুহূর্তে কোনো সম্ভাবনা তৈরি করবে না। এটি একটি ভিন্ন বিষয়। এর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি জড়িত। ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী মিয়ানমার এদের (রোহিঙ্গা মুসলমান) নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করে আসছে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে বলেও মনে হয় না। উপরন্তু মিয়ানমার গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ সেনা কমান্ডারদের বিচার করবে- এটাও মনে হয় না। যদিও অং সান সু চি আবারও বলেছেন, দোষীদের 'শাস্তি' দিতে তাদের আরও কিছু সময় দরকার। ফিনান্সিয়াল টাইমসে লিখিত এক প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন (মিয়ানমার টাইমস, ২৪ জানুয়ারি ২০২০)। মিয়ানমার সরকার এর আগে যে তথাকথিত একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করেছিল, কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে- নিরাপত্তা বাহিনী খুব সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ করে থাকতে পারে; কিন্তু তারা রাখাইনে কোনো গণহত্যা চালায়নি। সুতরাং একটা প্রশ্ন থাকলই, যারা রাখাইনে গণহত্যা চালিয়েছিল, তাদের আদৌ বিচার হবে কিনা? মিয়ানমারের একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, চীন এখনও মিয়ানমারকে সমর্থক করে যাচ্ছে। হেগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায়টি দেওয়ার এক সপ্তাহ আগে চীনা প্রেসিডেন্ট মিয়ানমার সফর করে গেছেন। বলা হচ্ছে, চীন-মিয়ানমার সম্পর্কের ৭০ বছর পালন উপলক্ষে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মিয়ানমার গিয়েছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার যখন অভিযুক্ত এবং একটি রায় অপেক্ষমাণ, তখন এই সফর অনেক বিতর্কের অবতারণা করবে মাত্র। মিয়ানমার সরকারের প্রতি চীনের সমর্থনের এটাই শেষ বহিঃপ্রকাশ।
মিয়ানমারে চীনা স্বার্থ সবচেয়ে বেশি। ১৯৮৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীন মিয়ানমারে বিনিয়োগ করেছে ২০.২৪ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় মিয়ানমারে যত বিনিয়োগ এসেছে, চীনের বিনিয়োগ ছিল সবচেয়ে বেশি। চীন মিয়ানমারের পাওয়ার সেক্টরে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে। মোট বিনিয়োগের ৫৭ শতাংশ এই সেক্টরে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর পরের অবস্থান তেল ও গ্যাস সেক্টরে, বিনিয়োগের পরিমাণ ১৮ শতাংশ। মিয়ানমার চীনের সীমান্তবর্তী দেশ। এ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বন্ধনটা ঐতিহাসিক। একজন গবেষক ও লেখক মাউং আউং মাইও চীন-মিয়ানমার সম্পর্ককে উল্লেখ করেছেন 'চধঁশ-চযধ'ি হিসেবে। 'চধঁশ-চযধ'ি বার্মিজ শব্দ। এর মধ্য দিয়ে জাতিগোষ্ঠীভাবে দু'দেশের মধ্যে যে মিল আছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। দু'দেশের সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে বার্মিজ নেতারা অতীতেও এই শব্দ ব্যবহার করেছেন। ভারত মহাসাগরে চীনের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে। চীনের 'জ্বালানি ক্ষুধা' নিশ্চিত করার স্বার্থে দেশটি ভারত মহাসাগরে নির্বিঘ্নে তার জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়। এ কারণেই বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে কিয়াউকপিউতে (রাখাইন) সমুদ্রবন্দরটি চীন নির্মাণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে চীনের স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মিয়ানমার একটি অংশ। খুব সঙ্গত কারণেই রোহিঙ্গা ইস্যুটি চীনের কাছে প্রাধান্য পায়নি কখনও। একসময় চীন একটি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চেয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের অসহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে কোনো জট খোলেনি। আইসিজে একটি রায় দিলেন; কিন্তু নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য তা কোনো ভালো সংবাদ বয়ে আনবে কি?
0 comments:
Post a Comment