রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

আরব বিশ্বে বড় পরিবর্তনের সূচনা

আরব বিশ্ব কি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন একটি পরিবর্তনের সূচনা করতে যাচ্ছে? হোসনি মোবারক-পরবর্তী মিসরে সাধারণ নির্বাচনে কট্টর ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত ইসলামিক ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির বিজয় এ কথাই প্রমাণ করে যে মিসরের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে। যদিও এই পরিবর্তন শুধু মিসরেই আসেনি, বরং প্রায় প্রতিটি আরব দেশেই এই পরিবর্তন আসছে। তিন দফা নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায় ৪৯৮টি আসনের সংসদে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির নেতৃত্বে গঠিত ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স পেয়েছে ২১৬টি আসন। তাদের নিজস্ব আসন ২১৬, শতকরা ৪৫ দশমিক ২ ভাগ ভোট। অপরদিকে কট্টরপন্থী সালাফিস্ট হিসেবে পরিচিত আল নুর পেয়েছে ১০৯টি আসন। দলটির নেতৃত্বে গঠিত ইসলামিক অ্যালায়েন্স পেয়েছে ১২৫টি আসন। শতকরা ২১ দশমিক ৮ ভাগ ভোট পেয়ে আল নুর দলটির অবস্থান দ্বিতীয়। ধর্মনিরপেক্ষবাদী তথা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর অবস্থান খুবই খারাপ। এই নির্বাচনী ফলাফলের মধ্য দিয়ে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করার দায়িত্ব অর্পিত হবে ইসলামপন্থীদের হাতে। মিসরের রাজনীতির জন্য এটা একটা বড় পরিবর্তন।
মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনটা প্রথম শুরু হয়েছিল তিউনিসিয়ায়। সেখানে ২৩ বছরের শাসক জয়নুল আবেদিন বিন আলির পতনের পর প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, তাতে বিজয়ী হয়েছে ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত এন্নাহদা পার্টি। ২১৭ আসনের সংসদে তারা পেয়েছে ৮৯টি আসন। এই ইসলামপন্থী দলটি ধর্মনিরপেক্ষ একটি দলের সঙ্গে মিলে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছে ইতোমধ্যে। নির্বাচনে বিজয়ী তিনটি দলের মাঝে সেখানে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে এন্নাহদার নেতা হামদি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেস ফর দ্য রিপাবলিক পার্টির মুনসেফ মারজুকি প্রেসিডেন্ট আর এত্তাকাতুল দলের মুস্তাফা বিন জাফর হয়েছেন স্পিকার। ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে মরক্কোয়। সেখানে অতি সম্প্রতি যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, তাতে ইসলামপন্থী দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বিজয়ী হয়েছে। যদিও দলটি এককভাবে বিজয়ী হতে পারেনি। অনেকটা তিউনিসিয়ার মতোই একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম হতে যাচ্ছে মরক্কোতে। তিউনিসিয়ায় যেমন ইসলামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা একটি প্ল্যাটফরমে একত্রিত হয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিতে যাচ্ছে, ঠিক তেমনটি হতে যাচ্ছে মরক্কোতে। এখানে ইসলামপন্থীরা এককভাবে বিজয়ী হয়েছে সত্য (৩৯৫ আসনের ১২০টিতে বিজয়ী), কিন্তু জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে ঐক্য করতে হয়েছে ইন্ডিপেনডেন্স পার্টি ও সোস্যালিস্ট ইউনিয়ন অব পপুলার ফোর্সের সঙ্গে। জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা আবদেলইয়া বারকিরানে হয়েছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী। মিসরও এখন সেদিকে যাচ্ছে। ইয়েমেনের অবস্থাও অনেকটা তেমনি।
মিসর তথা মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থীদের এই বিজয় পশ্চিমা বিশ্বে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, বলা মুশকিল। তবে ইসলামপন্থীদের এই উত্থান তেলআবিব ও ওয়াশিংটনে যে উত্কণ্ঠার সৃষ্টি করবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়ামস বার্নস মিসরে ইসলামিক ব্রাদারহুড নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর অর্থ পরিষ্কার-যুক্তরাষ্ট্র ব্রাদারহুডের রাজনীতি নিয়ে আরও কিছু জানতে চায়। বিশেষ করে মিসর ইসরায়েলের সঙ্গে যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, সে ব্যাপারে ব্রাদারহুড নেতাদের মনোভাব কী-এটা জানা ওবামা প্রশাসনের জন্য জরুরি। মিসরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বড় স্বার্থ রয়েছে। ব্রাদারহুডের উত্থান ওই স্বার্থে আঘাত হানুক, এটা ওয়াশিংটন চাইবে না। মিসরের খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে নিয়েও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ওবামা প্রশাসন। এই মুহূর্তে সর্বস্তরে ব্যাপক সম্পর্ক গড়ে না তুললেও ইসলামিক ব্রাদারহুডের সঙ্গে ‘সীমিত’ সম্পর্ক গড়ে তুলবে ওয়াশিংটন।
এক সময় ধারণা করা হয়েছিল আরব বিশ্বে একনায়কতান্ত্রিক সরকারগুলোর পতনের পর সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু ইসলামপন্থীদের উত্থান কি গণতন্ত্রের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে? সমস্যা আছে ইসলামিক উগ্রপন্থীদের নিয়ে। উত্তর আফ্রিকার মাগরেবভুক্ত অঞ্চলে গঠিত হয়েছিল অষ-ছধবফধ রহ ঃযব ওংষধসরপ গধমযত্বন (অছওগ)। ২০০৭ সালে আলজেরিয়াতে এরা গঠন করেছিল ঝধষধভরংঃ ত্ড়েঁঢ় ভড়ত্ চত্বধপযরহম ্ ঈড়সনধঃ (ঝেচঈ)। ঝেচঈ আলজেরিয়াতে এখনও সক্রিয়। আর লিবিয়াতে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। গাদ্দাফি-পরবর্তী লিবিয়াতে গণতন্ত্রের বিকাশ নিয়েও প্রশ্ন আছে। আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের অবস্থা খুব আশাব্যঞ্জক নয়। ফ্রিডম হাউস ১৬৭টি দেশের গণতন্ত্র নিয়ে যে জরিপ চালিয়েছিল, তাতে তিউনিসিয়ার অবস্থান ছিল ১৪৪, মিসরের ১৩৮ আর লিবিয়ার ১৫৮। লিবিয়ায় প্রয়াত কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতায় ছিলেন দীর্ঘ ৪১ বছর। এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার ইতিহাস কারও নেই। কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এত দীর্ঘ সময় কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেন না। দেশটিতে গণতন্ত্র চর্চার কোনো ইতিহাসও নেই। গাদ্দাফি নিজে সরকারিভাবে প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। তার উপাধি ছিল ‘বিপ্লবের নেতা’। অথচ ‘বিপ্লব’ হয়েছিল সেই ১৯৬৯ সালে। কোনো সংবিধানও ছিল না। সংসদের আদলে ছিল ‘জেনারেল পিপলস কংগ্রেস’, যেখানে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণীত হতো। কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বও ছিল না সেখানে। রাজনৈতিক দল ব্যতিরেকে এখন সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কীভাবে? আরব বিশ্বে এর বাইরে আলজেরিয়া ও ইয়েমেনে গণতন্ত্র সূচকে অবস্থান ১২৫ ও ১৪৬। বাহরাইনের অবস্থান ১২২। রাজতন্ত্র শাসিত দেশগুলোতেও গণতন্ত্র সূচক আশাব্যঞ্জক নয়। এই যখন পরিস্থিতি তখন মরক্কো থেকে এসেছে একটি আশাব্যঞ্জক খবর। বাদশাহ মুহম্মদ-৬ সেখানে সংস্কারের কথা বলেছেন। জনগণের ভোটে তিনি সেখানে পরিবর্তন এনেছেন। তরুণ এই রাজা ক্ষমতায় আছেন ১৯৯৯ সাল থেকে। তুলনামূলক বিচারে আরব বিশ্বের অন্য দেশগুলোর চেয়ে মরক্কোর অবস্থা অনেক ভালো। গণতন্ত্র ইনডেক্সে ১৬৭টি দেশের মধ্যে মরক্কোর অবস্থান ১১৬। আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ১৯৬টি দেশের মধ্যে দেশটির অবস্থান ১৪৬। এখন গণভোটে সংবিধানে কিছু পরিবর্তনের পক্ষে রায় হয়েছে। এবং আগামীতে যদি সেখানে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আরব বিশ্বের রাজনীতির জন্য তা হবে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সম্ভবত বাদশাহ মুহম্মদ পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছেন। তাই আগেভাগেই তিনি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন দেখতে হবে তিনি কতটুকু আন্তরিক। তবে একটা ভালো দিক হচ্ছে মরক্কোতে বড় ধরনের কোনো গণঅভ্যুত্থানের এখনও সৃষ্টি হয়নি। মিসর কিংবা সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি সেখানে এখনও সৃষ্টি হয়নি। তার আগেই বাদশাহ মুহম্মদ-৬ সংস্কারের উদ্যোগ নিলেন। তিনি নিজের কিছু ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন ইতোমধ্যে।
‘আরব বসন্ত’কে সামনে রেখে এখন অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। এক. লিবিয়া ইরাকের মতো পরিস্থিতি বরণ করবে কি না? অর্থাত্ ইরাকের মতো আত্মঘাতী বোমাবাজির সংস্কৃতির জন্ম হবে কি না? ২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী অবতরণ করেছিল এবং সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এখন লিবিয়ার পরিস্থিতি পুরোপুরি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে, তা বলা যাবে না। সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র তথা ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বোমাবর্ষণের পর মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উত্খাত করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন দীর্ঘ ৪১ বছর। এই দীর্ঘ ৪১ বছরে তিনি লিবিয়ায় নতুন ধরনের এক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছিলেন। এখন সেখানে নতুন এক সংস্কৃতির জন্ম হতে যাচ্ছে। তবে সেখানে ইসলামিক কট্টরপন্থীদের উত্থান নিয়ে শঙ্কা আছে। দুটো সংগঠনের কথা জানা যায়, যাদের দিকে নজর থাকবে অনেকের। এ দুটো সংগঠন হচ্ছে অষ-ঔধসধধ ধষ সঁয়ধঃরষধয নর ষরনুধ এবং খরনুধ ওংষধসরপ ঋরমযঃরহম মত্ড়ঁঢ় (খওঋ)ে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যে ক’টি সংগঠনকে আল কায়দার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে চিহ্নিত করেছিল, তার মাঝে খওঋ’ের নামও ছিল। এদিকে দ্রুত অবনতি ঘটছে সিরিয়ার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ ক্ষমতায় আছেন ২০০০ সাল থেকে। তার ছোট ভাই সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমান্ডার। লিবিয়ার পর সেখানেও পরিবর্তন আসন্ন। ইসলামপন্থীরাও সেখানে শক্তিশালী। সিরিয়ায় তুরস্কের একটা প্রভাব থাকবে। তিউনিসিয়ার প্রভাব সিরিয়ায় পড়তে পারে। ‘আরব বসন্ত’-এর পর তিউনিসিয়া এবং মিসরে ইসলামিক (মডারেট) শক্তিগুলো নতুন উদ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছে। মিসরে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ ও নির্বাচনে বিজয়ী ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টির সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, সেটাও দেখার বিষয় অনেকের। শুধু তাই নয়, পুরনো দল ডধভফ পার্টিও সক্রিয় হয়েছে। ইতোমধ্যে সংবিধান প্রণয়নেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন নতুন সংবিধানে সেনাবাহিনী তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চায়। বর্তমান যে সামরিক জান্তা ক্ষমতা পরিচালনা করছে, তারা চাচ্ছেন নয়া সংবিধানে সেনাবাহিনীর একটা প্রতিনিধিত্ব থাকুক। শেষ পর্যন্ত সংবিধান প্রণয়ন কমিটি এই চাপ উপেক্ষা করতে পারবে কি না, এটা দেখার বিষয়।
আরব বিশ্বের তরুণ সমাজ এই ‘বিপ্লব’কে সম্পন্ন করেছে। কিন্তু নতুন যে সংস্কৃতি বিকশিত হচ্ছে, তাতে তাদের কোনো স্বীকৃতি বা ভূমিকা নেই। ফলে এদের আশাভঙ্গ হয়েছে এবং তাদেরকে যদি আবার রাজপথে আন্দোলনে নিয়ে আসে, আমি অবাক হব না। ওই তরুণ সমাজ আরব বিশ্বে একটি শক্তি। আলজেরিয়ায় মোট জনগোষ্ঠীর মাঝে শতকরা ৪৬ ভাগ হচ্ছে তরুণ, তিউনিসিয়ায় ২৭ ভাগ, লিবিয়ায় ৪০ ভাগ, মিসরে ২৬ ভাগ, সিরিয়ায় ২০ ভাগ, জর্দানে ৩৯ ভাগ, বাহরাইনে ২৫ ভাগ আর মরক্কোতে ১৬ ভাগ। এই শক্তিকে অস্বীকার করা যাবে না। আরব বিশ্বে গোষ্ঠীতন্ত্র একটি ফ্যাক্টর। দেখা গেছে নিজস্ব গোষ্ঠী তথা গোত্রের লোকদের নিয়েই ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। গাদ্দাফির পেছনে ছিল তার গোত্রের লোকরা। সিরিয়ায় ‘আলাবি’ গোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট বাসারের ক্ষমতার অন্যতম উত্স। তিউনিসিয়ায় ক্ষমতাচ্যুত বেন আলি তার পরিবার ও গোত্রের লোকদের নিয়ে একটা ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করেছিলেন। বাহরাইনে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু সুন্নি সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও সেখানে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছেন। বাহরাইনের শাসক হামাদ বিন ইসা আল খলিফার (১৯৯৯ সাল থেকে যিনি ক্ষমতায়) বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল, তা দমন করতে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের উদ্যোগে সৌদি সেনাবাহিনী বাহরাইনে প্রবেশ করেছিল এবং আন্দোলন নস্যাত্ করে দিয়েছিল। এটা একটা নতুন উপাদান। ইয়েমেনেও এই কাউন্সিল উদ্যোগ নিচ্ছে। এখানেও উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল সেনাবাহিনী পাঠাতে পারে। স্পষ্টতই আরব বিশ্ব একটা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের উত্খাত করে সেখানে আদৌ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন। মিসরে ইসলামপন্থীরা পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মডেল যে মিসরে চালু করবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করেই বলা যায়। সেখানে ইসলাম আর গণতন্ত্রের সমন্বয়ে নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম হতে যাচ্ছে। তবে কট্টরপন্থীরা মিসর সংসদে বিজয়ী হওয়ায় একটা শঙ্কা থেকেই গেল। একই সঙ্গে রয়ে গেল সেনাবাহিনীর প্রশ্নটিও। তাই মিসর যে আগামীতে আলোচনায় থাকবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।
তা রে ক  শা ম সু র  রে হ মা ন
প্রফেসর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tareque.rahman(a)aol.com

0 comments:

Post a Comment