রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

জলবায়ু পরিবর্তন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যত্

গেল সপ্তাহে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বেশ ক’টি সংবাদ ছাপা হয়েছে পত্রপত্রিকায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব আজ বড় ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন-এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বের ১০৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর গিয়েছিলেন অ্যান্টার্কটিকায়। আমাদের পরিবেশমন্ত্রীও ছিলেন সেই দলে। আল গোর অ্যান্টার্কটিকা থেকে একটি প্রবন্ধও লিখেছেন, যার বাংলা অনুবাদ ছাপা হয়েছে কোনো কোনো পত্রিকায়। দ্বিতীয় সংবাদটি নাসার একটি গবেষণা, যা প্রকাশিত হয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে তা পৌঁছে গেছে ইতোমধ্যে। তৃতীয়ত, ক্রিশ্চিয়ান পেনেটি একটি বই লিখেছেন, ঞত্ড়ঢ়রপ ড়ভ ঈযধড়ং : ঈষরসধঃব পযধহমব ধহফ ঃযব ঘব িবেড়মত্ধঢ়যু ড়ভ ঠরড়ষবহপব, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ দিকটা তুলে ধরা হয়েছে। বইটি গেল বছরের শেষের দিকে প্রকাশিত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিশ্বব্যাপীই একটি আলোচিত বিষয়। এ নিয়ে প্রতিবছর শীর্ষ সম্মেলন (কপ সম্মেলন) অনুষ্ঠিত হলেও বিশ্বের উষ্ণতা রোধ করার ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখনও। বছর শেষ হলেই বিশ্বের দৃষ্টি থাকে ‘কপ’ সম্মেলনের দিকে। ফটো সেশনের মধ্য দিয়ে ওই সম্মেলন শেষ হয়, আর আমরা অপেক্ষায় থাকি পরবর্তী সম্মেলনের জন্য। কোপেনহেগেন, কানকুন কিংবা ডারবান ‘কপ’ (কমিটি অন্য দ্য পার্টিস) সম্মেলন শেষ হয়েছে কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই। কার্বন-ডাই-অক্সাইড তথা গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করা জরুরি। ‘কপ’ সম্মেলনে বারবার এ কথাটা উচ্চারিত হলেও ধনী দেশগুলোর অসহযোগিতার কারণে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাচ্ছে না। ধনী দেশগুলোর, যারা কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে বেশি ছড়ায়, তাদের ভূমিকাকে ক্রিশ্চিয়ান পেনেটি আখ্যায়িত করেছেন ঈষরসধঃব ঋধংপরংস হিসেবে। নাসা (ঘঅঝঅ) তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, ২০১১ সাল ছিল গত ১৩২ বছরের ইতিহাসে নবম উষ্ণ বছর। গড়ে তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাসা আশঙ্কা করছে গ্রিনল্যান্ডে যে বরফ জমা রয়েছে তা যদি উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে গলে যায় তা হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৭ মিটার বৃদ্ধি পাবে। তাই অবিলম্বে কার্বন-ডাই-অক্সাইড হ্রাসের কথা বলছে নাসা। আল গোর তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, বিশ্বের বৃহত্তম বন্দরগুলোয় ইতোমধ্যে চার কোটি মানুষ মারাত্মক প্লাবনের হুমকির মুখে আছে। আল গোর প্রশ্ন রেখেছেন, অ্যান্টার্কটিকায় যে বরফ আছে তা দ্রুত গলা শুরু করলে কী যে হবে? এ প্রশ্ন শত প্রতিনিধির মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছে কোপেনহেগেন, কানকুন আর ডারবানে। ডারবান ‘কপ’ সম্মেলন শেষে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্ব কার্বন নিঃসরণ কমাতে একটি চুক্তি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। আগামী বছর থেকে এ সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হবে এবং ২০২০ সাল থেকে ওই চুক্তিটি কার্যকর হবে। তবে একটি গ্রিন ফান্ড গঠনের ব্যাপারে শিল্পোন্নত দেশগুলো রাজি হয়েছে। এই ফান্ডের পরিমাণ হবে ১০০ বিলিয়ন ডলার। ৪০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে এই ফান্ড যাত্রা শুরু করবে। বিশ্বব্যাংক এই ফান্ডের ব্যবস্থাপনার তদারকি করবে।
ডারবান সম্মেলনের পর যে প্রশ্নটি আমার কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে প্রতিবছর এ ধরনের সম্মেলন করে শেষপর্যন্ত কি বিশ্বের উষ্ণতা রোধ করা সম্ভব হবে? বাংলাদেশের পরিবেশমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ঢাকায় ফিরে এসে তিনি কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তাই কপ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। ইতোমধ্যে জাপান, কানাডা ও রাশিয়া কিয়োটো পরবর্তী আলোচনা থেকে বেরিয়ে গেছে। সুতরাং বোঝাই যায়, একধরনের হতাশা এসে গেছে। আসলে বিশ্বের দেশগুলো এখন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে একেক গ্রুপের একেক এজেন্ডা। উন্নত বিশ্ব কিংবা উন্নয়নশীল বিশ্বের যে দাবি, তার মাঝে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আবার উন্নয়নশীল বিশ্বও একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। ধনী দেশগুলো এনেক্স-১-এর অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের জিডিপির শতকরা ৭৫ ভাগ এই দেশগুলোর। অথচ লোকসংখ্যা মাত্র বিশ্বের ১৯ ভাগ। কিন্তু কার্বন নিঃসরণ করে সবচেয়ে বেশি, শতকরা ৫১ ভাগ। অন্যদিকে গ্রুপ ৭৭-এর দেশগুলো (মোট ১৩০টি দেশ) বিশ্বের জনসংখ্যার ৭৬ ভাগ, জিডিপির মাত্র ১৯ ভাগ। কিন্তু কার্বন উদ্গিরণ করে ৪২ ভাগ। আবার সাগরপারের দেশগুলো, যারা বিশ্বের জনসংখ্যা, জিডিপি ও কার্বন নিঃসরণ করে মাত্র ১ ভাগ, তাদের দাবি ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বর্তমান অবস্থার চেয়ে শতকরা ৮৫ ভাগ কমিয়ে আনার। বনাঞ্চলভুক্ত দেশগুলো, যারা ‘রেইন ফরেস্ট কোয়ালিশন’ হিসেবে পরিচিত, তারা বিশ্ব জনগোষ্ঠীর ১৯ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। জিডিপির মাত্র ৩ ভাগ তাদের। আর মাত্র ৪ ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে। যুক্তরাষ্ট্র একা কার্বন নিঃসরণ করে ২০ ভাগ, জিডিপির ৩০ ভাগ তাদের। অথচ জনসংখ্যা মাত্র বিশ্বের ৫ ভাগ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বিশ্ব জিডিপির ২৫ ভাগ ও জনসংখ্যার ৮ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু কার্বন নিঃসরণ করে ১৫ ভাগ। চীনকে নিয়ে সমস্যা এখন অনেক। চীন একা কার্বন নিঃসরণ করে ২১ ভাগ। বিশ্ব জনসংখ্যার ২০ ভাগই চীনা নাগরিক। জিডিপির ৬ ভাগ তাদের। প্রতিটি গ্রুপের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। সবাই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কার্বন নিঃসরণের হার কমাতে চায়। জাতিসংঘ এটাকে বলছে কার্বন ঘনত্ব। অর্থাত্ দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদন বা মোট আয়ের (জিডিপি) অনুপাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উদ্গিরণের হারকে কার্বন ঘনত্ব বা গ্রিন হাউস গ্যাসের ঘনত্ব বলা হয়। উন্নয়নশীল বিশ্ব মনে করে এই হার মাথাপিছু জনসংখ্যা ধরে করা উচিত। কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের হার কমানো উচিত-এটা মোটামুটিভাবে সবাই মেনে নিয়েছেন। কিন্তু কে কতটুকু কমাবে সে প্রশ্নের কোনো সমাধান হয়নি। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন (এবং সেই সঙ্গে ভারতও) বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছড়ায়, সে কারণে এই দুটি দেশের কাছ থেকে কমিটমেন্ট আশা করেছিল বিশ্ব। কিন্তু তা হয়নি। চীন প্রস্তাব করেছিল ২০০৫ সালের কার্বন ঘনত্বের চেয়ে দেশটি ২০২০ সালে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কমাবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ছিল তারা ১৭ ভাগ কমাবে। কিন্তু চীন ও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এখানে বলা ভালো, চীনের কার্বন ঘনত্ব ২.৮৫ টন, আর ভারতের ১.৮ টন। চীন ও ভারত দুটি দেশই বড় অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে এই শতাব্দীতে। বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা হরিন্দর কোহলির মতে, আগামী ৩০ বছরে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। মাথাপিছু আয় তখন ৯৪০ ডলার থেকে বেড়ে ২২ হাজার ডলারে উন্নীত হবে। ২০০৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত আবদান রাখত মাত্র ২ ভাগ, ৩০ বছর পর অবদান রাখবে ১৭ ভাগ। তবে এটা ধরে রাখতে হলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে হবে ৮ থেকে ৯ ভাগ। এ কারণেই ভারতকে নিয়ে ভয়-তাদের কার্বন ঘনত্ব বাড়বে। কেননা প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হবে। আর তাতে করে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়বে। পাঠকদের এখানে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ১৯৯৭ সালে কিয়োটো সম্মেলনে ১৬০টি দেশ অংশ নিয়েছিল এবং সেখানে যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯৯০ সালের কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রার চেয়ে ৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ৭ শতাংশ, জাপানের ৬ শতাংশ হ্রাস করার কথা। তা ছাড়া সার্বিকভাবে ৫.২ শতাংশ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের আইনগত বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল সব দেশকে ২০০৮-২০১২ সালের মধ্যে গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। তত্কালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কিয়োটো চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও পরে বুশ প্রশাসন ওই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে কিয়োটো চুক্তি কাগজ-কলমেই থেকে গিয়েছিল।
বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে যে ক’টি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের উপকূলে প্রতিবছর ১৪ মিলিমিটার করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গত ২০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। সমুদ্রের পানি বেড়ে গেলে উপকূলের মানুষ অনত্র চলে যেতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশে প্রতি ৭ জনে ১ জন উদ্বাস্তু হবে। ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। বাংলাদেশ কোপেনহেগেন সম্মেলনে পরিবেশগত উদ্বাস্তুদের টহরাবত্ংধষ ঘধঃঁত্ধষ চবত্ংড়হ হিসেবে ঘোষণা করা দাবি জানিয়েছিল।
ডাববান সম্মেলনে বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফাস্ট স্টার্ট ফান্ডে পাওয়া গেছে মাত্র আড়াই মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ সেখান থেকে পেয়েছে ১৩০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইলার কারণে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর হয়নি। সার্ক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঐক্যবদ্ধভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যাগুলো আমরা তুলে ধরব। কিন্তু ডারবানে তা হয়নি। বাংলাদেশ ও ভারত একই ফোরামে ছিল না। একটি আইনি বাধ্যবাধকতার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্পর্কেও কোনো সমঝোতা হয়নি। কপ সম্মেলনে আসলেই বড় বড় কথা বলা হয়। কয়েক টন কার্বন নিঃসরণ করে ‘অনেক আশার কথা’ শুনিয়ে সম্মেলন শেষ হয় বটে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয় খুব কমই। আগে সমস্যা ছিল উন্নত বিশ্বকে নিয়ে। এখন চীন ও ভারতও একটি সমস্যা। তাদের যুক্তি, নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করলে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। তাতে করে বাড়বে দরিদ্রতা। এই যুক্তি ফেলে দেওয়ার নয়। ফলে কপ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। চলতি বছর কাতারে এ সম্মেলন হবে। কিন্তু চুক্তির ব্যাপারে অগ্রগতি কতটুকু হবে, বলা মুশকিল।
আমাদের পরিবেশমন্ত্রী আল গোরের সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকায় গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ যে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে, এটা বিশ্ববাসীকে জানাতেই আল গোর আমাদের পরিবেশমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অ্যান্টার্কটিকায়। আল গোর নিজে তার প্রবন্ধে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বাড়লে ২০৫০ সাল নাগাদ ২ থেকে আড়াই কোটি বাংলাদেশিকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করতে হবে। এর ফলে প্রচুর মানুষ হারাবে তাদের বসতি, তাদের পেশা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়া মানে কেবল বন্যা নয়, এর মানে লোনা পানির আগ্রাসন। ধানের আবাদ ধ্বংস হয়ে যাওয়া। ২ কোটি কৃষক পেশা হারিয়ে শহরে আশ্রয় নেবে-এমন আশঙ্কাও করেছেন আল গোর। মিথ্যা বলেননি তিনি।
বিশ্বের উষ্ণতা যদি হ্রাস করা না যায়, তা হলে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো যে তাদের অস্তিত্ব হারানোর ঝুঁকির মুখে থাকবে, তা নয়। বরং বিশ্ব ইতোমধ্যে প্রত্যক্ষ করছে দুর্ভিক্ষ (আফ্রিকা), অকালে বন্যা (থাইল্যান্ড), প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ব্রাজিল) কিংবা জলোচ্ছ্বাস (বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র)। জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে, যা গণঅভ্যুত্থানের জন্ম দিতে পারে। ‘আরব বসন্ত্ত’র পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খাদ্য সঙ্কট দায়ী বলে মন্তব্য করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ঋড়ত্বরমহ চড়ষরপু ম্যাগাজিনে (বেড়ঢ়ড়ষরঃরপং ড়ভ ভড়ড়ফ, গধু-ঔঁহব ২০১১)। ক্রিশ্চিয়ান পেনেটি তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ৩০০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যাতে প্রতিবছর মারা যাবে ৩ লাখ মানুষ। ২০৩০ সাল নাগাদ মারা যাবে ৫ লাখ মানুষ। বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০০ বিলিয়ন ডলার। জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে লাখ লাখ মানুষ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল আর্থ সায়েন্সের মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৭০০ মিলিয়নে। তাই বিশ্বের উষ্ণতা হ্রাসের ব্যাপারে একটি চুক্তি অত্যন্ত জরুরি।
দৈনিক সকালের খবর,১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২
তা রে ক  শা ম সু র  রে হ মা ন
প্রফেসর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tareque.rahman(a)aol.com

0 comments:

Post a Comment