সংবিধানের
পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংশোধিত
সংবিধানের আলোকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকার
বাতিল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বেশকিছু
নির্দেশনা রয়েছে, যে নির্দেশনা অনুসরণ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন
করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একটি
সমঝোতা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সংবিধানে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে, সেই
অসঙ্গতিগুলো দূর করা দরকার। আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যদি
সংবিধান সংশোধন করা না হয়, তাহলে একটি বড় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি
হাইকোর্টের এটা চ্যালেঞ্জও হতে পারে। নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণও জরুরি।
এটা না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আশার কথা মহাজোট সরকারের শরিকরাও কেউ
কেউ সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছেন।
এই নির্বাচন নিয়ে সাংবিধানিকভাবে সমস্যা রয়ে গেছে। সংবিধানের ৭২ (২) ধারায় বলা আছে, ‘যে কোনো সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হইবার ত্রিশ দিনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য সংসদ আহ্বান করা হইবে।’ তাহলে কী দাঁড়াল ব্যাপারটা? যেহেতু সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি, সেহেতু ৩৫০ জন (প্রতি আসনে একজন করে মহিলা আসনসহ), একুনে দশম নির্বাচনের পর পরই জাতি মোট ৬৫০ সংসদ সদস্য পেল! কে তখন সংসদীয় আসনে প্রতিনিধিত্ব করবেন, যেটা নিয়ে বড় সমস্যা তৈরি হবে। সাংবিধানিক সমস্যা আরও আছে। সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারায় বলা আছে ‘মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ লক্ষ করুন, বলা আছে ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার’ কথা। এখন তো সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি। তাহলে সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারা অনুযায়ী নির্বাচন হবে কীভাবে? সমস্যা আরও আছে। সংসদ নির্বাচন হবে। সংবিধানের ৭২ (২) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন আহ্বান করবেন। এ ক্ষেত্রে আগের সংসদের ৩৫০ সদস্যের কী হবে? সংবিধানে কোথাও বলা হয়নি যে আগের সংসদ ভেঙে যাবে বা সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। বৈসাদৃশ্য আরও আছে। ৭২ (৩) ধারা অনুযায়ী ‘রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভাঙিয়া না দিয়া থাকিলে বৈঠকের (সংসদ অধিবেশন) তারিখ হইতে পাঁচ বত্সর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙিয়া যাইবে’। এখানে এক ধরনের বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়। ৭১ (১) ধারায় বলা আছে ‘এক ব্যক্তি একই সময় একাধিক নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য হইবে না।’ এখন নবম জাতীয় সংসদের একজন প্রার্থী তিনি পদত্যাগ না করলে তো দশম সংসদে প্রার্থী হতে পারেন না। সংবিধানের ১২১ নং ধারায় বলা আছে ‘সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রত্যেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় একটি করিয়া ভোটার তালিকা থাকিবে।’ এখন উক্ত ৯০ দিনের মধ্যে যদি নির্বাচন কমিশন ‘একটি করে ভোটার তালিকা’ প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হন, তখন কী হবে?
নির্বাচনের এখনও অনেক দিন বাকি। কিন্তু তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে দেশে ও বিদেশে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। দেশের সুশীল সমাজের একটা বড় অংশ, এমনকি হিলারি ক্লিনটনের মতো ব্যক্তিত্বও সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন প্রত্যাশা করেছেন। এটা ঠিক সমঝোতা যদি প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং আওয়ামী লীগ যদি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়, সেই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।
এ দেশে ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালে তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু একটি বড় দল (বিএনপি ও আওয়ামী লীগ) অংশগ্রহণ না করায়, তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। অন্যদিকে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে দুটি বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করায় শুধু দেশেই নয়, বরং বিদেশেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এখন ২০১৩ সালে যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে একটি বড় দল বিএনপি যদি অংশগ্রহণ না করে, তাহলে সঙ্গত কারণেই ওই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি অবিসংবাদিত শক্তি। একটি দলকে বাদ দিয়ে অন্যদল এককভাবে যেমন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি, ঠিক তেমনি এই দু’দলের একটিকে বাদ দেওয়ার কিংবা ‘মাইনাস’ করার কোনো ষড়যন্ত্রও সফল হয়নি। এই দল দুটোর মাঝে প্রচণ্ড বিরোধ আছে। এই বিরোধ এখন ব্যক্তি পর্যায়ে চলে গেছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই দল দুটোর কারণেই গণতন্ত্র এ দেশে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, এ দেশে ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ন’টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৬ (তৃতীয়), ১৯৮৮ (চতুর্থ) ও ১৯৯৬ (ষষ্ঠ) সালে অনুষ্ঠিত হওয়া সংসদ নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। বাকি ৬টি সংসদ নির্বাচন ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শতকরা ৭৩.২০ ভাগ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিল। ওই সময় সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। ওই সময়ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে (রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের আওতায়) সদ্য গঠিত বিএনপি ২০৭টি আসন পায়। শতকরা হিসাবপ্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪১.০৭ ভাগ। আওয়ামী লীগ মিজান ও মালেক গ্রুপ আলাদাভাবে নির্বাচন করে। যৌথভাবে তারা পায় ৪১টি আসন (মালেক ৩৯), শতকরা হিসাবে যা ছিল ২৭.৩৪ ভাগ। এর বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় মুসলিম লীগ ও আইডিএল ঐক্য (২০ আসন, ১০.০৭ ভাগ ভোট)। গণঅভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ১৪১ আসন (৩০.৮১ ভাগ ভোট) ও আওয়ামী লীগ ৮৮ (৩০.০৮ ভাগ ভোট) আসন পেয়েছিল। জামায়াত ১৮ ও জাতীয় পার্টি ৩৫ আসন পেয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দৃশ্যপট বদলে যায়। প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (১৪৬ আসন, ৩৭.৪৪ ভাগ ভোট) বিজয়ী হয়। বিএনপির আসন দাঁড়ায় ১১৬ (৩৩.৬১)। জাতীয় পার্টি ৩২ (১৬.৩৯ ভাগ ভোট) আসন নিয়ে তৃতীয় অবস্থান ধরে রাখে। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০০১) দৃশ্যপট আবার বদলে যায়। বিএনপি ১৯৩ আসনে (৪০.৯৭ ভাগ ভোট) পেলেও চারদলীয় জোট পায় শতকরা ৪৭ ভাগ ভোট, আর আসন পায় ২১৬। আওয়ামী লীগের আসন কমে এসে দাঁড়ায় ৬২ (৪০.১৩ ভাগ ভোট)। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (২০০৮) প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। ২০০৭ সালের ‘এক-এগারর’ ঘটনা পুরো রাজনৈতিক সিসটেমকে একটি বড় ধরনের ধাক্কা দেয়। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের ভূমিকা এই ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করে। এমনই এক পরিস্থিতিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় (২৩১ আসন, ৪৮.০৬ ভাগ ভোট)। বিএনপির আসন কমে এসে দাঁড়ায় মাত্র ৩০টিতে (শতকরা ৩২.৪৫ ভাগ ভোট)। জাতীয় পার্টি (২৬ আসন ৭.০৫ ভাগ ভোট ) তৃতীয় অবস্থান ধরে রাখে।
সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বুঝতে আমাদের সাহায্য করবে। এক. এ দেশের রাজনীতি দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এই দল দুটোর যেকোনো একটিকে বাদ দিয়ে এককভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করা অসম্ভব। রাষ্ট্র পরিচালনায় বড় দল দুটোর মাঝে আস্থার সম্পর্ক থাকা দরকার। দুই. বড় দল দুটোর বাইরে তৃতীয় একটি বড় দলের জন্ম হয়নি। তৃতীয় ধারার কথা বারবার বলা হলেও, সাধারণ মানুষ এই তৃতীয় ধারার প্রতি আস্থাশীল নয়। জাতীয় পার্টি তৃতীয় শক্তি নয়। বরং একটি আঞ্চলিক দল। এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের ‘ঐক্য’ তৃতীয় শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার পথে প্রধান অন্তরায়। তিন. এককভাবে নির্বাচন করার ফলে, সেই নির্বাচনগুলোর কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচন এর বড় প্রমাণ। চার. এ দেশের রাজনীতিতে দুটি ধারা দৃশ্যমান। একদিকে ধর্মকে প্রাধান্য করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের একটি ধারা, অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, এককালের সমাজতন্ত্রী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ সমর্থকদের একটি ধারা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে যে অচলাবস্থা, তার কেন্দ্র মূলত একটি— আর তা হচ্ছে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যারা নির্বাচন পরিচালনা করবে। সংবিধানে ১৫তম সংশোধনী আনার ফলে এই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারই মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ মাস আগেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে। সমস্যাটা তৈরি হয়েছে এখানেই। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক পরিচালিত নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। আওয়ামী লীগও অতীতে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা পরিচালিত নির্বাচন সমর্থন করেনি। মাগুরা ও ভোলার উপনির্বাচন আমাদের কাছে এক-একটা দৃষ্টান্ত, যেখানে প্রমাণিত হয়েছে, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে প্রভাব খাটায়। তাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি উঠেছে, তা যুক্তিযুক্ত। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধনের দাবি উঠেছে, যাতে পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এ ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কথাটা না বলে একটি ‘নির্দলীয় সরকার’ কথাটাও বলা যায়। সরকার সংবিধান সংশোধন করে একটি ‘নির্দলীয় সরকার’-এর কাঠামো অন্তর্ভুক্ত করে আন্তরিকতা দেখাতে পারে। তবে সংবিধান সংশোধন না করেও সরকার একটি ‘নির্দলীয় সরকার’ কাঠামোর আওতায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে। সেখানে ‘নির্দলীয় সরকার’-এর রূপরেখা থাকবে। মহাজোট সরকারের শরিক যে কেউ (জাসদ অথবা ওয়ার্কার্স পার্টি) সংসদে এ ধরনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে, যাতে বিএনপিসহ সকল দলের সমর্থন থাকবে। ওই প্রস্তাবটির ভিত্তি হচ্ছে উচ্চ আদালত ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) বাতিল করে যে রায় দিয়েছিলেন, সেটি। আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেছিলেন যে আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জাতীয় সংসদে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিএনপির সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। একটি ‘ফর্মুলা’ উপস্থাপনের আগে বিএনপির যদি আপত্তি থাকে, তাহলে সেই ‘ফর্মুলা’ কোনো কাজ দেবে না।
এখন একটি ‘নির্দলীয় সরকার’ কীভাবে গঠিত হবে, সে ব্যাপারে কয়েকটি ‘বিকল্প’ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এক. বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ মাস আগে মহাজোট সরকার পদত্যাগ করবে ও একটি নির্দলীয় সরকার শুধু ৩ মাসের জন্য দায়িত্ব নেবে; দুই. একটি ‘এলডার্স কাউন্সিল’ নির্দলীয় সরকারের দায়িত্ব নেবে, যারা শুধু নির্বাচন পরিচালনা করবে; তিন. একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির (অথবা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির) নেতৃত্বে সংবিধানিক পদের অধিকারীদের নিয়ে একটি সরকার। চার. স্পিকারের নেতৃত্বে দুটি বড় দলের সমসংখ্যক সদস্যদের (৫ জন করে) নিয়ে একটি সরকার। তবে কথা থাকে, স্পিকার অথবা সদস্যরা কেউই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
পাঁচ. যৌথ নেতৃত্বে (একজন বিএনপি, একজন আওয়ামী লীগ মনোনীত) একটি নির্দলীয় সরকার, যাদের কেউই নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না।
ছয়. রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি সরকার।
কোনো ফর্মুলাই চূড়ান্ত নয়। আসল কথা হচ্ছে একটি সমঝোতা। আর একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে সংলাপ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
Daily SAKALER KHOBOR,
25409.12
এই নির্বাচন নিয়ে সাংবিধানিকভাবে সমস্যা রয়ে গেছে। সংবিধানের ৭২ (২) ধারায় বলা আছে, ‘যে কোনো সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হইবার ত্রিশ দিনের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য সংসদ আহ্বান করা হইবে।’ তাহলে কী দাঁড়াল ব্যাপারটা? যেহেতু সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি, সেহেতু ৩৫০ জন (প্রতি আসনে একজন করে মহিলা আসনসহ), একুনে দশম নির্বাচনের পর পরই জাতি মোট ৬৫০ সংসদ সদস্য পেল! কে তখন সংসদীয় আসনে প্রতিনিধিত্ব করবেন, যেটা নিয়ে বড় সমস্যা তৈরি হবে। সাংবিধানিক সমস্যা আরও আছে। সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারায় বলা আছে ‘মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ লক্ষ করুন, বলা আছে ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার’ কথা। এখন তো সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি। তাহলে সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারা অনুযায়ী নির্বাচন হবে কীভাবে? সমস্যা আরও আছে। সংসদ নির্বাচন হবে। সংবিধানের ৭২ (২) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন আহ্বান করবেন। এ ক্ষেত্রে আগের সংসদের ৩৫০ সদস্যের কী হবে? সংবিধানে কোথাও বলা হয়নি যে আগের সংসদ ভেঙে যাবে বা সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। বৈসাদৃশ্য আরও আছে। ৭২ (৩) ধারা অনুযায়ী ‘রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভাঙিয়া না দিয়া থাকিলে বৈঠকের (সংসদ অধিবেশন) তারিখ হইতে পাঁচ বত্সর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙিয়া যাইবে’। এখানে এক ধরনের বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়। ৭১ (১) ধারায় বলা আছে ‘এক ব্যক্তি একই সময় একাধিক নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য হইবে না।’ এখন নবম জাতীয় সংসদের একজন প্রার্থী তিনি পদত্যাগ না করলে তো দশম সংসদে প্রার্থী হতে পারেন না। সংবিধানের ১২১ নং ধারায় বলা আছে ‘সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রত্যেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় একটি করিয়া ভোটার তালিকা থাকিবে।’ এখন উক্ত ৯০ দিনের মধ্যে যদি নির্বাচন কমিশন ‘একটি করে ভোটার তালিকা’ প্রণয়ন করতে ব্যর্থ হন, তখন কী হবে?
নির্বাচনের এখনও অনেক দিন বাকি। কিন্তু তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে দেশে ও বিদেশে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। দেশের সুশীল সমাজের একটা বড় অংশ, এমনকি হিলারি ক্লিনটনের মতো ব্যক্তিত্বও সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন প্রত্যাশা করেছেন। এটা ঠিক সমঝোতা যদি প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং আওয়ামী লীগ যদি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়, সেই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।
এ দেশে ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালে তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু একটি বড় দল (বিএনপি ও আওয়ামী লীগ) অংশগ্রহণ না করায়, তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। অন্যদিকে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে দুটি বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করায় শুধু দেশেই নয়, বরং বিদেশেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এখন ২০১৩ সালে যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে একটি বড় দল বিএনপি যদি অংশগ্রহণ না করে, তাহলে সঙ্গত কারণেই ওই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি অবিসংবাদিত শক্তি। একটি দলকে বাদ দিয়ে অন্যদল এককভাবে যেমন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি, ঠিক তেমনি এই দু’দলের একটিকে বাদ দেওয়ার কিংবা ‘মাইনাস’ করার কোনো ষড়যন্ত্রও সফল হয়নি। এই দল দুটোর মাঝে প্রচণ্ড বিরোধ আছে। এই বিরোধ এখন ব্যক্তি পর্যায়ে চলে গেছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই দল দুটোর কারণেই গণতন্ত্র এ দেশে ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা যদি পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব, এ দেশে ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ন’টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৬ (তৃতীয়), ১৯৮৮ (চতুর্থ) ও ১৯৯৬ (ষষ্ঠ) সালে অনুষ্ঠিত হওয়া সংসদ নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। বাকি ৬টি সংসদ নির্বাচন ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শতকরা ৭৩.২০ ভাগ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিল। ওই সময় সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। ওই সময়ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে (রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের আওতায়) সদ্য গঠিত বিএনপি ২০৭টি আসন পায়। শতকরা হিসাবপ্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪১.০৭ ভাগ। আওয়ামী লীগ মিজান ও মালেক গ্রুপ আলাদাভাবে নির্বাচন করে। যৌথভাবে তারা পায় ৪১টি আসন (মালেক ৩৯), শতকরা হিসাবে যা ছিল ২৭.৩৪ ভাগ। এর বাইরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় মুসলিম লীগ ও আইডিএল ঐক্য (২০ আসন, ১০.০৭ ভাগ ভোট)। গণঅভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ১৪১ আসন (৩০.৮১ ভাগ ভোট) ও আওয়ামী লীগ ৮৮ (৩০.০৮ ভাগ ভোট) আসন পেয়েছিল। জামায়াত ১৮ ও জাতীয় পার্টি ৩৫ আসন পেয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দৃশ্যপট বদলে যায়। প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (১৪৬ আসন, ৩৭.৪৪ ভাগ ভোট) বিজয়ী হয়। বিএনপির আসন দাঁড়ায় ১১৬ (৩৩.৬১)। জাতীয় পার্টি ৩২ (১৬.৩৯ ভাগ ভোট) আসন নিয়ে তৃতীয় অবস্থান ধরে রাখে। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০০১) দৃশ্যপট আবার বদলে যায়। বিএনপি ১৯৩ আসনে (৪০.৯৭ ভাগ ভোট) পেলেও চারদলীয় জোট পায় শতকরা ৪৭ ভাগ ভোট, আর আসন পায় ২১৬। আওয়ামী লীগের আসন কমে এসে দাঁড়ায় ৬২ (৪০.১৩ ভাগ ভোট)। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (২০০৮) প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। ২০০৭ সালের ‘এক-এগারর’ ঘটনা পুরো রাজনৈতিক সিসটেমকে একটি বড় ধরনের ধাক্কা দেয়। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের ভূমিকা এই ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করে। এমনই এক পরিস্থিতিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় (২৩১ আসন, ৪৮.০৬ ভাগ ভোট)। বিএনপির আসন কমে এসে দাঁড়ায় মাত্র ৩০টিতে (শতকরা ৩২.৪৫ ভাগ ভোট)। জাতীয় পার্টি (২৬ আসন ৭.০৫ ভাগ ভোট ) তৃতীয় অবস্থান ধরে রাখে।
সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বুঝতে আমাদের সাহায্য করবে। এক. এ দেশের রাজনীতি দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এই দল দুটোর যেকোনো একটিকে বাদ দিয়ে এককভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করা অসম্ভব। রাষ্ট্র পরিচালনায় বড় দল দুটোর মাঝে আস্থার সম্পর্ক থাকা দরকার। দুই. বড় দল দুটোর বাইরে তৃতীয় একটি বড় দলের জন্ম হয়নি। তৃতীয় ধারার কথা বারবার বলা হলেও, সাধারণ মানুষ এই তৃতীয় ধারার প্রতি আস্থাশীল নয়। জাতীয় পার্টি তৃতীয় শক্তি নয়। বরং একটি আঞ্চলিক দল। এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের ‘ঐক্য’ তৃতীয় শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার পথে প্রধান অন্তরায়। তিন. এককভাবে নির্বাচন করার ফলে, সেই নির্বাচনগুলোর কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচন এর বড় প্রমাণ। চার. এ দেশের রাজনীতিতে দুটি ধারা দৃশ্যমান। একদিকে ধর্মকে প্রাধান্য করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের একটি ধারা, অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, এককালের সমাজতন্ত্রী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ সমর্থকদের একটি ধারা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে যে অচলাবস্থা, তার কেন্দ্র মূলত একটি— আর তা হচ্ছে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যারা নির্বাচন পরিচালনা করবে। সংবিধানে ১৫তম সংশোধনী আনার ফলে এই মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারই মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ মাস আগেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে। সমস্যাটা তৈরি হয়েছে এখানেই। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক পরিচালিত নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। আওয়ামী লীগও অতীতে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা পরিচালিত নির্বাচন সমর্থন করেনি। মাগুরা ও ভোলার উপনির্বাচন আমাদের কাছে এক-একটা দৃষ্টান্ত, যেখানে প্রমাণিত হয়েছে, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে প্রভাব খাটায়। তাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি উঠেছে, তা যুক্তিযুক্ত। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধনের দাবি উঠেছে, যাতে পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এ ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কথাটা না বলে একটি ‘নির্দলীয় সরকার’ কথাটাও বলা যায়। সরকার সংবিধান সংশোধন করে একটি ‘নির্দলীয় সরকার’-এর কাঠামো অন্তর্ভুক্ত করে আন্তরিকতা দেখাতে পারে। তবে সংবিধান সংশোধন না করেও সরকার একটি ‘নির্দলীয় সরকার’ কাঠামোর আওতায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে। সেখানে ‘নির্দলীয় সরকার’-এর রূপরেখা থাকবে। মহাজোট সরকারের শরিক যে কেউ (জাসদ অথবা ওয়ার্কার্স পার্টি) সংসদে এ ধরনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে, যাতে বিএনপিসহ সকল দলের সমর্থন থাকবে। ওই প্রস্তাবটির ভিত্তি হচ্ছে উচ্চ আদালত ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) বাতিল করে যে রায় দিয়েছিলেন, সেটি। আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেছিলেন যে আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জাতীয় সংসদে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিএনপির সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। একটি ‘ফর্মুলা’ উপস্থাপনের আগে বিএনপির যদি আপত্তি থাকে, তাহলে সেই ‘ফর্মুলা’ কোনো কাজ দেবে না।
এখন একটি ‘নির্দলীয় সরকার’ কীভাবে গঠিত হবে, সে ব্যাপারে কয়েকটি ‘বিকল্প’ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এক. বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ মাস আগে মহাজোট সরকার পদত্যাগ করবে ও একটি নির্দলীয় সরকার শুধু ৩ মাসের জন্য দায়িত্ব নেবে; দুই. একটি ‘এলডার্স কাউন্সিল’ নির্দলীয় সরকারের দায়িত্ব নেবে, যারা শুধু নির্বাচন পরিচালনা করবে; তিন. একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির (অথবা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির) নেতৃত্বে সংবিধানিক পদের অধিকারীদের নিয়ে একটি সরকার। চার. স্পিকারের নেতৃত্বে দুটি বড় দলের সমসংখ্যক সদস্যদের (৫ জন করে) নিয়ে একটি সরকার। তবে কথা থাকে, স্পিকার অথবা সদস্যরা কেউই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
পাঁচ. যৌথ নেতৃত্বে (একজন বিএনপি, একজন আওয়ামী লীগ মনোনীত) একটি নির্দলীয় সরকার, যাদের কেউই নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না।
ছয়. রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি সরকার।
কোনো ফর্মুলাই চূড়ান্ত নয়। আসল কথা হচ্ছে একটি সমঝোতা। আর একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে সংলাপ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
Daily SAKALER KHOBOR,
25409.12
0 comments:
Post a Comment