ভারতে
‘ষোড়শ’ লোকসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে ৭ এপ্রিল থেকে। মোট ৯ দফায় এই ভোটগ্রহণ
শেষ হবে ১২ মে। ধারণা করছি মে মাসের শেষ দিকে ভারতে একটি নয়া সরকার গঠিত
হবে। ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে নানা খবর, নানা জরিপের খবর বেরিয়েছে। প্রায়
প্রতিটিতেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক
অ্যালায়েন্স) জোটের বিজয়ের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণেই যে প্রশ্নটি
ওঠে, তা হচ্ছে এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যেসব ‘সমস্যা’ রয়েছে, তার সমাধানের ব্যাপারে আদৌ
কোনো উদ্যোগ নেবে কি-না নয়া সরকার?বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে
বেশকিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, যার সমাধান দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে আছে। আওয়ামী
লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হলেও এসব ‘সমস্যার’ কোনো
সমাধান হয়নি। অথচ বাংলাদেশ ওই সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন
ক্ষেত্রে ভারতকে বেশকিছু ছাড় দিয়েছে। তথাকথিত ‘কানেকটিভিটি’র নামে আমরা
ভারতকে ট্রানজিট দিলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে জটিলতা, তা দূর
করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি নয়াদিল্লি। তবে প্রতিশ্রুতি আছে অনেক। ভারতের
বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনিও প্রতিশ্রুতি
দিয়েছিলেন। এসেছিলেন সালমান খুরশীদ। তিনিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু
সমস্যাগুলো যা ছিল, তা-ই রয়ে গেছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে নয়া সরকার ক্ষমতা
নিতে যাচ্ছে নয়াদিল্লিতে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, বাংলাদেশের ব্যাপারে
তাদের মনোভাবের কতটুকু পরিবর্তন আসবে, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। এর সঙ্গে
অনেক প্রশ্ন জড়িত। আঞ্চলিক দলগুলো এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারতীয়
রাজনীতিতে অন্যতম একটি ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। তাদের
মনোভাবের, বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের মনোভাবের বিষয়টি নিবেচনায় নিতে হবে।
উপরন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিনি ভূমিকা, চীনের সঙ্গে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন
নৌ-উপস্থিতি বৃদ্ধি, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার ইত্যাদি
বিষয় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ‘প্রভাব’ বিস্তার
করবে। সুতরাং সম্ভাব্য একটি বিজেপি সরকার ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি
‘ইউটার্ন’ নেবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনেক
কথা হয়েছে। ভারতের সংবিধানে রাজ্যের মতামতের গুরুত্ব থাকায় কেন্দ্র কখনো
এককভাবে কোনো চুক্তি করতে পারে না। এই সংবিধান সংশোধন করাও সহজ নয়। অতীতে
বিজেপির সমর্থন এতে পাওয়া যায়নি। এমনকি ভারতের রাষ্ট্রপতি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে বলে
মন্তব্য করলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এ নিয়েও সমস্যা রয়েছে। সীমান্ত সমস্যার
সমাধানের ব্যাপারেও সংবিধান সংশোধন জরুরি। বাংলাদেশ-ভারত একটি সীমান্ত
চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ ওই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে
সংবিধানে সংশোধনী এনেছে (তৃতীয় সংশোধনী, ১৯৭৪)। কিন্তু দীর্ঘ ৩৯ বছরেও ভারত
তাদের সংবিধানে সংশোধনী এনে চুক্তিটি ‘রেটিফাই’ করেনি। ফলে ছিটমহলগুলো
নিয়ে যে সমস্যা, তা রয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আছে ১৭ হাজার
১৪৯ একর ভারতীয় ভূমি। আর ভারতের ভূখণ্ডে আছে ৭ হাজার ১১১ একর বাংলাদেশি
ভূমি। এসব অঞ্চলের মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রবণ মুখার্জি সীমান্ত সমস্যার সমাধানের কথা বললেও
বাস্তবতা ভিন্ন। দীর্ঘদিন পর ভারতীয় মন্ত্রিসভায় ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা
চুক্তি অনুমোদিত হয়েছে। সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত। সংবিধান
সংশোধনে কংগ্রেস সমর্থন পায়নি তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিজেপির।
মন্ত্রিসভায় মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুমোদন ও কংগ্রেস কর্তৃক সংবিধান
সংশোধনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও, বিজেপি বলছিল তারা এই সংশোধনীর
বিরোধিতা করবে। ফলে সমস্যা যা ছিল তা রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত সংবিধান
সংশোধনের বিলটি লোকসভায় ওঠেনি। কংগ্রেস নেতাদের আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের
প্রশ্ন নেই। হয়তো তারা সত্যি সত্যিই চান সমস্যাগুলোর সমাধান হোক। কিন্তু
সমস্যা ভারতের আমলাতন্ত্র নিয়ে, সেই সঙ্গে রয়েছে ভারতের নীতি-নির্ধারকদের
‘মাইন্ড সেট আপ’। তারা বাংলাদেশকে কখনো সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখেছে, এটা
আমি মনে করি না। ভারত বড় দেশ। আগামী ৩০ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি হবে
বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি। ভারতে প্রচণ্ড দরিদ্রতা থাকলেও আগামী ৩০ বছরের
মধ্যে মাথাপিছু আয় গিয়ে দাঁড়াবে ২২ হাজার ডলার। ভারতের এই অর্থনীতি আমাদের
অর্থনীতিকেও গ্রাস করবে। আমাদের উন্নয়নে ভারত একটি বড় ভূমিকা পালন করতে
পারে। তবে তেমনটি হচ্ছে না। দেখা গেছে দ্বিপাক্ষিকতার বেড়াজালে ভারত
এককভাবে সুবিধা নিচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধানে ভারতের
আগ্রহ কম। সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ায় তা বাংলাদেশি মানুষকে ভারতবিদ্বেষী
করে তুলেছে। ভারতীয় ঋণে ১৩টি প্রকল্প নির্ধারিত হলেও গত ২ বছরে মাত্র ২টি
প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি
বাড়ায়নি ভারত। নানা ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধায় বাংলাদেশি পণ্য চাহিদা থাকা
সত্ত্বেও ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি
স্বাক্ষরিত হলেও তাতে ভারতের স্বার্থ বেশি। কানেকটিভিটির আড়ালে ভারতকে
ট্রানজিট বা করিডর দিলেও নেপাল ও ভুটানের জন্য তা সম্প্রসারিত হয়নি। পানি
ব্যবস্থাপনার কথা বাংলাদেশি নেতারা বলেছেন বটে, কিন্তু এখানে ভারতের কোনো
উদ্যোগ কখনো পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ২০১১ সালে মালদ্বীপের আদ্দু সিটিতে ১৭তম
সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটান,
ভারত, নেপাল ও চীনকে নিয়ে ‘গঙ্গা নদী অববাহিকা সংস্থা’ ও ‘ব্রহ্মপুত্র নদ
অববাহিকা সংস্থা’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সদ্য সমাপ্ত বিমসটেক
সম্মেলনেও তিনি বলেছেন সে কথা। কিন্তু ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের
প্রচণ্ড বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে সিকিম থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথা বাংলাদেশ
বললেও ভারত তাতে সম্মতি দেয়নি (ভারতীয় এলাকার ওপর দিয়ে এই বিদ্যুৎ আনতে
হবে)। ‘কুনমিং উদ্যোগ’-এর ব্যাপারেও ভারতের সম্মতি (বিসিআইএম) নানা
প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প কিংবা টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে
বাংলাদেশের মানুষের যে শঙ্কা, সে শঙ্কা দূর করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি ভারত;
বরং একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়েও ভারতের সঙ্গে আমাদের
বিবাদ আছে, যা এখন হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারাধীন।তাই ষোড়শ
লোকসভা নির্বাচনের পর যে প্রশ্নটি থেকেই গেল তা হচ্ছে এই নির্বাচনের পর
সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা আছে, তা কি কাটবে? এখানেই এসে যায় মূল
প্রশ্নটি। ভারতীয় ‘মাইন্ড সেট আপ’-এ যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে সম্পর্কের
ক্ষেত্রে উন্নতি আসবে না। ভারতকে উদার মনোভাব নিয়ে আসতে হবে। আরো একটি কথা
বলা প্রয়োজন। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একাধিক ভারতীয় মন্ত্রী বাংলাদেশ
সফর করেছেন। বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী ও উপদেষ্টা একাধিকবার ভারত সফর
করেছেন। এর মধ্য দিয়ে ভারত আমাদের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে
নানা কারণে। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে রাজনীতি, তাতে ভারত
একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ‘ঐক্য’ দক্ষিণ এশিয়ার
রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ সেই প্রভাবের বাইরে থাকতে পারে না। আগেই
উল্লেখ করেছি ভারত একটি অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা
হরিন্দর কোহলির মতে, আগামী ৩০ বছরে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশে
পরিণত হবে। তখন মাথাপিছু আয় ৯৪০ ডলার থেকে ২২ হাজার ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।
২০০৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত যেখানে অবদান রাখত মাত্র ২ ভাগ, তখন অবদান
রাখবে ১৭ ভাগ। সুতরাং এই অর্থনীতির প্রভাব পার্শ্ববর্তী দেশের ওপর পড়বেই।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা জানেন একটি বড় দেশের পাশে যদি একটি ছোট দেশ
থাকে, তাহলে ওই বড় দেশ ছোট দেশের ওপর প্রভাব খাটায়। মেদভেদেভের (সাবেক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী) ধারণা ‘Zone of privileged
Interest’ অনেকটা এ ধারণাকেই সমর্থন করে। তাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে
অতিমাত্রায় ‘ভারতমুখিতা’ সাম্প্রতিককালে বিতর্কের মাত্রা বাড়ালেও বাস্তবতা
হচ্ছে আমরা ভারতের ‘প্রভাব’ থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না। তবে এ ক্ষেত্রে
আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা এক জায়গাতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আমরা
দক্ষতার পরিচয় দিতে পারিনি। আমাদের ‘প্রাপ্তি’ এখানে কম, ভারতের ‘প্রাপ্তি’
অনেক বেশি। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের
ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। ২০১০ সালেই প্রধানমন্ত্রী ভারত গেছেন।
ফিরতি সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসেন ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে। এ
ধরনের সফর ও পাল্টা সফরের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশের
রাজনীতিতে ভারত একটি ‘ফ্যাক্টর’। বেগম জিয়া এটাকে বিবেচনায় নিয়েই ভারতে
গিয়েছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশে পরিবর্তিত রাজনীতির প্রেক্ষাপটে
বেগম জিয়া এই মুহূর্তে বিরোধীদলীয় নেতা নন বটে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এ
দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। বেগম জিয়ার
নয়াদিল্লি সফর সফল হয়েছিল, এটা বলা যাবে না। নানা কারণে, বিশেষ করে বিএনপির
সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ককে ভারতীয় নেতারা খুব সহজভাবে নিতে পারেননি।
কংগ্রেস বরাবরই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে গেছে। রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেস আর
আওয়ামী লীগের মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এখন অনেকেই বলার চেষ্টা করেন
বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। এটাও ভুল
ধারণা। ভারতে যে জোটই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা জাতীয় স্বার্থের বাইরে
কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এর অর্থ হচ্ছে বিজেপি জোট ক্ষমতাসীন হলেও
(?) বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের যে নীতি, তাতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি।
তিস্তা চুক্তি থেকে গুরু করে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো প্রতিটি ক্ষেত্রে
বাংলাদেশের স্বার্থ অনেক বেশি। তাই বাংলাদেশের স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে
ভারতের নয়া সরকারের সঙ্গে দ্রুতই আলাপ-আলোচনা শুরু করতে হবে। দ্বিপাক্ষিক
আলোচনায় আমাদের দক্ষতা দেখাতে হবে। ভারতে নয়া সরকার এলেই আমাদের সব সমস্যার
সমাধান হয়ে যাবে, আমরা যেন এ ধরনের আত্মতুষ্টিতে না ভুগি।
Daily Manobkontho
17.03.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment