চলতি
২০১৪ সালে বাংলাদেশের জন্য রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। এই তিনটি
সংবাদ সরাসরিভাবে বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও এর একটা প্রভাব
বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকবেই। সংবাদ তিনটি হল- এক. ‘আরব বসন্ত’ পরবর্তী আরব
বিশ্বে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত আল কায়দা তথা এর সহযোগী সংগঠনগুলোর
উল্লাস ও প্রভাব বিস্তার। এদের প্রভাব বাংলাদেশের মতো দেশেও অনুভূত হতে
পারে। দুই. ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য
প্রত্যাহার করে নেবে। ফলে আফগানিস্তান আবার তালেবানদের নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে
যেতে পারে। এর একটা প্রভাব শুধু পাকিস্তানেই নয়, ভারত ও বাংলাদেশেও পড়তে
পারে। তিন. যুক্তরাষ্ট্র গেল ২০১৩ সালে তাদের প্যাসিফিক ফ্লিটের ৬টি
যুদ্ধজাহাজ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এ
প্রক্রিয়া পুরোপুরিভাবে কার্যকর করতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। কিন্তু এই
সিদ্ধান্ত এ অঞ্চলে জঙ্গিবাদকে উসকে দিতে পারে এবং জঙ্গিরা এটাকে ইস্যু করে
তাদের অপতৎপরতা বাড়াতে পারে। মোটা দাগে এ তিনটি পরিবর্তনের একটি প্রভাব এ
অঞ্চলের রাজনীতিতে পড়বেই। আমরা এ প্রভাবের বাইরে থাকতে পারব না।যুক্তরাষ্ট্র
আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলেও দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত
মহাসাগরের ব্যাপারে নতুন করে তাদের আগ্রহের জন্ম হয়েছে। তাদের আগ্রহের মূল
কেন্দ্রবিন্দু এখন মিয়ানমার, যেখানে রয়েছে প্রচুর জ্বালানিসম্পদ এবং
বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে একটা
অ্যালায়েন্স গড়ে তোলা। এই স্ট্র্যাটেজির আলোকে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গেও একটি ‘কৌশলগত সামরিক সম্পর্ক’ গড়ে তুলেছে
যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারই শেষ কথা নয়। বরং
নতুন আঙ্গিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আমরা প্রত্যক্ষ করব এ অঞ্চলে।
পাকিস্তানে একটি নয়া সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও মার্কিন ড্রোন বিমান হামলা
বন্ধ হয়নি। আগামীতে আফগানিস্তানে একজনও মার্কিন সৈন্য না থাকলেও ড্রোন
বিমান হামলা বন্ধ হবে না। এ অঞ্চলের কোনো একটা জায়গায় মার্কিন ঘাঁটি বসবে,
যেখান থেকে ড্রোন হামলা পরিচালিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরে তাদের
যুদ্ধ জাহাজ বাড়ানোর সিদ্ধান্তই শুধু নেয়নি, বরং চলতি সালের মাঝামাঝি একটি
নৌমহড়ার আয়োজন করছে, যাতে ভারতের নৌবাহিনী অংশ নিতে পারে। মালদ্বীপের
সঙ্গেও ‘সোফা’ চুক্তি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটো ২০১০ সালে তার
লিসবন সম্মেলনে ন্যাটোর সম্প্রসারিত ভূমিকা সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্ত
নিয়েছে। ন্যাটোর স্ট্র্যাটেজিক কনসেপ্ট সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন তারা
জানেন, এই ধারণাপত্রের মূল বিষয়টি হচ্ছে ন্যাটোর সম্প্রসারিত ভূমিকা।
ন্যাটোর কর্মকাণ্ড এখন আর শুধু ইউরোপেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং তা দক্ষিণ এশিয়ায়
সম্প্রসারিত হয়েছে। আগেই উল্লেখ করেছি, যুক্তরাষ্ট্র তার নৌবাহিনীর
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কর্মকাণ্ড ভারত মহাসাগর এলাকায় সম্প্রসারিত
করেছে। আগামীতে মার্কিন ষষ্ঠ ফ্লিটের বেশ কটি জাহাজ দক্ষিণ এশিয়ার
সমুদ্রসীমায় মোতায়েন করা হবে, যে কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য মার্কিন ভূমিকা
নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে গেল।অনেকেরই জানার কথা, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের
সঙ্গে এরই মধ্যে একটি ‘অংশীদারিত্ব সংলাপ’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই
তথাকথিত অংশীদারিত্ব সংলাপ চুক্তির আওতায় দৃশ্যত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র
সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ, শ্রমমান, পণ্যের শুল্ক
ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করলেও মূল বিষয় একটিই- যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত
নীতির ব্যাপারে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা। ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যৌথ
কর্মসূচি গ্রহণে’র আড়ালে এ অঞ্চলে আগামীতে মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়টি
উড়িয়ে দেয়া যায় না। বলা ভালো, প্রতি বছর একবার ‘অংশীদারিত্ব সংলাপ চুক্তির’
আওতায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিত হবে। প্রথম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল
গেল বছরের ১৯-২০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে। আর এবার পরবর্তী সংলাপ হবে ঢাকায়,
মে মাসে। সংলাপ শেষে একটি ব্রিফিং করা হয় বটে, কিন্তু ‘ভেতরের অনেক কথাই’
জানানো হয় না। বাংলাদেশ এর আগে ন্যাটোর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। তাই গুজবের ডালপালা বেড়েছে।
এবং আগামীতে তা আরও ছড়াবে। ২০১২ সালের ১৮ জুন ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়ায়
ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ন্যাটোর ২৫টি সদস্য দেশের বাইরেও
মোট ৫৫ দেশ এতে অংশ নিয়েছিল। ওই সম্মেলনকে তারা বলছে স্ট্র্যাটেজিক
মিলিটারি পার্টনারশিপ কনফারেন্স । যারা সরাসরি ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র নয়,
তারাও এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিল। ন্যাটোর সঙ্গে কাজ করতে পারে এমন দেশগুলোকে
ন্যাটোর নীতিনির্ধারকরা মোট ৪ ভাগে ভাগ করেছে- যারা ন্যাটোর সদস্য নয়, তবে
ন্যাটোর সহযোগী। যেমন- ইউরোপের ১২টি দেশকে নিয়ে গঠিত হয়েছে দ্য পার্টনারশিপ
ফর পিস। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত আলজেরিয়া, তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোকে নিয়ে
গঠিত হয়েছে মেডিটেরিয়ান ডায়ালগ মেমবার্স। সৌদি আরব কিংবা ওমানের মতো
দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত হয়েছে ইস্তানবুল কো-অপারেশন ইনিশিয়েটিভ। অস্ট্রেলিয়া ও
জাপানের মতো দেশগুলোকেও ন্যাটো পার্টনার্স অ্যাক্রস দ্য গ্লোব-এর ব্যানারে
একত্রিত করেছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানও এই ব্যানারে রয়েছে। দক্ষিণ
আমেরিকার দেশগুলোতে ন্যাটোর কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এখন এল সালভাদর ও
কলম্বিয়ার মতো দেশও ন্যাটোর সঙ্গে জড়িত হতে যাচ্ছে। মজার ব্যাপার হল,
ইউরোপে ন্যাটোর কমান্ডার এডমিরাল স্টাভরিডিস গেল বছর বলেছিলেন, তারা ভারত ও
ব্রাজিলের মতো দেশকে নিয়ে ভাবছেন এবং আশা করছেন এ দেশ দুটো পার্টনার্স
অ্যাক্রস দ্য গ্লোব-এর ব্যানারে আগামীতে ন্যাটোর কর্মকাণ্ডে শরিক হবে। ২০১০
সালে ন্যাটো লিসবন সম্মেলনে ন্যাটোর স্ট্র্যাটেজিক কনসেপ্ট গ্রহণ করেছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় ক্রোয়েশিয়ায় সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে
এটা প্রমাণিত হয়ে গেল, একুশ শতকে ন্যাটো নতুন এক কৌশলগত ধারণা নিয়ে উপস্থিত
হচ্ছে।ন্যাটোর এই ভূমিকা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিশ্বকে কর্তৃত্ব
করার প্রবণতা নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দিতে পারে। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে প্রভাব বলয়কে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছিল
স্নায়ুযুদ্ধের। আর ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে
সেই স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে গড়ে
ওঠা ওয়ারশ সামরিক জোট ভেঙে দেয়া হলেও ন্যাটো জোট ভেঙে দেয়া হয়নি। বরং এর
সম্প্রসারণ ঘটেছিল। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন ন্যাটো ও ওয়ারশ জোটের মধ্যে
সামরিক প্রতিযোগিতা এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল যে, ইউরোপে একাধিকবার
‘পারমাণবিক যুদ্ধে’র আশংকা দেখা দিয়েছিল। সেই যুদ্ধ হয়নি বটে, কিন্তু বিংশ
শতাব্দীর পুরোটা সময় এ দুই শক্তির মাঝে প্রতিযোগিতা বজায় ছিল। দুই
পরাশক্তিই ইউরোপে পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র মোতায়েন
করেছিল। শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরই এ স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। এর
প্রধান কারণ ছিল একটি- রাশিয়া এখন আর ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি নয়।
দুটি আদর্শের (সমাজতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদ) মাঝে যে দ্বন্দ্ব ছিল, সেই
দ্বন্দ্বেরও অবসান ঘটে, এখন রাশিয়া আদর্শ হিসেবে মুক্তবাজার ও পুঁজিবাদকে
গ্রহণ করেছে। উপরন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার অনেক আগেই ১৯৮৮ সালে
গরবাচেভ ওয়ারশ সামরিক জোট ভেঙে দিয়েছিলেন। যে কারণে ইউরোপে রাশিয়ার উত্থান
যুক্তরাষ্ট্র তথা ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেনি। আর তাই
নতুন করে এই অঞ্চলে স্নায়ুযুদ্ধের জন্মের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এখন ভারত
মহাসাগর হচ্ছে সম্ভাব্য ক্ষেত্র, যেখানে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হতে
যাচ্ছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে চীন। চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভয় ও শংকা
এখন অনেক বেশি। প্রথমত, তত্ত্বগতভাবে চীন এখন আর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়।
কিন্তু একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীন এখন বিশ্বকে কর্তৃত্ব করছে। চীন
বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হওয়ায় তা এখন মার্কিন স্বার্থকে
আঘাত করছে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে নিজের
অভ্যন্তরীণ বাজারকে সচল রাখছে। এটা মার্কিন নীতিনির্ধারকদের অনেকেরই
অপছন্দের। গত ৮ জুন নয়া চীনা প্রেসিডেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন।
এই সফরে ওবামার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তারপরও বেশ কিছু ইস্যুতে
বিরোধ রয়েছে। তৃতীয়ত, দক্ষিণ এশিয়া তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রভাব
বাড়ছে। এটা মার্কিনিদের চিন্তার কারণ। বিশেষ করে ভারত মহাসাগর ও
আফগানিস্তানের ব্যাপারে তাদের আশংকার কারণ রয়েছে যথেষ্ট। ২০১৪ সালে
আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য ও সেই সঙ্গে সব বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহার
করা হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে না।
এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। এ কারণেই তথাকথিত
‘অংশীদারিত্ব চুক্তি’ করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোকে ব্যবহার করে এ অঞ্চলে
তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। আর ন্যাটোর স্ট্র্যাটেজিক পাটনারশিপ
প্রোগ্রাম এক ধরনের কর্মসূচি, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার
উপস্থিতিকে নিশ্চিত করতে চায়। তাই যুক্তিসঙ্গত কারণেই ভারতকে প্রয়োজন রয়েছে
ওবামা প্রশাসনের। স্মরণ করা প্রয়োজন, জাতিসংঘের সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলনে
(২০১৩) যোগ দেয়া যে ক’জন সরকারপ্রধানকে ওবামা হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ
জানিয়েছিলেন, তার মাঝে অন্যতম ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। গত ২৭
সেপ্টেম্বর মনমোহন সিং হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। ভুলে গেলে চলবে
না, যুক্তরাষ্ট্রকে তার স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে হলে তার ভারতের সাহায্য ও
সহযোগিতা প্রয়োজন। ভারত উঠতি শক্তি। সামরিক তো বটেই, অর্থনৈতিক শক্তিও বটে।
মার্কিন স্বার্থ বিঘ্নিত হবে যদি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্র সেটা কখনোই চাইবে না।বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র
কখনও একক কোনো নীতি গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিনি নীতি ভারতীয়
মনোভাব দ্বারা প্রভাবান্বিত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের
সঙ্গে একটা মতভিন্নতা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র এখন বর্তমান সরকারকে অনেকটাই
স্বীকার করে নিয়েছে, যে কারণে বর্তমান সংসদ ন্যূনতম দুই থেকে তিন বছর টিকে
থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে হঠাৎ করে জঙ্গিবাদের উত্থান,
জেএমবি সদস্যদের পুলিশের হাত থেকে পলায়ন কিংবা আল-জাওয়াহিরির তথাকথিত অডিও
বার্তা যে ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকদের এতটুকুও বিচলিত করবে না, তা বলা যায়
না। তার ওপর গত ২ মার্চ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তথাকথিত
নয়টি জঙ্গি সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলাদেশ কমিটি’ নামে একটি কমিটির ব্যানারে
সংগঠিত হয়েছে। এ ব্যাপারে সত্যতা যাই থাকুক, ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকরা
সংবাদটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে বলেই আমার ধারণা। সুতরাং পুরো ২০১৪ সালটি
বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছেন,
উপজেলা নির্বাচনের পরপরই তিনি আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন। ফলে রাজনীতি
আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বাংলাদেশের জঙ্গিরা এ থেকে সুবিধা নিতে পারে।
বিষয়টি বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদেরও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।দক্ষিণ
এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহে একটির সঙ্গে অপরটির
একটি যোগসূত্র আছে। বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে আরব বিশ্বের ইসলামিক
জঙ্গিদের কতটুকু যোগসূত্র আছে, তা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভালো বলতে পারবে।
কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে এসব জঙ্গির যে একটা যোগাযোগ থাকতে পারে, বা
ভবিষ্যতে হতে পারে, তা আশংকা করা যায়। সুতরাং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন
সৈন্যদের প্রত্যাহারে যে ‘শূন্যতার’ সৃষ্টি হবে (ভ্যাকুয়াম থিওরি), তার
সুযোগ নিতে পারে জঙ্গিরা। আর জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে রাখা, চীনের সঙ্গে
সম্পর্কের অবনতির প্রেক্ষাপটে ভারত মহাসাগরে যখন মার্কিন নৌবাহিনীর
উপস্থিতি বাড়বে, সঙ্গত কারণেই এর ‘প্রতিবাদে’ জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার
আশংকাই বেশি। এক্ষেত্রে এ অঞ্চলকে ঘিরে (বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের
রোহিঙ্গা প্রধান অঞ্চলে) নতুন করে ‘আফগান সিনক্রমে’র জন্ম হয় কিনা, সে
ব্যাপারে লক্ষ্য থাকবে অনেকের। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, সাবেক সোভিয়েত
ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ করার জন্য একসময় সিআইএ’র উদ্যোগে তালেবানের জন্ম
হয়েছিল। ইতিহাসের কী নির্মম পরিণতি, এই তালেবানের বিরুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্র
গত ১৩ বছর যুদ্ধ করে আসছে। ‘আরব বসন্তে’র জন্ম হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের
পরোক্ষ মদদে। আজ সেখানে উগ্রবাদী রাজনীতির জন্ম হয়েছে।এ অঞ্চলের
রাজনীতির নতুন মেরুকরণে বাংলাদেশ বাদ থাকতে পারে না। প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহ
বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। এর প্রতিটির
সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ জড়িত। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় যে
বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে তা হল আমাদের জাতীয় স্বার্থ। আমাদের জাতীয়
স্বার্থ যাতে বিঘিœত না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে প্রথমে।
০৮ মার্চ, ২০১৪
Daily Jugantor
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment