রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

অবসরের বয়স যখন সাতষট্টি!

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের অবসরের বয়স ৬৭-তে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছেন। গেল সপ্তাহে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছেন। শিক্ষকদের এ দাবির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি আছে। এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করেছে। ধারণা করছি, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় একই পথ অনুসরণ করবে। বিশেষ করে সবাই তাকিয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ সিদ্ধান্ত নিলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় খুব দ্রুত এ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় অবসরের বয়সসীমা ৬৭ নির্ধারণ করে সামগ্রিকভাবে এটা আইনে পরিণত করতে পারবে না। এজন্য সংসদে আইন প্রণয়ন করতে হবে। বলা ভালো, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫-তে উন্নীত করেছিল। এখন আবার এটা যদি ৬৭-তে উন্নীত করা হয়, তাহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে। অতিরিক্ত এ দুই বছরের বেতন কোত্থেকে আসবে, সে প্রশ্ন থাকবেই। অর্থ মন্ত্রণালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সমর্থন এতে নেই। ফলে একটা বড় জটিলতা নিয়েই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন অবসরের বয়স ৬৭ বছরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। বলাই বাহুল্য, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকার এ চাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না। দ্বিতীয়ত, প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় ৬০ বছরের পর একজন সিনিয়র শিক্ষকের দেয়ার কিছুই থাকে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য, খুব কম শিক্ষকই ৬০ বছরের পর তেমন একটা গবেষণার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন না। অথবা রাখতে পারেন না। অসুস্থতা তাকে পেয়ে বসে। এ বয়সে এসে অনেকেই দেখেছি, প্রবাসে অবস্থানরত ছেলে বা মেয়ে এবং সেইসঙ্গে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। পড়াশোনা, গবেষণা, ক্লাস নেয়া ইত্যাদির পেছনে 'সময় দেয়ার' প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন কম। এর একটি বাস্তব ভিত্তিও রয়েছে। আমাদের যে সংস্কৃতি, তাতে পরিণত বয়সে এসে মানুষ সন্তানদের কাছে আবার ফিরে যায়। এটাই বাস্তব। গবেষণা তাকে টানে না। তবে ব্যতিক্রম যে নেই, তা আমি বলছি না। ব্যতিক্রম আছে। কিন্তু আমরা অনেক জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিকে ৬৫ বছরের সুযোগও দেইনি। অনেক পন্ডিত ব্যক্তি এ সমাজে এখনও আছেন, যারা ৬০ বছরেরও আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন; কিন্তু এখনও সক্রিয়। বই লিখছেন। সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন। নিঃসন্দেহে এ প্রজন্মের তরুণরা তাদের ক্যাম্পাসে পেলে আরও বেশি অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হতো। কিন্তু তা হয়নি। আরও একটি কারণে অবসরের বয়স ৬৭-তে উন্নীত করার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করা যেতে পারে। তা হচ্ছে ৬৭ বছর নির্ধারণ করে দেয়ায় অনেকেই (যারা সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত) সরাসরি ৪০ বছর শিক্ষকতা করবেন। রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? গবেষণা, পাঠ্যদানের চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্য যেখানে বেশি, সেখানে তারা গবেষণায় মনোনিবেশ করবেন, পাঠ্যবই রচনা করবেন- এটা আশা করা যায় না। অনেক তরুণ প্রভাষকের বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগ শুনি, তাতে করে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি রীতিমতো আতঙ্কিত। আমার আস্থার জায়গাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬৭-তে উন্নীত করায় সমাজ, রাষ্ট্র উপকৃত হবে- এ বিশ্বাস রাখতে পারছি না। এরই মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শত শত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পক্ষ থেকেও দাবি উঠেছে, তাদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর। রাজনৈতিক সরকারের ওপর সঙ্গত কারণেই 'চাপ' আসবে এবং কোনো সরকারই চাইবে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থিতিশীল হোক। এক সময় সরকারও বাধ্য হবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা বাড়াতে। ফলে যা হবে, তা হচ্ছে 'উপরের স্তরে' জট সৃষ্টি হবে এবং নতুনদের চাকরি পেতে অসুবিধা হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসরদের দুটো গ্রেড- প্রফেসর ও সিলেকশন গ্রেড প্রফেসর। অনেক শিক্ষক দীর্ঘদিন প্রফেসর হিসেবে নিজ পদে থাকলেও, ১০ ভাগ কোঠার কারণে কোনোদিনই 'সিলেকশন গ্রেড প্রফেসর' হতে পারেন না। ফলে যা হবে তা হচ্ছে, সিনিয়র সচিবদের মতো 'সিনিয়র প্রফেসর' পদ সৃষ্টি করতে বাধ্য হবে সরকার। কেননা রাজনৈতিক সরকার সব সময়ই চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমর্থন। শিক্ষকদের খুশি করার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি 'সিনিয়র প্রফেসরের' পদ আগামীতে সৃষ্টি করা হয়, আমি তাতে অবাক হব না। তবে এক্ষেত্রে যেন একটি নীতিমালা থাকে। সরকার সিনিয়র সচিবের আটটি পদ সৃষ্টি করেছে। এতে করে সচিবদের পাশে সিনিয়র-জুনিয়র পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আদৌ কী কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে? বয়সে সিনিয়র- এটাই কি নীতিমালা? আসলে নীতিমালাটি হওয়া উচিত যোগ্যতার ফলে। একজন সচিব বয়সের কারণে সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা পাবেন, সেটি ঠিক নয়। তিনি যোগ্যতা দেখাতে পেরেছেন কিনা, সেটাই হলো আসল কথা। সচিব সাহেবদের কাজ যদি হয় 'বিদেশ ভ্রমণ' আর 'দাতাদের নির্দেশনা' অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন করা, সেই সচিব 'যোগ্য' বলে বিবেচিত হবেন না। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী মেধাশূন্য সচিবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক আগে ২৮ সেপ্টেম্বর (২০১১) এ ধরনের একটি সংবাদ ছাপা হয়েছিল একটি জাতীয় দৈনিকে। সচিবদের 'পারফরম্যান্সে' প্রধানমন্ত্রী অসন্তুষ্ট এমন খবরও ছিল ওই প্রতিবেদনে। তবুও প্রধানমন্ত্রীকে সিনিয়র সচিবের পদ সৃষ্টি করতে হয়েছিল। আইজিকে 'থ্রিস্টার জেনারেলের' পদমর্যাদা দেয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর জন্য পাঁচজন সিনিয়র সচিবের পদও সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে করে রাষ্ট্র, সমাজ কতটুকু উপকৃত হলো? এখন সঙ্গত কারণেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দাবি করবেন 'সিনিয়র প্রফেসর'-এর পদ সৃষ্টি করার। তাদের কী ফেলে দিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী! এখানেই এসে যায় মূল প্রশ্নটি। শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬৭ হতে পারে তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু এখানে যেন কিছু চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকে। ঢালাওভাবে একজন অসুস্থ, কর্মে অক্ষম, মেধাহীন, অযোগ্য শিক্ষক ৬৭ বছর পর্যন্ত শিক্ষকতা করবেন- এটি কাম্য নয়। সমাজ তার কাছ থেকে কিছু পাবে না। শিক্ষকতায় দয়া-দাক্ষিণ্যের কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় 'দলীয় ক্যাডার' নিয়োগ দিয়ে আমরা এরই মাঝে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংস করে ফেলেছি। আর নয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। শিক্ষকদের অবসরসংক্রান্ত আইনটি সংশোধন হতে পারে। সবাই যখন সবকিছু পাচ্ছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পাবেন না কেন, তাদের দায়িত্ব এখন আরও বেশি। এখানে সংসদীয় কমিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিক্ষাসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি অতীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে, যা প্রশংসিত হয়েছে। নবম সংসদে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওই কমিটি ছিল আমাদের জন্য একটা আস্থার জায়গা। তারা তা প্রমাণও করেছেন। শিক্ষকদের স্বার্থে আঘাত করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত এ কমিটি অতীতেও নেয়নি, আগামীতেও নয়া কমিটি নেবে না। তবে সংসদীয় কমিটি শিক্ষকদের অবসরের ব্যাপারে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে পারে- ১. অবসরের বয়সসীমা ৬৭ করা হোক, আপত্তি নেই। কিন্তু তাকে প্রমাণ করতে হবে তিনি শারীরিকভাবে 'ফিট'। অর্থাৎ সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত ক্লাস নেয়ার ক্ষমতা তার আছে (এক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা এড়িয়ে চলতে হবে), ২. ২+২+১ এর যে ফর্মুলা, তা নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজাতে হবে। নয়া ফর্মুলা আসতে পারে অর্থাৎ সরাসরি ৬৭ পর্যন্ত আইন না করে ধাপে ধাপে তা কার্যকর করলে ভালো হয়, ৩. এ সুযোগ তিনি পাবেন, যিনি নিয়মিত এমফিল এবং পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণা তত্ত্বাবধান করেন, ৪. শর্ত হিসেবে তাকে ৬০ বছরের পর প্রতি বছর একটি পাঠ্যবই রচনা করতে হবে। যদি তিনি তা না পারেন, তাহলে তিনি ৬৭ বছরে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন না, ৫. ৬৭-তে যাওয়ার যোগ্যতা তিনি অর্জন করতে পারবেন, অথবা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, যিনি অধ্যাপক পদে থাকাকালীন নূ্যনতম একবার 'সেবাটিক্যাল লিভ' নিয়ে (এক বছর) একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার কোনো গবেষণাগ্রন্থ নেই, তিনি ৬৭-তে যাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। অধ্যাপক থাকাকালীন তিনি যদি আদৌ কোনো এমফিল বা পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধান না করে থাকেন, তিনিও যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। মোট কথা একটা নীতিমালা থাকুক। কিছু শর্ত থাকুক। যদি ঢালাওভাবে ৬৭ করা হয়, তাহলে তাতে 'রাজনীতি' ঢুকে যাবে। জাতি, সমাজ, রাষ্ট্র শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়েও তেমন উপকৃত হবে না। আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নূ্যনতম পাওনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করছি না। আমি প্রশ্ন রাখছি নৈতিকতার। আমি যদি আমার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হই, তাহলে কী অধিকার আছে আমার শিক্ষকতার পথকে দীর্ঘায়িত করার? আমি বাস্তবতাকে মেনে নিতে চাই। শুধু অবসরের বয়স আরও দুই বছর বাড়িয়ে রাষ্ট্রের কী ক্ষতিসাধন আমরা করছি না। আজ যারা নতুন প্রজন্ম শিক্ষকতায় আসছেন, তারা জাতিকে কী দেবেন? এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক তরুণ প্রভাষকের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে স্বয়ং তার শিক্ষকরাই প্রশ্ন তুলেছেন। যিনি তার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন, তিনি তখন ৬৭ বছরের অবসরের সুবিধা ভোগ করবেন। একটি 'বিতর্কিত' থিসিস তত্ত্বাবধায়ন করে তিনি আদৌ বিভাগের কোনো সুনাম আনতে পারেননি। তিনি যদি ৬৭ বছর পর্যন্ত থাকেন, তিনি কী সুনাম আনবেন আর? আর এক ভদ্রলোক 'ঘুষ' দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন। পারেননি। সাবেক ভিসির নির্দেশে মামলা হয়েছিল। এখন যে ভদ্রলোক টাকা দিয়ে 'শিক্ষক' হতে চান, তিনি যদি ঘটনাক্রমে শিক্ষক হয়ে যান অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, তিনি জাতিকে কী দেবেন? তাদের কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি? আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় হতাশাগ্রস্ত। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কার আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার শিক্ষকদের অবসরের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। একইসঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। দেশে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করা হয়েছে। কেউই খেয়াল করছেন না, এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে ভালো শিক্ষকের অভাবে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করে ফেলেছি। সব বিশ্ববিদ্যালয় একটি আইনে এখনও চলছে না। মাত্র চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তথাকথিত সিনেট আছে, যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে ভিসিরা 'নির্বাচিত' হচ্ছেন। ওই নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট নির্বাচন হয় না বছরের পর বছর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার এটা একটা বড় ব্যর্থতা। সরকারের দৃষ্টি এদিকে নেই। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের পদোন্নতির নীতিমালা একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম। এতে করে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নীতিমালা অনুসরণ করা উচিত। তৃতীয়ত, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচ- অনিয়ম হচ্ছে। কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই পিএইচডি ও এমফিল কোর্সে ছাত্র ভর্তি করানো হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা, পুলিশের সিনিয়র অফিসাররা, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা পিএইচডি নিচ্ছেন। ভর্তি হচ্ছেন। একজন পূর্ণ চাকুরে কোনো ধরনের ফিল্ডওয়ার্ক কিংবা লাইব্রেরি ওয়ার্ক ছাড়া পিএইচডি করেন কীভাবে? এখানে দেখভাল করার কেউ নেই। চতুর্থত, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভাগ খোলা হচ্ছে। আর সেইসব বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে অন্য ডিসিপ্লিনের। অনেকটা যেন প্রাইমারি স্কুলের মতো। যে কেউ যে কোনো বিষয় পড়াতে পারে। কোথাও কোথাও সহকারী অধ্যাপকরাও বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এতে করে উচ্চশিক্ষার মান রক্ষিত হচ্ছে না। শিক্ষকরা তাদের অবসরের বয়সসীমা বাড়াতে চাচ্ছেন। কোনো কোনো পেশায় বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের বাড়ানো হবে না কেন? এটা হতেই পারে। কিন্তু শিক্ষক রাজনীতির জন্য যদি এ বয়সসীমা বাড়ানো হয়, তাহলে তা সমর্থনযোগ্য হবে না। সিনিয়র শিক্ষকরা 'রাজনীতি' করেন। অভিযোগ আছে, শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার জন্যই এ বয়সসীমা বাড়ানো। বয়সসীমা বাড়ানোর আগে উচ্চশিক্ষার মানের দিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। সিনিয়র শিক্ষকরা, ভিসিরা এটি করছেন না, দুঃখটা এখানেই। তাই অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেয়া হোক। একুশ শতকে এসে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। মেধার চেয়ে এখানে 'রাজনীতি' প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। সংস্কারটা তাই জরুরি। Daily ALOKITO BANGLADESH 11.07.14

0 comments:

Post a Comment