সুষমা
স্বরাজের ঢাকা সফরে কী পেল বাংলাদেশ? ভারতের নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪০
ঘণ্টার ঢাকা সফর ছিল নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এলেন, দেখলেন। কিন্তু
জয় করতে পারলেন কি? খুব ব্যস্ত সময় তিনি ঢাকায় কাটিয়েছেন। বাংলাদেশের
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ,
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করা-সব মিলিয়ে তার এ সফর 'শুভেচ্ছা' সফর
বলা হলেও, এটা ছিল হাইপ্রোফাইল একটি ভিজিট। রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও তিনি
সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এ সফরের তিনটি বিষয় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এক.
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি স্টাডিজ (বিস)
কর্তৃক আয়োজিত নীতিনির্ধারণী একটি বক্তব্য। এখানে তিনি মোদি সরকারের
দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা তুলে ধরেছেন। দুই. প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয়
বৈঠক। তিন. খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ। তার এ সফর বাংলাদেশ অত্যন্ত
গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া
হয়, যা কিনা সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে
দেয়া হয়নি। এমনকি কিছুদিন আগে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা
রাব্বানিও এ সংবর্ধনা পাননি। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নিজে তাকে গেট পর্যন্ত
এসে গ্রহণ করেছেন এবং বিদায় জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া তার সঙ্গে দেখা করতে
সোনারগাঁও হোটেলে পর্যন্ত গেছেন। এটা প্রমাণ করে, বাংলাদেশ কী পরিমাণ
গুরুত্ব দিয়ে তার এ সফরকে বরণ করেছে। কিন্তু আমাদের প্রাপ্তি কী? আমাদের
প্রত্যাশা কি পূরণ হয়েছে? নিঃসন্দেহে কোনো একটি ক্ষেত্রেও আমাদের প্রত্যাশা
পূরণ হয়নি। তিস্তার পানি চুক্তি কিংবা স্থল সীমানা চুক্তির ব্যাপারে শুধু
আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ আমরা পেয়েছি, তার এ
সফর থেকে। এর একটি হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ প্রশ্নে
সঙ্কীর্ণ দলীয় রাজনীতিতে যাবে না ভারত'। দ্বিতীয়ত, বলা হয়েছে, তিস্তা
চুক্তির ব্যাপারে ভারতে জাতীয় ঐকমত্যের চেষ্টা করা হবে। অর্থাৎ তিস্তা
চুক্তির ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জিকে রাজি করানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখবে
দিলি্ল। তৃতীয়ত, বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান
বাংলাদেশের জনগণকেই করতে হবে। ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় কোনো ধরনের
হস্তক্ষেপ করবে না। চতুর্থত, স্থল সীমানা চিহ্নিতকরণের ব্যাপারে নয়াদিলি্ল
তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। মোটা দাগে এসব ছিল সুষমা স্বরাজের আশাবাদ,
কোনো ধরনের স্পষ্ট 'কমিটমেন্ট' তিনি করেননি। তবে বিদ্যুৎ রফতানি, মৈত্রী
ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি দুই-একটি চুক্তি হয়েছে, যা বলাই
বাহুল্য, তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। তাই প্রশ্ন থাকবেই এ সফর নিয়ে। এ সফর সফল
কিংবা ব্যর্থ এটা বলার আগে আমাদের কতগুলো বিষয় বিবেচনায় নেয়া উচিত। এক.
সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আমাদের জাতীয় নেতাদের একটি ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে।
বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার
ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। আমাদের জাতীয় নেতাদের তিনি চেনেন, জানেন এবং তাদের
রাজনীতি সম্পর্কে তিনি ভালো ধারণা রাখেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে,
ব্যক্তিগত সখ্য বা পরিচয় সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে কোনো বড় ভূমিকা পালন করে
না। দুই. জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ভারতীয় নেতাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রশ্নে সাবেক ইউপিএ সরকারের প্রণীত নীতি থেকে মোদি
সরকার একটা 'ইউ টার্ন' নেবে, যারা এ মনোভাব পোষণ করেন, তারা একটা 'বোকার
স্বর্গে' বাস করছেন। তিন. সুষমা স্বরাজের এ সফর ছিল মূলত একটি 'রুটিন
ওয়ার্ক'। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মনোভাব জানার
প্রয়োজন রয়েছে। তবে এটাও বিবেচনায় নিতে হবে যে, মোদি সরকারের অগ্রাধিকার
তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। যে কারণে আমরা দেখি, মোদির শপথ গ্রহণ
অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার সরকার তথা রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো
হয়েছিল। মোদি নিজে ভুটান প্রথম সফর করে এ মেসেজটাই দিলেন যে, তিনি দক্ষিণ
এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে চান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ
সম্পর্কের ভিত্তি কী? শুধু ভারতের জাতীয় স্বার্থকে রক্ষা করা? নাকি দক্ষিণ
এশিয়ার উন্নয়ন? তাই খুব সঙ্গত কারণেই দক্ষিণ এশিয়ায় আগামী দিনে ভারতের
ভূমিকা কী হবে, সে ব্যাপারে লক্ষ্য থাকবে অনেকের। সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফর এ
আলোকেই দেখতে হবে।
তিস্তার পানি চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তির
ব্যাপারে বিজেপির অবস্থান আমরা মোটামুটি জানি। চূড়ান্ত বিচারে নরেন্দ্র
মোদিকে যদি মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় প্রশ্নে কোনো
'কমপ্রোমাইজ' করতে হয়, তাহলে মোদি মমতার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবেন
না। এতে করে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি চলে যাবে 'ডিপ ফ্রিজে'। আন্তঃনদী
সংযোগের কথাও তিনি বলেছেন। মনে রাখতে হবে, ২০১৬ সালে পশ্চিম বাংলায় বিধান
সভার নির্বাচন। তিস্তা একটা ইস্যু সেখানে। সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারেও
বিজেপির প্রচন্ড আপত্তি ছিল। বিজেপির বিরোধিতার কারণেই কংগ্রেস সরকারের সময়
চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। চুক্তিটি ভারতীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছিল।
একটি বিল রাজ্যসভায় উপস্থাপিতও হয়েছিল। কিন্তু বিজেপির আপত্তির কারণে এটা
নিয়ে আর তখন আলোচনা হয়নি। এখন বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার এ বিষয়টিকে
গুরুত্ব দেবে, এটা আমার মনে হয় না। এর বাইরে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং
ট্রানজিট প্রশ্নে দুই দেশের মাঝে আস্থার যে ঘাটতি রয়েছে, সে ব্যাপারে নয়া
সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে বলে মনে হয় না। আমাদের পররাষ্ট্র সচিব মার্চ মাসের
শেষের দিকে নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের
সঙ্গে কথা বলেছেন। নির্বাচনের আগে আমাদের পররাষ্ট্র সচিব যখন নয়াদিলি্ল
যান, তখন বুঝতে হবে বাংলাদেশ সরকার পরিস্থিতি যাচাই করছে। স্পষ্টতই তিনি
তখন কোনো সুখবর নিয়ে আসতে পারেননি। এটা মোটামুটিভাবে আমরা সাবাই জানি,
কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যে
কারণে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ বেশ কিছু
চুক্তি করেছিল। ভারত গেল ৫ বছর বাংলাদেশের কাছ থেকে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা
নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সে অর্থে তেমন সুবিধা পায়নি। তখন নয়াদিলি্লতে সদ্য
গঠিত মোদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে
দাঁড়ায়, সেটা দেখার বিষয়। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট করেই বলা যায়, জাতীয়
স্বার্থের প্রশ্নে ভারতের নীতির পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয়
না। এরই মধ্যে খবর বের হয়েছে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে
করিডোর পেতে যাচ্ছে ভারত। আরুণাচল থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের ভেতর দিয়ে
বিদ্যুৎ যাবে বিহারে। একইসঙ্গে চলতি বছরই বহুল বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎ
কেন্দ্র নির্মাণ করবে ভারত। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থ রয়েছে। সুতরাং
নয়াদিলি্লতে মোদি সরকার এসব প্রকল্প বাতিল করবে, এটা মনে করার কোনো কারণ
নেই। বাংলাদেশ তখন তার স্বার্থ আদায়ে কতটুকু শক্ত অবস্থানে যেতে পারে,
সেটাই হচ্ছে আসল কথা। সে কারণেই সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফর ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু অত্যন্ত কৌশলী তিনি। তিনি ঢাকায় এসে এমন কোনো মন্তব্য করেননি যে,
তাতে করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো পিছপা ধারণার জন্ম হয়।
তিনি নিজে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি, যা বলার তা বলেছেন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আকবর উদ্দীন। তিনিও মেপে মেপে কথা বলেছেন।
এমনকি খালেদা জিয়া-সুষমা স্বরাজ সাক্ষাৎকারের সময় 'দেশে কোনো গণতন্ত্র
নেই' বলে খালেদা জিয়া যে মন্তব্য করেছেন, সে ব্যাপারেও কোনো মন্তব্য করেননি
সুষমা। তবে মূল প্রশ্ন আবর্তিত হবে ভারত সরকারের মনোভাবের ওপর। এ মনোভাব
আধিপত্যসুলভ। এ মনোভাবে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন এবং পারস্পরিক নির্ভরশীল একটা
সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। এখানে নরেন্দ্র মোদির ভুটান সফর উল্লেখ করা
প্রয়োজন। চীন ও বাংলাদেশ ওই সফর থেকে একটা মেসেজ পেতে পারে। অতীতে ভারতে
কোনো সরকারপ্রধানই ভুটানকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। ভুটান-ভারত বাণিজ্যিক
সম্পর্কও তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। তবে ভুটানের একটা স্ট্রাটেজিক গুরুত্ব রয়েছে।
আর এটা বিবেচনায় নিয়েই মোদি ভুটানে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ভুটান সফরের
পর যেসব সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে, তার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। যেমন ভুটানে
মোদির সফরের পরপরই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোগরে এক বিবৃতিতে বলেছেন,
'ভুটানে দূতাবাস খুলতে চীনকে অনুমতি দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, ভুটানের সঙ্গে
কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সম্প্রতি খুব তোড়জোড় শুরু করেছে চীন।
চীনের এ উদ্যোগে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন ভারত। শুধু তাই নয়, সফর শেষে এক
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় স্বার্থে দুই দেশ (ভারত ও ভুটান) একে অপরকে
সাহায্য করবে।' মোদির ভুটান সফর ও যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর এটা
স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ভুটান ও ভারতের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ একই। ভারতের
সীমান্তে চীনের 'আগ্রাসন' আর ভুটানের উত্তরেও চীনের 'আগ্রাসন' একই রকমের
উদ্বেগের কারণ। চীনের সম্ভাব্য 'আগ্রাসন' রোধে ভারত ও ভুটান একে অপরকে
সাহায্য করবে বলেও যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের
জি-নিউজ আমাদের জানাচ্ছে, ভারত চীন সীমান্তে দ্বিগুণ সেনা মোতায়েন করেছে।
এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চীন শক্তি বৃদ্ধি করছে এবং
চীনা হামলা বাড়ছে। বলা ভালো, ভারত-চীন সীমান্তে ইন্দো-তিব্বত বর্ডারে
পুলিশের ঘাঁটি রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে ১৫ হাজার সেনা। এখন দ্বিগুণ সেনা
মোতায়েনের বিষয়টি এবং ভুটানে চীনা দূতাবাস না খোলার সিদ্ধান্ত ভারত-চীন
সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। অথচ বলা হয়েছিল, মোদির জমানায় চীন-ভারত
সম্পর্কের উন্নতি হবে। এমনকি মোদির শপথ নেয়ার পরপরই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
নয়াদিলি্ল সফর এ আভাসই দিয়েছিল, এ দুই দেশের মাঝে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।
এখন মনে হচ্ছে, চীনের ব্যাপারে মোদির মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। চীনকে ভারত
এখন এ অঞ্চলে তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করছে। এ অঞ্চলের
উন্নয়নে চীন নাক গলাক, তা ভারত কোনোভাবেই চাইবে না। আমরা মোদির শাসনামলে
ইন্ডিয়া ডকট্রিনের নতুন এক রূপ দেখতে পাব। মোদির ভুটান সফরের সময় চীন
প্রসঙ্গ প্রকাশ্যে আলোচিত হলেও, বাংলাদেশে সুষমা স্বরাজের সফরের সময় এ
প্রসঙ্গটি প্রকাশ্যে আসেনি। তবে একটা খবর এসেছে, সোনাদিয়ায় গভীর
সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ভারত নিজেও অংশীদার হতে চায়। এবং বলা হয়েছে, এ
ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এখানেই রয়েছে মূল প্রশ্নটি।
সোনাদিয়ায় চীনের ভূমিকা কী হবে এবং তা ভারতের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে
দেখা দেবে কিনা-এটা নিশ্চিত হতে চায় ভারত। স্পষ্ট করেই বলা যায়, চীনের
সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেলেও দক্ষিণ এশিয়া তথা বঙ্গোপসাগরীয়
এলাকায় চীনের সামরিক উপস্থিতিকে ভারত খুব হালকাভাবে নেবে না। দক্ষিণ এশিয়ায়
ভারত তার অলিখিত কর্তৃত্ব বজায় রাখবে। নেপালের পর ভুটানে এখন তার কর্তৃত্ব
বাড়ল। একটি নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের আওতায় এ দেশগুলোকে একত্রিত করতে চায়
ভারত। সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের সময় পরোক্ষভাবে এ প্রসঙ্গটি এসেছে। যে
কারণে দেখা যায়, আগামীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রসঙ্গটি নিয়ে ভারতের
সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে। অনেকের মনে থাকার কথা, প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার চীন সফরের সময় এ চুত্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু
চূড়ান্ত মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। এবং বলা হয়, এ নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনার
প্রয়োজন রয়েছে।
সুষমা স্বরাজ ঢাকা ছেড়েছেন শুক্রবার। কিন্তু রেখে
গেছেন নানা প্রশ্ন। অনেক প্রত্যাশা জাগিয়ে তিনি ঢাকা এসেছিলেন। সাধারণ
মানুষের ধারণা ছিল, তিনি সুস্পষ্ট কোনো কমিটমেন্ট করে যাবেন। কিন্তু তিনি
তা করেননি। সেটা বোধ হয় সম্ভবও নয়। ভারতে নয়া সরকারের বয়স এক মাস পার হয়েছে
মাত্র। এ এক মাসের মধ্যে বিরাজমান সমস্যাগুলোর সমাধান হবে-এটা প্রত্যাশা
করাও ভুল। মোদি সরকারের নিজের প্রচুর সমস্যা রয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে
রাজ্যের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। মমতা
ব্যানার্জি নিঃসন্দেহে মোদির জন্য মাথাব্যথার একটা কারণ। মমতাকে উপেক্ষা
করে মোদি কোনো কিছুই করবেন না। তবে সুষমা স্বরাজ একটা প্রত্যাশা জাগিয়ে
গেলেন। ধারণা করছি, চলতি বছরের কোনো এক সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে
যাবেন। আগামী দুই থেকে তিন মাস মোদি ব্যস্ত সময় পার করবেন। তিনি ব্রিকস
সম্মেলনে যোগ দেবেন। অতঃপর তিনি জি-২০ সম্মেলনে যাবেন। মাঝখানে তার টোকিও
যাওয়ার কথা। সেপ্টেম্বরে যাবেন নিউইয়র্ক। এর আগে শেখ হাসিনার জন্য সময় বের
করা হবে কঠিন একটি কাজ।
সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরে বাংলাদেশ খুব
বেশি কিছু পায়নি বটে; কিন্তু তিনি একটা প্রত্যাশা জাগিয়ে গেলেন। এখন
বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে থাকবে মোদি সরকারের পরবর্তী কর্মকান্ডের ওপর।
বিরাজমান সমস্যাগুলোর ব্যাপারে মোদি সরকার যদি বাস্তবমুখী কোনো পদক্ষেপ
নেয়, তা মোদির জনপ্রিয়তাকে বাংলাদেশে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এখন দেখার
পালা মোদি সরকার কী পদক্ষেপ নেয়।
Daily ALOKITO BANGLADESH
03.07.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment