গত ১ অক্টোবর স্পেনের প্রদেশ কাতালোনিয়ায় অনুষ্ঠিত
গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় পড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতি এখন নতুন একটি মোড়
নিল। গেল সপ্তাহে জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনে নব্য নাজি পার্টি হিসেবে খ্যাত ‘অলটারনেটিভ ফর
জার্মানি’ পার্টির বিজয়ে এবং পার্লামেন্টে তৃতীয় বৃহত্তম পার্টি
হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর সারা ইউরোপ যখন উৎকণ্ঠিত, ঠিক
তখনই এলো কাতালোনিয়ার গণভোটের খবর। গণভোটে ৯০ শতাংশ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট
দিয়েছে। আর তাই কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা কার্লস পুইগদেমন্ত বলেছেন,
১২ হাজার ৩৯৭ বর্গমাইল আয়তনের কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা এখন সময়ের
ব্যাপার মাত্র। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্বাধীনতা কি
স্পেন মেনে নেবে? কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থানই বা কী
হবে? গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় পড়ায় চরম প্রতিক্রিয়া
দেখিয়েছে স্পেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। স্পেন সরকার এর সমালোচনা করেছে এবং স্পেনের একটি
সাংবিধানিক আদালত বলেছেন, ১৯৭৮ সালের সংবিধানের ডিক্রি
অনুসারে দেশকে বিভক্ত করা যাবে না। শুধু জাতীয় সরকারই গণভোটের আয়োজন করতে পারে।
কিন্তু কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতারা স্বাধীনতার প্রশ্নে অনড়। এ
ক্ষেত্রে কাতালোনিয়া যদি স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তাহলে
স্পেন সরকার সংবিধানের ১৫৫ ধারা প্রয়োগ করতে পারে। স্পেনের পার্লামেন্ট
কাতালোনিয়ার জন্য যে স্বায়ত্তশাসন রয়েছে, তা বাতিল করতে
পারে। পার্লামেন্ট হয়তো একটা রাজনৈতিক সমাধানের দিকে যেতে পারে। কিন্তু
স্বাধীনতাকামীরা তা মানবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন।
বলা ভালো, কাতালোনিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৭৫ লাখ ২২ হাজার।
স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ মানুষ কাতালোনিয়ায় বসবাস করে। এই প্রদেশটির
রাজধানী বার্সেলোনা। বার্সেলোনার ফুটবল টিম জগদ্বিখ্যাত। স্পেনের জাতীয় আয়ের ২০
শতাংশ আসে (২৫৫.২০৪ মিলিয়ন) এই প্রদেশ থেকে। ইউরো জোনের চতুর্থ বড় অর্থনৈতিক শক্তি
হচ্ছে স্পেন। এখন কাতালোনিয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন যদি শক্তিশালী হয়, যদি সত্যি সত্যিই কাতালোনিয়া ইউরোপে নতুন একটি রাষ্ট্র হিসেবে
আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে তা ইউরোপের অন্যত্র
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আরো উৎসাহ জোগাবে।
বদলে যাচ্ছে ইউরোপের রাজনীতি। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন
থেকে বেরিয়ে গেছে। উগ্র ডানপন্থী উত্থান ঘটেছে ইউরোপে, যারা নতুন করে
ইউরোপের ইতিহাস লিখতে চায়। ফ্রান্সে উগ্র ডানপন্থী উত্থানের পাশাপাশি এখন
জার্মানিতে উগ্র ডানপন্থী তথা নব্য নাজি উত্থান ইউরোপের রাজনীতি বদলে দিতে পারে।
ভয়টা হচ্ছে জার্মানিতে এএফডির উত্থান নিয়ে। এরা পার্লামেন্টে থাকায় উগ্রবাদ
বিস্তার ঘটবে। এটা বড় ধরনের ঘটনা নিঃসন্দেহে। নির্বাচনে নব্য নাজি পার্টি হিসেবে
পরিচিত অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (AFD) পার্টি প্রথমবারের
মতো পার্লামেন্টে যাওয়ায় তা শুধু একটি বড় ধরনের ঘটনারই জন্ম দেয়নি, বরং ইউরোপের সনাতনপন্থী রাজনীতিবিদদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। চিন্তাটা
হচ্ছে উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান। এই ডানপন্থী উত্থান এরই মধ্যে ইউরোপে অনেক দেশে
বিস্তৃত হয়েছে। জার্মানি বড় দেশ। বড় অর্থনীতি। বলা যেতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে
ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পর জার্মানিই হচ্ছে ইউরোপের নেতা। এখন সেই জার্মানিতেই
যদি নব্য নাজিবাদের উত্থান ঘটে, তা যে একটা খারাপ সংবাদ
বয়ে আনল, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। এএফডির জন্ম মাত্র
চার বছর আগে, ২০১৩ সালে। মূলত মুসলমান বিদ্বেষ আর
ব্যাপকহারে জার্মানিতে শরণার্থী আগমনকে কেন্দ্র করে (২০১৫ সালে ১৩ লাখ সিরীয়-ইরাকি
শরণার্থীর জার্মানি প্রবেশ) এই দলটির জন্ম হয়। এরই মধ্যে তারা জার্মানির ১৬টি
প্রদেশের মধ্যে ১৩টি প্রদেশ পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছে। আরো মজার বিষয় হচ্ছে,
সাবেক পূর্ব জার্মানি, যেখানে একসময়
সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা চালু ছিল, সেখানে এই দলটির
(এএফডির) প্রতিপত্তি এখন বেশি। চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল নিজেও পূর্ব
জার্মানি থেকে এসেছেন।
নির্বাচনে এএফডি ১২ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে
পার্লামেন্টে ৯৪টি আসন (মোট আসন ৭০৯) নিশ্চিত করেছে। সংখ্যার দিক থেকে ৯৪টি আসন
খুব বেশি নয়। কিন্তু ভয়টা হলো, ইউরোপের প্রতিটি দেশে উগ্র ডানপন্থীরা একটি শক্ত
অবস্থান নিয়েছে। যেমন—অস্ট্রিয়ায় ফ্রিডম পার্টি ভোট পেয়েছে ৩৫.১ (২০১৬), বেলজিয়ামে নিউ
ফ্লেমিস অ্যালায়েন্স ২০.৩ শতাংশ (২০১৪), ব্রিটেনে ইউকেআইপি ১২.৭ শতাংশ (২০১৫),
ডেনমার্কে পিপলস পার্টি ২১.১ শতাংশ (২০১৫), ফিনল্যান্ডে ফিনস পার্টি ১৭.৭ শতাংশ (২০১৫), ফ্রান্সে
ন্যাশনাল ফ্রন্ট ২৭.৭ শতাংশ (২০১৫), হাঙ্গেরিতে
ফিডেস-কেডিএনপি ৪৪.৮ শতাংশ (২০১৪), হল্যান্ডে পার্টি অব
ফ্রিডম ১৩.১ শতাংশ (২০১৭), পোল্যান্ড ল অ্যান্ড জাস্টিস
পার্টি ৩৭.৬ শতাংশ (২০১৫), স্লোভাকিয়ায় ন্যাশনাল পার্টি
৮.৬ শতাংশ (২০১৬), সুইডেনে ডেমোক্রেটস ১২.৯ শতাংশ (২০১৪)
কিংবা সুইজারল্যান্ডে পিপলস পার্টি ২৯.৪ শতাংশ (২০১৫)। এখন এসব
উগ্র দক্ষিণপন্থী দলগুলোর তালিকায় যুক্ত হলো এএফডির (জার্মানি) নাম। অথচ এই দলটি
২০১৩ সালে পেয়েছিল মাত্র ৪.৭ শতাংশ ভোট। ফলে পার্লামেন্টে তাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল
না। ৫ শতাংশ ভোটের দরকার হয় পার্লামেন্টে যেতে। এই উগ্র ডানপন্থী উত্থান এখন
ইউরোপের জন্য একটা হুমকি। এর প্রভাব ইউরোপের অন্য দেশগুলোয় পড়বে এটা স্বাভাবিক।
ফ্রান্স ও ইতালিতে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা সক্রিয়। এরা সবাই মিলে ইউরোপে উগ্র দক্ষিণপন্থী
উত্থানের জন্ম দিতে পারে। তাই এএফডির উত্থান জার্মানির জন্য কোনো ভালো সংবাদ বয়ে
আনবে না।
এএফডি চাচ্ছে ইউরো জোন থেকে জার্মানি বেরিয়ে আসুক।
এটা নিশ্চয়ই মার্কেল করবেন না। কিন্তু তিনি ‘চাপে’ থাকবেন। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয়
ইউনিয়নের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কিছু সংস্কার আসতে পারে। ইইউতে জার্মানি বড় দেশ।
দেশটির যেকোনো সিদ্ধান্ত ইইউর রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। দক্ষিণপন্থীদের ব্যাপক
উত্থান পুরো ইউরোপের চেহারা ভবিষ্যতে বদলে দিতে পারে। শরণার্থী ইস্যুকে কেন্দ্র
করে ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে গেছে। নির্বাচনে টেরেসা মে সেখানে সুবিধা করতে
পারেননি। তিনি অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন আরেকটি দলের ওপর। এখন অ্যাঙ্গেলা
মার্কেলের অবস্থা হতে যাচ্ছে তেমনটি। কট্টরপন্থী এএফডিকে ব্যালান্স করার জন্য
তাঁকে এখন দুটি বড় দল ও কোয়ালিশন পার্টনার এফডিপি ও গ্রিন পার্টিকে ছাড় দিতে হবে।
এই দল দুটির মধ্যেও তাঁকে সমন্বয় করতে হবে। তিনি যদি ব্যর্থ হন, তাহলে নয়া নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু এই ঝুঁকিটি এই মুহূর্তে কোনো
দলই নিতে চাইবে না। কেননা, দ্রুত আরেকটি নির্বাচন মানে
এএফডিকে আরো সুযোগ করে দেওয়া। নয়া নির্বাচন এএফডিকে একটি দর-কষাকষি অবস্থানে নিয়ে
যেতে পারে। এমনকি ক্ষমতাসীন সিডিইউ-সিএসইউকে বাধ্য করতে পারে গ্রিন পার্টিকে বাদ
দিয়ে তাদের কোয়ালিশন সরকারে নিতে! শুধু তা-ই নয়, সিডিইউয়ের
নেতৃত্ব থেকে মার্কেল সটকে পড়তে পারেন।
আগামী ২৪ অক্টোবর পার্লামেন্টের অধিবেশন বসছে।
মার্কেল চ্যান্সেলরের দায়িত্ব নেবেন। মোট চারবার তিনি জার্মানিকে নেতৃত্ব দেওয়ার
সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা। তিনি কনরাড অ্যাডেনাওয়ার, হেলমুট কোল কিংবা
উইলি ব্রান্ডের নামের তালিকায় নিজের নামটি অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হলেন বটে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দ্রুত বদলে যাচ্ছে ইউরোপের
রাজনীতি। কট্টর দক্ষিণপন্থী উত্থান ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের উত্থান এই
শক্তিকে আরো শক্তিশালী করেছে। এখন দেখার পালা জার্মানিতে উগ্র ডানপন্থীর উত্থান
অন্য দেশগুলোতে কতটুকু প্রভাব ফেলে। ফ্রান্সে যে প্রত্যাশা নিয়ে ম্যাক্রো ক্ষমতায়
এসেছিলেন, সেই প্রত্যাশায় ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর
জনপ্রিয়তা কমছে। মে মাসে তাঁর জনপ্রিয়তা যেখানে ছিল ৬২ শতাংশ, আগস্টে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে (টাইম, অক্টোবর ৯, ২০১৭)। তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ
রাস্তায় নেমেছে গত ২৩ সেপ্টেম্বর। বড় বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে। ফ্রান্সে এসে লক্ষ
করলাম, ম্যাক্রোর ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা কমছে।
ফ্রান্সের রাজনীতি দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণ করেছে একদিকে মধ্যপন্থী ডানরা, আর মধ্যপন্থী বামরা। এই দুটি বড় রাজনৈতিক দলের আদর্শ মানুষকে টানতে
পারেনি। তাই নির্বাচনে (প্রেসিডেন্ট) তারা ম্যাক্রোকে বেছে নিয়েছিল। ম্যাক্রো
মাত্র দুই বছর আগে একটি দল গঠন করে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়েছিলেন। তাঁর তারুণ্য,
স্পষ্ট বক্তব্য মানুষ গ্রহণ করেছিল। এখন ম্যাক্রো যদি ব্যর্থ হন,
তাহলে লি পেনের উত্থানকে ঠেকানো যাবে না। সমস্যা আছে ইতালিতেও।
একটি ভঙ্গুর সরকার সেখানে রয়েছে, যেকোনো সময় এই সরকারের
পতন ঘটতে পারে। কমেডিয়ান বেপ্পে গ্রিল্লও এবং তাঁর নবগঠিত দল ‘ফাইভ স্টার মুভমেন্ট’-এর উত্থান ইতালির
সনাতন রাজনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এই দলটি শরণার্থীবিরোধী এবং ইউরোপীয়
ইউনিয়নবিরোধী। এরই মধ্যে ইতালি ৮০ হাজারের ওপরে শরণার্থী গ্রহণ করেছে। এই শরণার্থী
আগমন ইতালির রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে। জন্ম হচ্ছে নব্য নাজি পার্টির।
শরণার্থীদের ব্যাপকহারে ইউরোপে প্রবেশ শুধু জার্মানি, ফ্রান্স আর ইতালির
রাজনীতিকেই বদলে দেয়নি, বরং পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক রিপাবলিক আর স্লোভাকিয়ার
রাজনীতিকেও বদলে দিয়েছে। শরণার্থীরা যখন ইউরোপে ব্যাপকহারে প্রবেশ করতে শুরু করে,
তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক ধরনের ‘কোটা সিস্টেম’ আরোপ করেছিল। ওই কোটা
সিস্টেমে প্রতিটি দেশকে শরণার্থী গ্রহণে নির্দিষ্ট কোটা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু
পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক ও
স্লোভাকিয়া তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রতিটি দেশকে ১১ হাজার করে শরণার্থী নিতে
বলা হয়েছিল। কিন্তু এই দেশগুলো তা মানেনি। এমনকি হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া ইউরোপিয়ান
কোর্ট অব জাস্টিসে আবেদন করলে তা বাতিল হয়। এসব
দেশে শরণার্থীদের ব্যাপক অভিবাসনকে কেন্দ্র করে যেমনি একদিকে দক্ষিণপন্থী উগ্র
জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটেছে, অন্যদিকে ইউরোপীয়
ইউনিয়নবিরোধী মনোভাবও শক্তিশালী হচ্ছে।
বদলে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতি। নতুন নতুন
রাজনীতিবিদের উত্থান ঘটছে ইউরোপে, যাঁরা তথাকথিত ‘পপুলিজম’-এর কারণে জনপ্রিয় হচ্ছেন। সস্তা
স্লোগান, জাতীয়তাবোধের ধারণা তাঁদের জনপ্রিয় করছে।
একসময়ের ট্র্যাডিশনাল রাজনৈতিক দলগুলো চলে গেছে পেছনের সারিতে। লিপেন, উইলডাস, গ্রিল্লাও, ভিক্টর
উরবান—এই নামগুলো এখন ইউরোপের রাজনীতিতে বারবার আলোচিত হচ্ছে। হল্যান্ডে গ্রিয়াট
উইলডার্সের দল নির্বাচনে সনাতন রাজনৈতিক দলগুলোকে পেছনে ঠেলে দ্বিতীয় হয়েছিল, অনেকটা ফ্রান্সের
মিরিয়ান লি পেনের মতো। লি পেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (ফ্রান্সে) দ্বিতীয় হয়েছিলেন।
তাঁদের সবার মধ্যে একটা মিল আছে। তাঁরা সবাই মুসলমান তথা শরণার্থীবিরোধী। তাঁরা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধারণারও বিরোধী। উগ্র জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ দ্বারা সবাই চালিত।
তাই সংগত কারণেই যে প্রশ্নটি ওঠে, তা হচ্ছে এই উগ্র
জাতীয়তাবাদী চেতনা ইউরোপকে কোথায় নিয়ে যাবে? ২৮টি দেশ
নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত। লোকসংখ্যা প্রায় ৫১০ মিলিয়ন। ১৯৯৯ সালে একক মুদ্রার
(ইউরো) সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর হয় ২০০২ সালে। যদিও মাত্র ১৯টি দেশ ইউরো চালু
করেছে নিজ দেশের মুদ্রাকে অবলুপ্ত করে। ১৯৫১ সালে প্যারিস চুক্তির মধ্য দিয়ে
ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি তার যাত্রা শুরু করলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসেবে
আত্মপ্রকাশ করে ১৯৯৩ সালে। ১৬ দশমিক ৪৭৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ইইউর যে অর্থনীতি,
তা বিশ্বের জিডিপির প্রায় ২৩ শতাংশ। বড় অর্থনীতির এই সংস্থাটি
বিশ্ব আসরে এত দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। এখন এতে বিভক্তি আসছে।
তৈরি হচ্ছে নানা জটিলতা। এই জটিলতা, বিভক্তি, দ্বন্দ্ব ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটাই
বড় প্রশ্ন এখন।
0 comments:
Post a Comment