রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কিউবায় আদৌ কি পরিবর্তন আসবে


আন্তর্জাতিক রাজনীতির ডামাডোলের মধ্য দিয়ে গত ২ জুন কিউবায় একটি পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিউবার পার্লামেন্ট একটি বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হয়ে সদ্যবিদায়ী প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ত্রোকে সংবিধান পরিবর্তনের লক্ষ্যে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে, তার প্রধান করা হয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল (২০১৮) ক্যাস্ত্রো ৮৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার ছেড়ে দেন তার চেয়ে ২৮ বছরের ছোট মিগেল ডিয়াজ-ক্যানালের হাতে। তখন থেকেই বলা হচ্ছিল যে কিউবা কি তার কট্টরপন্থি সমাজতান্ত্রিক মতবাদ ধরে রাখবে, নাকি অর্থনীতিতে সংস্কার আনবে? অর্থনীতিতে সংস্কার আনতে হলে সংবিধানে কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার। আর সে লক্ষ্যেই কিউবার সংসদ একটি কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু রাউল ক্যাস্ত্রোকে কমিশনের প্রধান, আর বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা ও বিপ্লবী জোসে রামোন মাকাদো ভেন্টুরাকে (৮৭ বছর বয়স) কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনায় যে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না, তা-ই নির্দেশ করে। তবে অর্থনীতিতে কিছু কিছু পরিবর্তন হতে পারে বলে পশ্চিমা সংবাদপত্রগুলো আভাস দিচ্ছে। আর্টেমিসা ও মায়াকেবিউ প্রদেশে স্থানীয় সরকার পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে একটি পাইলট প্রজেক্ট আছে। সংবিধান পরিবর্তন এনে এর বৈধতা দেওয়া হবে, রাষ্ট্রীয় শীর্ষপর্যায়ের নেতারা দুই টার্মের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবে না এবং নেতাদের বয়স নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবেÑ এমন কথা ক্যাস্ত্রো এর আগে সংসদে বলেছিলেন। এখন সংবিধানে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এতে রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে না। আর বড় ধরনের পরিবর্তন যদি না আসে, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
রাউল ক্যাস্ত্রোর ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া কিংবা মিগেল ডিয়াজ ক্যানেলের ক্ষমতা গ্রহণ নানা প্রশ্নের জন্ম দিতে বাধ্য। কোন পথে এখন হাঁটবে কিউবা? যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কি আদৌ উন্নতি ঘটবে? মিগেল ডিয়াজ ক্যানেল ক্যাস্ত্রো অনুসৃত নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন কতটুকুÑ এসব প্রশ্ন এখন বারবার উচ্চারিত হবে। বারবার আলোচিত হতে থাকবে। তবে এটা বলতেই হয়, মিগেল ডিয়াজ ক্যানেল রাউল ক্যাস্ত্রোর খুব ঘনিষ্ঠজন। ব্যক্তি এখানে একটি ফ্যাক্টর। তিনি রাউল ক্যাস্ত্রোর প্রভাবের বাইরে যেতে পারবেন না। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত ধাঁচের সমাজতন্ত্রের পতনের রেশ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন সমাজতন্ত্রের পতন ঘটল, তখন বলতে গেলে সারা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল কিউবার দিকে। কেননা কিউবা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম মিত্র। স্নায়ুযুদ্ধকালীন কিউবা সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী একটা অবস্থান নিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে বলা হয়েছিল, কিউবা কি আদৌ অর্থনৈতিকভাবে দাঁড়াতে পারবে? কেননা কিউবার অর্থনীতির অন্যতম উৎস ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। এক্ষেত্রে তখন বলা হয়েছিল, কিউবা অর্থনৈতিকভাবে দাঁড়াতে পারবে না। কিউবার কমান্ড অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। কিউবার অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি সত্য; কিন্তু অর্থনীতিতে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বে সমাজতন্ত্রের পতনের পর দুটি বড় সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন ও ভিয়েতনামে অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। চীন ও ভিয়েতনাম এখন আর ধ্রুপদী মার্কসবাদ অনুসরণ করে না। তাদের অর্থনীতিতে বাজার অর্থনীতির বেশকিছু মৌলিক ‘এলিমেন্ট’ প্রবেশ করেছে। ব্যক্তিগত খাত, বিদেশি বিনিয়োগ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শেয়ারবাজার ইত্যাদি এখন এই দুটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তারা এখন অর্থনৈতিক এই বিবর্তনকে বলছে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি। তাতে তারা ফলও পেয়েছে। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি। চীনের অর্থ ও উৎপাদনসামগ্রী এখন বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। এক্ষেত্রে কিউবায়ও কিছু কিছু পরিবর্তন এসেছে। তবে চীনের মতো অতটা ব্যাপক নয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন অনেক দিন ধরেই চাচ্ছে, কিউবা আরও ‘উন্মুক্ত’ হোক। কিন্তু কিউবার নেতৃত্বে এখনও সবকিছু ‘উন্মুক্ত’ করে দেননি। দেশের অর্থনীতির শতকরা ৮০ ভাগ এখনও সরকার নিয়ন্ত্রিত। কিছু কিছু ব্যবসা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে এ সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার। বেসরকারি খাত সম্প্রসারণের আরও সুযোগ রয়েছেÑ বিশেষ করে ট্যুরিজম খাতে। এই খাত কিছুটা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আরও উন্মুক্ত করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের হোটেল চেইন ব্যবসায়ীরা এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। কিউবায় সীমিত আকারে ডলার বাণিজ্য হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কিউবান-আমেরিকানরা এখন নিয়মিত কিউবায় ডলার পাঠাচ্ছে। কিউবায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এতদিন ভেনিজুয়েলা থেকে যে স্বল্পমূল্যে জ্বালানি পেত, তা এখন আর আগের মতো আসছে না। কিউবায় তেমন একটা বিনিয়োগও আসছে না। মার্কিন বিনিয়োগ বলতে গেলে বন্ধের কোঠায়। সবচেয়ে বড় কথা, কিউবা-আমেরিকা সম্পর্কে তেমন উন্নতি ঘটছে না। একটি বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। তিনি কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি নিজে হাভানায় গিয়েছিলেন। হাভানায় ফের মার্কিন দূতাবাস খোলা হয়েছিল। তিনি অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওবামা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি কিউবাকে রাষ্ট্র পরিচালিত সন্ত্রাসবাদের তালিকা থেকে বাদ দেবেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বদলে দিলেন সবকিছু। তিনি দাবি জানালেন কিউবায় আরও বেশি গণতন্ত্রায়নের।
কিউবার বড় সমস্যা তার নিরাপত্তাহীনতা। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই কিউবায় একটি সমাজতান্ত্রিক সরকারকে স্বীকার করে নেয়নি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবার এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র কিউবা বিপ্লবের মাত্র দুই বছরের মধ্যে ১৯৬১ সালে ভাড়াটে কিউবানদের দিয়ে কিউবা সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়। সিআইএর অর্থে পরিচালিত এই অভিযান ‘বে অব পিগ্স’ নামে পরিচিত। বলাবাহুল্য, ওই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেমে থাকেনি। ঠিক এর পরের বছর, ১৯৬২ সালের অক্টোবরে কিউবা সংকট একটি পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল, কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে, এটা বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি নৌ অবরোধ আরোপ করেছিল, যাতে সমুদ্রপথে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র কিউবায় সরবরাহ করা না হয়। ওই সমুদ্র অবরোধ যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি পারমাণবিক যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন দাবি করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্ক থেকে তাদের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে নিতে হবে। দীর্ঘ ১৩ দিন ওই সমুদ্র অবরোধ বহাল ছিল। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ক থেকে মিসাইল প্রত্যাহার করে নিলে সোভিয়েত ইউনিয়নও কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সরিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে গেলেও সংকট থেকে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র কিউবার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে এই অর্থনৈতিক অবরোধের বিরুদ্ধে কিউবা যুদ্ধ করে আসছিল। এতে কিউবার অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু প্রবল ‘চাপ’ এর মুখে থেকেও কিউবা তার সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে গেছে। এমনকি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে কিউবা ছিল একটি আদর্শ। পৃথিবীর যেখানেই শোষণ হয়েছে, অত্যাচার হয়েছে, সেখানেই ফিদেল ক্যাস্ত্রো আর কিউবার নাম বারবার উচ্চারিত হয়েছে। বাংলাদেশের তরুণদের মাঝেও চে গুয়েভারা ও ফিদেল ক্যাস্ত্রো ছিলেন সমান জনপ্রিয়। শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই দুই ব্যক্তিত্ব বারবার আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
কিউবার বিপ্লবের এত বছর পর সেখানে এই প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়েছে এমন একজনের কাছে, যিনি ক্যাস্ত্রো পরিবারের বাইরে। ক্যাস্ত্রো পরিবারের সদস্যরা কিউবায় আছেন। তাদের সন্তানরা কেউ সেনাবাহিনীতে, কেউ পার্টিতে। কিন্তু রাউল ক্যাস্ত্রো এদের কাউকে সামনে নিয়ে আসেননি; নিয়ে এসেছিলেন মিগেল ডিয়াজ কানেলকে। ৮৬ বছর বয়স হয়েছিল রাউল ক্যাস্ত্রোর। তিনি ইচ্ছে করলে আরও কিছুদিন থাকতে পারতেন। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছেÑ রাউল একসময় চিন্তা করেছিলেন, তিনি আরও দু-টার্ম থাকবেন (৫ বছর করে) এবং এরপর মিগেল ডিয়াজ দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা তিনি পরিত্যাগ করেছিলেন। দু-বছর আগেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ২০১৮ সালের এপ্রিলের পার্লামেন্ট অধিবেশনেই তিনি পদত্যাগ করবেন এবং করলেনও তা-ই। ফিদেল ক্যাস্ত্রো জীবিত থাকাকালে রাউল ক্যাস্ত্রো তার পাশাপাশি থেকেছেন। ফিদেল তাকেই উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। যদিও এটা ঠিক, কিউবার বিপ্লবে রাউল ক্যাস্ত্রোরও একটি ভূমিকা ছিল। কিন্তু মিগেল ডিয়াজ কানেল বিপ্লবে অংশ নেননি। তার পরও রাউল ক্যাস্ত্রোই তাকে বেছে নিয়েছিলেন। এখন যে প্রশ্নটি পশ্চিমাবিশ্বে উঠেছে, তা হচ্ছেÑ মিগেল ডিয়াজ কানেল কি রাউলের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবেন, কিংবা সংস্কারের ব্যানারে তিনি কতটুকু ‘কমিটেড’ হবেন? রাউল ক্যাস্ত্রো বিদায় নিয়েছেন বটে; কিন্তু অত্যন্ত ক্ষমতাবান সেনাবাহিনী ও পার্টিপ্রধান হিসেবে তিনি আছেন ২০২২ সাল পর্যন্ত। এর অর্থ নয়া প্রেসিডেন্ট মিগেল রাউল ক্যাস্ত্রোর প্রভাবের বাইরে যেতে পারবেন না। তিনি যদি আরও বেশি সংস্কারের উদ্যোগ নেন, সে ক্ষেত্রে রাউলের সমর্থনের তার প্রয়োজন হবে। রাউল ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হিসেবে থেকে যাচ্ছেন। এটাও ঠিক আছে। এই মুহূর্তে তিনি যদি পার্টিপ্রধান হিসেবেও পদত্যাগ করেন, তাহলে পার্টিতে কোন্দল দেখা দিতে পারে। পার্টির জন্য তা কোনো ভালো খরব নয়। প্রকাশ্যে পার্টির ভেতরকার কোনো দ্বন্দ্বের খবর আমরা জানি না। পার্টিতে যারা সিনিয়র, যারা কিউবার বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ বেঁচে আছেন সত্য। এরা সংস্কারের ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন। রাউল ক্যাস্ত্রোর মেয়ের জামাই (যিনি সেনাবাহিনীর জেনারেল) সম্পর্কেও পশ্চিমাবিশ্বে একটা কথা বলা হয়, যিনি উচ্চাকাক্সক্ষী ও ক্ষমতালিপ্সু! যদিও তার অতি আগ্রহের কথা সংবাদপত্রে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। এর অর্থ পরিষ্কার, মিগেল ডিয়াজ কানেল দু-টার্মের (১০ বছর) জন্য ক্ষমতায় এলেন। দুটি বিষয় আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণÑ এক. যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষমতাবদলকে কোন দৃষ্টিতে দেখবে এবং কিউবার ব্যাপারে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির আদৌ পরিবর্তন হবে কি না? দুই. কিউবার আরও বেশি অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে এই মুহূর্তে নিয়ে যাবে কি না? কিউবার ব্যাপারে ওবামা প্রশাসন একটি ‘নরম’ অবস্থানে গিয়েছিল। রিপাবলিকানদের চাপের মুখেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার। তিনি নিজে কিউবায় গিয়েছিলেন। কিন্তু কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার যে উদ্যোগ, তা তিনি নিতে পারেননি। এখন ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে পুরো উল্টো পথে হাঁটছেন। রাউল ক্যাস্ত্রো সম্পর্কেও তিনি নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তার দাবি কিউবায় আরও বেশি গণতন্ত্রায়ন। তিনি চান কিউবা আরও বেশি উন্মুক্ত করে দিক। এটা বোধহয় কিউবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। আরও বেশি তথাকথিত গণতন্ত্রায়নের অর্থ হচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা কমানো বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও তাদের প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে সুযোগ করে দেওয়া। কিউবার নয়া নেতৃত্ব এটি করবে বলে মনে হয় না। ফলে কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যে পর্যায়ে রয়েছে, সে রকমই রয়ে যাবে। তবে ধীরে ধীরে সংস্কারের পথে যেতে হবে কিউবাকে। এটা ছাড়া কিউবার কোনো বিকল্প নেই। রিফর্ম ছাড়া কিউবার সঙ্গে পশ্চিমাবিশ্বের সম্পর্ক উন্নত হবে না। কিউবার প্রচুর সম্ভাবনা আছে। কিউবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা জগদ্বিখ্যাত। দক্ষ জনশক্তি কিউবা গড়ে তুলতে পারে, যা কিউবার বৈদেশিক আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে। পশ্চিম ইউরোপে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি রয়েছে। এটি পূরণ করতে পারে কিউবা। এখন সত্যিকার অর্থেই দেখার পালা, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রাউল ক্যাস্ত্রো সংবিধানে কতটুকু পরিবর্তন আনেন? হ
ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Alokito Bangladesh
25.06.2018

0 comments:

Post a Comment