রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ট্রাম্প-কিম ঐতিহাসিক বৈঠক কী পেল বিশ্ব?



প্রিন্টমন্তব্য()

গত সোমবার সিঙ্গাপুরের দক্ষিণের রিসোর্ট দ্বীপ সেন্টোসার ক্যাপিলা হোটেলে ঐতিহাসিক ট্রাম্প-কিম বৈঠকের পর যে প্রশ্নটি এখন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা করেছেন, তা হচ্ছে এই বৈঠক থেকে কী পেল বিশ্ব? অনেক প্রশ্ন এরই মধ্যে উচ্চারিত হয়েছে এবং চটজলদি এর কোনো জবাব পাওয়া যাবে বলেও মনে হয় না। সারা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল এই ঐতিহাসিক ‘সামিট’-এর দিকে। কয়েক মাস আগেও যা ছিল অসম্ভব, তা সম্ভব করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। কোরীয় যুদ্ধের অবসানের পর বোধ হয় এটাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যেখানে উত্তর কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বৈঠক করলেন। উত্তর কোরিয়া রাষ্ট্রটি আত্মপ্রকাশের পর এই প্রথম উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতা একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করলেন। কিন্তু এই বৈঠক আদৌ কি কোনো ফল বয়ে আনবে, নাকি শুধু একটি ‘ফটোসেশনের’ মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
প্রায় ঘণ্টাখানেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর কিম জং উন একান্তে কথা বলেছেন শুধু তাঁদের দোভাষীদের নিয়ে। পরে যোগ দেন দুই দেশের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। বৈঠকের পর ট্রাম্প বললেন, ‘বৈঠক খুব ভালো হয়েছে। সব সমালোচনা, অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের সম্পর্ক দারুণ।’ আর কিমের স্বীকারোক্তি ‘আমরা শান্তির লক্ষ্যে কাজ করব।’ তবে দিনটি যে সহজ ছিল না, এ কথাটা জানাতেও কিম ভুল করেননি। মিডিয়ায় খবর হয়েছে কিম বলেছেন, ‘অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেক পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা সব সমস্যা কাটিয়ে উঠে আজ এই আলোচনার টেবিলে বসেছি।’ মূল বিষয় ছিল একটিই—উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বলে যে ‘শিগগিরই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ শুরু করবে উত্তর কোরিয়া।’ প্রশ্নটি সেখানেই—কোরীয় উপদ্বীপ কি সত্যি সত্যি একটি পরমাণু বোমামুক্ত অঞ্চলে পরিণত হতে যাচ্ছে? ট্রাম্প ও কিম দুজনই সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে ‘একটি বড় সমস্যার সমাধান হলো।’ দুই দেশের মাঝে সম্পর্ক উন্নতির জন্য আগামী দিনে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষরের কথাও বললেন দুই নেতা।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের মূল টার্গেট ছিল একটিই—উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের পরিপূর্ণ ধ্বংস। কেননা যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এই পারমাণবিক অস্ত্র তার নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। গেল বছরের শেষের দিকে উত্তর কোরিয়া একের পর এক আন্তর্মহাসাগরীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক ধরনের বিবাদে জড়িয়ে গিয়েছিল। একপর্যায়ে দেশটি গুয়ামে (যুক্তরাষ্ট্র) পারমাণবিক বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিল। পেন্টাগনের সিনিয়র জেনারেলরা নিশ্চয়ই এটি ভুলে যাননি। সুতরাং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যেকোনো আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের এটিই অগ্রাধিকার ছিল উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করবে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া কি তা করবে? বর্তমান বিশ্বে আটটি দেশ রয়েছে, যারা ঘোষিত পারমাণবিক শক্তি। এর বাইরে ইসরায়েলকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ইসরায়েল উত্তর কোরিয়ার মতো পারমাণবিক দেশ হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেনি। ইতিহাস বলে, ১৯৮০ ও ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম দেশ; যে দেশটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব ধরনের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। আর কোনো দেশ তা করেনি। এখন উত্তর কোরিয়া কি তা করবে? যুক্তরাষ্ট্রের একজন পারমাণবিক গবেষক ও ইতিহাসবিদ, যিনি নিউ জার্সির স্ট্রেভেনস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সঙ্গে জড়িত, তিনি বলেছেন উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে এ রকম না-ও ঘটতে পারে। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই উত্তর কোরিয়ার ও তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার একটি মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উভয় দেশই শত্রু দেশ দ্বারা ঘেরাও অবস্থায় ছিল বা রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, যেখানে মোতায়েন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রেও এমনটি ছিল। সত্তর ও আশির দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনামলে দেশটি এমন সব দেশ দ্বারা ‘হুমকির’ মুখে ছিল, যারা দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতাকামীদের পেছনে ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিউবানদের উপস্থিতি ছিল আফ্রিকায়। ফলে একপর্যায়ে দক্ষিণ কোরিয়া তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে পারমাণবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। কিন্তু এই কর্মসূচি যে আদৌ প্রয়োজন ছিল না, এ কথা বর্ণবাদী আমলের প্রেসিডেন্ট ডি ক্লার্ক পরে স্বীকারও করেছিলেন। ফলে একপর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা তার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করে। উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে যেটি বড় সমস্যা, তা হচ্ছে তার নিরাপত্তাহীনতা। উত্তর কোরিয়া মনে করে তারা এক ধরনের ‘আগ্রাসনের’ মুখে আছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন বিশাল মার্কিন বাহিনী উত্তর কোরিয়ার জন্য এক ধরনের নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করেছে। এখন দুই কোরিয়ার মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু এতে বরফ কি গলবে? একটি আস্থার সম্পর্ক কি সৃষ্টি হবে? উত্তর কোরিয়া এরই মধ্যে একটি পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করে দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। কিন্তু যেতে হবে অনেক দূর। এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন বলেন,  ‘শিগগিরই উত্তর কোরিয়া পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ শুরু করবে’ তখন একটি প্রশ্ন থাকে বৈকি যে উত্তর কোরিয়াকে কী আশ্বাস দেওয়া হয়েছে? মার্কিন কর্মকর্তারা এর আগে স্পষ্ট করেই বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে না। এটি কি উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে? যত দিন দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সেনা থাকবে তত দিন উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। সুতরাং প্রশ্নটি সেখানেই, ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে সিঙ্গাপুরে কী নিশ্চয়তা দিলেন? জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও একটি ফ্যাক্টর। এই দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের কথা হয়েছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই উত্তর কোরিয়া নিরাপত্তা চাইবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কিভাবে, এটি একটি বড় প্রশ্ন। উত্তর কোরিয়ার জ্বালানি সংকট রয়েছে। চীন থেকে আমদানি করা কয়লা উত্তর কোরিয়ার জ্বালানির অন্যতম উৎস। কিন্তু এখন এতে ভাটা পড়েছে। জাতিসংঘ নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে চীন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য সংকটও রয়েছে। সমঝোতার একটি ভিত্তি হবে উত্তর কোরিয়ায় জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহ করা। নিঃসন্দেহে ট্রাম্প-কিম আলোচনায় এ প্রশ্ন উঠেছে। এটি বলতেই হবে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন অনেক বদলে গেছেন। যিনি কয় মাস আগেও যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি কিভাবে হঠাৎ করে বদলে গেলেন? তাঁর ওপর সত্যি করেই কি আস্থা রাখা যায়? কিমের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পর মার্কিন সংবাদপত্রে আমি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ‘Trump-Kim statement offers scant concrete evidence to backup North Korea’s pledge to complete denuclearization.’ এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব। পরিপূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ওয়াশিংটন পোস্টের মন্তব্য, ট্রাম্প-কিম বৈঠকের সাফল্য নির্ভর করে আগামী দিনে দুই পক্ষের আলোচনায় কী ফলাফল পাওয়া যাবে তার ওপর। নিউজ উইক মন্তব্য করেছে এভাবে, Art of Deal : Is Kim Jong Un Beating  Trump at His own Game? কিম জং উনের কূটচালে কি হেরে গেলেন ট্রাম্প?  বৈঠকের পর শেনক্রোচার যে প্রবন্ধটি নিউজ উইক ম্যাগাজিনে লেখেন, এতে তিনি স্পষ্ট করেই লিখেছেন, The summit is a huge win for Kim Jong Un—কিমের জন্য বড় বিজয়। আসলেই কি এটা কিম জং উনের জন্য বড় বিজয়? বৈঠকের পর যে যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে চারটি জিনিস সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে : ১. শান্তি ও উন্নতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া কমিটেড; ২. কোরীয় পেনিনসুলায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে দেশ দুটি একসঙ্গে কাজ করবে; ৩. উত্তর কোরিয়া পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাজ করবে; ৪. কোরীয় যুদ্ধে নিহত সেনাদের দেহাবশেষ চিহ্নিত করা এবং যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের দেহাবশেষ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। এর বাইরে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সব ধরনের সামরিক অনুশীলন স্থগিত ঘোষণা করেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিসটফ লিখেছেন, It sure looks as if President Trump was hoodwinked in Singapore—প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কলা দেখানো হয়েছে! এ ধরনের মন্তব্য কী ইঙ্গিত বহন করে? সহজ করে বললে যা বলা যায়, তা হচ্ছে একটি ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছে বটে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুব বেশি কিছু আদায় করতে পারেননি। ট্রাম্প বলেছেন বটে উত্তর কোরিয়া পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাজ করবে; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কবে নাগাদ এই কাজটি উত্তর কোরিয়া সম্পন্ন করবে তার কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এমনকি যৌথ ঘোষণাপত্রেও কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এতে  দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সন্তুষ্ট হবে বলে মনে হয় না। দ্বিতীয়ত, উত্তর কোরিয়া ইউরেনিয়াম ও প্লুটোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল বা ধ্বংস করবে (যা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়), এমন কোনো কথা যৌথ ইশতেহারে নেই। অথচ ইরানের সঙ্গে যে ছয় জাতি পারমাণবিক চুক্তি হয়েছিল, যা ট্রাম্প সম্প্রতি বাতিল ঘোষণা করেছেন, তাতে ৯৮ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল বা ধ্বংস করতে ইরান কমিটেড বা দায়বদ্ধ ছিল। তৃতীয়ত, উত্তর কোরিয়ার কাছে যেসব আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা ধ্বংস করার ব্যাপারেও উত্তর কোরিয়া কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এর ফলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবে না। চতুর্থত, পারমাণবিক পর্যবেক্ষকরা আদৌ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে যৌথ ইশতেহারে কোনো কথা বলা হয়নি। নিউক্লিয়ার টেস্ট যে বন্ধ হবে, সে ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট কমিটমেন্ট নেই।
ফলে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ও তার মিত্রদের মাঝে এক ধরনের হতাশা থাকতে পারে। ট্রাম্প নিজে কংগ্রেসে তাঁর সমর্থকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন। সংগত কারণেই তাই প্রশ্ন উঠবে, কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেয়েও ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এ ধরনের ‘সমঝোতায়’ কেন গেলেন?
আসলে ট্রাম্প বড় ধরনের সংকটে আছেন। তাঁর পররাষ্ট্রনীতি এখন প্রশ্নের মুখে। ইউরোপের সঙ্গে এক ধরনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধে’ তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন। চীনের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে চীনের স্টিলের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তিনি বিবাদে জড়িয়ে গেছেন। সদ্য সমাপ্ত জি-৭ সম্মেলনেও যুক্তরাষ্ট্র একা হয়ে গেছে। জি-৭ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে ট্রাম্প স্বাক্ষর করেননি। এমনই এক পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছিল আন্তর্জাতিক আসরে তাঁর ইমেজ বৃদ্ধি করার। আর এই কাজটিই তিনি করেছেন সিঙ্গাপুরে কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করে। একটি ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছে। ভালো ফটোসেশন হয়েছে। নিয়ম রক্ষার্থে যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কোরিয়ান পেনিনসুলায় উত্তেজনা হ্রাস পাবে কি না কিংবা এ এলাকা একটি শান্তির এলাকায় পরিণত হবে কি না, সে প্রশ্ন থাকলই।
ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Kalerkontho
14.06.2018

0 comments:

Post a Comment