মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে বিশ্ব রাজনীতিতে একের পর এক যে সংকট তৈরি হয়েছে, তাতে সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’।
ট্রাম্প চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডার পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে যে নির্দেশ জারি করেছেন, তা নতুন বিশ্বব্যবস্থায় একটি বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্প ওইসব দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার নির্দেশ দিলে ওই দেশগুলোও একই পথ অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে।
ফলে একধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই বাণিজ্যযুদ্ধ শেষ অব্দি ওই দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলবে। এবং আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশও এ ‘যুদ্ধের’ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গত বেশ কয়েক মাস ধরেই এ বাণিজ্য যুদ্ধের কথা শোনা যাচ্ছিল। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা চলে আসছিল।
কিন্তু কোনো পক্ষই কোনো সমাধানে আসতে পারছিল না। একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথমে চীনা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের নির্দেশ দেন।
একইভাবে ইইউর ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। চীন ও ইইউ একই কাজ করে। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, তা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি চীনের ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। আরও ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
চীন এর জবাবে পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এশিয়ার শেয়ারবাজারে এর প্রভাব পড়ে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন চীন অবৈধভাবে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।
ট্রাম্পের মতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে এ ঘাটতি কমবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের কারণে আগামী ৬ জুলাই থেকে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার সমমূল্যের ৮১৮টি চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।
পরবর্তীকালে আরও ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্যের ওপরও (মোট ৫ হাজার কোটি ডলার) অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এর হার শতকরা ২৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ হাজার কোটি ডলার।
চীন এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত কৃষি পণ্য (সয়াবিন), গাড়ি ও সামুদ্রিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানের কথা বলছে। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি।
ট্রাম্প আরও বলেছেন বেইজিং যদি মার্কিন পণ্যে শুল্ক বসানোরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আরও শুল্ক বসাবে। স্পষ্টতই বড় ধরনের বাণিজ্যিক বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
পাঠকদের স্মরণে থাকার কথা, যুক্তরাষ্ট্র এর আগে চীন ও ইউরোপ থেকে আমদানিকৃত ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল। এর ফল স্বরূপ চীনের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
বলা ভালো, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্ক থেকে ইইউ, কানাডা ও মেক্সিকো এতদিন অব্যাহতি চেয়ে আসছিল। জুনের প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইইউভুক্ত দেশগুলোর ইস্পাত রফতানিতে ২৫ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়াম রফতানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করে।
এর মধ্য দিয়ে চীনের পাশাপাশি ইইউর সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করল। ইইউ এখন মার্কিন পণ্যের (হেভি মোটরসাইকেল, মদ ইত্যাদি) ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। ইইউর পক্ষ থেকে ডব্লিউটিও (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা)তে অভিযোগ দাখিল করার কথাও বলা হয়েছে।
জুনে কানাডায় যে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে এ বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব পড়েছিল। এখন এই বাণিজ্যযুদ্ধ যদি প্রলম্বিত হয়, তাহলে ভারতের মতো দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপের কারণে ভারতের ক্ষতি যথাক্রমে ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে শুধু চীন ও ইইউতে এর প্রতিক্রিয়া পড়বে তা নয়, বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায়ও এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্যযুদ্ধ তাতে কি যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারবে? বিষয়টি অত সহজ নয়। কিন্তু ট্রাম্পের উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বোঝাচ্ছেন যে, তারা এ ‘যুদ্ধে’ বিজয়ী হতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বলে, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে পণ্য ক্রয় করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের। আর চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনে ১৩০ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বছরে ৩৭০ বিলিয়ন ডলার। এ ঘাটতি বাড়ছেই।
ট্রাম্প অনেকদিন থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন, চীনা পণ্যের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে মানুষ বেকার হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে কি এই বেকার সমস্যার সমাধান কিংবা বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব?
একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার এখন চীনা ল্যাপটপে সয়লাব। এটি সস্তা ও মানসম্মত। এখন যুক্তরাষ্ট্র শতকরা ২৫ ভাগ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার কথা বলছে। এর ফলে চীনে তৈরি ল্যাপটপের দাম বেড়ে যাবে।
ক্ষতিগ্রস্ত হবে মার্কিন ভোক্তারা। যুক্তরাষ্ট্র নিজে কোনো ল্যাপটপ তৈরি করে না। সেখানে সব চীনা পণ্য। এমনকি ল্যাপটপের খুচরা যন্ত্রাংশ আসে চীন থেকে। আইফোনের কথা ভাবুন। যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন যথেষ্ট জনপ্রিয়।
এ আইফোন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তৈরি করে চীন। এখন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে আইফোনের দামও বেড়ে যাবে। শুধু ইলেকট্রনিকস দ্রব্যাদির কথা কেন বলি, তৈরি পোশাক, জুতা, খেলনা, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ঘরে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি- সব আসে চীন থেকে।
চীন এক বিশাল মার্কেট গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রে। আমি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেট থেকে নিউ ম্যাক্সিকো স্টেট পর্যন্ত যেখানেই গেছি, সর্বত্রই দেখেছি চীনা পণ্য। ‘ডলার শপ’গুলো মধ্যবিত্তের কাছে জনপ্রিয়। এসব ‘ডলার শপ’ চীনা পণ্যে ভর্তি।
মধ্য আয়ের মার্কিন নাগরিকদের কাছে চীনা পণ্য জনপ্রিয়। এখন সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহৃত পণ্যে শতকরা ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করা হলে এবং তাতে দাম বেড়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষই।
চীন রাশিয়া কিংবা ইরানের মতো নয় যে চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করলে দেশটি তাতে নতি স্বীকার করবে। চীনা অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চীনা অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের বড় ক্রেতা। একইসঙ্গে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেক গম, শূকরের মাংস, গরুর মাংস, মাছ আমদানি করে (চীন মোট ৬০০টির ওপর পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে থাকে)।
চীনের এ হিসাবটা এ রকম : সয়াবিন ১৩ মিলিয়ন ডলার, গাড়ি ১২ মিলিয়ন ডলার, পেট্রোলিয়াম ৩ মিলিয়ন, কেমিক্যালস ২ মিলিয়ন ডলার, কটন ২ মিলিয়ন, গম, বাদাম, মাছ ইত্যাদি ১ মিলিয়ন ডলার। এখন চীনও এসব পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলছে।
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। চীন এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন না কিনে তা ব্রাজিল থেকে কিনতে পারে। গম ও ভুট্টা কিনতে পারে আর্জেন্টিনা থেকে। মাংসও নিতে পারে সেখান থেকে।
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা যদি চীনা বাজার হারিয়ে ফেলেন, তাহলে এ বাজার যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা কোথায় পাবেন? প্রকারান্তরে তো তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
চীনের পথ ইইউ, কানাডা ও মেক্সিকোও অনুসরণ করতে পারে। তখন? প্রশাসনের ওপর তখন কি কৃষকরা প্রেসার খাটাবেন না? রাজনীতিকরা তখন ট্রাম্পের ওপর প্রেসার খাটাবেন। কংগ্রেসও প্রেসিডেন্টকে ‘চাপ’ দেবে।
চীনকে হালকাভাবে নেয়া ট্রাম্প প্রশাসনের ঠিক হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বড় কর্পোরেট হাউসগুলোর স্বার্থ রয়েছে চীনে। আমাজন, ওয়ালমার্ট, জিএমের মতো কোম্পানি যেসব পণ্য মার্কিন নাগরিকদের কাছে বিক্রি করে, সেসবের বলতে গেলে পুরোটাই আসে চীন থেকে।
অ্যাপলের পণ্য তৈরি হয় চীনে। অন্যদিকে জিএম গাড়ির কথাই ধরা যাক। এটা মার্কিন গাড়ি প্রতিষ্ঠান। জিএম গাড়ি যেখানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় ৩০ লাখ, সেখানে ৪০ লাখ গাড়ি বিক্রি হয় চীনে।
এখন জিএম চীনে তার ব্যবসা হারানোর ঝুঁকিতে থাকবে। চিন্তা করুন স্টারবাক্স কফি, কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ড, কিংবা শেরাটন, হিল্টনের হোটেল চেইনগুলো চীনে ব্যবসা করছে। এ ব্যবসা এখন বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকবে।
এরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে চীনে। চীন যদি ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তাহলে এ ধরনের ব্যবসায় ক্ষতি হবে। ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ ক্ষতি তো ওরা সহজে মেনে নেবে না।
এসব মার্কিন ব্যবসায়িক কর্পোরেট হাউসগুলোর ক্ষতির মানে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষতি। Rare Earth Element (REE)-এর কথা অনেকেই জানেন না। ১৭টি দুষ্প্রাপ্ত ধাতু (scandium, lanthanum, cerium, samarium, terbium, lutetium ইত্যাদি) জঊঊ হিসেবে পরিচিত।
এসব ধাতু শুধু চীনেই পাওয়া যায়। হাইব্রিড কার, এমআরই মেশিন, মিসাইল তৈরিতে এসব ধাতু ব্যবহার হয়। মার্কিন অস্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র তৈরিতে এসব ধাতু ব্যবহার করে।
এখন যদি চীন জঊঊ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাতে সামরিক বাহিনী তথা অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। বিশ্বের বড় সামরিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র উৎপাদনকারী লবি এটা মেনে নিতে চাইবে না।
বলা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। বিশ্বে শীর্ষ অস্ত্র উৎপাদন ও রফতানিকারক দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
অস্ত্র উৎপাদনে তারা চীনা ম্যাটেরিয়ালসের ওপর নির্ভরশীল। বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এ অস্ত্র উৎপাদনকারী খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য।
আরও একটা কথা। ‘যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে ঋণী। ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত এ ঋণের পরিমাণ ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ঋণের পরিমাণ জাপান থেকে নেয়া ঋণের (১ দশমিক ০৪ ট্রিলিয়ন ডলার) চেয়ে বেশি। এ ঋণ দিন দিন বাড়ছেই।
এই ঋণ যুক্তরাষ্ট্র কমাতে পারছে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে আরও বেশি জড়িয়ে যায়, তাহলে চীনের ঋণ একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে।
আসলে চীনের একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের যে প্রতিক্রিয়া হবে, তা চীন তার মুদ্রার (ইউয়ান) মান কমিয়ে মোকাবেলা করতে পারবে। ২৫ ভাগ হারে যুক্তরাষ্ট্র কর আরোপ করলে ১৫ ভাগ হারে মুদ্রার মান কমিয়ে দেবে চীন।
তাতে প্রতিক্রিয়া হবে কম। চীনের জনগণ অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করতে জানে, যা হয়তো আমেরিকান জনগণের জন্য মোকাবেলা করা কঠিন।
সুতরাং অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, তা চূড়ান্ত বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শুভ হবে না। ক্রিস কানথান নামে একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সব দেশের সঙ্গেই একধরনের ‘বাণিজ্য ঘাটতি’ সৃষ্টি করে।
কেননা বাণিজ্য ঘাটতি না হলে ডলার বিশ্ব মুদ্রায় পরিণত হবে না। আর বিশ্ব মুদ্রায় পরিণত না হলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বিশ্বশক্তি হিসেবেও টিকে থাকা সম্ভব হবে না (Nation of Change, June 20, 2018)।
এটাই হচ্ছে মোদ্দাকথা। চীন, ইইউ ও কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বশক্তি হিসেবে তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চাইছে। কিন্তু বিষয়টি যে খুব সুখের হবে, তা মনে হয় না।
Daily Jugantor
30.06.2018
0 comments:
Post a Comment