রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিকমতো চলছে না


উচ্চশিক্ষা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে এখন নানা অভিযোগ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সংবাদ হচ্ছে, যা একজন শিক্ষক হিসেবে আমাকে কষ্ট দেয়। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্বে নিয়োজিত, তাদের নানা কর্মকা- উচ্চশিক্ষার পরিবেশকে একটি ঝুঁকির মাঝে ঠেলে দিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম, সুশাসনের অভাব এখন যেন একটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের অনিয়ম ও শৃঙ্খলার অভাব সাম্প্রতিককালে বড় ধরনের সংবাদের জন্ম দিয়েছে। এর একটি হচ্ছে একজন উপাচার্যের নিয়মনীতি ভঙ্গ করে দিনের পর দিন ঢাকায় থাকা (৩৪০ দিনের মধ্যে ২৫০ দিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত; বাংলা ট্রিবিউন, ২০ মে), একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে মোবাইল ফোনে ভাইভা নেওয়া (ওই ২৮ মে), কিংবা নারী কেলেঙ্কারিতে উপাচার্যের জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে। এর বাইরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক দেবাশীষ ম-লের আত্মহত্যা সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় ধরনের আলোড়ন তুলেছিল। দেবাশীষ নব্যপ্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। কিন্তু প্রভাষক হিসেবে আবেদন করেছিলেন তার নিজ বিশ্ববিদ্যালয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। নিজ বিভাগে তিনি চাকরি করবেন, এটা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু চাকরির শর্ত হিসেবে তার কাছে চাওয়া হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা। সে টাকা তিনি জোগাড়ও করেছিলেন। ১২ মে তিনি সেখানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশও নেন। কিন্তু জানতে পারেন ক্ষমতাসীন এক নেতার ভাইঝির চাকরি হয়েছে তার পরিবর্তে, যার যোগ্যতা তার চেয়ে অনেক কম ছিল। তিনি তখন আত্মহত্যা করেন (১৪ মে)। ভালো ছাত্রদের শিক্ষক না হওয়ার ঘটনা এখন ঘটছে। টাকা এখানে ফ্যাক্টর। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্যরা বাদ পড়ছেন। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে রাজনীতি। টিআইবি তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল কীভাবে অর্থের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবলিক) শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে! আমার ধারণা ছিল দুদক টিআইবির সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে পারে। কিন্তু দুদক তা করেনি। ফলে এই প্রবণতা বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা জানেন বিষয়টি। এই প্রবণতা যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে দক্ষ শিক্ষকের অভাবে আমরা বিশাল জনগোষ্ঠীকে কখনোই দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব না। এজন্য আমার আবারও সুপারিশ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি মঞ্জুরি কমিশনের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। অথবা পিএসসির মডেলে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। এটা খুবই জরুরি। সরকারি কলেজের শিক্ষকরা যদি পরীক্ষার মাঝে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকরা হবেন না কেন? একসময় এর প্রয়োজনীয়তা ছিল না, এটা সত্যি। কিন্তু এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক, ৩৬ থেকে ৩৭টি। 
নতুন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ও হতে যাচ্ছে। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার প্রশ্ন যখন জড়িত, তখন প্রয়োজন যোগ্য শিক্ষকের। ব্যক্তিপরিচয়, সম্পর্ক, রাজনৈতিক পরিচয় শিক্ষক নিয়োগের মানদ- হতে পারে না। বিশেষায়িত শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। বিবিএ আর এমবিএর ‘মাকাল ফল’ আমাদের উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা সার্টিফিকেটসর্বস্ব বিবিএ গ্র্যাজুয়েটের নামে শিক্ষিত কেরানি তৈরি করছি! ‘স্যুটেড-বুটেড’ হয়ে এসব অর্ধশিক্ষিত তরুণ কোনো ক্রমে বাবার কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একখানা বিবিএর সার্টিফিকেট নিচ্ছেন! বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবলিকসহ) একাধিক নামের এমবিএ কোর্স আছে। যিনি কোনোদিন নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতাবলে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে পারেননি, তিনি অর্থের বিনিময়ে আবার ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সার্টিফিকেট কিনছেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দু-ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চলতে পারে না। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববাজারে যেসব শিক্ষার চাহিদা রয়েছে (আইটির বিভিন্ন শাখা, নার্সিং, মেডিকেল টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, কৃষি ইত্যাদি), সেসব বিষয় চালু করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে একটি কমিশন গঠন করারও প্রস্তাব করছি।
আমাদের অনেক সিনিয়র শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পরও ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী থাকেন। তাদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা যেতে পারে। এতে নতুন প্রজন্ম তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। বিশেষ করে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে এদের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে একধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট আর পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটের মান এক নয়। ফলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাজে লাগিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষার মানের উন্নতি করতে পারে। এক্ষেত্রে একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কাঠামো ভেঙে সাতটি বিভাগে সাতটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা জরুরি। প্রতিটি বিভাগে অন্তর্ভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এরা নিজেরাই সিলেবাস প্রণয়ন করবেন। নিজেরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কাঠামো শিক্ষিত বেকার তৈরি করছে এবং একটি সার্টিফিকেটসর্বস্ব জাতিতে পরিণত করছে। মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। রাজনৈতিক বিবেচনায় এখানে নিয়োগ হচ্ছে। ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যরা ব্যস্ত থাকেন সরকারের তোষামোদে। পত্রিকায় রাজনৈতিক কলাম লিখে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থ আদায় করছেন। 
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যে অনিয়ম হচ্ছে, তা তারা দেখছেন না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়েও কিছু কথা বলা প্রয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন একশ অতিক্রম করেছে। এটা ভালো কি মন্দ, আমি সেই বিতর্কে যাব না। এরা জনশক্তি গড়তে একটা ভূমিকা রাখছে, এটা অস্বীকার করি না। তবে এক্ষেত্রে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনায় দক্ষ জনবল নিয়োগ। আধুনিক উপযোগী বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন। ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা না করা। অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল নিজেদের স্বার্থেই করা দরকার। প্রয়োজন ভালো ও সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ। সেই সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভাল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড ও সরকারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আলাদা একটি ইউজিসি টাইপ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। একুশ শতকে আমরা যদি একটা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে এই তরুণ প্রজন্ম আমাদের জন্য একটা বড় সংকট তৈরি করবে আগামী দিনে। সেই সংকট আমরা মোকাবিলা করতে পারব না। মনে রাখতে হবে, একশত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উচ্চশিক্ষাকে আমরা উচ্চস্তরে নিয়ে যেতে পারব না। এজন্য দরকার দক্ষ ও বাজার-উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা। এজন্য যে পরিকল্পনা থাকা দরকার, তা নেই। পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকা দরকার, তা-ও নেই। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে, আবার অনেকগুলোই খারাপ করছে। এজন্য একটা ‘ওয়াচডগ’ প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার, যা ইউজিসির নেই। ইউজিসি শুধু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। ঢালাওভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমালোচনা করে লাভ নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যর্থতাই শিক্ষার্থীদের ব্যাপক হারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে নিয়ে যাচ্ছেÑ আমরা যেন এ কথাটা ভুলে না যাই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ যুগের বাস্তবতা। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার এক দিন আগে একটি জনপ্রিয় দৈনিকে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিলÑ শিক্ষার সংখ্যাগত উন্নয়ন হলেও এর গুণগত মানের উন্নতি হয়নি (বণিক বার্তা, ৫ মে)। প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছেÑ শিক্ষার মানে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। আর বৈশ্বিক পরিম-লে শিক্ষার মানের দিক থেকে ১৩০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৭। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত। তালিকায় বৈশ্বিকভাবে ভারতের অবস্থান ২৭, শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৩৮, পাকিস্তানের ৬৬, আর নেপালের অবস্থান ৭০তম। এর অর্থ শিক্ষার মানের দিক দিয়ে আমরা নেপালের নিচে অবস্থান করছি। অথচ নেপালি ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, আর তাদের মান আমাদের চেয়েও বেশি! আমি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্টকে হালকাভাবে নিতে চাই না। এই রিপোর্ট পক্ষপাত দোষে দুষ্টÑ সে কথাটাও আমি বলব না। এই রিপোর্টের ভিত্তি আছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তা শিকারও করি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘দ্য হিউম্যান ক্যাপিটাল রিপোর্ট ২০১৭’ এ বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছেÑ জনবহুল দেশটিতে পড়াশোনা শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ বেকার থাকে। দেশটির প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাও নিম্নমানের। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিশেষায়িত বিষয়ের সংখ্যা খুবই কম। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াই, এই মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করতে পারি না। এটা সবাই স্বীকার করবেন যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার মানের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। 
আমরা মানি আর নাই মানি, আমরা এ দেশে জিপিএ-৫ মার্কা একটা শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছি। আমাদের শিক্ষামন্ত্রীও উচ্ছ্বসিত হন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান বেড়েছে দাবি করে! কিন্তু শিক্ষার মান তো আদৌ বাড়েনি। এটা সত্য, দেশে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারি আর বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন অনেক। মানুষ বেড়েছে। এদের উচ্চশিক্ষা দিতে রাষ্ট্র বাধ্য। সরকার তাই একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। কিন্তু যে প্রশ্নটি প্রধানমন্ত্রী কিংবা শিক্ষামন্ত্রীকে কখনোই করা হয় না, তা হচ্ছেÑ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা যায় না। প্রতিষ্ঠানের হয়তো প্রয়োজন আছে; কিন্তু তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা। ভালো শিক্ষক আমরা তৈরি করতে পারিনি। এ ব্যর্থতা একজন শিক্ষক হিসেবে আমারও। আমরা ভালো ছাত্র তৈরি করতে পারিনি। আমাদের মধ্যে যারা ভিসি হয়েছেন, তারা শিক্ষার মানোন্নয়নের পরিবর্তে ব্যস্ত থেকেছেন নিজেদের আখের গোছাতে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক উপাচার্যকে দুদক তলব করেছিল। ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য প্রতিদিন নাশতার বিল তুলেছেন সাত হাজার টাকার উপরে। এসবই সংবাদপত্রের খবর। বর্তমান উপাচার্যকে নিয়েও কম কথা নেই। তিনি উপাচার্যের বদলে নিজেকে পরিচয় দেন (টিভিতে) একটি এনজিওর চেয়ারম্যান হিসেবে। এরা সবাই শিক্ষক, যাদের প্রয়োজন ছিল নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলা। তা তারা করেননি। বরং নিজেদের স্বার্থে তারা ব্যস্ত থেকেছেন। নতুন নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে; কিন্তু সেখানে যেসব বিষয় চালু করা হয়েছে, তার আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। এতে বরং শিক্ষিত বেকার সমস্যা বাড়ছে। আমি অবাক হয়ে যাই যখন দেখি নতুন নতুন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শুধু ‘দলীয় ও ব্যক্তিগত’ স্বার্থ রক্ষায় এমন সব বিষয় চালু করা হয়েছে, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। অথচ ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল শুধু প্রান্তিক জনপদকে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানশিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে। গোপালগঞ্জ কিংবা পাবনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এ লক্ষ্যেই। কিন্তু সেখানে সাধারণ বিষয় চালু করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। যারা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান, তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে চলেছে। আমি অবাক হয়ে যাই এটা দেখে যে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব সাধারণ বিষয় চালু করার অনুমতিও দিয়েছে। দেশের বড় বড় যে কটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেখানে সাধারণ বিষয় রয়েছে। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় এসব বিষয় চালু করার কোনো প্রয়োজন নেই।
অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি বন্ধ করা জরুরি। দেবাশীষ ম-লের বিষয়টি তদন্ত করে দেখুক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এমনকি দুদকও বিষয়টি দেখতে পারে, এখানে আদৌ দুর্নীতি হয়েছে কি না। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। এটি সমর্থনযোগ্য নয়। এটি কোনো প্রতিবাদের ধরনও হতে পারে না। এ ঘটনা দুঃখজনক। একজন শিক্ষক হিসেবে এ ঘটনা আমাকে ব্যথিত করেছে।
Daily Alokito Bangladesh
03.06.2018

0 comments:

Post a Comment