গত ১২ জুন সিঙ্গাপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের মধ্যকার শীর্ষ বৈঠক সফল হয়েছে নাকি ব্যর্থ হয়েছে তা নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক, এটা সত্য উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের এটা প্রাথমিক অগ্রগতি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে বলেছেন, তিনি আর উত্তর কোরিয়াকে ‘পারমাণবিক হুমকি’ মনে করেন না। ট্রাম্প এক সময় যাকে ‘রকেটম্যান’ আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করেননি, শীর্ষ বৈঠকের পর সেই কিম জং উনের তিনি প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘শিগগিরই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ শুরু করবে উত্তর কোরিয়া।’ আর কিম তার প্রত্যুত্তরে বলেছেন, ‘আমরা শান্তির লক্ষ্যে কাজ করব।’ সব মিলিয়ে প্রশ্ন একটাই- উত্তর কোরিয়া কি আদৌ তার পারমাণবিক বোমা ধ্বংস করবে? সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত করবেন? কিংবা উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে কতটুকু আস্থায় নিতে পারবে এখন?
বিষয়টি অত সহজ নয়। প্রকাশ্যে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়া সীমান্তে কোনো যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেবে না। কিন্তু খোদ শীর্ষ মার্কিন কমান্ডারদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে মৃদু আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে।
কেউ কেউ এমন প্রস্তাবও করেছেন যে, মহড়ার স্থান অন্যত্র সরিয়ে নেয়া যেতে পারে। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, উত্তর কোরিয়া তার কাছে রক্ষিত পারমাণবিক বোমা ধ্বংস করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তো পারমাণবিক বোমা রয়ে যাচ্ছে! এই পারমাণবিক বোমা কি উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে না?
এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি ‘বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম’ তত্ত্ব প্রয়োগ করবেন? ‘বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম’ হচ্ছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক ধরনের গ্যারান্টি। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে বিধায় এটি ‘বুদাপেস্ট মেরোরেন্ডাম’ নামে পরিচিত।
এতে ইউক্রেনের এনপিটি (Treaty on the Non-Proliferation of Nuclear Weapons) চুক্তি স্বাক্ষরের বিনিময়ে ৫টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ (রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীন ও ফ্রান্স) ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। এ গ্যারান্টির ফলে ইউক্রেন তার কাছে যে পারমাণবিক সমরাস্ত্র ছিল, তা রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছিল।
‘বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামে’ ইউক্রেনকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে- ১. ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হবে, ২. ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক অভিযান পরিচালিত হবে না, ৩. ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কোনো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হবে না, ৪. যদি কোনো পারমাণবিক শক্তি দ্বারা ইউক্রেন ভবিষ্যতে আক্রান্ত হয়, তাহলে নিরাপত্তা পরিষদ (জাতিসংঘ) ইউক্রেনের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে, ৫. দেশটির বিরুদ্ধে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হবে না।
এখন উত্তর কোরিয়াকেও কি এ ধরনের আশ্বাস দেয়া হবে? যে যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে চারটি জিনিস সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে : ১. শান্তি ও উন্নতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ২. কোরীয় পেনিনসুলায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে দেশ দুটো একসঙ্গে কাজ করবে, ৩. উত্তর কোরিয়া পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাজ করবে, ৪. কোরীয় যুদ্ধে নিহত সেনাদের দেহাবশেষ চিহ্নিত করা হবে এবং যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের দেহাবশেষ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।
এর বাইরে নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সব ধরনের সামরিক অনুশীলন স্থগিত ঘোষণা করেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিসটফ লিখেছেন, ‘It sure looks as if President Trump was hoodwinked in Singapore’ যার বাংলা করলে দাঁড়ায়- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কলা দেখানো হয়েছে।
এ ধরনের মন্তব্য কী ইঙ্গিত বহন করে? সহজ করে বললে যা বলা যায় তা হচ্ছে, একটি ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছে বটে; কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুব বেশি কিছু আদায় করতে পারেননি। ট্রাম্প বলেছেন বটে উত্তর কোরিয়া পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাজ করবে; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কবে নাগাদ এ কাজটি উত্তর কোরিয়া সম্পন্ন করবে, তার কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।
এমনকি যৌথ ঘোষণাপত্রেও কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এতে করে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সন্তুষ্ট হবে বলে মনে হয় না। উত্তর কোরিয়া ইউরেনিয়াম ও প্লুটেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল বা ধ্বংস করবে (যা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়), এমন কোনো কথা যৌথ ইশতেহারে নেই।
অথচ ইরানের সঙ্গে যে ছয় জাতি পারমাণবিক চুক্তি হয়েছিল, যা ট্রাম্প সম্প্রতি বাতিল ঘোষণা করেছেন, তাতে শতকরা ৯৮ ভাগ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল বা ধ্বংস করতে ইরান দায়বদ্ধ ছিল। উত্তর কোরিয়ার কাছে যেসব আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, সেসবও ধ্বংস করার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়া কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এর ফলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবে না।
পারমাণবিক পর্যবেক্ষকরা আদৌ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন কিনা, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে যৌথ ইশতেহারে কোনো কথা বলা হয়নি। পরমাণু পরীক্ষা যে বন্ধ হবে, সে ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি নেই।
ফলে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও তার মিত্রদের মাঝে এক ধরনের হতাশা থাকতে পারে। ট্রাম্প নিজে কংগ্রেসে তার সমর্থকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠবে, কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেয়েও ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এ ধরনের সমঝোতায় কেন গেলেন?
যুক্তরাষ্ট্রে থেকে আমি লক্ষ করছি, সমঝোতার ব্যাপারে গণমাধ্যমগুলো খুব সন্তুষ্ট নয়। ১২ জুনের শীর্ষ বৈঠকের পর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভিত্তি নিয়ে এখনও লেখালেখি হচ্ছে। কোন পথে যাবে এই সম্পর্ক? আমি ট্রাম্পের বক্তব্য অনুসরণ করেছি।
ট্রাম্প কিমের প্রশংসা করেছেন একাধিকবার। বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো।’ কিমকে ‘ভালো মানুষ’ বলতেও দ্বিধা করেননি ট্রাম্প। কিন্তু কিমের বক্তব্য লক্ষ করলে দেখা যাবে তিনি কখনোই ট্রাম্পের প্রশংসা করেননি।
ট্রাম্প কিম জং উনকে হোয়াইট হাউসে দাওয়াত দেয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার ওপর যে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়েছিল এবং যা এখনও বর্তমান, তা প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বা প্রতিশ্রুতি কোনোটাই দেননি ট্রাম্প। ফলে উত্তর কোরিয়ার নেতারা কতটুকু আশ্বস্ত হয়েছেন, বলা মুশকিল।
শুধু চীন ও রাশিয়া বলেছে, জাতিসংঘের এখন উচিত উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়া। কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থন ও উদ্যোগ ছাড়া এ ধরনের কোনো উদ্যোগ সফল হবে না।
বস্তুত দু’জনেরই অতীত আছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার। যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় জাতির একটি সমঝোতা হয়েছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ১০ বছরের জন্য স্থগিত রাখার। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এ চুক্তিটি করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে ছয় জাতি আলোচনা চলে দীর্ঘদিন। উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে এই ছয় জাতি গঠিত। আলোচনা চলে ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত।
২০০৭ সালে একটি সমঝোতায়ও উপনীত হয়েছিল উত্তর কোরিয়া। এর ফলে উত্তর কোরিয়া তার ণড়হমনুড়হ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ করার এবং পারমাণবিক পর্যবেক্ষকদের উত্তর কোরিয়ার বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনেরও অনুমতি দিয়েছিল।
বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ায় খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে উত্তর কোরিয়া মহাশূন্যে একটি স্যাটেলাইট পাঠানোর উদ্যোগ নিলে (যা ব্যর্থ হয়েছিল) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এর সমালোচনা করে।
নিরাপত্তা পরিষদের অভিযোগ ছিল- এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদ এ ব্যাপারে নিন্দা জানালে উত্তর কোরিয়া ২০০৯ সালের এপ্রিলে ছয় জাতি আলোচনা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
কাজেই এক ধরনের আস্থাহীনতা রয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে মূল সমস্যা। ১২ জুন উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কিছু ‘কমিটমেন্টের’ কথা বলেছে বটে; কিন্তু তা তারা কতটুকু রক্ষা করবে, সেটাই প্রশ্ন এখন। বড় প্রশ্ন হচ্ছে আন্তরিকতার। যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু আন্তরিক হবে, সে প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
কারণ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি তার নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তত্ত্বগতভাবে উত্তর কোরিয়া যদি তার সব পারমাণবিক বোমা ও স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়, তা কি তার নিরাপত্তাকে একটি হুমকির মুখে ঠেলে দেবে না?
ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠকের পর বিশ্বে যত পারমাণবিক বোমা রয়েছে, তার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ পেয়েছে। তাতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যেখানে ৬ হাজার ৪৫০টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে (২০১৮), সেখানে উত্তর কোরিয়ার আছে মাত্র ১০-২০টি (SIPRI year book, ২০১৮)। উত্তর কোরিয়ার এই পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ভারত (১৩০-১৪০টি) ও পাকিস্তানের (১৪০-১৫০টি) চেয়ে অনেক কম।
এর অর্থ হচ্ছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক প্রতিযোগিতা বাড়ছে এবং দেশ দুটি এ অঞ্চলে যে নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করেছে, উত্তর কোরিয়া কোরিয়া উপদ্বীপে সে ধরনের নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করছে না! তত্ত্বগতভাবে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আওতায় দেশটি রয়ে যাচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তাহীনতা এখন কীভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব? এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে, সন্দেহ নেই। তবে এ ক্ষেত্রে ‘বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামে’ অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। এটি একটি ‘মডেল’ হতে পারে। উত্তর কোরিয়াকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রেখে কোনো সমঝোতাই আদৌ কোনো ফল বয়ে আনবে না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য দু’দেশের মধ্যে যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা এগিয়ে নেয়া জরুরি। কারণ ইতিমধ্যে বিশ্ব আসরে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। সনাতন মিত্রদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। তাই একটি বড় ধরনের বিজয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দরকার।
উত্তর কোরীয় নেতাকে আস্থায় নিতে ট্রাম্প শীর্ষ বৈঠকের আগে তাকে ফোনে একটি ভিডিও দেখিয়েছিলেন বলে কোনো কোনো সংবাদপত্র আমাদের আভাস দিচ্ছে। ট্রাম্প ব্যবসায়ী। তিনি কিমকে বুঝিয়েছেন উত্তর কোরিয়া যদি ‘উন্মুক্ত’ হয়ে যায়, তাহলে এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে দেশটি।
বড় বড় আকাশছোঁয়া হোটেল হবে, সি-বিচগুলো উন্নত হবে, বদলে যাবে দেশটির অর্থনীতি। দুই কোরিয়া একত্রিত হলে উত্তর কোরিয়া প্রকারান্তরে উপকৃত হবে। উত্তর কোরিয়ার ৪০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি (জিডিপি) দ্বিগুণ হয়ে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার ২.০২ (২০১৭) ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি দুই কোরিয়া একত্রিত হওয়ার পর বিশাল এক অর্থনীতিতে পরিণত হবে, যা চীনকে ছাড়িয়ে যাবে।
KTX বুলেট ট্রেন, যা বর্তমানে সিউলের (দক্ষিণ কোরিয়া) সঙ্গে প্যারিসের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে, তা উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে, এবং তা বদলে দেবে উত্তর কোরিয়াকে। একটা ভিডিও তৈরি করে এনেছিলেন তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতাকে বোঝানোর জন্য। কিম তাতে কতটুকু উদ্বুদ্ধ হয়েছেন কিংবা ট্রাম্প কতটুকু সফল হয়েছেন, তা শুধু ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।
দু’নেতার বৈঠকের পর এখনও হিসাব-নিকাশ চলছে। এখনও পরবর্তী কর্মশালা নিয়ে আলোচনা চলছে। ট্রাম্প একটি ঝুঁকি নিয়েছেন- তিনি ব্যর্থও হতে পারেন। বিখ্যাত ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্টের সর্বশেষ সংখ্যার (১৬-২২ জুন) কভার স্টোরি হচ্ছে করস Kim Jong won, অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং বিজয়ী হয়েছেন। টাইমসের কভার স্টোরিও এই শীর্ষ বৈঠক নিয়ে- The Riskiest Shwo on Earth। পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শো।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিম জং উনকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন একটি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার। কিন্তু অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেই। ২০০৬ সালের পর থেকে উত্তর কোরিয়ার রফতানির শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে। খাদ্য ঘাটতির কারণে শতকরা ৪১ ভাগ উত্তর কোরীয় নাগরিক অপুষ্টির শিকার। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য ব্যাপক- দক্ষিণ কোরিয়ায় মাথাপিছু আয় যেখানে ৩৯,৪০০ ডলার, সেখানে উত্তর কোরিয়ায় মাত্র ১,৭০০ ডলার। এসব বিষয় যদি বিবেচনায় না নেয়া হয়, তাহলে উত্তর কোরিয়ায় অসন্তোষ থাকবেই।
তাই অনেক কিছুই এখন নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর। এই শীর্ষ বৈঠকটি একটি ‘ফটোসেশনের’ মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, যদি সত্যিকার অর্থে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয়।
ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Jugantor
23.06.2018
0 comments:
Post a Comment