রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রসঙ্গ



উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির একটি ‘সমঝোতা’ হয়েছে। গত ১২ জুন সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে যে ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তাতে এই ‘সমঝোতা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। দুই নেতা একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন এবং ওই ‘সমঝোতায়’ কিছু প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে। ফলে যে প্রশ্নটি উঠেছে তা হচ্ছেÑ ওই সমঝোতাকে কেন্দ্র করে কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কতটুকু সম্ভব? আমাদের মনে রাখতে হবে, ‘সমঝোতা’ আর চুক্তি এক নয়। একটি সমঝোতা হয়েছে; কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। ফলে কোনো পক্ষই ওই ‘সমঝোতা’ মেনে চলবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে একটা প্রশ্ন থাকলই। তবে এই ‘সমঝোতা’কে কেন্দ্র করে আগামীতে কোনো চুক্তি হবে কি না, তা নির্ভর করছে দুই পক্ষের আন্তরিকতার ওপর। 
ওই ‘সমঝোতায়’ সুনির্দিষ্টভাবে চারটি ‘কমিটমেন্টের’ কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ দুই পক্ষ অঙ্গীকার করেছে, তারা সমঝোতায় উল্লিখিত শর্তগুলো পালন করবে। এখন খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় এবং আইনপ্রণেতারা ওই সমঝোতায় উল্লেখিত অঙ্গীকারগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি খুব কম মার্কিন মিডিয়া দেখেছি, যেখানে ওই সমঝোতার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রশংসা করা হয়েছে। বরং বলা হয়েছে, ট্রাম্প কিম জং উনের কাছ থেকে তেমন কিছু আদায় করতে পারেননি। ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠক নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং সময়ের দাবিদার। যেভাবে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ‘বাগ্যুদ্ধ’ তথা পারমাণবিক হামলা ও পাল্টাহামলার হুমকি দিয়ে আসছিল, সে পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের একটি শীর্ষ বৈঠক দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা হ্রাস করতে সাহায্য করবে। কিন্তু ওই শীর্ষ বৈঠক রেখে গেছে নানা প্রশ্ন। ওই প্রশ্নগুলো বারবার আলোচিত হতে থাকবে। 
কিম জং উনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই বৈঠক ১৯৭২ সালে চীনা নেতা মাও সে তুংয়ের সঙ্গে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের মধ্যকার শীর্ষ বৈঠকের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। ওই সময় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা প্রয়োজন ছিল। বিশ্ব রাজনীতিতে তখন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ছিল চরমে। এমনই এক পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট নিক্সন উদ্যোগ নিয়েছিলেন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার। ‘চরম শত্রু’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রহণ করতে মাও সে তুং সেদিন কোনো চিন্তা করেননি। এর পরের ইতিহাস সবাই জানে। ১৯৭২ সালের ওই শীর্ষ বৈঠকের পর চীন-মার্কিন সম্পর্ক বিশ্বরাজনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। আজ পরিস্থিতি অনেকটা সেরকমই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই বিশ্বরাজনীতিতে একা হয়ে পড়েছে। বিশ্বরাজনীতিতে ট্রাম্পের বর্তমান ভূমিকা শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে তার বন্ধুদের কাছ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখেনি, বরং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়েছে। সর্বশেষ জি-৭ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সনাতন মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। জি-৭ সম্মেলনের শেষে গৃহীত ইশতেহারে যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষর করেনি। ট্রাম্পের একগুঁয়েমির কারণে বাকি ছয়টি দেশ তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এমনকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো সম্পর্কে ট্রাম্প যেসব কথা বলেছেন, তা কূটনৈতিক সৌজন্যের মধ্যে পড়ে না। ফলে ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে দিন দিনই বিতর্ক বাড়ছে। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এই অবনতির পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে ইউরোপের স্টিলের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত। চীনের স্টিলের ওপরও অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে। পরিণামে চীনও মার্কিনি পণ্যের ওপর কর আরোপ করেছে। ফলে চীন-মার্কিন সম্পর্কের কিছুটা হলেও অবনতি হয়েছে। এমনকি অভ্যন্তরীণভাবেও তিনি সমস্যায় আছেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে তার ভূমিকা কী ছিল, এটা নিয়ে তাকে তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হবে। সব মিলিয়ে এ-ই যখন পরিস্থিতি, তখন বিশ্ব আসরে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তার এ ধরনের একটি শীর্ষ বৈঠকের প্রয়োজন ছিল। ট্রাম্প সেটা করলেন। মাত্র ছয় মাস আগেও যাকে তিনি ‘রকেটম্যান’ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন, নিউক্লিয়ার বাটন তার কাছে আছে, তা তিনি প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন এ ধরনের কথাবার্তা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছিল, সেই ট্রাম্পই কী করে হঠাৎ করে বদলে গেলেন এবং কিম জং উনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন, বোঝা সত্যিকার অর্থেই কঠিন। তার একটা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য আছে, এটা বোঝা যায়। কেননা সিঙ্গাপুর বৈঠক শুরু হওয়ার আগে তিনি কিম জং উনকে মোবাইল ফোনে একটি ভিডিও দেখিয়েছিলেন বলে কোনো কোনো সংবাদপত্র আমাদের আভাস দিচ্ছে। ট্রাম্প ব্যবসায়ী। ট্রাম্প কিমকে বুঝিয়েছেন উত্তর কোরিয়া যদি ‘উন্মুক্ত’ হয়ে যায়, তাহলে এই অঞ্চলে অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে দেশটি। বড় বড় আকাশছোঁয়া হোটেল হবে, সিবিচগুলো উন্নত হবে, বদলে যাবে দেশটির অর্থনীতি। দুই কোরিয়া একত্রিত হলে উত্তর কোরিয়া প্রকারান্তরে উপকৃত হবে। উত্তর কোরিয়ার ৪০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি (জিডিপি) ডাবল বা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার ২.০২ (২০১৭) ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি দুই কোরিয়া একত্রিত হওয়ার পর বিশাল এক অর্থনীতিতে পরিণত হবে, যা চীনকে ছাড়িয়ে যাবে। KTX  বুলেট ট্রেন, যা বর্তমানে সিউলের (দক্ষিণ কোরিয়া) সঙ্গে প্যারিসের সরাসরি সংযোগ রয়েছে, তা উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে এবং তা বদলে দেবে উত্তর কোরিয়াকে। একটা ভিডিও তৈরি করে এনেছিলেন তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে বোঝানোর জন্য। এখন কিম কতটুকু উদ্বুদ্ধ হয়েছেন কিংবা ট্রাম্প কতটুকু সফল হয়েছেন, তা শুধু ভবিষ্যৎই বলতে পারবে। দুই নেতার বৈঠকের পর যে যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ৪টি জিনিস সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছেÑ ১. শান্তি ও উন্নতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া কমিটেড, ২. কোরীয় পেনিনসুলায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে দেশ দুটি একসঙ্গে কাজ করবে, ৩. উত্তর কোরিয়া পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাজ করবে, ৪. কোরীয় যুদ্ধে নিহত সেনাদের দেহাবশেষ চিহ্নিত করা এবং যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের দেহাবশেষ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে দু-দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। এর বাইরে নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সব ধরনের সামরিক অনুশীলন স্থগিত ঘোষণা করেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিসটফ লিখেছেন, ÔIt sure looks as it president Trump was hoodwinked in SingaporeÕ বাংলা করলে দাঁড়ায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কলা দেখানো হয়েছে! এ ধরনের মন্তব্য কী ইঙ্গিত বহন করে? সহজ করলে বললে যা বলা যায়, তা হচ্ছেÑ একটি ঐতিহাসিক বৈঠক হয়েছে বটে; কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুব বেশি কিছু আদায় করতে পারেননি। ট্রাম্প বলেছেন বটে উত্তর কোরিয়া পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাজ করবে; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেÑ কবে নাগাদ এ কাজটি উত্তর কোরিয়া সম্পন্ন করবে, তার কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এমনকি যৌথ ঘোষণাপত্রেও কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এতে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সন্তুষ্ট হবে বলে মনে হয় না। উত্তর কোরিয়া ইউরোনিয়াম ও প্লুটোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল বা ধ্বংস করবে (যা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়), এমন কোনো কথা যৌথ ইশতেহার নেই। অথচ ইরানের সঙ্গে যে ছয়-জাতি পারমাণিবক চুক্তি হয়েছিল, যা ট্রাম্প সম্প্রতি বাতিল ঘোষণা করেছেন, তাতে শতকরা ৯৮ ভাগ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল বা ধ্বংস করতে ইরান কমিটেড বা দায়বদ্ধ ছিল। উত্তর কোরিয়ার কাছে যেসব আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা ধ্বংস করার ব্যাপারেও উত্তর কোরিয়া কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এর ফলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবে না। পারমাণবিক পর্যবেক্ষকরা আদৌ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে যৌথ ইশতেহারে কোনো কথা বলা হয়নি। নিউক্লিয়ার টেস্ট যে বন্ধ হবে, সে ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট কমিটমেন্ট নেই।
ফলে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ও তার মিত্রদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা থাকতে পারে। ট্রাম্প নিজে কংগ্রেসে তার সমর্থকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন। সংগত কারণেই তাই প্রশ্ন উঠবে, কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেয়েও ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এ ধরনের সমঝোতায় কেন গেলেন? 
যুক্তরাষ্ট্রে থেকে আমি লক্ষ করছি, মিডিয়া এবং টিভি চ্যানেলগুলো সমঝোতার ব্যাপারে খুব সন্তুষ্ট নয়। ১২ জুনের সাক্ষাৎকারের পর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভিত্তি নিয়ে এখনও লেখালেখি হচ্ছে। কোন পথে যাবে এই সম্পর্ক? আমি ট্রাম্পের বক্তব্য অনুসরণ করেছি। ট্রাম্প কিমের প্রশংসা করেছেন একাধিকবার। বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো।’ কিমকে ‘ভালো মানুষ’ বলতেও দ্বিধা করেননি ট্রাম্প। কিন্তু কিমের বক্তব্য লক্ষ করলে দেখা যাবে, কিম কখনোই ট্রাম্পের প্রশংসা করেননি। ট্রাম্প কিম জন উনকে হোয়াইট হাউজে দাওয়াত দেওয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার ওপর যে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়েছিল এবং যা এখনও বর্তমান, তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা বা প্রতিশ্রুতি কোনোটাই দেননি ট্রাম্প। ফলে উত্তর কোরিয়ার নেতারা কতটুকু আশ্বস্ত হয়েছেন, বলা মুশকিল। শুধু চীন বলেছে, জাতিসংঘের এখন উচিত উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া। কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থন ও উদ্যোগ ছাড়া অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, ট্রাম্প ও কিম দুজনের মধ্যেই একটা অদ্ভুত ‘মিল’ আছে। দুজনই অনেকটা ক্ষ্যাপাটে স্বভাবের। এক্ষেত্রে কিম একটু বেশি ক্ষ্যাপাটে। দেশের ভেতরে ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের কাউকে যদি একটু সন্দেহ হয়, কিম তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি। নিজের আপন কাকাকে, সৎভাইকে ‘খুন’ করা তার জন্য ছিল স্বাভাবিক একটি ঘটনা। অন্যদিকে ট্রাম্পও অনেকটা এই মানসিকতার। আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনও তিনি মানতে চান না। জি-৭ সম্মেলনে তিনি যেভাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে আঘাত করে মন্তব্য করেছেন, অশালীন বাক্য ব্যবহার করেছেন, তা কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে আশা করা যায় না। ফলে একটি ‘ফটোসেশন’ হয়েছে, প্রাপ্তি শূন্য। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভবিষ্যতে আর দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে কোনো সামরিক মহড়া হবে না। কিন্তু স্পষ্ট করেননি দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়োজিত ৩২ হাজার মার্কিন সেনা তিনি প্রত্যাহার করে নেবেন। এই সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ায় সদ্য মোতায়েনকৃত ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোও তিনি প্রত্যাহার করে নেননি। 
ঐতিহাসিক সিঙ্গাপুর সমঝোতার একদিন পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, তিনি আশা করছেন আগামী আড়াই বছরের মধ্যে উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করা সম্ভব হবে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এ মুহূর্তে আর উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক হুমকি বলে মনে করেন না। এসব বক্তব্য আমাদের আশাবাদী করে। কিন্তু ভবিষ্যৎই বলে দেবে কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কতটুকু সম্ভব হয়েছে। 
ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Alokito Bangladesh
19.06.2018

0 comments:

Post a Comment