নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই নতুন নতুন জোটের জন্ম হচ্ছে। নতুন দলের জন্ম হচ্ছে, যাদের কারোরই নিবন্ধন নেই। সংবাদপত্রগুলোর কেন যেন বেশি আগ্রহ এসব জোটের ব্যাপারে। নাম সর্বস্ব এসব দল নিত্য ঢাকার প্রেসক্লাবে জমায়েত হয়ে সাংবাদিকদের জানান, তারা একটি নতুন দল অথবা জোট গঠন করেছেন। সংবাদপত্রগুলোতে তা ছাপাও হয়। তাতেই তাদের লাভ। সর্বশেষ এই কাজটি করলেন নুরুল আমিন বেপারী। প্রেসক্লাবের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন তারাই ‘আসল বিকল্প ধারা’। জানালেন তারা ডা. বি. চৌধুরী, মেজর (অব.) মান্নান এবং মাহী বি. চৌধুরীকে বহিষ্কার করেছেন। নুরুল আমিন বেপারী আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ান তিনি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি করতেই পারেন। কিন্তু শিক্ষকতায় থেকে একইসঙ্গে তিনি একটি দলের সভাপতি হবেন, তা কী করে সম্ভব?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘আইন- ১৯৭৩’ তো তা অনুমোদন করে না। ওটা তো নৈতিকতার প্রশ্নও বটে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও যখন অনৈতিক কাজ করেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হয়ে আমার কষ্ট হয়। বেপারী জানালেন তারা সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন। চারটি দল নিয়ে ফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। এখন অচিরেই আমরা দেখবো ২০-দলের প্রায় সবাই এই ফ্রন্টে যোগ দিয়েছে। এরই মাঝে আবার ন্যাপ ও এনডিপি ২০-দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা জানিয়ে আরেকটি ফ্রন্ট গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এনডিপি, যাদের পূর্ণ কমিটি আছে কিনা সন্দেহ, দলটি আবার তিন ভাগ হয়ে গেছে।
২০ অক্টোবর সংবাদপত্র আমাদের খবর দিয়েছে যে জনৈক লামিনাল ফিহার নেতৃত্বে ৩৯ দলের সমন্বয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি জোট গঠন করেছে। কষ্ট করে ৩৯টি দলের নাম পড়লাম, জীবনে এই প্রথম আমি এ দলগুলোর নাম শুনলাম। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) নেতৃত্বে রয়েছে সম্মিলিত জাতীয় জোট। এই জোটে দলের সংখ্যা ৫৮। সরকারপন্থী ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমানের নেতৃত্বে ১৫টি নাম সর্বস্ব দল ‘ইসলামী গণতান্ত্রিক জোট’ গঠন করেছে। চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন। বামরা আবার ‘বাম গণতান্ত্রিক জোটের’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই জোটে আছে সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ আটটি বামপন্থী দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে ১৪ দলীয় জোট রয়েছে, সেই জোটের ব্যাপারে আগ্রহ অনেক দলের। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ইসলামি ঐক্যজোট, জাকের পার্টি ও ইসলামিক ফ্রন্ট ১৪ দলীয় জোটে যোগ দিতে চাইছে। এই জোট সম্প্রসারিত হতে পারে এমন আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দেশে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৩৯। অনিবন্ধিত দলের সংখ্যা একশ’ থেকে দেড়শ’র মতো। মজার ব্যাপার বড় দুই জোটে অনেক অনিবন্ধিত দলও রয়েছে। যেমন ১৪ দলে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা আটটি। ২০- দলীয় জোটে ( এখন ১৮ দল) অনিবন্ধিত দল রয়েছে একাধিক।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই জোটের যে রাজনীতি, তা অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। নাম তথা প্যাড সর্বস্ব এসব রাজনৈতিক দলের জন্ম অতীতে তেমনটি দেখা যায়নি। বড় বড় দলগুলো আবার এদেরকে ব্যবহার করে জোটের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। এতে করে জনসাধারণকে একধরনের ‘বোকা’ বানানো হয়। জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই দলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এতে করে রাজনীতিতে তেমন গুণগত পরিবর্তন আসে না। শুধু মন্ত্রিত্ব কিংবা সংসদ সদস্য হওয়ার আশায় এরা বড় দলে ভিড়তে চায়। চলতি সংসদে এমন একটি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, যার নেতার নাম সাধারণ মানুষ এই প্রথম শুনেছে। দুর্ভাগ্য এই জাতির এ ধরনের লোক সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে! দলের নিবন্ধনও পেয়েছে। আবার ‘এক ব্যক্তি, এক দল’এর বাম নেতা তার জীবদ্দশায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধিতা করলেও শুধু প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিলেন। যদিও সংসদীয় নির্বাচনে তিনি কোনোদিন জামানত ফেরত পাননি।
বাংলাদেশে রাজনীতির ধারা মূলত দুটি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি ধারা, অপরটি আওয়ামী লীগ বিরোধী। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এই ধারায় যুক্ত। যদিও জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে বিভ্রান্তি আছে। এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঝে বিলীন হয়ে যাবে। বামদের তৃতীয় ধারার প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ভুল রাজনীতি বামদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য, ইসলামপন্থীরা বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন (তারা এখনো কোনো জোটে নেই) তৃতীয় শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে! স্থানীয় সরকার নির্বাচন এর বড় প্রমাণ। আগামীতে ইসলামি আন্দোলনের ব্যানারে যদি সকল ইসলামী দল একত্রিত হয়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
Daily Amader Notun Somoy
22.10.2018
0 comments:
Post a Comment