আগামী ৫ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের মধ্য
দিয়ে যে প্রশ্নটি এখন বেশি করে আলোচিত হচ্ছে তা হচ্ছে, বাংলাদেশ কি একটি
মার্কিন প্রভাবাধীন রাজনৈতিক ও সামরিক জোটে নিজেকে জড়িত করতে যাচ্ছে? এ
ধরনের একটি ধারণা আরো বদ্ধমূল হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল ঢাকায় বাংলাদেশ ও
যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তাসংক্রান্ত একটি শীর্ষ সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ায়। ওই
নিরাপত্তা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার সহকারী পররাষ্ট্রসচিব আন্দ্রে জে শাপিরো।
সংবাদপত্রে শীর্ষ সংলাপের সংবাদটি শুধু স্থান পেয়েছে। কিন্তু সেখানে কী কী
বিষয় আলোচিত হয়েছে এবং কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত
কোনো তথ্য নেই। সরকারিভাবেও তা জানানো হয়নি। সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, এ
ধরনের নিরাপত্তা সংলাপ কেন? এর উদ্দেশ্য কী? লক্ষ করলে দেখা যাবে, সম্প্রতি
একাধিক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফর করেছেন।
তাঁদের সবাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে গেছেন মারিয়া ওটেরো (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডারসেক্রেটারি), রবার্ট ওব্লেক (সহকারী পররাষ্ট্রসচিব), ভেন্ডি শেরম্যান (আন্ডারসেক্রেটারি) ও আন্দ্রে জে শাপিরো (সহকারী পররাষ্ট্রসচিব)। এর আগে একাধিক প্যাসিফিক ফ্লিটের কমান্ডার বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এসব সফরের উদ্দেশ্য কী?
বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেড়েছে নানা কারণে। প্রথমত, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের নৌবাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করতে পারে। সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে একটি অ্যালায়েন্স গড়ে তোলা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলে সেখানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে, সেই শূন্যতা পূরণের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি 'শান্তিরক্ষী' বাহিনী গঠন করা, যারা ২০১৪ সালে মার্কিন সেনাদের পরিবর্তে আফগানিস্তানে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত হবে। তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ইসলামী কট্টরপন্থীরা দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে নতুন করে একটি ঘাঁটি গড়তে পারে। সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মোর্চা গঠন করা প্রয়োজন। চতুর্থত, এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে বিপুল জ্বালানি সম্পদ রয়েছে (গভীর সমুদ্রে)। মার্কিন আইওসির এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে যথেষ্ট। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্য এ কারণেই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে অবস্থান করে খুব সহজেই মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যায় এবং বাংলাদেশের কাছে প্রতিবেশী চীনের রাজনৈতিক উত্থান-পতনে প্রভাব খাটানো সম্ভব। হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরকে আমি এসব বিষয় সামনে রেখেই বিশ্লেষণ করতে চাই।
যাঁরা রবার্ট কাপলানের লেখালেখির সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা জানেন কাপলান দীর্ঘদিন ধরে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যাঁরা তাঁর ২০১০ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ Monsoon : The Indian Ocean and the future of American Power পাঠ করেছেন, তাঁরা দেখেছেন তিনি মার্কিনদের কাছে ভারত মহাসাগর কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের ওপর একটি চ্যাপ্টারও রয়েছে গ্রন্থটিতে (Bangladesh : The Existential Challenge)। রবার্ট কাপলান সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন, যা ছাপা হয়েছে গত ২৫ এপ্রিল STRATFOR নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জার্নালে (The India-China Rivalry)। ওই প্রবন্ধে রবার্ট কাপলান মন্তব্য করেছেন এভাবে_The growth of Indian military and economic power benefits the USA since its acts as a counter balance to a rising chinese Power, the USA never wants to see a Power as dominant in the Eastern Hemisphere as it itself is in the western Hemisphere. That is the silver living of the India-China rivalry. India, balancing against china and thus relieving the USA of some of the burden of being the world's dominant Power।'
এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। চীন যাতে শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা। চীন ইতিমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরে অন্যতম নৌশক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করছে। চীন এ অঞ্চলে 'String of Pearls' বা 'মুক্তার মালার' মতো বিভিন্ন সামুদ্রিক বন্দরে তার অবস্থান শক্তিশালী করে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। চীনের String of Pearls-এর যে নেটওয়ার্ক, তাতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত গাওদার সমুদ্রবন্দর একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মালাক্কা প্রবাসী হয়ে ভারত মহাসাগর পার হয়ে এরাবিয়ান গালফ পর্যন্ত সমুদ্রপথ ও পথের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় চীন। চীন যে তেল আমদানি করে তার ৮০ শতাংশ ওই মালাক্কা প্রণালি হয়ে চীনে যায়। তাই সংগত কারণেই চীনের জন্য তার ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাওদারে চীনা নৌবাহিনীর একটি ছোট্ট ইউনিটও থাকবে, যা কি না ভারত মহাসাগরের সব নৌ-ম্যুভমেন্ট মনিটর করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে গাওদার বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব আরো বেড়েছে। স্ট্রেইট অব হরমুজ থেকে গাওদারের দূরত্ব মাত্র ১৮০ নটিক্যাল মাইল।
আর ইরান সীমান্ত রয়েছে মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে। চীন প্রায় এক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে গাওদার সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে। চীন তার দক্ষিণাঞ্চলের ইউনান প্রদেশে মধ্য এশিয়ার গ্যাস এই গাওদার বন্দর দিয়েই পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে চায়। চীন শ্রীলঙ্কার হামবানটোটায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে। তামিল টাইগারদের সঙ্গে যুদ্ধে চীন শ্রীলঙ্কা সরকারকে সমর্থন করেছিল। মিয়ানমারে রয়েছে চীনের নৌবাহিনীর একটি রাডার স্টেশন। মিটওয়েসহ আরো বেশ কয়টি বন্দরে রয়েছে চীনা উপস্থিতি। ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে চীন যে বিশাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলছে, তা মূলত তার জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখেই করা হয়েছে। চীনের এ-জাতীয় স্বার্থকে আঘাত করা ও চীনের নৌবাহিনীর ভূমিকাকে খর্ব করার উদ্দেশ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সঙ্গে নিয়ে এ অঞ্চলে একটি মোর্চা গড়ে তুলছে, যাতে বাংলাদেশকে অন্যতম একটি পার্টনার হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থও রয়েছে।
তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন তেল কম্পানিগুলোর বড় বিনিয়োগ রয়েছে এ দেশে। শেভরনের বিনিয়োগের পরিমাণ এক মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট হাজার ২০০ কোটি টাকার সমান। শেভরন বর্তমানে জালালাবাদ, মৌলভীবাজার ও বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে কাজ করছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত গ্যাসের ৫০ শতাংশ শেভরন একাই উৎপাদন করে। বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে তাদের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় জনগণও অসন্তুষ্ট। সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে। এখন শেভরন চাইছে গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে তাদের অধিকার। বহুল আলোচিত 'টিফা' চুক্তির ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রয়েছে। যদিও বাংলাদেশ 'টিফা' নয়, বরং 'ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন ফোরাম' (টিআইসিএফ) নামে ভিন্ন নামে চুক্তিটি করতে যাচ্ছে। এটি এখনো ক্যাবিনেটে অনুমোদিত হয়নি।
এ ধরনের একটি চুক্তিতে বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনা কম। এ ধরনের চুক্তি হলে বাংলাদেশ কোনো পাইরেটেড পণ্য বাজারজাত করতে পারবে না। ওষুধ শিল্পও হুমকির মুখে পড়বে। এটা ঠিক হিলারি ক্লিনটনের এ সফরের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আরো উন্নতি ঘটবে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত বন্ধু ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ না উঠলেও 'গুম' তথা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়টি উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা 'মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি)' থেকে বাংলাদেশ কোনো সাহায্য পাচ্ছে না_এ প্রশ্নটিও বাংলাদেশ তুলতে পারে। মূলত দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৪ সালে এমসিসি গঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় কোনো বিরোধ নেই। বরং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র বারবার প্রশংসা করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে 'চীনকে ঘিরে ফেলার' যুক্তরাষ্ট্রের নয়া স্ট্র্যাটেজিতে নিজেকে যদি জড়িত করে, তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ নাও রক্ষিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এক হলেও বাংলাদেশ এতে করে ফায়দা তুলতে পারবে না।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tareque.rahman@aol.com
(সূত্র: কালের কন্ঠ,০৩/০৫/১২)
তাঁদের সবাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে গেছেন মারিয়া ওটেরো (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডারসেক্রেটারি), রবার্ট ওব্লেক (সহকারী পররাষ্ট্রসচিব), ভেন্ডি শেরম্যান (আন্ডারসেক্রেটারি) ও আন্দ্রে জে শাপিরো (সহকারী পররাষ্ট্রসচিব)। এর আগে একাধিক প্যাসিফিক ফ্লিটের কমান্ডার বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এসব সফরের উদ্দেশ্য কী?
বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেড়েছে নানা কারণে। প্রথমত, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের নৌবাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করতে পারে। সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে একটি অ্যালায়েন্স গড়ে তোলা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলে সেখানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে, সেই শূন্যতা পূরণের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি 'শান্তিরক্ষী' বাহিনী গঠন করা, যারা ২০১৪ সালে মার্কিন সেনাদের পরিবর্তে আফগানিস্তানে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত হবে। তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ইসলামী কট্টরপন্থীরা দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে বাংলাদেশে নতুন করে একটি ঘাঁটি গড়তে পারে। সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মোর্চা গঠন করা প্রয়োজন। চতুর্থত, এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে বিপুল জ্বালানি সম্পদ রয়েছে (গভীর সমুদ্রে)। মার্কিন আইওসির এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে যথেষ্ট। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্য এ কারণেই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে অবস্থান করে খুব সহজেই মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যায় এবং বাংলাদেশের কাছে প্রতিবেশী চীনের রাজনৈতিক উত্থান-পতনে প্রভাব খাটানো সম্ভব। হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরকে আমি এসব বিষয় সামনে রেখেই বিশ্লেষণ করতে চাই।
যাঁরা রবার্ট কাপলানের লেখালেখির সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা জানেন কাপলান দীর্ঘদিন ধরে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যাঁরা তাঁর ২০১০ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ Monsoon : The Indian Ocean and the future of American Power পাঠ করেছেন, তাঁরা দেখেছেন তিনি মার্কিনদের কাছে ভারত মহাসাগর কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের ওপর একটি চ্যাপ্টারও রয়েছে গ্রন্থটিতে (Bangladesh : The Existential Challenge)। রবার্ট কাপলান সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন, যা ছাপা হয়েছে গত ২৫ এপ্রিল STRATFOR নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জার্নালে (The India-China Rivalry)। ওই প্রবন্ধে রবার্ট কাপলান মন্তব্য করেছেন এভাবে_The growth of Indian military and economic power benefits the USA since its acts as a counter balance to a rising chinese Power, the USA never wants to see a Power as dominant in the Eastern Hemisphere as it itself is in the western Hemisphere. That is the silver living of the India-China rivalry. India, balancing against china and thus relieving the USA of some of the burden of being the world's dominant Power।'
এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। চীন যাতে শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা। চীন ইতিমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরে অন্যতম নৌশক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করছে। চীন এ অঞ্চলে 'String of Pearls' বা 'মুক্তার মালার' মতো বিভিন্ন সামুদ্রিক বন্দরে তার অবস্থান শক্তিশালী করে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। চীনের String of Pearls-এর যে নেটওয়ার্ক, তাতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত গাওদার সমুদ্রবন্দর একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মালাক্কা প্রবাসী হয়ে ভারত মহাসাগর পার হয়ে এরাবিয়ান গালফ পর্যন্ত সমুদ্রপথ ও পথের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় চীন। চীন যে তেল আমদানি করে তার ৮০ শতাংশ ওই মালাক্কা প্রণালি হয়ে চীনে যায়। তাই সংগত কারণেই চীনের জন্য তার ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাওদারে চীনা নৌবাহিনীর একটি ছোট্ট ইউনিটও থাকবে, যা কি না ভারত মহাসাগরের সব নৌ-ম্যুভমেন্ট মনিটর করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে গাওদার বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব আরো বেড়েছে। স্ট্রেইট অব হরমুজ থেকে গাওদারের দূরত্ব মাত্র ১৮০ নটিক্যাল মাইল।
আর ইরান সীমান্ত রয়েছে মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে। চীন প্রায় এক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে গাওদার সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে। চীন তার দক্ষিণাঞ্চলের ইউনান প্রদেশে মধ্য এশিয়ার গ্যাস এই গাওদার বন্দর দিয়েই পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে চায়। চীন শ্রীলঙ্কার হামবানটোটায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে। তামিল টাইগারদের সঙ্গে যুদ্ধে চীন শ্রীলঙ্কা সরকারকে সমর্থন করেছিল। মিয়ানমারে রয়েছে চীনের নৌবাহিনীর একটি রাডার স্টেশন। মিটওয়েসহ আরো বেশ কয়টি বন্দরে রয়েছে চীনা উপস্থিতি। ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে চীন যে বিশাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলছে, তা মূলত তার জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখেই করা হয়েছে। চীনের এ-জাতীয় স্বার্থকে আঘাত করা ও চীনের নৌবাহিনীর ভূমিকাকে খর্ব করার উদ্দেশ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সঙ্গে নিয়ে এ অঞ্চলে একটি মোর্চা গড়ে তুলছে, যাতে বাংলাদেশকে অন্যতম একটি পার্টনার হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থও রয়েছে।
তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন তেল কম্পানিগুলোর বড় বিনিয়োগ রয়েছে এ দেশে। শেভরনের বিনিয়োগের পরিমাণ এক মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট হাজার ২০০ কোটি টাকার সমান। শেভরন বর্তমানে জালালাবাদ, মৌলভীবাজার ও বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে কাজ করছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত গ্যাসের ৫০ শতাংশ শেভরন একাই উৎপাদন করে। বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডে তাদের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় জনগণও অসন্তুষ্ট। সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে। এখন শেভরন চাইছে গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে তাদের অধিকার। বহুল আলোচিত 'টিফা' চুক্তির ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রয়েছে। যদিও বাংলাদেশ 'টিফা' নয়, বরং 'ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন ফোরাম' (টিআইসিএফ) নামে ভিন্ন নামে চুক্তিটি করতে যাচ্ছে। এটি এখনো ক্যাবিনেটে অনুমোদিত হয়নি।
এ ধরনের একটি চুক্তিতে বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনা কম। এ ধরনের চুক্তি হলে বাংলাদেশ কোনো পাইরেটেড পণ্য বাজারজাত করতে পারবে না। ওষুধ শিল্পও হুমকির মুখে পড়বে। এটা ঠিক হিলারি ক্লিনটনের এ সফরের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আরো উন্নতি ঘটবে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত বন্ধু ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ না উঠলেও 'গুম' তথা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়টি উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা 'মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিসি)' থেকে বাংলাদেশ কোনো সাহায্য পাচ্ছে না_এ প্রশ্নটিও বাংলাদেশ তুলতে পারে। মূলত দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৪ সালে এমসিসি গঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় কোনো বিরোধ নেই। বরং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র বারবার প্রশংসা করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে 'চীনকে ঘিরে ফেলার' যুক্তরাষ্ট্রের নয়া স্ট্র্যাটেজিতে নিজেকে যদি জড়িত করে, তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ নাও রক্ষিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এক হলেও বাংলাদেশ এতে করে ফায়দা তুলতে পারবে না।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
tareque.rahman@aol.com
(সূত্র: কালের কন্ঠ,০৩/০৫/১২)
can't we move with a balanced indo-china relationship? What to do? Pls write another article.
ReplyDeleteWell, I will try. Follow me either in Kalerkontho or in Jugantor. Thanks.
ReplyDeleteTSR