গত ৩০ মে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। কেমন হবে তাঁর প্রশাসন? কী হবে তাঁর রাজনীতি? বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হবে? ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ের পর বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। কট্টর হিন্দুত্ববাদী নীতি ও মুসলমান বিদ্বেষকে তিনি নির্বাচনের আগে পুঁজি করেছিলেন। পশ্চিম বাংলায় এনআরসি করা, মুসলিম পারিবারিক আইনে পরিবর্তন আনা, সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য যে বিশেষ সুবিধা (ধারা ৩৭০ ও ৩৫-ক) রয়েছে, তা বাতিল করাসহ নানা বক্তব্য তাঁকে ‘বিতর্কিত’ করলেও, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাস্তব ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি এসব বাস্তবায়নে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি না? পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী হবে, সেটি নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। তাঁর পররাষ্ট্রনীতি, বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী হবে—বিষয়গুলোও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হওয়ায় রাজনীতিতে, পার্লামেন্টে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ নেই। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ভালো—তিনি বলেছেন, সবাইকে নিয়েই তিনি ‘কাজ’ করবেন। এটিই গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য। এটিই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। তার পরও তাঁর নয়া সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। অর্থনীতি হবে তাঁর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি ঠিক, মোদির প্রথম জামানায় ভারত অন্যতম বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে (বিশ্বে ষষ্ঠ, ক্রয়ক্ষমতা বা পিপিপির হিসাবে তৃতীয়)। ২.৮৪৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ভারতের। কিন্তু বেকার সমস্যা সেখানে প্রবল। কর্মজীবী মানুষের (যাদের বয়স ১৫-এর ওপরে) মধ্যে ৫০ শতাংশের কোনো চাকরি নেই। ৬৫ শতাংশ মানুষের বয়স ৩৫-এর নিচে। তাদের জন্য চাকরি দরকার। বেকারত্বের হার ছিল ৬.১ শতাংশ, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৭.৬ শতাংশে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মাসে ১২ লাখ তরুণের জন্য কাজ দরকার। বিষয়টি নরেন্দ্র মোদির জন্য যে খুব সহজ, তা বলা যাবে না। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে কৃষকদের আস্থায় নেওয়া। সাম্প্রতিককালে ভারতে সবচেয়ে বড় কৃষক আন্দোলন হয়েছে। কৃষকদের সংগঠিত করে বাম সংগঠনগুলো নয়াদিল্লিতে পর্যন্ত দীর্ঘ লংমার্চ করেছে। ঋণের ভারে কৃষকরা পর্যুদস্ত। তারা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে। এ রকম ঘটনা একটি নয়, অনেক। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী (৩ মে ২০১৭) বছরে ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করে। সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি জানানো হয়েছিল।
ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে কৃষকদের আত্মহত্যা যেকোনো সরকারের জন্যই একটি বিব্রতকর অবস্থা। মোদি সরকার তাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে ছয় হাজার রুপি করে দেওয়ার। আর কংগ্রেসের প্রস্তাব ছিল গরিব মানুষকে (২০ শতাংশ) বছরে ৭২ হাজার টাকা করে দেওয়া। নয়া সরকারের জন্য এটি হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যাপক শিল্পায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারতে বড় ধরনের পানি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ সুপেয় পানির অভাবে মারা যায়। ২০২০ সালের মধ্যে ২১টি বড় শহরে পানি সংকট দেখা দেবে। ৭৫ শতাংশ মানুষ নিজ বাড়িতে সুপেয় পানি পায় না। আর ৭০ শতাংশ পানি দূষিত। সুচিকিৎসা ভারতের জন্য একটি বড় সমস্যা। National Health Profile ২০১৪-তে দেখা যায়, ভারতের নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয় জিডিপির মাত্র ১.৫ শতাংশ। অন্যদিকে ধনী রাষ্ট্রগুলো ব্যয় করে ৫.১ শতাংশ। এমনকি নিম্ন আয়ের দেশগুলোও ব্যয় করে প্রায় ২ শতাংশ। এটি মোদি সরকারের আরেকটি চ্যালেঞ্জ—কী করে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়। এ জন্য বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার Ayushman Bharat প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যাতে করে একটি বীমার আওতায় নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে। কিন্তু এতে করে কতটুকু সফলতা পাওয়া যাবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
শিক্ষা নয়া সরকারের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ। বিপুলসংখ্যক তরুণ প্রতিবছর ‘জব মার্কেটে’ প্রবেশ করছে। কিন্তু তারা সুশিক্ষিত নয়। অথবা বলা যেতে পারে তাদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যায়নি। Gross Enrolment Ratio (GER)-তে দেখা যায়, প্রাথমিক স্টেজে (ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত) সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ নিবন্ধন হয়েছিল ২০০৯ সালে। ২০১৬-১৭ সালে তা নেমে আসে ৯০ শতাংশের কিছুটা ওপরে। কলেজ শিক্ষায় নিবন্ধন বেড়েছে, ২০০১ সালে যেখানে নিবন্ধনের হার ছিল ৫-৬ শতাংশ, সেখানে ২০১৬-১৭ সালে তা বেড়েছে ২০ শতাংশের ওপরে। কিন্তু গুণগত শিক্ষার মান নিশ্চিত হয়নি। যে কারণে দেখা যায়, শুধু সরকারি পিয়ন পদের জন্য আবেদনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা শুধু গ্র্যাজুয়েটাই নয়, বরং পিএইচডি ডিগ্রিধারীরাও আবেদন করছে। এসংক্রান্ত প্রতিবেদন সংবাদপত্রে ছাপাও হয়েছে। বিপুল তরুণ প্রজন্মের এই দেশে মোদি সরকারের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ—কিভাবে সুশিক্ষায় আগামী প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তোলা যায়। বিশ্ব আসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে যে ‘যুবশক্তি’ ভারতের দরকার, তা ভাবতে হবে নয়া সরকারকে। মোদি সরকারের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দলিত ও নিম্ন শ্রেণির মানুষের পাশাপাশি মুসলমানদেরও তাদের দরিদ্রতম অবস্থা থেকে তুলে আনা। Sachar Committee Report (২০১৮)-এ দেখা যায়, ভারতে Scheduled Castes (SC) এবং Scheduled Tribes (ST)-এর মধ্যে দারিদ্র্যের অবস্থা সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩৫ শতাংশ। এর পরের অবস্থান মুসলমানদের, ৩১ শতাংশ। মুসলমানদের আস্থায় নিতে হলে তাদের দরিদ্রতম অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। না হলে অসন্তোষ বাড়বে। এটি মোদি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারতে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক (৪৮.১৮ শতাংশ) নারী। অথচ সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব সীমিত। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব খুব যে বেড়েছে, তা বলা যাবে না। ৫৪৩ সদস্যবিশিষ্ট লোকসভায় নারী প্রতিনিধিত্ব ২০১৪ সালে ছিল ৭৬, ২০১৯ সালে তা বেড়েছে ৭৮-এ। নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর দাবি রয়েছে। ক্রমবর্ধমান নারী সহিংসতার কারণে ভারতে #MeToo আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল। স্বাধীনতার এত বছর পরও নারীরা পূর্ণ নিরাপদ নয়। মোদি সরকারের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ—কিভাবে নারী সহিংসতা কমানো যায়। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে গেছে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম।
সন্ত্রাসীরা ভারত সীমান্তের বাইরে থেকে, বিশেষ করে পাকিস্তান থেকে এসে খোদ ভারতের ভেতরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড বাড়ছে। এটি যে নয়া মোদি সরকারের অন্যতম এজেন্ডা হবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং এই সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড কিভাবে রোধ করা যায়, সে ব্যাপারে বড় উদ্যোগ নেবেন মোদি। এরই মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মোদিকে অভিনন্দন বাণী পাঠালেও দুই দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে। পাকিস্তানি মদদপুষ্ট জঙ্গিরা ভারতের মাটিতে হামলা চালাচ্ছে। ২০১৬ সালে উরিতে, ২০০১ সালে ভারতীয় পার্লামেন্ট ভবনে হামলা, ২০০৮ সালে মুম্বাই হোটেলে হামলা—প্রতিটি জঙ্গি ঘটনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে ভারতের অভিযোগ। এবং সর্বশেষ বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলন আয়োজনে ভারতের আপত্তি রয়েছে। ফলে মোদির জন্য এটিও একটি চ্যালেঞ্জ—তিনি কিভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবেন। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মোদির আরেকটি এজেন্ডা। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ছে। এটি ভারতের পছন্দ নয়। চীন তার ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনছে। এটি ভারতের চিন্তার কারণ। মোদির আমলে পুরনো ‘কটন রুট’কে পুনরুজ্জীবিত করতে চায় ভারত। এটি চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এর বিকল্প। ভারত-চীন সম্পর্কটি তাই আলোচনায় থাকবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ‘কৌশলগত সম্পর্ক’ আরো জোরদার হয়েছে। ভারতের জোট নিরপেক্ষতা এখন প্রশ্নের মুখে। মার্কিনি চাপে ভারত ইরান থেকে সস্তায় জ্বালানি তেল আনতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আগামী পাঁচ বছর কোন পর্যায়ে যায়, সেটিও মোদির অন্যতম একটি এজেন্ডা। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশাও অনেক। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করে, এসব সমস্যার সমাধানে মোদি আন্তরিক হবেন।
কট্টর হিন্দুত্ববাদ মোদিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। তিনি যদি এখন একটি বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ করেন, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং তিনি সত্যিকার অর্থেই বিশ্বনেতায় পরিণত হবেন। এটি অস্বীকার করা যাবে না, মোদির রাজনীতি নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন, মোদি নিজেকে জওয়াহেরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধীর সমপর্যায়ে নিয়ে গেছেন। যে বিজেপি সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে ১৯৮৪ সালে (অষ্টম লোকসভা) মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল, ২০১৯ সালে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে দলটি পেয়েছে এককভাবে ৩১৩ আসন, আর জোটগতভাবে ৩৫০ আসন। তাঁর ব্যক্তি কারিশমার কারণে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে নেহরু পরিবার আর বিরোধী দলের সম্মিলিত উদ্যোগ। পারিবারিক আসন আমেথিতে রাহুলের পরাজয়ের পেছনে স্মৃতি ইরানির অবদান যতটুকু না ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল মোদির ইমেজ। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন অনেক। নির্বাচনের আগে তিনি যেসব বক্তব্য দিয়েছিলেন (পশ্চিম বাংলায় নাগরিকপঞ্জি, কিছু মুসলমানকে ‘অবৈধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের পুশব্যাক করা), তা কি বাস্তবায়ন করবেন? নাকি একটি বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ করবেন? আগামী পাঁচ বছর তিনি ক্ষমতায় থাকবেন।
বিবিসির ভাষ্য মতে, এবারের লোকসভা নির্বাচন ভারতবাসীকে অনেকটা দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলেছিল—একদিকে হিন্দুত্ববাদী কট্টর জাতীয়তাবাদ, অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা। হিন্দুত্ববাদের বিজয় হয়েছে। কিন্তু এই হিন্দুত্ববাদ নিয়ে নরেন্দ্র মোদি বেশি দূর এগিয়ে যাবেন বলে মনে হয় না। এর বড় প্রমাণ গত ২৫ মে। সংসদের সেন্ট্রাল হলে পা রাখার ঠিক আগে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা সংবিধানের ওপর মাথা ছোঁয়ালেন নরেন্দ্র মোদি। বললেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’। ‘সবকা বিশ্বাস’ এটি নতুন মন্ত্র। এই বিশ্বাসটি কাদের। সংখ্যালঘু মুসলমানদের। তিনি বললেন, ‘সংবিধানকে সাক্ষী রেখে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে সব বর্ণের মানুষকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। ধর্ম-জাতির ভিত্তিতে কোনো ভেদাভেদ হবে না’ (আনন্দবাজার ২৬ মে)। এটিই সঠিক রাজনীতি। সবার আস্থা অর্জন করা জরুরি। ৩০ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এনডিএ-২ সরকারের যাত্রা শুরু হলো। পাঁচ বছরের এই যাত্রাপথ কতটুকু মসৃণ হবে, কতটুকু আস্থা তিনি নিশ্চিত করতে পারবেন—সেটিই দেখার বিষয়
Daily Kalerkontho
09.06.2019
0 comments:
Post a Comment