রোহিঙ্গা
থেকে এনআরসি। বাংলাদেশ আর বাংলাদেশিরা আজ ‘অভিযুক্ত’! ২০১৭ সালে তথাকথিত
বাংলাদেশি বলে অভিযোগ এনে মিয়ানমার বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয় রোহিঙ্গা নামে
পরিচিত ৭ লাখ ২০ হাজার মিয়ানমারের নাগরিককে। বাংলাদেশ সেদিন মানবিক দিক
বিবেচনা করে তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। সারা বিশ্ব সেদিন বাংলাদেশের প্রশংসা
করেছিল। এরপর মিয়ানমার কথা দিয়েছিল, তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে।
দু’বছর পার হয়েছে। একটি চুক্তি হয়েছে। একজন নাগরিককেও মিয়ানমার ফেরত নেয়নি।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন ভারতের আসাম থেকে এলো আরেকটি দুঃসংবাদ। তারা সেখানে
এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) করেছে। চূড়ান্ত বিচারে বাদ দেয়া
হয়েছে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষকে, যারা বছরের পর বছর ধরে সেখানে বসবাস
করে আসছেন। অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা নাকি সবাই ‘বাংলাদেশি’! এ নিয়ে খোদ
ভারতবর্ষেই তুলকালাম কাণ্ড। এই নাগরিকপঞ্জির হিসাব পুরোটাই রাজনৈতিক।
উদ্দেশ্য পরিষ্কার- ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। মুসলমানদের
জন্য ভারতবর্ষ নয়! যে ভারতকে সারা বিশ্বের মানুষ দেখে এসেছে একটি
গণতান্ত্রিক, উদারনৈতিক ও মানবতাবাদী দেশ হিসেবে; সেই ভারত কিনা এখন পরিণত
হতে যাচ্ছে কট্টরপন্থী একটি হিন্দু রাষ্ট্রে! এটা তো এক ধরনের ‘এথনিক
ক্লিনসিং’, জাতিগত উচ্ছেদ।
কাশ্মীর থেকে আসাম- মিল এক জায়গায়। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা।
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ তো জানিয়েই দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশি
হিন্দুরা স্বাগত, অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের ঠাঁই নেই। মুসলমানরা কোনো রেয়াত
পাবে না।’ আর অত্যন্ত ক্ষমতাধর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তো প্রকাশ্যেই
ঘোষণা করলেন- ‘ভারতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান শরণার্থীদের সবাই নাগরিকত্ব
পাবে, শুধু মুসলমান বাদে।’ বার্তাটি স্পষ্ট- আসামে এনআরসিতে যেসব হিন্দু
বাদ পড়েছেন, তারা বিশেষ বিবেচনায় সেখানকার নাগরিকত্ব পাবেন। পাবেন না শুধু
মুসলমানরা। কী ভয়ংকর কথা! ভারতের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ‘এথনিক
ক্লিনসিং’! এ ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯৯২ সালে সাবেক যুগোস্লাভিয়া
থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্র
বসনিয়া-হারজেগোভিনার কথা। ওই সময় সারা বিশ্বের মানুষ জেনেছিল সার্ব কর্তৃক
(যারা ছিলেন অর্থোডক্স খ্রিস্টান) ‘বসনিকাস’দের (বসনিয়ার মুসলমান) উচ্ছেদ ও
গণহত্যার কথা। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সার্বরা সেখানে গণহত্যা চালায়,
যাতে প্রাণ হারান ১ লাখ মানুষ; যাদের প্রায় সবাই ছিলেন মুসলমান। ওই সময়
সেব্রেনিসার গণহত্যা ও গণকবরের খবর সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছিল।
আসামে এ ধরনের গণহত্যা হয়তো হবে না; কিন্তু বাদ পড়া মুসলমানদের আর তাদের
বাসভূমে থাকতে দেয়া হবে না। তাদের নিয়ে যাওয়া হবে ক্যাম্পে। এক হাজারের মতো
এ ধরনের ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে সেখানে। আশঙ্কা হচ্ছে, জীবনের শেষদিন
পর্যন্ত হয়তো তাদের অনেককেই এই ক্যাম্পেই শেষ জীবন কাটাতে হবে। এখানেই
রয়েছে আরাকানে আর কক্সবাজারে যেসব ক্যাম্প করে রোহিঙ্গাদের রাখা হচ্ছে, তার
সঙ্গে অদ্ভুত এক মিল। মিয়ানমারের আরাকানে এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারে
ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের রাখা হচ্ছে, যারা মুসলমান। আর এনআরসির কারণে আসামে
যারা নাগরিকত্ব হারিয়েছেন তারাও মুসলমান। মিলটা এখানেই। মিয়ানমারের রাখাইন
স্টেটে এখনও প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান রয়ে গেছেন, যাদের মধ্যে ১ লাখ ৩০
হাজারকে সেখানে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়ে রাখা হয়েছে। এএফপির এক রিপোর্টে এসব
ক্যাম্পকে ‘কনসেনট্রেশন’ ক্যাম্প হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি
ইন্টারন্যাশনাল রাখাইন স্টেটকে ‘Apartheid State " বা ‘বর্ণবাদী রাজ্য’
হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ( The Globe Post, 26 June 2019 )।
আসামের পরিস্থিতি কি এখন সেদিকেই যাচ্ছে? কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ২২ আগস্ট একটি প্রত্যাবাসনের দিন ধার্য করা হলেও একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গারা পাঁচটি দাবি উত্থাপন করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি জটিল করে তুলেছে। এটা এখন স্পষ্ট যে, কোনো ধরনের নিরাপত্তা না পেলে রোহিঙ্গারা আর ফেরত যাবে না। এর পেছনে এনজিওগুলোর প্রত্যক্ষ মদদের কথাও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে একটি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখনই এলো আসামে এনআরসির কথা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৯ লাখ বাঙালিকে এখন বাংলাদেশে পুশ-ইন করার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
এনআরসি প্রকারান্তরে ভারতীয় সংবিধানের (গৃহীত নভেম্বর, ১৯৪৯) Preamble বা প্রস্তাবনার পরিপন্থী। এই চৎবধসনষব ভারতীয় সংবিধানের অংশ। এতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে, যা কিনা ভারতীয় সংবিধানের মূল ভিত্তি। এগুলো হচ্ছে- ন্যায়পরায়ণতা (Justice ), স্বাধীনতা ( Liberty ), সমতা ( Equality ), ভ্রাতৃত্ববোধ ( Fraternity )। জাত, পাত, ধর্ম কাউকে আলাদা করতে পারবে না- সমতার এটাই কথা। কিন্তু এখন এনআরসি করে ১৯ লাখ মানুষকে আলাদা করা হল। সংবিধানে ‘ভ্রাতৃত্ববোধের’ কিংবা ‘ন্যায়পরায়ণতা’র যে কথা বলা হয়েছে, এটাও তার পরিপন্থী। এই এনআরসি এখন মুসলমানবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। যদিও এটা সত্য, এই বাদ পড়া নাগরিকত্বের তালিকায় অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকও রয়েছেন। তবে চূড়ান্ত বিচারে এবং Foreign Tribunal (প্রায় এক হাজার আপিল ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে)-এর মাধ্যমে হিন্দুরা তাদের নাগরিকত্ব ফেরত পেতে পারেন। কারণ লোকসভায় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (যা ১৯৫৫ সালের নাগরিক আইনের সংশোধনী ও প্রতিস্থাপিত হবে) উত্থাপিত হয়েছে, তাতে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হলেও সুনির্দিষ্টভাবে ‘মুসলমান’দের বাদ রাখা হয়েছে। এই প্রস্তাবিত সংশোধনী বলে আসামের হিন্দুরা সেখানে নাগরিকত্ব পাবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভা নির্বাচনের (২০১৯) আগে ও পরে একাধিকবার বলেছেন, হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। চূড়ান্ত বিচারে তাই মুসলমানরা বড় বিপদে পড়বেন। বিজেপি সরকার ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে দেখতে চায়। ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে নরেন্দ্র মোদি যে ‘হিন্দুত্ববাদী’ নীতির সূচনা করেছেন, তারই ফল হচ্ছে তথাকথিত এ নাগরিকপঞ্জি। এই নাগরিকপঞ্জি ১৯৮৫ সালে ত্রিপক্ষীয় যে সমঝোতা হয়েছিল (কেন্দ্র, আসাম সরকার ও আসাম ছাত্র ফেডারেশন), তারও পরিপন্থী। এই সমঝোতায় একটি ‘স্ট্যাটাস কো’র কথা বলা হয়েছিল।
আসামের পরিস্থিতি কি এখন সেদিকেই যাচ্ছে? কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ২২ আগস্ট একটি প্রত্যাবাসনের দিন ধার্য করা হলেও একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গারা পাঁচটি দাবি উত্থাপন করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি জটিল করে তুলেছে। এটা এখন স্পষ্ট যে, কোনো ধরনের নিরাপত্তা না পেলে রোহিঙ্গারা আর ফেরত যাবে না। এর পেছনে এনজিওগুলোর প্রত্যক্ষ মদদের কথাও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে একটি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই যখন পরিস্থিতি, তখনই এলো আসামে এনআরসির কথা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৯ লাখ বাঙালিকে এখন বাংলাদেশে পুশ-ইন করার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
এনআরসি প্রকারান্তরে ভারতীয় সংবিধানের (গৃহীত নভেম্বর, ১৯৪৯) Preamble বা প্রস্তাবনার পরিপন্থী। এই চৎবধসনষব ভারতীয় সংবিধানের অংশ। এতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে, যা কিনা ভারতীয় সংবিধানের মূল ভিত্তি। এগুলো হচ্ছে- ন্যায়পরায়ণতা (Justice ), স্বাধীনতা ( Liberty ), সমতা ( Equality ), ভ্রাতৃত্ববোধ ( Fraternity )। জাত, পাত, ধর্ম কাউকে আলাদা করতে পারবে না- সমতার এটাই কথা। কিন্তু এখন এনআরসি করে ১৯ লাখ মানুষকে আলাদা করা হল। সংবিধানে ‘ভ্রাতৃত্ববোধের’ কিংবা ‘ন্যায়পরায়ণতা’র যে কথা বলা হয়েছে, এটাও তার পরিপন্থী। এই এনআরসি এখন মুসলমানবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। যদিও এটা সত্য, এই বাদ পড়া নাগরিকত্বের তালিকায় অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকও রয়েছেন। তবে চূড়ান্ত বিচারে এবং Foreign Tribunal (প্রায় এক হাজার আপিল ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে)-এর মাধ্যমে হিন্দুরা তাদের নাগরিকত্ব ফেরত পেতে পারেন। কারণ লোকসভায় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (যা ১৯৫৫ সালের নাগরিক আইনের সংশোধনী ও প্রতিস্থাপিত হবে) উত্থাপিত হয়েছে, তাতে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হলেও সুনির্দিষ্টভাবে ‘মুসলমান’দের বাদ রাখা হয়েছে। এই প্রস্তাবিত সংশোধনী বলে আসামের হিন্দুরা সেখানে নাগরিকত্ব পাবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভা নির্বাচনের (২০১৯) আগে ও পরে একাধিকবার বলেছেন, হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। চূড়ান্ত বিচারে তাই মুসলমানরা বড় বিপদে পড়বেন। বিজেপি সরকার ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে দেখতে চায়। ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে নরেন্দ্র মোদি যে ‘হিন্দুত্ববাদী’ নীতির সূচনা করেছেন, তারই ফল হচ্ছে তথাকথিত এ নাগরিকপঞ্জি। এই নাগরিকপঞ্জি ১৯৮৫ সালে ত্রিপক্ষীয় যে সমঝোতা হয়েছিল (কেন্দ্র, আসাম সরকার ও আসাম ছাত্র ফেডারেশন), তারও পরিপন্থী। এই সমঝোতায় একটি ‘স্ট্যাটাস কো’র কথা বলা হয়েছিল।
এদিকে এনআরসিকে বাংলাদেশ বলছে, ‘এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু’। ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের সময় (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বক্তব্যটি দিয়েছিলেন। এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে প্রকাশ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে, আসামে এনআরসিতে বাদ পড়া নাগরিকরা বাংলাদেশি, সেখানে এনআরসির ইস্যুটি আর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে না, এর সঙ্গে বাংলাদেশ জড়িয়ে যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘Neighborhood First’, প্রতিবেশীরা আগে। অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত অগ্রাধিকার দেয়। মোদির ঢাকা সফরের সময় (জুন, ২০১৫) মোদি নিজে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু এনআরসির তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মাঝে অবিশ্বাসের জন্ম হতে পারে এখন। এতে করে মোদি প্রস্তাবিত উপআঞ্চলিক সহযোগিতা BBIN (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারতের সাত বোন রাজ্য-নেপাল) প্রশ্নের মুখে পড়বে। এর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। এই তালিকাটি প্রকাশিত হল এমন এক সময়, যখন অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার বারবার বলে আসছে, দু’দেশের সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের কথা অনুযায়ী এই সম্পর্ক ‘স্বামী-স্ত্রীর মতো’ (বাংলাদেশ টুডে, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯)। এই যখন ‘সম্পর্ক’ তখন এনআরসির তালিকা প্রকাশ এ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী ভারতের অর্থনীতি এখন খুব নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে এসেছে; অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ (আনন্দবাজার, ৩১ আগস্ট, ২০১৯)। প্রবৃদ্ধির এই হার গেল ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে। আসামে নাগরিকপঞ্জি তালিকা প্রকাশ করে বিজেপি সরকার অভ্যন্তরীণ এই সংকটকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে। যারা ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’ বিশ্বাস করেন, তারা মনে করতেই পারেন, বাংলাদেশকে ‘চাপে’ রাখার এটা একটা কৌশল। বাংলাদেশ থেকে আরও কিছু সুবিধা নিতে চায় ভারত। তবে সেই ‘সুবিধা’গুলো কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। হয়তো আগামীতে সেই বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে। সুতরাং এনআরসি যে বাংলাদেশের জন্য একটা উদ্বেগ তৈরি করেছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না।
বাংলাদেশ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, এনআরসিতে বাদ পড়া ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিক নন। কিন্তু আসামের অর্থমন্ত্রী ও বিজেপির অন্যতম স্ট্র্যাটেজিস্ট হিমান্ত বিশ্ব শর্মা যখন বলেন, বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে ১৪-১৫ লাখ ‘অবৈধ অভিবাসীকে’ তারা বাংলাদেশে ফেরত নিতে বলবেন, তখন বাংলাদেশ চুপ করে বসে থাকতে পারে না। বাংলাদেশ এর ব্যাখ্যা চাইতে পারে। কূটনৈতিক পর্যায়ে বলে দিতে পারে, ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের সমর্থন পেলেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে না পারা আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা। আমরা বিশ্ব জনমতকে আমাদের কাজে লাগাতে পারিনি। সনাতন কূটনৈতিক প্রক্রিয়া এখানে ব্যর্থ হয়েছে। চীনের সমর্থন আমরা পাইনি। পাবও না। চীন তার জাতীয় স্বার্থের কারণে মিয়ানমারকে তুলনামূলক বিচারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারে গণহত্যাকারীদের বিচারের প্রক্রিয়াও শ্লথ। উপরন্তু চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সেখানে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, শীর্ষ পর্যায়ে সফর বিনিময় করছে। এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে সিনিয়র রাজনীতিক, বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করা যেতে পারে। ‘ট্রাক টু ডিপ্লোমেসি’র বিষয়টিও ভেবে দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশ নতুন একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেয়েছে। তিনি রোহিঙ্গা প্রশ্নে ‘আরাম তত্ত্বের’ কথা বলে প্রকারান্তরে রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যেতে উৎসাহিত করেছিলেন; কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সুতরাং একদিকে রোহিঙ্গা, অন্যদিকে এনআরসি- বাংলাদেশকে নতুন করে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে হবে।
Daily Jugantor
07.09.2019
অসাধারণ লিখেছেন স্যার।
ReplyDelete