বাসচালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। হাইওয়ে পুলিশের কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে। অদক্ষ ও ভুয়া চালকদের চিহ্নিত করার স্বার্থে প্রতিটি গাড়িতে একটি বিশেষ যন্ত্র স্থাপন করতে হবে, যার মাধ্যমে ভুয়া লাইসেন্স চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। চালকদের যে কোনো অন্যায়ের জন্য ফাইন ও লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মহাসড়কের পাশে কোনো হাট-বাজার থাকবে না। গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিডব্রেকার থাকতে হবে। কিছুদূর পরপর গতি নিয়ন্ত্রণ মেশিন থাকতে হবে, যা হবে অটোমেটিক। প্রতিটি গাড়ির গতির পরিমাণ রেকর্ড হবে এবং অতিরিক্ত গতির জন্য চালককে ফাইন গুনতে হবে। মন্ত্রী মহোদয় এসব ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন। পরিবহন শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে পরে দুঃখ প্রকাশ করলে তাতে সমস্যার সমাধান হবে না নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কেননা তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সভায় (২৪ অক্টোবর) তার সমর্থকরা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রবক্তা ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রতিকৃতির ওপর জুতা নিক্ষেপ করেছিল। জুতা নিক্ষেপের ছবি পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। নৌপরিবহনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেওয়ার পর মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করলেও মন্ত্রীর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে থাকে। গত ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীর। তাদের এই মৃত্যুতে সর্বমহলে একটি গণসচেতনতা সৃষ্টি হয়েছিল। সাধারণ মানুষ ওই মৃত্যুতে শুধু সমবেদনাই জানায়নি, তারা ধিক্কার জানিয়েছিল ঘাতক বাসচালককে। তদন্ত কমিটিও বাসচালককে অভিযুক্ত করেছিল। ইলিয়াস কাঞ্চন গত প্রায় দুই দশক ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে আসছেন। তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীরের মৃত্যুতে তিনি এগিয়ে আসবেন, এটাই স্বাভাবিক। তিনি এসেছিলেন। একদিন অনশনও পালন করেছেন। তিনি কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে এই আন্দোলন করেননি। বরং বাসচালকদের বেপরোয়া মনোভাব, অদক্ষতা, পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা ও সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেই সেদিন অনশন পালন করেছিলেন। কিন্তু নৌপরিবহনমন্ত্রী এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। তিনি পাল্টা কর্মসূচি দিলেন। উস্কে দিলেন পরিবহন শ্রমিকদের। বললেন_ বাসচালকদের ঘাতক বলা যাবে না। বললেন_ ৩০২ ধারা (জামিন অযোগ্য ধারা) বাতিল করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও এ দেশের একজন শ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদ_ তাকেও হুমকি দিলেন বাসচালকদের নিয়ে নিবন্ধ লেখার কারণে। তার উপস্থিতিতেই ঘোষণা করা হয়েছিল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ রুটে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট (১০ জেলায়) পালন করা হবে। ওই ধর্মঘট গত ২৬ অক্টোবর শুরু হলেও পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে যশোর, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি রুটে ওইদিন কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। সংবাদপত্রগুলো আমাদের জানাচ্ছে, পরিবহন শ্রমিকরা ওইদিন নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছিল।
মন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে পরিবহন শ্রমিকরা যখন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তখন মন্ত্রীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয় বৈকি। মন্ত্রী পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি করেন। কিন্তু তিনি যদি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতেন, আমি খুশি হতাম। সড়ক দুর্ঘটনায় বাসচালকরা দায়ী_ এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এটাও সত্য, শুধু বাসচালকরাই এককভাবে দায়ী নয়। আমি নিত্যদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাভার-ঢাকা মহাসড়কে চলাচল করি। নিত্যদিন আমি প্রত্যক্ষ করি, চালকরা ওভারটেক করছে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ি ঢুকিয়ে দিচ্ছে রং সাইডে। দেখার যেন কেউ নেই। হেমায়েতপুর, সাভার বাজার, সেই একই চিত্র। ট্রাফিক পুলিশের কাজটি হচ্ছে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা। তারা তা করছে না। হেমায়েতপুর বাজারে দেখলাম দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন (তিনি কি ঈদ বকশিশ আদায় করছিলেন!)। সাভার বাজারে সেই পুরনো দৃশ্য_ রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে, আর পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশ নির্বিকার। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছেন না। একটু সামনে গেলেই একটা বাঁক, দেখলাম সেখানে সেই প্রতিযোগিতা_ কে কার আগে যাবে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ দৃশ্য আমাকে সপ্তাহে একাধিক দিন দেখতে হয়। কেননা এ রুট ধরেই আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করি। উপযাচক হয়ে অতীতে একাধিক দিন সাভার এলাকায় দায়িত্ব পালনরত সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। না, কিছুই হয়নি। কোনো পরিবর্তন হয়নি। যেমনটা ছিল দু\'দিন আগে, তেমনটিই রয়ে গেছে। সেই ওভারটেকিং, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন না করা, ভুল পথে চালদের গাড়ি চালানো_ সবকিছুই আগের মতো। এই মঙ্গলবারও (১৫ নভেম্বর) ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের এই ছিল দৃশ্য। এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, এমনকি রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো, আন্দোলন হলো, সেখানে এতটুকুও সচেতন হলেন না যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা। ওই মৃত্যু তাদের এতটুকুও স্পর্শ করেনি। আমরা এ কোন দেশে বসবাস করছি? আর কত নিবন্ধ লিখলে আমরা সচেতন হবো? মানিকগঞ্জ ট্র্যাজেডির ঘাতক বাসচালক জামির হোসেন যখন ডিবি অফিসে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান তিনি নির্দোষ, তখন সত্যি সত্যিই আমার ভাবতে কষ্ট লাগে আমরা এ কোন দেশে বসবাস করছি! ঘাতক চালক জামির হোসেনের কথার সঙ্গে আমি মিল খুঁজে পাই মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রীর বক্তব্যের। আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী তো \'আবিষ্কার\' করেছিলেন, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের বাহনকারী মাইক্রোবাসের চালকও দায়ী! কী অদ্ভুত এক দেশ! যে ঘাতক ৫ জন মানুষকে হত্যা করল, হত্যা সংঘটিত করে পালিয়ে গেল, তার মুক্তির দাবিতে বাস ধর্মঘট হলো। মন্ত্রী তার পক্ষে কথা বললেন। বাসচালক বললেন, তিনি নির্দোষ! আর বলছিলেন কোথায় কোথায়? ডিবি অফিসে, পুলিশের সম্মুখে। কী জানি, পুলিশ এ কথা বলতে তাকে শিখিয়ে দিয়েছিল কি-না। না হলে জামির এত সাহস পেল কোথায়? আমি জানি না পুলিশ কোন ধারায় মামলা করেছিল। কিংবা তদন্ত রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে কতটুকু অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে আমি বুঝি, এটা একটা হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হওয়া উচিত। না হলে ঘাতক বাসচালকরা এতটুকুও সচেতন হবে না। ২৪ অক্টোবরও যখন আমি আরিচা সড়কে বাসচালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে দেখি, তখন আমার কাছে এ প্রশ্নটাই মুখ্য। হত্যাকাণ্ডের আইনেই এর বিচার হতে হবে। আমাদের \'বিবেক\' আইনজীবীরা দয়া করে জামির হোসেনের পাশে দাঁড়াবেন না। আপনারা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন_ যাতে করে আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখতে পারি।
আজ মাননীয় নৌপরিবহনমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন বটে, কিন্তু তাতে করে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়নি। তার উপস্থিতিতে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ যখন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়, ওই সিদ্ধান্ত তো সরকারের বিরুদ্ধেই যায়। মন্ত্রী হয়ে তিনি কী করে এই সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেন? এভাবে একজন ব্যবসায়ী কিংবা একজন শ্রমিক নেতা মন্ত্রী হতে পারেন কি-না, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন এখন। মন্ত্রীর উপস্থিতি পরিবহন শ্রমিকদের আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে, যার খুব কমই সংবাদপত্রে ছাপা হয়। দুর্ঘটনা রোধে তিনি যদি কোনো কর্মপন্থা ঘোষণা করতেন, আমি খুশি হতাম। ৩০২ ধারা বাতিল করা যাবে না। বাসচালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। হাইওয়ে পুলিশের কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে। অদক্ষ ও ভুয়া চালকদের চিহ্নিত করার স্বার্থে প্রতিটি গাড়িতে একটি বিশেষ যন্ত্র স্থাপন করতে হবে, যার মাধ্যমে ভুয়া লাইসেন্স চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। চালকদের যে কোনো অন্যায়ের জন্য ফাইন ও লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মহাসড়কের পাশে কোনো হাট-বাজার থাকবে না। গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিডব্রেকার থাকতে হবে। কিছুদূর পরপর গতি নিয়ন্ত্রণ মেশিন থাকতে হবে, যা হবে অটোমেটিক। প্রতিটি গাড়ির গতির পরিমাণ রেকর্ড হবে এবং অতিরিক্ত গতির জন্য চালককে ফাইন গুনতে হবে। মন্ত্রী মহোদয় এসব ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন। পরিবহন শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে পরে দুঃখ প্রকাশ করলে তাতে সমস্যার সমাধান হবে না।
মন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে পরিবহন শ্রমিকরা যখন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তখন মন্ত্রীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয় বৈকি। মন্ত্রী পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি করেন। কিন্তু তিনি যদি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতেন, আমি খুশি হতাম। সড়ক দুর্ঘটনায় বাসচালকরা দায়ী_ এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এটাও সত্য, শুধু বাসচালকরাই এককভাবে দায়ী নয়। আমি নিত্যদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাভার-ঢাকা মহাসড়কে চলাচল করি। নিত্যদিন আমি প্রত্যক্ষ করি, চালকরা ওভারটেক করছে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ি ঢুকিয়ে দিচ্ছে রং সাইডে। দেখার যেন কেউ নেই। হেমায়েতপুর, সাভার বাজার, সেই একই চিত্র। ট্রাফিক পুলিশের কাজটি হচ্ছে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা। তারা তা করছে না। হেমায়েতপুর বাজারে দেখলাম দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন (তিনি কি ঈদ বকশিশ আদায় করছিলেন!)। সাভার বাজারে সেই পুরনো দৃশ্য_ রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে, আর পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশ নির্বিকার। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছেন না। একটু সামনে গেলেই একটা বাঁক, দেখলাম সেখানে সেই প্রতিযোগিতা_ কে কার আগে যাবে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ দৃশ্য আমাকে সপ্তাহে একাধিক দিন দেখতে হয়। কেননা এ রুট ধরেই আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করি। উপযাচক হয়ে অতীতে একাধিক দিন সাভার এলাকায় দায়িত্ব পালনরত সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। না, কিছুই হয়নি। কোনো পরিবর্তন হয়নি। যেমনটা ছিল দু\'দিন আগে, তেমনটিই রয়ে গেছে। সেই ওভারটেকিং, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন না করা, ভুল পথে চালদের গাড়ি চালানো_ সবকিছুই আগের মতো। এই মঙ্গলবারও (১৫ নভেম্বর) ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের এই ছিল দৃশ্য। এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, এমনকি রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো, আন্দোলন হলো, সেখানে এতটুকুও সচেতন হলেন না যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা। ওই মৃত্যু তাদের এতটুকুও স্পর্শ করেনি। আমরা এ কোন দেশে বসবাস করছি? আর কত নিবন্ধ লিখলে আমরা সচেতন হবো? মানিকগঞ্জ ট্র্যাজেডির ঘাতক বাসচালক জামির হোসেন যখন ডিবি অফিসে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান তিনি নির্দোষ, তখন সত্যি সত্যিই আমার ভাবতে কষ্ট লাগে আমরা এ কোন দেশে বসবাস করছি! ঘাতক চালক জামির হোসেনের কথার সঙ্গে আমি মিল খুঁজে পাই মাননীয় যোগাযোগমন্ত্রীর বক্তব্যের। আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী তো \'আবিষ্কার\' করেছিলেন, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের বাহনকারী মাইক্রোবাসের চালকও দায়ী! কী অদ্ভুত এক দেশ! যে ঘাতক ৫ জন মানুষকে হত্যা করল, হত্যা সংঘটিত করে পালিয়ে গেল, তার মুক্তির দাবিতে বাস ধর্মঘট হলো। মন্ত্রী তার পক্ষে কথা বললেন। বাসচালক বললেন, তিনি নির্দোষ! আর বলছিলেন কোথায় কোথায়? ডিবি অফিসে, পুলিশের সম্মুখে। কী জানি, পুলিশ এ কথা বলতে তাকে শিখিয়ে দিয়েছিল কি-না। না হলে জামির এত সাহস পেল কোথায়? আমি জানি না পুলিশ কোন ধারায় মামলা করেছিল। কিংবা তদন্ত রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে কতটুকু অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে আমি বুঝি, এটা একটা হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হওয়া উচিত। না হলে ঘাতক বাসচালকরা এতটুকুও সচেতন হবে না। ২৪ অক্টোবরও যখন আমি আরিচা সড়কে বাসচালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে দেখি, তখন আমার কাছে এ প্রশ্নটাই মুখ্য। হত্যাকাণ্ডের আইনেই এর বিচার হতে হবে। আমাদের \'বিবেক\' আইনজীবীরা দয়া করে জামির হোসেনের পাশে দাঁড়াবেন না। আপনারা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন_ যাতে করে আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখতে পারি।
আজ মাননীয় নৌপরিবহনমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন বটে, কিন্তু তাতে করে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়নি। তার উপস্থিতিতে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ যখন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়, ওই সিদ্ধান্ত তো সরকারের বিরুদ্ধেই যায়। মন্ত্রী হয়ে তিনি কী করে এই সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেন? এভাবে একজন ব্যবসায়ী কিংবা একজন শ্রমিক নেতা মন্ত্রী হতে পারেন কি-না, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন এখন। মন্ত্রীর উপস্থিতি পরিবহন শ্রমিকদের আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে, যার খুব কমই সংবাদপত্রে ছাপা হয়। দুর্ঘটনা রোধে তিনি যদি কোনো কর্মপন্থা ঘোষণা করতেন, আমি খুশি হতাম। ৩০২ ধারা বাতিল করা যাবে না। বাসচালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। হাইওয়ে পুলিশের কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে। অদক্ষ ও ভুয়া চালকদের চিহ্নিত করার স্বার্থে প্রতিটি গাড়িতে একটি বিশেষ যন্ত্র স্থাপন করতে হবে, যার মাধ্যমে ভুয়া লাইসেন্স চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। চালকদের যে কোনো অন্যায়ের জন্য ফাইন ও লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মহাসড়কের পাশে কোনো হাট-বাজার থাকবে না। গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিডব্রেকার থাকতে হবে। কিছুদূর পরপর গতি নিয়ন্ত্রণ মেশিন থাকতে হবে, যা হবে অটোমেটিক। প্রতিটি গাড়ির গতির পরিমাণ রেকর্ড হবে এবং অতিরিক্ত গতির জন্য চালককে ফাইন গুনতে হবে। মন্ত্রী মহোদয় এসব ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন। পরিবহন শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে পরে দুঃখ প্রকাশ করলে তাতে সমস্যার সমাধান হবে না।
দৈনিক সমকাল, ১৯ নভেম্বর ২০১১.
ডা. তারেক শামসুর রেহমান
ডা. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tssrahmanbd@yahoo.com
tssrahmanbd@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment