বিএনপির নেতৃত্বাধীন তৃতীয় রোডমার্চ গতকাল ২৭ অক্টোবর ময়মনসিংহে শেষ হয়েছে। এর আগে দ্বিতীয় রোডমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে শেষ হয় গত ১৯ অক্টোবর। প্রথম রোডমার্চটি শেষ হয়েছিল সিলেটে গত ১১ অক্টোবর। বিএনপি তথা চারদল আরো রোডমার্চ করার পরিকল্পনা করছে। প্রশ্ন হচ্ছেএই রোডমার্চ বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে কতটুকু পরিবর্তন আনতে পারবে? কিংবা সরকার কী এই রোডমার্চের ব্যাপারে কোন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? গত ১১ অক্টোবর প্রথম রোডমার্চের পর প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তাতে করে এটা ধারণা করা স্বাভাবিক যে সরকারের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল না। দ্বিতীয় রোডমার্চে বেগম জিয়া বিভিন্ন পথসভায় কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন, এটা তার পুরনো দাবি। তিনি গণঅভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও গণঅভ্যুত্থানের ডাক তিনি দেননি। ঢাকা ঘেরাওয়ের কর্মসূচির প্রতিও তিনি ইংগিত দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে বিএনপি একটি কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে আদৌ উৎকণ্ঠিত এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। সরকারি দলের নেতারা এই রোডমার্চ নিয়ে প্রায়সই বিরূপ মন্তব্য করছেন। এর ফলে দেশ একটি বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে যাচ্ছে বলেই আমার ধারণা। এমনিতেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা, তার প্রভাব বাংলাদেশেও অনুভূত হচ্ছে। টাকার মান কমে গেছে, সারা বিশ্বব্যাপী যেখানে ডলারের দাম কমে গেছে, সেখানে বাংলাদেশে বেড়েছে ডলারের দাম। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইউরোপে রফতানি কমছে। তৈরি পোষাক শিল্পএখন ঝুঁকির মুখে। ইউরোপে তৈরি পোষাক শিল্পের অর্ডার কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকেও অর্ডার কমে আসবে এখন। যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিবাদ বিরোধী আন্দোলন অর্থনীতিতে আঘাত করেছে। ফলে আমদানিতে নেতীবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের পোষাক শিল্প। ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে একটি খবর- তিন হাজার ওভেন ও নিট গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বরে (২০১১) রফতানি আয় ২৩ শতাংশ কমেছে। যা নিঃসন্দেহে একটি চিন্তার কারণ। আমাদের রাজনীতিবিদদের এটা নিয়ে ভাবা উচিত। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) রফতানি আয় হয়েছিল ২৩৩৯ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ১৭ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকার সমান। জুলাইয়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আয় কমেছে প্রায় ৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ কম। এমনি এক পরিস্থিতিতে বেগম জিয়ার নেতৃতে বিএনপি রোডমার্চ করছে। বেগম জিয়া জানিয়ে দিয়েছেন যে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা আর ঘরে ফিরে যাবেন না। এর অর্থ পরিষ্কার। বিএনপি এখন সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে। যদিও পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০১৩ সালের শেষের দিকে।
বিএনপি যেসব এজেন্ডাকে সামনে রেখে রোডমার্চের আয়োজন করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আওতায় নির্বাচন পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের একটি রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে হলে সরকারকে নতুন করে সংসদে একটি বিল আনতে হবে। এটা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে নামকরণ করতে হবে, তার কোন মানে নেই। কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হবে, হতে পারে এটি একটি নির্দলীয় সরকার। এই নির্দলীয় সরকারে কারা থাকবেন, তা সংসদ ঠিক করে দিতে পারে। উচ্চ আদালতের রায় অনুসরণ করেই ওই নির্দলীয় সরকার গঠন করা সম্ভব। বর্তমান প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে এই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। বিকল্প হিসেবে ব্যারিস্টার রফিকুল হকের মতো সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে এই দায়িত্বটি দেয়া যেতে পারে। তিনজন গুণী ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি টিমও গঠন করা যেতে পারে, যাদের দায়িত্ব হবে শুধু একটি নির্বাচন পরিচালনা করা। তবে মূল কথা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। বিরোধী দলের সম্মতি না পেলে কোন প্রস্তাবই জট খুলবে না। এ জন্য একটি সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। সরকারের মন্ত্রীরা বারে বারে বিএনপির সংসদে আসা ও সেখানে গিয়ে প্রস্তাব দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে অতীতে বিরোধী দলকে সংসদে কথা বলতে দেয়া হয়নি। সংসদে গালি-গালাজ ও অতীত বারবার টেনে আনা হয়েছে। বিচারাধীন মামলা নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। সংসদ হয়ে পড়েছে এক দলীয়। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। সরকার এখন যে কাজটি করতে পারে, তা হচ্ছে নিজেদের উদ্যোগে একটি নির্দলীয় সরকারের কাঠামো সংসদে উপস্থাপন করা ও তা সংসদে পাশ করানো। মহাজোটের শরিকরাও পারে এ ধরনের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করতে। বিএনপি ওই প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে পারে, অথবা তাতে সংশোধনী আনতে পারে। এর মাধ্যমে সরকার তার আন্তরিকতা প্রমাণ করতে পারে। সরকার যদি এ ধরনের কোন প্রস্তাব না আনে, তাহলে রাজনৈতিক সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। ১৯৯৬ সালেও বিএনপি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। কিন্তু ওই সংসদ টিকেছিল মাত্র ১৩ দিন। ওই সংসদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পাস হয়েছিল। এখন দেয়ালের লিখন থেকে সরকার কী কিছু শিখবে? সরকার যদি নমনীয় হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য মঙ্গল। পত্র পত্রিকায় যেসব জনমত প্রতিফলিত হয়েছে, তাতে দেখা যায় একটি নিরপেক্ষ তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে জনমত সবচেয়ে বেশি। সরকার যদি একটি নিরপেক্ষ সরকারের আওতায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়, আমার বিশ্বাস তাতে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়বে বৈ কমবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা দেয়ালের লিখন থেকে কেউ কিছু শিখি না।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচন আয়োজনের প্রশ্নে একটি সমঝোতা প্রয়োজন। এ জন্য বিএনপির সাথে সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। যদিও সংলাপের অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো নয়। অতীতেও সংলাপ কোন ফল বয়ে আনেনি। তবুও সংলাপ ছাড়া কোনো বিকল্পও নেই। এ ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। নিদেন পক্ষে সংসদের স্পিকার একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। তিনি নিরপেক্ষ থেকে দুই প্রধান দলকে এক টেবিলে ডাকতে পারেন। কোন ধরনের পূর্ব শর্ত ছাড়াই আলোচনা হতে পারে। ওই আলোচনায় একটা সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব বলেই আমি মনে করি। মনে রাখতে হবে ইতোমধ্যে আমাদের ভাবমূর্তি অনেক নষ্ট হয়েছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন সেতু। ওই সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে যদি সমঝোতা না হয়, তাহলে বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে দেশ এক গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত হবে। এর ফলে প্রধান দু’টো দল আদৌ লাভবান হবে না।
বিএনপি যেসব এজেন্ডাকে সামনে রেখে রোডমার্চের আয়োজন করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আওতায় নির্বাচন পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের একটি রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে হলে সরকারকে নতুন করে সংসদে একটি বিল আনতে হবে। এটা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে নামকরণ করতে হবে, তার কোন মানে নেই। কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হবে, হতে পারে এটি একটি নির্দলীয় সরকার। এই নির্দলীয় সরকারে কারা থাকবেন, তা সংসদ ঠিক করে দিতে পারে। উচ্চ আদালতের রায় অনুসরণ করেই ওই নির্দলীয় সরকার গঠন করা সম্ভব। বর্তমান প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে এই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। বিকল্প হিসেবে ব্যারিস্টার রফিকুল হকের মতো সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে এই দায়িত্বটি দেয়া যেতে পারে। তিনজন গুণী ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি টিমও গঠন করা যেতে পারে, যাদের দায়িত্ব হবে শুধু একটি নির্বাচন পরিচালনা করা। তবে মূল কথা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। বিরোধী দলের সম্মতি না পেলে কোন প্রস্তাবই জট খুলবে না। এ জন্য একটি সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। সরকারের মন্ত্রীরা বারে বারে বিএনপির সংসদে আসা ও সেখানে গিয়ে প্রস্তাব দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে অতীতে বিরোধী দলকে সংসদে কথা বলতে দেয়া হয়নি। সংসদে গালি-গালাজ ও অতীত বারবার টেনে আনা হয়েছে। বিচারাধীন মামলা নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। সংসদ হয়ে পড়েছে এক দলীয়। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। সরকার এখন যে কাজটি করতে পারে, তা হচ্ছে নিজেদের উদ্যোগে একটি নির্দলীয় সরকারের কাঠামো সংসদে উপস্থাপন করা ও তা সংসদে পাশ করানো। মহাজোটের শরিকরাও পারে এ ধরনের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করতে। বিএনপি ওই প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে পারে, অথবা তাতে সংশোধনী আনতে পারে। এর মাধ্যমে সরকার তার আন্তরিকতা প্রমাণ করতে পারে। সরকার যদি এ ধরনের কোন প্রস্তাব না আনে, তাহলে রাজনৈতিক সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। ১৯৯৬ সালেও বিএনপি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। কিন্তু ওই সংসদ টিকেছিল মাত্র ১৩ দিন। ওই সংসদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পাস হয়েছিল। এখন দেয়ালের লিখন থেকে সরকার কী কিছু শিখবে? সরকার যদি নমনীয় হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য মঙ্গল। পত্র পত্রিকায় যেসব জনমত প্রতিফলিত হয়েছে, তাতে দেখা যায় একটি নিরপেক্ষ তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে জনমত সবচেয়ে বেশি। সরকার যদি একটি নিরপেক্ষ সরকারের আওতায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়, আমার বিশ্বাস তাতে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়বে বৈ কমবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা দেয়ালের লিখন থেকে কেউ কিছু শিখি না।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচন আয়োজনের প্রশ্নে একটি সমঝোতা প্রয়োজন। এ জন্য বিএনপির সাথে সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। যদিও সংলাপের অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো নয়। অতীতেও সংলাপ কোন ফল বয়ে আনেনি। তবুও সংলাপ ছাড়া কোনো বিকল্পও নেই। এ ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। নিদেন পক্ষে সংসদের স্পিকার একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। তিনি নিরপেক্ষ থেকে দুই প্রধান দলকে এক টেবিলে ডাকতে পারেন। কোন ধরনের পূর্ব শর্ত ছাড়াই আলোচনা হতে পারে। ওই আলোচনায় একটা সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব বলেই আমি মনে করি। মনে রাখতে হবে ইতোমধ্যে আমাদের ভাবমূর্তি অনেক নষ্ট হয়েছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন সেতু। ওই সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে যদি সমঝোতা না হয়, তাহলে বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে দেশ এক গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত হবে। এর ফলে প্রধান দু’টো দল আদৌ লাভবান হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব , নভেম্বর ২০১১। ড. তারেক শামসুর রেহমান আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
0 comments:
Post a Comment