আরব বিশ্বে যে পরিবর্তনের ঢেউ বইছে, তার রেশ ধরে সেখানে একটি ইসলামী শক্তির উত্থান ঘটেছে। প্রথম ঘটল তিউনিসিয়ায়, তারপর মরক্কোয়, এরপর মিসরে। মিসরে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডসহ ইসলামপন্থী দলগুলো ৬০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছে। ইসলামী শক্তির উত্থান ঘটেছে গণতান্ত্রিকভাবেই। অর্থাৎ জনগণ ভোট দিয়েই তাদের ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। যে অগণতান্ত্রিক শক্তি দীর্ঘদিন বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রে ক্ষমতা ভোগ করে আসছিল, গেল এক বছরে একে একে তাদের পতন ঘটেছে। জয়নুল আবেদিন বেন আলী, হোসনি মোবারক কিংবা মুয়াম্মার গাদ্দাফি এখন ইতিহাসের অংশ। এদের পথেই হাঁটছেন বাশার আল আসাদ ও আলী আবদুল্লাহ সালেহ। ‘আরব বসন্ত’ একের পর এক পরিবর্তন ডেকে আনছে আরব বিশ্বে। আর ক্ষমতাসীনদের পতনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতাসীন হচ্ছে নতুন একটি শক্তি, যারা ইসলাম আর গণতন্ত্রকে এক করে দেখছে। এরা আধুনিক। কট্টর ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত আল-কায়েদার সঙ্গে এদের কোন সম্পর্ক নেই। আরও অবাক করার বিষয়, যে তারুণ্য আরব বিশ্বে ‘বিপ্লব’ সম্পন্ন ও ‘আরব বসন্তে’র সূচনা করেছে, তারা এই ইসলামী শক্তির প্রতি আস্থা রেখেছে। তাদের ভোট দিয়েছে।
পরিবর্তনটা প্রথম শুরু হয়েছিল তিউনিসিয়ায়। সেখানে ২৩ বছরের শাসক জয়নুল আবেদিন বেন আলীর পতনের পর প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়, তাতে বিজয়ী হয়েছে ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত এন্নাহদা পার্টি। ২১৭ আসনের সংসদে তারা পেয়েছে ৮৯টি। এখন এই দলটি ধর্মনিরপেক্ষ একটি দলের সঙ্গে মিলে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনে বিজয়ী তিনটি দলের মাঝে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে এন্নাহদার নেতা হামদি হবেন প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেস ফর দি রিপাবলিক পার্টির মুনসেক মারজুকি প্রেসিডেন্ট আর এত্তাকাতুল দলের মুস্তাফা বিন জাফর হবেন স্পিকার। ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে মরক্কোয়। সেখানে গেল সপ্তাহে যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, তাতে ইসলামপন্থী দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বিজয়ী হয়েছে। যদিও দলটি এককভাবে বিজয়ী হতে পারেনি। অনেকটা তিউনিসিয়ার মতোই একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জ হতে যাচ্ছে মরক্কোয়। তিউনিসিয়ায় যেমনি ইসলামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা এক প্লাটফর্মে একত্রিত হয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিতে যাচ্ছে, ঠিক তেমনটি হতে যাচ্ছে মরক্কোয়। সেখানে ইসলামপন্থীরা এককভাবে বিজয়ী হয়েছে সত্য (৩৯৫ আসনের ১২০টিতে বিজয়ী), কিন্তু জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে ঐক্য করতে হয়েছে ইন্ডিপেনডেন্স পার্টি ও সোশ্যালিস্ট ইউনিয়ন অব পপুলার ফোর্সের সঙ্গে। জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা আবদেলইয়া বারকিয়ানে হতে যাচ্ছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী। মিসরও এখন সেদিকে যাচ্ছে। ইয়েমেনের অবস্থাও অনেকটা তেমনি।
অতিসম্প্রতি তিউনিসিয়ার নির্বাচনে সেখানে নতুন এক রাজনৈতিক ধারার জন্ম হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কেননা নির্বাচনে ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত দল এন্নাহদার বিজয় নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিতে যাচ্ছে তিউনিসিয়ায়। ১৯৫৬ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সাল থেকে বেন আলী ছিলেন ক্ষমতায়। মধ্য ষাটের দশকে এন্নাহদা নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর চলতি বছরের মার্চে দলটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। দলটির শীর্ষ নেতা রশিদ আল ঘান্নুচি দীর্ঘদিন ছিলেন লন্ডনে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরই তিনি তিউনিসিয়ায় ফিরে আসেন। এন্নাহদা কট্টরপন্থী কোন ইসলামী দল নয়। একসময় দলটি মিসরের নিষিদ্ধঘোষিত মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনীতি অনুসরণ করত। ১৯৮১ সালে দলটির জন্ম হয়েছিল। তখন দলটির নাম ছিল ‘ইসলামিক টেনডেনসি মুভমেন্ট’। পরে ১৯৮৯ সালে ‘এন্নাহদা’ বা ‘গণজাগরণ আন্দোলন’ নাম ধারণ করে। দলটি ইসলাম আর গণতন্ত্রের সমন্বয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জš§ দিয়েছে। দলটির সঙ্গে তুরস্কের ক্ষমতাসীন ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’র অনেক মিল রয়েছে। এন্নাহদার নেতারা এটা স্বীকারও করেন। তারা তিউনিসিয়ায় একটি ‘তুরস্ক মডেল’ অনুসরণ করতে চান। ঘান্নুচি নিজেই বলেছেন, `In Turkey and Tunisia there was the same movement of reconciliation between Islam and modernity and we are the descendants of this movement'। ঘান্নুচির বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যায়, এন্নাহদা আধুনিকতার বিরোধী নয়। এমনকি এবার নির্বাচনে এমন অনেক মহিলা এই দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, যারা হিজাব পরেন না এবং পর্দাও করেন না। এন্নাহদা বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনে বিশ্বাসী। তিউনিসিয়ায় ১৯৫৬ সালে প্রবর্তিত হয়েছিল ব্যক্তির অধিকারসংক্রান্ত বিধিবিধান। যেখানে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে সমতা আনা হয়েছিল। পুরুষের বহুবিবাহ নিষিদ্ধ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমঅধিকার ভোগ করে। এন্নাহদা এই বিধিবিধানের বিরোধী নয়। ঘান্নুচির মতে, এই বিধিবিধান (নারীর অধিকারসংক্রান্ত) হচ্ছে ‘ইসলামের আইন অনুসারে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান’। ঘান্নুচির এই অভিমত যে কোন ইসলামী মৌলবাদী নেতৃত্বের সঙ্গে তাকে পার্থক্য করবে। মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে পারস্যীয় অঞ্চলে নারীর অধিকার সীমিত। বহুবিবাহ সেখানে স্বীকৃত, আর নারীরা পুরুষের মতো সমঅধিকার ভোগ করে না। তিউনিসিয়া এ থেকে ভিন্নতর ছিল। এখন ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত এন্নাহদাও সমঅধিকারের পক্ষে। তিউনিসিয়ায় নারীদের চাকরি করার ব্যাপারে কোন বাধানিষেধ নেই। তারা স্বামীর অনুমতি না নিয়েই নিজেরাই ব্যবসা করতে পারে, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। হিজাব পরার ব্যাপারেও কোন বাধ্যবাধকতা নেই, যা যে কোন আরব দেশে অকল্পনীয়। তিউনিসিয়ায় রাজনীতি ও স্থানীয় সরকারে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার শতকরা ২৭ দশমিক ৬ ভাগ, যার সঙ্গে নরডিকভুক্ত দেশগুলোর একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সমাজে নারীর এই অবস্থান অন্য কোন আরব দেশ্বে দেখা যায় না। এমনই একটি দেশে নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলের বিজয় সঙ্গত কারণেই নানা প্রশ্নের জš§ দেবে। ঘান্নুচি হবেন তিউনিসিয়ার পরবর্তী নেতা, অনেকটা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুলের মতো, সংকটময় সময় যিনি তুরস্কের হাল ধরেছিলেন। তাকে একজন সমাজবিজ্ঞানী চিহ্নিত করেছেন এভাবে, ‘একজন আধুনিকমনস্ক মানুষ, যিনি ইসলাম ও আরবীয় ঐতিহ্য ধারণ করেন।’ এটাই হচ্ছে আসল কথা। ঘান্নুচি কট্টর নন, আধুনিকমনস্ক একজন মানুষ, যিনি আরবীয় ও ইসলামী ঐতিহ্য ধারণ করেন। তিনি আধুনিক গণতন্ত্রের সঙ্গে ইসলামের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ‘বিপ্লব’-পরবর্তী তিউনিসিয়ায় নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি উপহার দিতে চান। সম্ভবত তিনি হবেন আগামী দিনের তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট। তুরস্কের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট গুল ও প্রধানমন্ত্রী এরদোগান তার আদর্শ। তুরস্কের মডেল তিনি অনুসরণ করতে চান তিউনিসিয়ায়। তবে তিউনিসিয়ায় পটপরিবর্তন মিসরের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে, সেটা একটা ভিন্ন প্রশ্ন। মিসরের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্নতর। সেখানে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ একটি শক্তিশালী ও ঐতিহ্যগত সংগঠন। সমাজে সর্বত্র এদের সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। দলটি অতীতে নিষিদ্ধ থাকলেও ভিন্ন সংগঠনের নামে এর কর্মীরা সংসদে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এরা একটি শক্তি। মোবারকবিরোধী আন্দোলনেও এরা অংশ নিয়েছিলেন। তবে মিসরের সমস্যাটা অন্যত্র। গত ১১ ফেব্র“য়ারি হোসনি মোবারকের পদত্যাগের পর ফিল্ড মার্শাল হোসেন তানতাবির নেতৃত্বে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি সামরিক জান্তা সেখানে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছে। এখন শোনা যাচ্ছে তানতাবি নিজেই প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। সামরিক জান্তা চাচ্ছে নয়া সংবিধানে তাদের একটা সাংবিধানিক স্বীকৃতি। মজার ব্যাপার, তাহরির স্কয়ারে এবার যারা জমায়েত হয়েছেন, তারা নির্বাচন পেছানোর পক্ষে। কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুড নির্বাচনের পক্ষে। অর্থাৎ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তারা ফায়দা ওঠাতে চায়। তবে ১৯২৮ সালে যে আদর্শ নিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুড পার্টির জন্ম হয়েছিল, তারা ২০১২ সালের দিকে এসে ওই আদর্শ কতটুকু ধরে রাখতে পারবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এন্নাহদা কিংবা জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হলেও ব্রাদারহুড কতটুকু নমনীয় হবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে; কেননা মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাদের যেসব বক্তব্য ছাপা হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট হয়নি যে তারা তাদের কট্টরপন্থী মনোভাব পরিত্যাগ করেছেন। হোসনি মোবারকের উৎখাতের প্রাক্কালে মুসলিম ব্রাদারহুডের গাইডিং কাউন্সিলের সদস্য এচ্ছাম এল এরসিয়ানের একটি প্রবন্ধ নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়েছিল (৯ ফেব্র“য়ারি ২০১১)। সেখানে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে গণতন্ত্র ইসলামী মূল্যবোধকে স্বীকার করে না, সেই গণতন্ত্র মিসরবাসী গ্রহণ করে নেবে না। তিনি লিখেছিলেন, ইসলামী দুনিয়ায় ইসলামের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং যে গণতন্ত্রে ধর্মের ভূমিকা স্বীকৃত এবং যা জনগণের অধিকার ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেয়, সেই গণতন্ত্রই মিসরে বিকশিত হবে। অর্থাৎ তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ইসলামী ভাবধারায় গড়ে উঠবে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। আর মুসলিম ব্রাদারহুড তেমনি একটি গণতান্ত্রিক সমাজই চায়। এচ্ছাম এল এরসিয়ান একই সঙ্গে আমাদের এ কথাটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে পশ্চিমা গণতন্ত্র মিসরের জন্য উপযুক্ত নয়। এর অর্থ পরিষ্কার, মিসরের সংসদ নির্বাচনে (তিন পর্যায়ে তা সম্পন্ন হবে) মুসলিম ব্রাদারহুড বিজয়ী হলেও তারা যে সংবিধান প্রণয়ন করবে, সেখানে ইসলামী মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে এককভাবে বিজয়ী না হলে তাদের ধর্মনিরপেক্ষ ও লিবারেলপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্রাদারহুড কিছুটা নমনীয় হলেও আমি অবাক হব না। তবে মনে রাখতে হবে, মিসরে সেনাবাহিনী এখনও একটা শক্তি। এই শক্তিকে উপেক্ষা করা সত্যিকার অর্থেই কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে তিউনিসিয়া ও মরক্কোয় ইসলামী শক্তিগুলো যে অবস্থান গ্রহণ করেছে, মুসলিম ব্রাদারহুডকেও সেই অবস্থানে ঠেলে দিতে পারে। এখানে বলা যেতে পারে যে মরক্কোয় বিজয়ী ইসলামী দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি একসময় অত্যন্ত কট্টর ছিল। ২০১০ সালে দলটি মরক্কোয় বিখ্যাত গায়ক এলটন জনের একটি কনসার্টের বিরোধিতা করেছিল। এলটন জন সমকামী। দলটি সমকামিতা ও প্রকাশ্যে মদ্যপানের বিরোধী। অথচ মরক্কোর বৈদেশিক অর্থের একটা বড় উৎস ট্যুরিজম ও বৈদেশিক বিনিয়োগ। এটা বিবেচনা করেই দলটি এখন আর এসব বিষয়ে কথা বলে না। সর্বশেষ নির্বাচনে তারা গুরুত্ব দিয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও তরুণদের চাকরির নিশ্চয়তা সম্পর্কিত সামাজিক বিষয়াদিতে। দলটি এখন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, সুশাসন ও গণতন্ত্রের কথা বলছে।
বদলে যাচ্ছে আরব বিশ্ব। সনাতন ইসলামী দলগুলো তাদের কঠোর অবস্থানেও পরিবর্তন এনেছে। আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরোধিতা করছে। সবচেয়ে বড় কথা, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সঙ্গে যে সহাবস্থান সম্ভব, তা প্রমাণ করেছে তিউনিসিয়া ও মরক্কোর ইসলামী দলগুলো। দীর্ঘদিন একনায়কতান্ত্রিক যে সমাজব্যবস্থার জন্ম হয়েছিল আরব বিশ্বে, তাতে এখন পরিবর্তন আসছে। একটি আধুনিকমনস্ক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সেখানে জন্ম হতে যাচ্ছে, যেখানে ধর্ম একটা অংশ, কিন্তু কট্টরপন্থী ইসলামী চিন্তাধারা আদৌ কোন প্রভাব বিস্তার করছে না। গত ষাট বছরের আরব বিশ্বের রাজনীতিতে এটা চতুর্থ ধারা। ১৯৫২ সালে মিসরে রাজতন্ত্র উৎখাত ও জামাল আবদুন নাসেরের উত্থানের মধ্য দিয়ে আরব জাতীয়তাবাদী রাজনীতির যে ধারা সূচিত হয়েছিল, তা ২০১১ সালে এসে নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিল। মাঝখানে ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয় ও ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব নতুন দুটি ধারার জন্ম দিলেও তা স্থায়ী হয়নি। এখন মডারেট ইসলামিক শক্তির উত্থান এই চতুর্থ ধারার জন্ম দিল। এ ধারা কতদিন স্থায়ী হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
পরিবর্তনটা প্রথম শুরু হয়েছিল তিউনিসিয়ায়। সেখানে ২৩ বছরের শাসক জয়নুল আবেদিন বেন আলীর পতনের পর প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়, তাতে বিজয়ী হয়েছে ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত এন্নাহদা পার্টি। ২১৭ আসনের সংসদে তারা পেয়েছে ৮৯টি। এখন এই দলটি ধর্মনিরপেক্ষ একটি দলের সঙ্গে মিলে কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনে বিজয়ী তিনটি দলের মাঝে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে এন্নাহদার নেতা হামদি হবেন প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেস ফর দি রিপাবলিক পার্টির মুনসেক মারজুকি প্রেসিডেন্ট আর এত্তাকাতুল দলের মুস্তাফা বিন জাফর হবেন স্পিকার। ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে মরক্কোয়। সেখানে গেল সপ্তাহে যে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, তাতে ইসলামপন্থী দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বিজয়ী হয়েছে। যদিও দলটি এককভাবে বিজয়ী হতে পারেনি। অনেকটা তিউনিসিয়ার মতোই একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জ হতে যাচ্ছে মরক্কোয়। তিউনিসিয়ায় যেমনি ইসলামপন্থী ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা এক প্লাটফর্মে একত্রিত হয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিতে যাচ্ছে, ঠিক তেমনটি হতে যাচ্ছে মরক্কোয়। সেখানে ইসলামপন্থীরা এককভাবে বিজয়ী হয়েছে সত্য (৩৯৫ আসনের ১২০টিতে বিজয়ী), কিন্তু জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে ঐক্য করতে হয়েছে ইন্ডিপেনডেন্স পার্টি ও সোশ্যালিস্ট ইউনিয়ন অব পপুলার ফোর্সের সঙ্গে। জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা আবদেলইয়া বারকিয়ানে হতে যাচ্ছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী। মিসরও এখন সেদিকে যাচ্ছে। ইয়েমেনের অবস্থাও অনেকটা তেমনি।
অতিসম্প্রতি তিউনিসিয়ার নির্বাচনে সেখানে নতুন এক রাজনৈতিক ধারার জন্ম হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কেননা নির্বাচনে ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত দল এন্নাহদার বিজয় নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিতে যাচ্ছে তিউনিসিয়ায়। ১৯৫৬ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সাল থেকে বেন আলী ছিলেন ক্ষমতায়। মধ্য ষাটের দশকে এন্নাহদা নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর চলতি বছরের মার্চে দলটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। দলটির শীর্ষ নেতা রশিদ আল ঘান্নুচি দীর্ঘদিন ছিলেন লন্ডনে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরই তিনি তিউনিসিয়ায় ফিরে আসেন। এন্নাহদা কট্টরপন্থী কোন ইসলামী দল নয়। একসময় দলটি মিসরের নিষিদ্ধঘোষিত মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনীতি অনুসরণ করত। ১৯৮১ সালে দলটির জন্ম হয়েছিল। তখন দলটির নাম ছিল ‘ইসলামিক টেনডেনসি মুভমেন্ট’। পরে ১৯৮৯ সালে ‘এন্নাহদা’ বা ‘গণজাগরণ আন্দোলন’ নাম ধারণ করে। দলটি ইসলাম আর গণতন্ত্রের সমন্বয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জš§ দিয়েছে। দলটির সঙ্গে তুরস্কের ক্ষমতাসীন ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’র অনেক মিল রয়েছে। এন্নাহদার নেতারা এটা স্বীকারও করেন। তারা তিউনিসিয়ায় একটি ‘তুরস্ক মডেল’ অনুসরণ করতে চান। ঘান্নুচি নিজেই বলেছেন, `In Turkey and Tunisia there was the same movement of reconciliation between Islam and modernity and we are the descendants of this movement'। ঘান্নুচির বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যায়, এন্নাহদা আধুনিকতার বিরোধী নয়। এমনকি এবার নির্বাচনে এমন অনেক মহিলা এই দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, যারা হিজাব পরেন না এবং পর্দাও করেন না। এন্নাহদা বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনে বিশ্বাসী। তিউনিসিয়ায় ১৯৫৬ সালে প্রবর্তিত হয়েছিল ব্যক্তির অধিকারসংক্রান্ত বিধিবিধান। যেখানে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে সমতা আনা হয়েছিল। পুরুষের বহুবিবাহ নিষিদ্ধ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমঅধিকার ভোগ করে। এন্নাহদা এই বিধিবিধানের বিরোধী নয়। ঘান্নুচির মতে, এই বিধিবিধান (নারীর অধিকারসংক্রান্ত) হচ্ছে ‘ইসলামের আইন অনুসারে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান’। ঘান্নুচির এই অভিমত যে কোন ইসলামী মৌলবাদী নেতৃত্বের সঙ্গে তাকে পার্থক্য করবে। মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে পারস্যীয় অঞ্চলে নারীর অধিকার সীমিত। বহুবিবাহ সেখানে স্বীকৃত, আর নারীরা পুরুষের মতো সমঅধিকার ভোগ করে না। তিউনিসিয়া এ থেকে ভিন্নতর ছিল। এখন ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত এন্নাহদাও সমঅধিকারের পক্ষে। তিউনিসিয়ায় নারীদের চাকরি করার ব্যাপারে কোন বাধানিষেধ নেই। তারা স্বামীর অনুমতি না নিয়েই নিজেরাই ব্যবসা করতে পারে, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। হিজাব পরার ব্যাপারেও কোন বাধ্যবাধকতা নেই, যা যে কোন আরব দেশে অকল্পনীয়। তিউনিসিয়ায় রাজনীতি ও স্থানীয় সরকারে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার শতকরা ২৭ দশমিক ৬ ভাগ, যার সঙ্গে নরডিকভুক্ত দেশগুলোর একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সমাজে নারীর এই অবস্থান অন্য কোন আরব দেশ্বে দেখা যায় না। এমনই একটি দেশে নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলের বিজয় সঙ্গত কারণেই নানা প্রশ্নের জš§ দেবে। ঘান্নুচি হবেন তিউনিসিয়ার পরবর্তী নেতা, অনেকটা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুলের মতো, সংকটময় সময় যিনি তুরস্কের হাল ধরেছিলেন। তাকে একজন সমাজবিজ্ঞানী চিহ্নিত করেছেন এভাবে, ‘একজন আধুনিকমনস্ক মানুষ, যিনি ইসলাম ও আরবীয় ঐতিহ্য ধারণ করেন।’ এটাই হচ্ছে আসল কথা। ঘান্নুচি কট্টর নন, আধুনিকমনস্ক একজন মানুষ, যিনি আরবীয় ও ইসলামী ঐতিহ্য ধারণ করেন। তিনি আধুনিক গণতন্ত্রের সঙ্গে ইসলামের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ‘বিপ্লব’-পরবর্তী তিউনিসিয়ায় নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি উপহার দিতে চান। সম্ভবত তিনি হবেন আগামী দিনের তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট। তুরস্কের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট গুল ও প্রধানমন্ত্রী এরদোগান তার আদর্শ। তুরস্কের মডেল তিনি অনুসরণ করতে চান তিউনিসিয়ায়। তবে তিউনিসিয়ায় পটপরিবর্তন মিসরের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে, সেটা একটা ভিন্ন প্রশ্ন। মিসরের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্নতর। সেখানে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ একটি শক্তিশালী ও ঐতিহ্যগত সংগঠন। সমাজে সর্বত্র এদের সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। দলটি অতীতে নিষিদ্ধ থাকলেও ভিন্ন সংগঠনের নামে এর কর্মীরা সংসদে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এরা একটি শক্তি। মোবারকবিরোধী আন্দোলনেও এরা অংশ নিয়েছিলেন। তবে মিসরের সমস্যাটা অন্যত্র। গত ১১ ফেব্র“য়ারি হোসনি মোবারকের পদত্যাগের পর ফিল্ড মার্শাল হোসেন তানতাবির নেতৃত্বে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি সামরিক জান্তা সেখানে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছে। এখন শোনা যাচ্ছে তানতাবি নিজেই প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। সামরিক জান্তা চাচ্ছে নয়া সংবিধানে তাদের একটা সাংবিধানিক স্বীকৃতি। মজার ব্যাপার, তাহরির স্কয়ারে এবার যারা জমায়েত হয়েছেন, তারা নির্বাচন পেছানোর পক্ষে। কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুড নির্বাচনের পক্ষে। অর্থাৎ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তারা ফায়দা ওঠাতে চায়। তবে ১৯২৮ সালে যে আদর্শ নিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুড পার্টির জন্ম হয়েছিল, তারা ২০১২ সালের দিকে এসে ওই আদর্শ কতটুকু ধরে রাখতে পারবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এন্নাহদা কিংবা জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হলেও ব্রাদারহুড কতটুকু নমনীয় হবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে; কেননা মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাদের যেসব বক্তব্য ছাপা হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট হয়নি যে তারা তাদের কট্টরপন্থী মনোভাব পরিত্যাগ করেছেন। হোসনি মোবারকের উৎখাতের প্রাক্কালে মুসলিম ব্রাদারহুডের গাইডিং কাউন্সিলের সদস্য এচ্ছাম এল এরসিয়ানের একটি প্রবন্ধ নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়েছিল (৯ ফেব্র“য়ারি ২০১১)। সেখানে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে গণতন্ত্র ইসলামী মূল্যবোধকে স্বীকার করে না, সেই গণতন্ত্র মিসরবাসী গ্রহণ করে নেবে না। তিনি লিখেছিলেন, ইসলামী দুনিয়ায় ইসলামের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং যে গণতন্ত্রে ধর্মের ভূমিকা স্বীকৃত এবং যা জনগণের অধিকার ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেয়, সেই গণতন্ত্রই মিসরে বিকশিত হবে। অর্থাৎ তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ইসলামী ভাবধারায় গড়ে উঠবে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। আর মুসলিম ব্রাদারহুড তেমনি একটি গণতান্ত্রিক সমাজই চায়। এচ্ছাম এল এরসিয়ান একই সঙ্গে আমাদের এ কথাটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে পশ্চিমা গণতন্ত্র মিসরের জন্য উপযুক্ত নয়। এর অর্থ পরিষ্কার, মিসরের সংসদ নির্বাচনে (তিন পর্যায়ে তা সম্পন্ন হবে) মুসলিম ব্রাদারহুড বিজয়ী হলেও তারা যে সংবিধান প্রণয়ন করবে, সেখানে ইসলামী মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে এককভাবে বিজয়ী না হলে তাদের ধর্মনিরপেক্ষ ও লিবারেলপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ব্রাদারহুড কিছুটা নমনীয় হলেও আমি অবাক হব না। তবে মনে রাখতে হবে, মিসরে সেনাবাহিনী এখনও একটা শক্তি। এই শক্তিকে উপেক্ষা করা সত্যিকার অর্থেই কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে তিউনিসিয়া ও মরক্কোয় ইসলামী শক্তিগুলো যে অবস্থান গ্রহণ করেছে, মুসলিম ব্রাদারহুডকেও সেই অবস্থানে ঠেলে দিতে পারে। এখানে বলা যেতে পারে যে মরক্কোয় বিজয়ী ইসলামী দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি একসময় অত্যন্ত কট্টর ছিল। ২০১০ সালে দলটি মরক্কোয় বিখ্যাত গায়ক এলটন জনের একটি কনসার্টের বিরোধিতা করেছিল। এলটন জন সমকামী। দলটি সমকামিতা ও প্রকাশ্যে মদ্যপানের বিরোধী। অথচ মরক্কোর বৈদেশিক অর্থের একটা বড় উৎস ট্যুরিজম ও বৈদেশিক বিনিয়োগ। এটা বিবেচনা করেই দলটি এখন আর এসব বিষয়ে কথা বলে না। সর্বশেষ নির্বাচনে তারা গুরুত্ব দিয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও তরুণদের চাকরির নিশ্চয়তা সম্পর্কিত সামাজিক বিষয়াদিতে। দলটি এখন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, সুশাসন ও গণতন্ত্রের কথা বলছে।
বদলে যাচ্ছে আরব বিশ্ব। সনাতন ইসলামী দলগুলো তাদের কঠোর অবস্থানেও পরিবর্তন এনেছে। আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরোধিতা করছে। সবচেয়ে বড় কথা, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সঙ্গে যে সহাবস্থান সম্ভব, তা প্রমাণ করেছে তিউনিসিয়া ও মরক্কোর ইসলামী দলগুলো। দীর্ঘদিন একনায়কতান্ত্রিক যে সমাজব্যবস্থার জন্ম হয়েছিল আরব বিশ্বে, তাতে এখন পরিবর্তন আসছে। একটি আধুনিকমনস্ক গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সেখানে জন্ম হতে যাচ্ছে, যেখানে ধর্ম একটা অংশ, কিন্তু কট্টরপন্থী ইসলামী চিন্তাধারা আদৌ কোন প্রভাব বিস্তার করছে না। গত ষাট বছরের আরব বিশ্বের রাজনীতিতে এটা চতুর্থ ধারা। ১৯৫২ সালে মিসরে রাজতন্ত্র উৎখাত ও জামাল আবদুন নাসেরের উত্থানের মধ্য দিয়ে আরব জাতীয়তাবাদী রাজনীতির যে ধারা সূচিত হয়েছিল, তা ২০১১ সালে এসে নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিল। মাঝখানে ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয় ও ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব নতুন দুটি ধারার জন্ম দিলেও তা স্থায়ী হয়নি। এখন মডারেট ইসলামিক শক্তির উত্থান এই চতুর্থ ধারার জন্ম দিল। এ ধারা কতদিন স্থায়ী হয়, সেটাই দেখার বিষয়।
দৈনিক যুগান্তর, ৯ ডিসেম্বর ২০১১।
ড. তারেক শামসুর রেহমান,
ড. তারেক শামসুর রেহমান,
অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment