টিপাইমুখ বাঁধ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনার অন্যতম বিষয়। গত ১৯ নভেম্বর বিবিসির বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ যখন বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয় তখন বদলে যায় রাজনীতির দৃশ্যপট। বিরোধী দল নেতা বেগম জিয়া এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দেন। এমনকি কঠোর কোন কর্মসূচি না দিয়ে তিনি এ ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতারও প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রীও তার প্রতিক্রিয়া জানান গত ২৩ নভেম্বর। সংসদে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি জানান, টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়ার জন্য তিনি শিগগিরই ভারতে বিশেষ প্রতিনিধি পাঠাচ্ছেন। তিনি সংসদে এ কথাও জানিয়েছেন, সরকার ইতিমধ্যে ভারতের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। আর ২৪ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন টিপাইমুখ বাঁধ প্রশ্নে ভারত যে আশ্বাস দিয়েছে তাতে বাংলাদেশ আস্থা রাখছে। সংবাদপত্রে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের উৎকণ্ঠা যখন প্রকাশিত হয়েছে তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষোভ উৎকণ্ঠা তো প্রকাশিত হলই না, বরং তিনি জানিয়ে দিলেন যৌথ সমীক্ষা ছাড়া কিন্তু বলা যাবে না টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হবে। এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশের যে ক্ষতি হবে তা মানতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারাজ। এখন আদৌ যৌথ সমীক্ষা হবে কি-না কিংবা ভারত তাতে রাজি হবে কি-না সে প্রশ্ন থেকেই গেল। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি মূলত আজকের নয়। একাধিকবার এ বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশ, আসাম ও মণিপুর রাজ্যের স্থানীয় সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মণিপুর রাজ্যের চোরাচাঁদপুর জেলার তুইভাই ও বরাক নদীর সঙ্গমস্থলে টিপাইমুখ বাঁধটি নির্মিত হচ্ছে। ভারত এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। কিন্তু এর ফলে বৃহত্তর সিলেট জেলা বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। বরাক একটি আন্তর্জাতিক নদী। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উজানে ভারত এ ধরনের কোন অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারে না। নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে ভারত বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে একটি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে চাইছে। অর্থনীতিকে ধ্বংসের একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ভারত। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ভারত ওই কাজটি করতে পারে না। আন্তর্জাতিক আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, একটি নদী যদি ২ থেকে ৩টি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তাহলে ওই নদীর পানি কীভাবে বণ্টন হবে। আন্তর্জাতিক নদীর ব্যবহার সম্পর্কে ১৮১৫ সালের ভিয়েনা সম্মেলন, ১৯২১ সালে দারিপুর নদী কমিশন কর্তৃক প্রণীত আইন, আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহার সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫নং অনুচ্ছেদ, ১৯৯২ সালের ডারলিন নীতিমালার ২নং নীতি, প্রতিটি ক্ষেত্রে ভাটির দেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকিং নীতিমালার ৪ ও ৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র, অভিন্ন নদীসমূহ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নিতে হবে। তা অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের কোন ক্ষতি না করেই হতে হবে। অথচ বাঁধটি নির্মিত হলে বৃহত্তর সিলেট বিভাগ বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আন্তর্জাতিক জলপ্রবাহ কনভেনশনের ৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রতিটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক জলপ্রবাহে পানি তার নিজের ভৌগোলিক এলাকায় যুক্তি ও ন্যায় পরায়ণতার সঙ্গে ব্যবহার করবে। এ ‘যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতা’ টিপাইমুখের ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়েছে। জলপ্রবাহ কনভেনশনের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে যেখানে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ক্ষতি যাতে না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা (অনুচ্ছে ৭-১), পারস্পরিক সুবিধা লাভ (অনুচ্ছেদ-৮), তথ্য উপাত্ত বিনিময় (অনুচ্ছেদ ৯-১), এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রকে সময়মতো জানানোর যে কথা বলা হয়েছে ভারত তার একটিও অনুসরণ করেনি। জলাভূমি বিষয়ক কনভেনশনের (কামসার কনভেনশন) ৫নং অনুচ্ছেদ অনুসারে জলাভূমির এবং সেখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহের পরস্পরের যে কথা বলা হয়েছে টিপাইমুখ বাঁধটি চালু হলে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ট্রেডিশনাল উদ্ভিদ, মৎস্যসম্পদ সব ধ্বংস হয়ে যাবে। জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের ১৪নং অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রত্যেক রাষ্ট্রকে কোন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রভাব নিরূপণ করতে হবে। কিন্তু ভারত এ কাজটি করেনি। এমনকি বাংলাদেশ সরকারকেও কখনও বলেনি পরিবেশতগত প্রভাবটি খতিয়ে দেখার জন্য। আন্তর্জাতিক আইন বিশারদ অধ্যাপক ওপেনহেইম বলেছেন, কোন রাষ্ট্রকে নিজ ভূ-খণ্ডের প্রাকৃতিক অবস্থা এমনভাবে পরিবর্তন করতে দেয়া হবে না, যার ফলে তা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূ-খণ্ডের প্রাকৃতিক অবস্থার কোন অসুবিধা সৃষ্টি করে। এখন টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে মণিপুর রাজ্যের বিশাল বনাঞ্চল পানির নিচে চলে যাবে। উদ্বাস্তুতে পণিত হবে কয়েক হাজার মানুষ। এতো গেল একদিক, অন্যদিকে সীমান্তের এপারে অর্থাৎ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল পানিশূন্য হয়ে পড়বে। মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাবে এ অঞ্চল। আন্তর্জাতিক আইন এটা অনুমোদন করে না। এমনকি ভারত যে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প হাতে নিয়েছে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে তাও অবৈধ। কেন না এর ফলে পানির অভাবে সুন্দর করে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাবে (স্পেবাল হেরিটেজ সাইট)। আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত ইউনেস্কো কনভেনশনের এটা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই কনভেনশনের ৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে প্রতিটি রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রকে সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে সহযোগিতা করতে বাধ্য। আমি আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারব। (ওয়ার্ল্ড কনভেনশন অন ডেমস, ১৯৯৮) যা কি না ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের যৌক্তিকতাকে সমর্থন করে না। ভারত অত্যন্ত সুকৌশলে ফুলেরতল ব্যারাজ নির্মাণের কথা এড়িয়ে যাচ্ছে। টিপাইমুখের ১০০ মাইল ভাটিতে ভারত এ ব্যারাজটি নির্মাণ করছে। বাঁধ নির্মিত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। সে জন্য বিশাল জলাধার নির্মাণ করতে হয়। আর ব্যারাজ নির্মাণ করা হয় সেচ কাজের জন্য। ভারত সেচ কাজের জন্যই ব্যারাজটি নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ যদি তার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ‘কিংবা ভারতকে তোষামোদি করার নীতি পরিত্যাগ না করে, তাহলে বাংলাদেশ আগামীতে মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যার মুখোমুখি হবে। ডারবানে যে পরিবেশগত সম্মেলন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ফলে যে পরিবেশগত সমস্যা হবে, তা উত্থাপন করা উচিত। বিষয়টি সংসদেও আলোচিত হোক। বাংলাদেশের নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় হালকাভাবে দেখা ঠিক নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যথেষ্ট উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর (জানুয়ারি-২০১০) ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ওই সফরের সময় যে সহযোগিতা সম্পর্কিত চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তাতে কৌশলে ভারত ট্রানজিট সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। কোন রকম ট্রানজিট ফি নির্ধারণের আগেই ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ ট্রানজিট চালু হয়েছে। এমনই এক সময়ে ভারত যখন টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করার ব্যাপারে একটি চুক্তি করে, তখন সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। এ বাঁধটি নির্মিত হলে শুধু যে বাংলাদেশেরই ক্ষতি হবে, তা নয়। বরং ক্ষতি হবে ভারতের মণিপুর রাজ্যসহ আসাম ও মিজোরাম রাজ্যও। আজ যখন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত হতে পারছেন না আমাদের আদৌ ক্ষতি হবে কি না ঠিক তখন ভারতের এ তিনটি রাজ্যের একাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আন্দোলনে নেমেছে। ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দিয়ে আসামে গঠিত হয়েছে ‘কমিটি অন পিপলস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (কোপে)। কোপে ব্যাপক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে চুক্তি স্বাক্ষরের সংবাদটি নভেম্বরে ছাপা হলেও, গত ১১ জুলাই (২০১১) ভারতের নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশনের (নিপকো) চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রেমচান্দ পংকজ স্থানীয় (মণিপুর) সংবাদপত্রে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে টিপাইমুখে বরাক নদীতে প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবেই। তার বক্তব্য বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় তখন ছাপা হয়েছিল, (আমার দেশ ১২ জুলাই, ২০১১)। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি নয়াদিল্লিতে ওই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২২ অক্টোবর। নয়াদিল্লিতে আমাদের একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক বর্তমানে হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাছে এ তথ্যটি থাকল না কেন? তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানালেন না কেন? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন জানল সংবাদপত্রে খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর? আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে হাজারটা অভিযোগ আছে। তখন এর সাথে আরেকটি অভিযোগ হল। চুক্তিটি সবেমাত্র ৩টি পক্ষের সাথে স্বাক্ষরিত হয়েছে (জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগস, রাষ্ট্রায়াত্ত জলবিদ্যুৎ সংস্থা ও মাণিপুর সরকার)। কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৮৭ মাস। দীর্ঘসময়। বাংলাদেশ এখন অনেক সময় পেল। বাংলাদেশ একদিকে যেমনি ভারতের সাথে এ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে। ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক কোন সংস্থার সাহায্য নিয়ে নিজেরাও একটি সমীক্ষা চালাতে পারে। একটি যৌথ সমীক্ষার কথা বেগম জিয়া বললেও, ভারতের ইতিহাস কখনো বলে না তারা এসব ব্যাপারে অতীতে কখনও রাজি হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধটি (প্রস্তাবিত) বাংলাদেশের সীমানার খুব কাছে। ফলে এর থেকে সৃষ্ট সব ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব যেমন নদীগর্ভে অতিরিক্ত বালুর সঞ্চালন ও সঞ্চায়ন, হঠাৎ বন্যা, অতি বন্যা, ইত্যাদির প্রভাব সম্পূর্ণটুকুই পড়বে বাংলাদশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে সম্পূর্ণ হাওর জনপদের ওপর। এ অঞ্চলের সার্বিক দৃশ্যপট অতিদ্রুত পাল্টে যাবে। আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের হাওর, বিল-ঝিল, বাঁওড়, নদী-নালা বালুতে প্রায় ভরে যাবে। হাওর অঞ্চলের অত্যন্ত উর্বরা ধানের জমি পুরু বালির স্তরের নিচে চাপা পড়বে। ধ্বংস হয়ে যাবে কৃষি। হারিয়ে যাবে শস্য, তথ্য বোরো, শাইল, ও আমন ধানের আঞ্চলিক বৈচিত্র্য। ধ্বংস হয়ে যাবে জীববৈচিত্র্য। হারিয়ে যাবে এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মাছ, গাছপালা, জলজ উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম। ধ্বংস হয়ে যাবে মহামূল্যবান মৎস্য সূতিকাগার। সুরমা ও কুশিয়ারা ধ্বংস হলে মেঘনার কোন অস্তিত্বই থাকবে না। সুতরাং শুধু সিলেটে হাওর অঞ্চলই নয়, মহাপির্যয়ের সম্মুখীন হবে মেঘনা নদী অধ্যুষিত জনপদে বসবাসরত এ দেশের অর্ধেক জনগণ। ধস নামবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়, দেশের অর্থনীতিতে। সুতরাং বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ভারতের সাথে আলাপ-আলোচনায় কিংবা তথ্য আদান-প্রদানে আমরা কখনও সফল হতে পারিনি। ভারত কখনোই আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনি। আজও টিপাইমুখ প্রশ্নে আমরা পূর্ণ তথ্য পাব, তা মনে হয় না। ভারতের সাথে আলাপ-আলোচনার পাশাপাশি আমাদের আন্তর্জাতিক আসরেও সক্রিয় হতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিবেশের ক্ষতির ব্যাপারে সারা বিশ্ব আজ সোচ্চার। আমরা বিশ্ববাসীকে আমাদের সমস্যার কথা জানাতে পারি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতি আদালতে যাওয়ার কথাটিও বলেছেন। বলেছেন ‘যদি বিধান থাকে ও আইন থাকে’ তাহলে বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবে। তিনি সমুদ্র বিবাদ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে (আরবিট্রেশন) যাওয়ার প্রশ্নটিও তুলেছেন। ফারাক্কায় ভারত যখন একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, তখন কিন্তু বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করেছিল। ফলশ্র“তিতে ১৯৭৭ সালেই একটা সমঝোতা হয়েছিল। আজ বোধ করি বাংলাদেশকে সেদিকেই যেতে হবে। সারা দেশের মানুষের যে উৎকণ্ঠা সরকার সেই উৎকণ্ঠাকে উপেক্ষা করতে পারে না।
ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসুত্র:
দৈনিক ইনকিলাব ১২ ই ডিসেম্বর ২০১১।
0 comments:
Post a Comment