মিসরের
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে 'বিপুল' ভোটে সাবেক সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আবদেল
সাত্তা আল সিসি 'বিজয়ী' হয়েছেন। সরকারি ফলে দেখা গেছে, তিনি পেয়েছেন ৯৬
দশমিক ২ শতাংশ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবাহি পেয়েছেন মাত্র ৩ দশমিক ৮
শতাংশ ভোট। দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুরসিকে
ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় এসেছিলেন ফিল্ড মার্শাল সিসি। ২০১১ সালের তাহরির
স্কোয়ারের 'বিপ্লব' মিসরে বড় ধরনের পরিবর্তন ডেকে এনেছিল। ওই পরিবর্তনের
রেশ ধরেই পতন ঘটে হোসনি মোবারকের। অতঃপর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হন
ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ড. মুরসি ২০১২ সালে। কিন্তু সেনাবাহিনী সময় নিয়েছে
মাত্র এক বছর। সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা 'দখল' করে মার্শাল সিসি ক্ষমতা
করায়ত্ত করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, তা এখন তাকে তথাকথিত নির্বাচনে
'বিজয়ী' করল। আসলে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি। ভোটকেন্দ্র দখল আর 'সিল
মারা' সংস্কৃতি সিসিকে 'বিজয়ী' করেছে।
মিসরের এই যে রাজনীতি, এ
রাজনীতির সঙ্গে আমরা মোটামুটি পরিচিত। হোসনি মোবারক এভাবেই বছরের পর বছর
ক্ষমতায় থেকে গেছেন। এভাবেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। আর ওইসব নির্বাচনের
সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক ছিল না। জনগণ সেখানে ভোট দেয়নি। তা সত্ত্বেও
হোসনি মোবারক বারবার বিজয়ী হয়েছেন। তার আগে আনোয়ার সাদাতও এভাবে বিজয়ী
হয়েছিলেন। তখন স্পষ্টতই মিসরে হোসনি মোবারকের জমানার পর সিসির জমানা শুরু
হয়। এটা যে দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা আর কাউকে বলে দিতে হয় না। পুরো আরব বিশ্বে
২০১১ সালের যে আন্দোলন সেখানকার স্বৈরাচারী সরকারদের উৎখাত করেছিল, সেই
আন্দোলন তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। সাময়িক সুবিধা পাওয়া গেছে সত্য; কিন্তু
দীর্ঘস্থায়ী হিসেবে আবারও এক ধরনের স্বৈরাচার চালু হয়েছে। সিসির উত্থান
এটাই প্রমাণ করে।
সঙ্গত কারণেই যে প্রশ্নটি সবাই করেন তা হচ্ছে,
আরব বিশ্বের রাজনীতি এখন কোন বাঁকে? তাহলে কি 'আরব বসন্ত' ব্যর্থ হলো?
কিংবা জঙ্গিবাদ কি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে সমগ্র আরব বিশ্বে? সেক্যুলার
শক্তিগুলো কি ব্যর্থ হলো? গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী? 'আরব বসন্ত' চতুর্থ বর্ষে
পা দিয়েছে। তিউনেসিয়ার ছোট্ট এবং অখ্যাত সিদি বওজিদ শহরের বেকার কম্পিউটার
গ্রাজুয়েট বোউয়াজিজির আত্মহননের মধ্য দিয়ে অন্যায়, অত্যাচারের যে প্রতিবাদ
তিনি করেছিলেন, তা পরিণত হয়েছিল 'আরব বসন্ত'-এ। সেই প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে
গিয়েছিল তিউনেসিয়া থেকে মিসরে, ইয়েমেনে এবং লিবিয়ায়। একের পর এক পতন ঘটেছিল
স্বৈরাচারী সরকারের। রচিত হয়েছিল ইতিহাস। সেটা ২০১১ সালের কথা। তারপর কেটে
গেছে তিন বছর। এরই মাঝে এ অঞ্চলে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। বোউয়াজিজির
নিজের দেশ তিউনেসিয়ায় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইসলামবাদীরা বিজয়ী হলেও, সেখানে
একটি কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছিল। কিন্তু সংবিধান রচনা করার ব্যর্থতা আজ
বিরোধী দলের নেতাদের হত্যাকা-ের ঘটনার রেশ ধরে সেখানে মেহদি জোমাকে প্রধান
করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছে।
এ সরকার ২০১৪ সালেই সাধারণ
নির্বাচনের আয়োজন করবে। মিসরে গণঅভ্যুত্থানে হোসনি মোবারকের পতন সুখের হয়নি
মিসরবাসীর জন্য। মিসরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচনে সেখানে
ইসলামবাদী মুরসির বিজয় একটি সম্ভাবনার জন্ম দিলেও, সেনাবাহিনী আবার সেখানে
ক্ষমতা করায়ত্ত করেছে। এর মধ্য দিয়ে মিসর আবার ফিরে গেল পুরনো বৃত্তে।
ইয়েমেনে দীর্ঘদিনের শাসক আলি আবদুল্লাহ সালেহর অপশাসনের অবসান ঘটলেও,
সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। ঐকমত্যের প্রার্থী হিসেবে আবদ রাব্বু মনসুর
হাদি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেও, সেখানে সংবিধান ও রাষ্ট্রীয়
কাঠামো কী হবে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি 'ন্যাশনাল ডায়ালগ কনফারেন্স', যাদের
ওপর দায়িত্ব পড়েছিল ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করার। লিবিয়ার পরিস্থিতি আরও খারাপ।
গাদ্দাফির হত্যাকান্ডের পর সেখানে সংসদ বা জেনারেল পিপলস কংগ্রেসের
নির্বাচন হয়েছে বটে; কিন্তু নয়া সংবিধান এখনও রচিত হয়নি। পুরনো কাঠামো এখনও
বজায় রয়েছে। শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। সিরিয়ায় পরিবর্তন হয়েছে
ব্যাপক। প্রেসিডেন্ট আসাদ এখনও রয়ে গেছেন ক্ষমতায়। তবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে
লাখ লাখ মানুষ দেশান্তরিত হয়েছে। সেখানে শেষ মুহূর্তে মার্কিন হামলা এড়ানো
গিয়েছিল বটে; কিন্তু জেনেভা সম্মেলনে যদি কোনো 'সমাধান' না হয়, তাহলে সেই
হামলার সম্ভাবনা আরও বাড়বে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাশারের ক্ষমতায় থাকার
সম্ভাবনাই বেশি
আসলে 'আরব বসন্ত' একটা সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছিল।
সেখানে একনায়কতন্ত্রের পরিবর্তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। মানবাধিকার
রক্ষিত হবে। সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন হবে; কিন্তু সে সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমে
যাচ্ছে। যে সম্ভাবনা নিয়ে আরব বসন্তের জন্ম হয়েছিল, তা এখন অনেকটাই অতীত।
'আরব বসন্ত' যখন চতুর্থ বর্ষে পড়েছে, তখন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে এ
অঞ্চলে। মিসরে বহুল আলোচিত সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আবদেল ফাত্তাহ আল
সিসি এখন একটি তথাকথিত নির্বাচন করে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি
মোবারকের পদাঙ্কই অনুসরণ করতে যাচ্ছেন। সে সঙ্গে সেখানে প্রেসিডেন্ট
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সিসি সেখানে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ২০১৩
সালের জুলাই মাসে সেনা অভ্যুত্থানের তিনি নেতৃত্ব দেন। সেনাবাহিনীর শীর্ষ
সামরিক পরিষদ অনেক আগেই তার এ মনোনয়নকে সমর্থন করেছিল। এর মধ্য দিয়ে মিসরে
সিসির যুগ শুরু হচ্ছে এ জুন থেকেই। অন্যদিকে সামরিক অভ্যুত্থানে
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসির বিচার হচ্ছে একটি সামরিক আদালতে। যদিও তিনি
নিজেকে এখনও প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনে করেন; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তার
জনসমর্থক তেমন একটা এখন আর নেই। তিনি মিসরের জন্য একটি প্রচন্ড সম্ভাবনার
সৃষ্টি করলেও, তিনি বেশি মাত্রায় ইসলামের দিকে ঝুঁকে ছিলেন। মিসরকে তিনি
খুব দ্রুত একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। কোনো কোনো আইনে
নারীদের অধিকারও খর্ব করা হয়েছিল। তাহরির স্কোয়ারের 'বিপ্লবীরা', যেখানে
নারীদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। তারা এটা চাননি। আর এ সুযোগটাই নিয়েছিল
সেনাবাহিনী।
এদিকে সিরিয়া থেকেও কোনো আশাব্যঞ্জক খবর আসছে না। ৩
জুন সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গৃহযুদ্ধের মধ্যেই।
প্রার্থী তিনজন। বাশার আল আসাদ নিজে (২০০০ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট), হাসান আল
নুরি ও মাহের আল হাজার। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে আসাদ বিজয়ী হবেন এবং
বিরোধীরা ফল প্রত্যাখ্যান করবে।>
জেনেভায় বিজয়ীদের সঙ্গে আলোচনায়
কোনো ফল পাওয়া যায়নি। সেখানে সরকারপক্ষ একটি অবস্থানপত্র উত্থাপন করলেও
তাতে ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো কথা উল্লেখ নেই। ফলে একটি জটিলতা রয়েই গেল।
একইসঙ্গে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ব্যাপ্তি আরও বেড়েছে। সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর
হাতে প্রায় ১০০ বিদ্রোহী সৈন্য মারা গেছেন জেনেভা আলোচনা চলাকালীনই। আরও
একটি উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে, আল কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠন নুসরা
ফ্রন্ট কর্তৃক সিরিয়ার তেলকূপগুলোর (ফালুজা শহরে) দখল। এটা পশ্চিমা বিশ্বকে
একটা ভুল সিগন্যাল পেঁৗছে দিতে পারে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা,
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সমঝোতা সেখানে যুদ্ধের সম্ভাবনা কমিয়ে আনলেও,
সিরিয়ায় আল কায়দার উত্থান একটি বড় ধরনের সংবাদের জন্ম দিয়েছে। সিরিয়ায় আল
কায়দার উত্থান এখন আলোচনার অন্যতম একটি বিষয়। কোনো কোনো অনলাইন সংবাদপত্রে
[ফ্রন্ট পেইজ ম্যাগ (২০ সেপ্টেম্বর)] এমন কথাও বলা হচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট
ওবামা বাহ্যত আল কায়দাকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছেন। গেল বছর লন্ডনের ডেইলি
টেলিগ্রাফ পত্রিকায় আল কায়দার উত্থান নিয়ে একটি উদ্বেগজনক সংবাদ ছাপা
হয়েছিল। পত্রিকাটি আইএইচএস জেন (IHS Jane) গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ধৃতি
দিয়ে বলেছিল, সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করছে (সংখ্যায়
প্রায় এক লাখ), সেই বিদ্রোহী বাহিনীর প্রায় অর্ধেক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার
সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যারা নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন, তাদের কাছে
লন্ডনের জেন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি কোনো অপরিচিত নাম নয়। জেন-এর পক্ষ থেকে
গবেষণাটি পরিচালনা করেন চার্লস লিস্টার। লিস্টার তার গবেষণায় এটাও উল্লেখ
করেছেন যে, বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধা রয়েছেন, যারা
আদৌ সিরিয়ার নাগরিক নন। এরা জঙ্গিবাদী সংগঠন আল লুসরা ফ্রন্ট, ইসলামিক
স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার ব্যানারে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে
যাচ্ছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে যেসব অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, তার একটা
বড় অংশ চলে গেছে জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর কাছে। এখন এমন ধারণাও পোষণ করা হচ্ছে
যে, আগামীতে যদি আসাদ সরকারের পতন ঘটে, তাহলে আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে
থাকা বিপুল অস্ত্রভা-ার চলে যাবে এসব জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর কাছে, যাদের
প্রায় সবাই আল কায়দার সঙ্গে জড়িত। সিরিয়ায় আল কায়দার উত্থান নিয়ে খোদ ওবামা
প্রশাসনও উৎকণ্ঠিত। গেল বছর ওয়াশিংটনে সিনেটের এক শুনানিতে (হোমল্যান্ড
সিকিউরিটি) টম জোসেলিনও এ ব্যাপারে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। যারা
নিয়মিত সিরিয়ার ঘটনাবলি মনিটরিং করেন, তাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে, কিছুদিন
আগে ইসলামী জঙ্গিরা আলেপ্পো শহরের কাছাকাছি আস সাদ্দাদি (লোকসংখ্যা ৭০
হাজার) শহরটি দখল করে নিয়েছিল।
জেনের গবেষণা প্রতিবেদনে যে
উদ্বেগজনক দিকটি রয়েছে তা হচ্ছে, সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ
করছে, তাদের মাঝে শতকরা মাত্র ২৫ ভাগ যোদ্ধা ধর্মনিরপেক্ষ, লিবারেলপন্থী।
বাকিরা সবাই বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
যদিও এ ধরনের সংবাদের সত্যতা যাচাই করা সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে
বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, গবেষণা নিবন্ধ থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে
যে, আল কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলোর অবস্থান অত্যন্ত
শক্তিশালী। ফলে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, আগামীতে যদি আসাদ সরকারের পতন
ঘটে(?), তাহলে কোন শক্তি সিরিয়ায় রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে?
সিরিয়ায়
বিদ্রোহী গ্রুপগুলো কোনো একক নেতৃত্বে পরিচালিত হয় না। এরা বিভিন্ন গ্রুপ,
উপগ্রুপে বিভক্ত। এককভাবে কোনো বিরোধী দল বা গ্রুপ নেই, যারা আসাদ-পরবর্তী
সিরিয়ায় সরকার গঠন করতে পারে। এক সময় সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল গঠিত
হয়েছিল; কিন্তু সেই কাউন্সিল এখন বিলুপ্ত। এর পরিবর্তে গঠিত হয়েছে
ন্যাচারাল কাউন্সিল ফর সিরিয়ান রেভ্যুলেশনারি অ্যান্ড অপজিশন ফোর্সেস
(এনসিএসআরও)। এটি গঠিত হয় ২০১২ সালের নভেম্বরে দোহায়।
২০১৩ সালের
জুলাই মাসে আহমেদ জাবরা এ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এদের
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্বাধীন এবং ঐক্যবদ্ধ সিরিয়া ও গণতান্ত্রিক
সংস্কৃতি, যেখানে সংসদের কর্তৃত্ব নিশ্চিত হবে। এরা আসাদ সরকারের সঙ্গে
কোনো আলাপ-আলোচনার পক্ষপাতী ছিলেন না। এদের একটি প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, গালফ
কো-অপারেশন কাউন্সিল এদের সমর্থন করে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মরক্কোর
মারাকাসে আসাদবিরোধীদের যে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রায় ১০০
দেশ সেখানে প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিল, তাতে তাদের সমর্থন নিশ্চিত করা হয়।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এদের সমর্থন করে
সিরিয়ার বামপন্থীরা ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির ব্যাপারে কাজ করে। ১৩টি
দল এ ব্যানারে রয়েছে। কুর্দিরাও এ ব্যানারের আওতায় কাজ করে। এর বাইরে রয়েছে
ইসলামিক ফোর্সগুলো, যাদের সঙ্গে আল কায়দার সম্পর্ক রয়েছে। ইসলামী জঙ্গি
সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে জাবহাল উল নুসরা। ১২টি ইসলামী জঙ্গি সংগঠন সিরিয়ান
ইসলামিক ফ্রন্টের ব্যানারে একত্রিত হয়েছে।
বুসরা ফ্রন্টের বাইরে
ইসলামিক স্ট্রেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া, আহরার আল শাসের মতো সংগঠনের নাম
পাওয়া যায়, যারা আলাদাভাবে পাঁচ থেকে ছয় হাজার জঙ্গি ইসলামিক সেনার নেতৃত্ব
দিয়ে আসছে। ধারণা করা হয়, কোনো কোনো গ্রুপের হাতে প্রায় ২৫ হাজার সেনা
পর্যন্ত রয়েছে। যদিও এরা কেউই প্রশিক্ষিত যোদ্ধা নন। এদের মূল দর্শন হচ্ছে,
সিরিয়াকে একটি ইসলামিক এমিরাতে পরিণত করা। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি মূলত
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ত্যাগ করে বিদ্রোহী দলে যোগ দেয়া সেনা সদস্য ও ঊর্ধ্বতন
জেনারেলদের নিয়ে গঠিত হয়েছে। এ সেনাবাহিনী রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি
দায়বদ্ধ থাকলেও, আগামী দিনের রাজনীতিতে এদের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে
না। ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর কাছে প্রচুর অস্ত্র চলে গেছে। ওই অস্ত্র আগামী
দিনের সিরিয়ার রাজনীতিতে একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে।
>আমরা
লক্ষ করেছি, এর আগে দুটি দেশে যেখানে মার্কিন সামরিক আগ্রাসন হয়েছে (ইরাক ও
লিবিয়া), সেখানে ইসলামী জঙ্গিরা শক্তিশালী হয়েছে। ইরাকে (২০০৩) মার্কিন
আগ্রাসন, সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের পর একটি সরকার সেখানে গঠিত হয়েছে বটে;
কিন্তু ইসলামী জঙ্গিরা সেখানে শক্তিশালী হয়েছে, যা সাদ্দামের জমানায় ছিল
না। ইরাকে এখন আত্মঘাতী বোমা সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। লিবিয়াও একই পরিস্থিতি
বরণ করেছে। সেখানকার ইসলামিক জঙ্গিরা অত্যন্ত শক্তিশালী। এদের হাতেই
বেনগাজির মার্কিন দূতাবাস আক্রান্ত হয়েছিল এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তারা
হত্যা করেছিল। এখন সিরিয়ার পরিস্থিতিও অনেকটা সেরকম।
'আরব বসন্ত'
সেখানে সাময়িক একটা পরিবর্তন এনেছে, এটা সত্য। কিন্তু স্বৈরাচারী
সরকারগুলোর উৎখাতের মধ্য দিয়ে সেখানে এরই মধ্যে গণতান্ত্রিক সরকারের মৃত্যু
ঘটেছে। মিসর বাদে প্রায় প্রতিটি আরব বিশ্বে আন্তঃরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ
করছে। অস্ত্রবাজরা রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি যতটুকু না বিশ্বস্ত, তার চেয়ে
বেশি বিশ্বস্ত ক্ষমতা ধরে রাখাতে কিংবা ক্ষমতা প্রদর্শন করতে। সিরিয়া,
ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন এর বড় প্রমাণ। তবে মিসরে সিসির উত্থান মিসরকে আবার
নিয়ে গেল স্বৈরাচারের এক যুগে।
Daily Alokito Bangladesh
05.05.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment