রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ক্যাস্ত্রো-পরবর্তী যুগে কিউবা



  তারেক শামসুর রেহমান ২৩ এপ্রিল ২০১৮, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এটা অনেকটাই নির্ধারিত ছিল। কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ত্রো পদত্যাগ করবেন। কিউবার পার্লামেন্টের অধিবেশনে তিনি পদত্যাগ করবেন- এমনটাই বলা হয়েছিল। তিনি তাই করলেনও। প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট মিগেল ডিয়াজ-কানেল দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, ওটাও অনেকটা নির্ধারিত ছিল। সব মিলিয়ে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবেই কিউবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় পটপরিবর্তন ঘটল। কিউবান বিপ্লবের ৫৯ বছরের ইতিহাসে ওই প্রথম কিউবা একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে পেল, যিনি ক্যাস্ত্রো পরিবারের বাইরে এবং কিউবার বিপ্লবের পর যার জন্ম। ৫৭ বছর বয়সী মিগেল ডিয়াজ-কানেলকে বলা হয় তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। কেননা রাউল ক্যাস্ত্রোর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। যদিও ৮৬ বছর বয়সে তিনি ‘সুস্থ’ই ছিলেন। তার পরও বছর দু’এক আগেই বলা হয়েছিল, ২০১৮ সালের কিউবান পার্লামেন্টের অধিবেশনে তিনি পদত্যাগ করবেন। রাউল ক্যাস্ত্রো ক্ষমতায় ছিলেন ২০০৬ সাল থেকে। অর্থাৎ প্রায় ১২ বছর প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ক্ষমতা পরিচালনা করে গেছেন। কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখনও তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন ছোট ভাই রাউল ক্যাস্ত্রোর হাতে। আর ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল এসে রাউল ক্যাস্ত্রোও ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন।
রাউল ক্যাস্ত্রোর ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া কিংবা মিগেল ডিয়াজ-কানেলের ক্ষমতা গ্রহণ নানা প্রশ্নের জন্ম দিতে বাধ্য। কোন পথে এখন হাঁটবে কিউবা? যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কী আদৌ উন্নতি ঘটবে? মিগেল ডিয়াজ-কানেল কী ক্যাস্ত্রো অনুসৃত নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন? এসব প্রশ্ন এখন বারবার উচ্চারিত হবে। বারবার আলোচিত হতে থাকবে। তবে এটা বলতেই হয়, মিগেল ডিয়াজ-কানেল রাউল ক্যাস্ত্রোর খুব ঘনিষ্ঠজন। ব্যক্তি এখানে একটি ফ্যাক্টর। তিনি রাউল ক্যাস্ত্রোর প্রভাবের বাইরে যেতে পারবেন না। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত ধাঁচের সমাজতন্ত্রের পতনের রেশ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন সমাজতন্ত্রের পতন ঘটল, তখন বলতে গেলে সারা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল কিউবার দিকে। কেননা বিউবা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম মিত্র। øায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে কিউবা সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী একটা অবস্থান নিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে বলা হয়েছিল কিউবা কী আদৌ অর্থনৈতিকভাবে দাঁড়াতে পারবে? কেননা কিউবার অর্থনীতির অন্যতম উৎস ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ ক্ষেত্রে তখন বলা হয়েছিল, কিউবা অর্থনীতি ভেঙে পড়বে! কিউবার অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি সত্য, কিন্তু অর্থনীতিতে পরিবর্তন এসেছে। সমাজতন্ত্রের পতনের পর দুটি বড় সমাজতান্ত্রিক দেশ, চীন ও ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। চীন ও ভিয়েতনাম এখন আর ধ্রুপদী মার্কসবাদ অনুসরণ করে না। তাদের অর্থনীতিতে বাজার অর্থনীতির কিছু মৌলিক ‘এলিমেন্ট’ প্রবেশ করেছে। ব্যক্তিগত খাত, বিদেশি বিনিয়োগ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শেয়ারবাজার ইত্যাদি এখন এই দুটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তারা এখন অর্থনৈতিক এই বিবর্তনকে বলছে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি। তাতে তারা ফলও পেয়েছে। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। চীনের অর্থ ও উৎপাদন সামগ্রী এখন বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ক্ষেত্রে কিউবাতেও কিছু কিছু পরিবর্তন এসেছে। তবে চীনের মতো অত ব্যাপক নয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন অনেক দিন ধরেই চাচ্ছে কিউবা আরও ‘উন্মুক্ত’ হোক। কিন্তু কিউবার নেতৃত্ব এখনও সবকিছু ‘উন্মুক্ত’ করে দেয়নি। দেশের অর্থনীতির শতকরা ৮০ ভাগ এখনও সরকার নিয়ন্ত্রিত। কিছু কিছু ব্যবসা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সারা দেশে এ সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার। বেসরকারি খাত সম্প্রসারণের আরও সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ‘ট্যুরিজম খাত’। এ খাত কিছুটা উন্মুক্ত করা হয়েছে। আরও উন্মুক্ত করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের হোটেল চেইন ব্যবসায়ীরা এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। কিউবায় সীমিত আকারে ডলার বাণিজ্য হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কিউবান-আমেরিকানরা এখন নিয়মিত কিউবাতে ডলার পাঠাচ্ছে। কিউবাতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এতদিন ভেনিজুয়েলা থেকে যে স্বল্পমূল্যে জ্বালানি পেত, তা এখন আর আগের মতো আসছে না। কিউবাতে তেমন একটা বিনিয়োগও আসছে না। মার্কিন বিনিয়োগ বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। সবচেয়ে বড় কথা কিউবা-আমেরিকা সম্পর্কে তেমন উন্নতি ঘটছে না। একটি বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। তিনি কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি নিজে হাভানায় গিয়েছিলেন। হাভানায় পুনরায় মার্কিন দূতাবাস খোলা হয়েছিল। তিনি অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওবামা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন, তিনি কিউবাকে রাষ্ট্র পরিচালিত সন্ত্রাসবাদের তালিকা থেকে বাদ দেবেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বদলে দিলেন সবকিছু। তিনি দাবি জানালেন কিউবাতে আরও বেশি গণতন্ত্রায়নের।
কিউবার বড় সমস্যা তার নিরাপত্তাহীনতা। যুক্তরাষ্ট্র কখনই কিউবায় একটি সমাজতান্ত্রিক সরকারকে স্বীকার করে নেয়নি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবার এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র কিউবা বিপ্লবের মাত্র দু’বছরের মধ্যে ১৯৬১ সালে ভাড়াটে কিউবানদের দিয়ে কিউবা সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়। সিআইএ’র অর্থে পরিচালিত এই অভিযান ‘বে অব পিগ্স’ নামে পরিচিত। বলাই বাহুল্য, ওই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেমে থাকেনি।
একটি পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে, যা যুুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে, এটা বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি নৌ অবরোধ আরোপ করেছিল, যাতে সমুদ্রপথে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র কিউবাতে সরবরাহ করা না যায়। ওই সমুদ্র অবরোধ যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি পারমাণবিক যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন দাবি করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্ক থেকে তাদের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে নিতে হবে। দীর্ঘ ১৩ দিন ওই সমুদ্র অবরোধ বহাল ছিল। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ক থেকে মিসাইল প্রত্যাহার করে নিলে সোভিয়েত ইউনিয়নও কিউবা থেকে ক্ষেণাস্ত্রগুলো সরিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে গেলেও সংকট থেকে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র কিউবার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে এই অর্থনৈতিক অবরোধের বিরুদ্ধে কিউবা যুদ্ধ করে আসছিল। এতে করে কিউবার অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু প্রবল ‘চাপ’-এর মুখে থেকেও কিউবা তার সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে গেছে। এমনকি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে কিউবা ছিল একটি আদর্শ। পৃথিবীর যেখানেই শোষণ হয়েছে, অত্যাচার হয়েছে, সেখানেই ফিদেল ক্যাস্ত্রো আর কিউবার নাম বারবার উচ্চারিত হয়েছে। বাংলাদেশের তরুণদের মাঝেও চে গুয়েভারা ও ফিদেল ক্যাস্ত্রো ছিলেন সমান জনপ্রিয়। শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই দুই ব্যক্তি বারবার আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
কিউবার বিপ্লবের এত বছর পর এই প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হল এমন একজনের কাছে, যিনি ক্যাস্ত্রো পরিবারের বাইরে। ক্যাস্ত্রো পরিবারের সদস্যরা কিউবাতে আছেন। তাদের সন্তানরা কেউ সেনাবাহিনীতে, কেউ পার্টিতে। কিন্তু রাউল ক্যাস্ত্রো এদের কাউকে সামনে নিয়ে আসেননি। নিয়ে এসেছিলেন মিগেল ডিয়াজ-কানেলকে। ৮৬ বছর বয়স হয়েছিল রাউল ক্যাস্ত্রোর। তিনি ইচ্ছা করলে আরও কিছুদিন থাকতে পারতেন। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, রাউল এক সময় চিন্তা করেছিলেন তিনি আরও দু’টার্ম থাকবেন (৫ বছর করে) এবং এরপর মিগেল ডিয়াজ দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা তিনি পরিত্যাগ করেছিলেন। দু’বছর আগেই তিনি পদত্যাগ করবেন। এবং করলেনও তাই। ফিদেল ক্যাস্ত্রো জীবিত থাকাকালীন রাউল ক্যাস্ত্রো তার পাশাপাশি থেকেছেন। ফিদেল তাকেই উত্তরসূরি হিসেবে মনোনীত করেছিল। যদিও এটা ঠিক কিউবার বিপ্লবে রাউল ক্যাস্ত্রোরও একটি ভূমিকা ছিল। কিন্তু মিগেল ডিয়াজ-কানেল বিপ্লবে অংশ নেননি। কিন্তু রাউল ক্যাস্ত্রোই তাকে বেছে নিয়েছিলেন। এখন যে প্রশ্নটি পশ্চিমা বিশ্বে উঠেছে, তা হচ্ছে মিগেল ডিয়াজ-কানেল কি রাউলের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবেন? কিংবা সংস্কারের ব্যাপারে তিনি কতটুকু ‘কমিটেড’ হবেন? রাউল ক্যাস্ত্রো বিদায় নিয়েছেন বটে; কিন্তু অত্যন্ত ক্ষমতাবান সেনাবাহিনী ও পার্টিপ্রধান হিসেবে তিনি থেকে যাচ্ছেন। এর অর্থ নয়া প্রেসিডেন্ট মিগেল রাউল ক্যাস্ত্রোর প্রভাবের বাইরে যেতে পারবেন না। তিনি যদি আরও বেশি সংস্কারের উদ্যোগ নেন, সে ক্ষেত্রে রাউলের সমর্থনের তার প্রয়োজন হবে। রাউল ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান হিসেবে থেকে যাচ্ছেন। এটাও ঠিক আছে। এ মুহূর্তে তিনি যদি পার্টিপ্রধান হিসেবেও পদত্যাগ করেন, তাহলে পার্টিতে কোন্দল দেখা দিতে পারে। পার্টির জন্য তা কোনো ভালো খবর নয়। প্রকাশ্যে পার্টির ভেতরকার কোনো দ্বন্দ্বের খবর আমরা জানি না। পার্টিতে যারা সিনিয়র, তারা কিউবান বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ বেঁচে আছেন। এরা সংস্কারের ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন। রাউল ক্যাস্ত্রোর মেয়ের জামাই (যিনি সেনাবাহিনীর জেনারেল) সম্পর্কেও পশ্চিমা বিশ্বে একটা কথা বলা হয় যে, তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ক্ষমতালিপ্সু। যদিও তার অতি আগ্রহের কথা সংবাদপত্রে কখনই প্রকাশিত হয়নি। এর অর্থ পরিষ্কার মিগেল ডিয়াজ-কানেল অনেক দিনের জন্য ক্ষমতায় এলেন। দুটি বিষয় দেশটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক. যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষমতাবদলকে কোন দৃষ্টিতে দেখবে এবং কিউবার ব্যাপারে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির আদৌ পরিবর্তন হবে কিনা? দুই. কিউবায় আরও বেশি অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে মিগেল ডিয়াজ যাবেন কিনা? কিউবার ব্যাপারে ওবামা প্রশাসন একটি ‘নরম’ অবস্থানে গিয়েছিল। রিপাবলিকানদের চাপের মুখেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়ার। তিনি নিজে কিউবায় গিয়েছিলেন। কিন্তু কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার যে উদ্যোগ, তা তিনি নিতে পারেননি। এখন ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে পুরো উল্টোপথে হাঁটলেন। রাউল ক্যাস্ত্রোর সম্পর্কেও তিনি নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তিনি চান কিউবা সবকিছু আরও বেশি উন্মুক্ত করে দিক! এটা বোধহয় কিউবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। আরও বেশি তথাকথিত গণতন্ত্রায়নের অর্থ হচ্ছে, কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা কমানো, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ও তাদের প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে সুযোগ করে দেয়া। কিউবার নয়া নেতৃত্ব এটি করবে বলে মনে হয় না। ফলে কিউবার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যে পর্যায়ে রয়েছে, সে রকমটিই রয়ে যাবে। তবে নয়া প্রেসিডেন্ট মিগেল ডিয়াজ-কানেল সংস্কারের ব্যাপারে আরও কিছু উদ্যোগ নিতে পারেন। সমাজতান্ত্রিক সমাজে সংস্কারটা প্রয়োজন। চীন ও ভিয়েতনাম ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কার এনে সফল হয়েছে। কিউবা এখন সে পথে হাঁটতে পারে। সমাজতন্ত্রের অর্থ দারিদ্র্য নয়- এ কথাটা বলেছিলেন চীনের সংস্কারের জনক দেং জিয়াও পিং। চীনে ওই সময় দরিদ্রতা ছিল। চীন সমাজতান্ত্রিক কাঠামো বজায় রেখেই ধীরে ধীরে একটি ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্য সেখানে কমেছে। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিউবার ক্ষেত্রেও এমনটি হতে পারে। ৮৭ মিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি কিউবার। জিডিপি র‌্যাংকিংয়ে কিউবার অবস্থান ৬৫তম। মাথাপিছু আয় ৭৪৬৫ ডলার। সার্ভিস সেক্টরে জিডিপির অবদান বেশি, শতকরা ৭৩ ভাগ। এখানেই নয়া কিউবা সরকারকে হাত দিতে হবে। ট্যুরিজমের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। এই সার্ভিস সেক্টর যদি আরও উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করা যায়, তাহলে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসতে বাধ্য। কিউবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জগৎ বিখ্যাত। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে কিউবা এই সেবা দিয়ে থাকে (ভেনিজুয়েলার সহযোগিতায়)। ভেনিজুয়েলার অর্থনৈতিক মান্দাভাবের কারণে এটাও এখন বন্ধের পথে। সস্তায় জ্বালানি তেলও পাওয়া যাচ্ছে না ভেনিজুয়েলা থেকে। ফলে এই সেক্টরের দিকে প্রেসিডেন্ট মিগেলকে নজর দিতে হবে।
কিউবার নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। এটাই স্বাভাবিক। নয়া নেতৃত্ব, যাদের জন্ম বিপ্লবের পর, তারা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছেন। একুশ শতকে তারা এখন কিউবাকে কোথায় নিয়ে যেতে চান, সেটাই দেখার বিষয়।
Daily Jugantor
23.04.2018

1 comments: