জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব উরসুলা মুয়েলার একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৭ লাখ রোহিঙ্গা যখন নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষা করছে, ঠিক তখনই তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য পরিস্থিতি অনুকূল নয়। সম্প্রতি মিয়ানমার তাকে রাখাইনে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। তিনি ছয় দিনের সফরে মিয়ানমারে গিয়েছিলেন এবং রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলও সফর করেছেন। তিনি সফরশেষে এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পরও ৪ লাখের বেশি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ৬ বছর ধরে শিবিরে বন্দি রয়েছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ যখন বড় ধরনের সংকটে আছে, ঠিক তখনই উরসুলা মুয়েলারের এই বক্তব্য নতুন করে নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে। জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তার বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, জাতিসংঘ প্রকারান্তরে চাচ্ছে না রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে ফিরে যাক। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, তিনি রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কোনো কর্মকা- গ্রহণ করতে মিয়ানমার সরকারকে দেখেননি। তিনি আরও একটি কথা বলেছেন, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে এখনও চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে প্রান্তিকীকরণের শিকার ও কঠোর জীবনযাপনে বাধ্য হওয়া ৪ লাখেরও বেশি মুসলমান ব্যক্তির (রোহিঙ্গা) দুঃখের কথা আমরা ভুলতে পারি না; কোনোভাবেই আমাদের উচিতও নয়।
মিথ্যা বলেননি উরসুলা মুয়েলার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জাতিসংঘের যে ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল, সেটি করতে পারছে না শুধু বৃহৎ দুই শক্তি চীন ও রাশিয়ার অসহযোগিতার কারণে। এ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হলেও তাতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন ভারতের নয়া পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে। গোখলে সাংবাদিকদের বলেছেন, তার সরকার ও বাংলাদেশ একসঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কাজ করবে। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ভারত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য দেবে। অতীতে ভারত রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। নিঃসন্দেহে ভারত যদি মিয়ানমার সরকারকে কিছুটা ‘চাপ’ দেয়, তাহলে চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২১ জানুয়ারি বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেছিলেন। তিনি নিজে মিডিয়ার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং ঝি লিও ২১ জানুয়ারি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এদের সবার বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ব্রিফিং করেছেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতও। তার বক্তব্যও গুরুত্বের দাবি রাখে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠিক কোনদিন থেকে শুরু হবে, সে রকম তারিখ-টারিখ বলা মুশকিল।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘যেতে না চাইলে তো জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের চুক্তির সব জায়গায়ই স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কফি আনানের কমিশনের রিপোর্টেও তা আছে।’ যখন রোহিঙ্গারা জানতে পারবে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেÑ এসব বিষয় দেখলে তখন তারা নিজেরাই যেতে উৎসাহী হবে। (যুগান্তর, ২২ জানুয়ারি)। অনেকটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বক্তব্যের একটা ‘মিল’ খুঁজে পাওয়া যায়। বার্নিকাট বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অবশ্যই নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় হতে হবে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্পষ্টই কয়েকটি বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছেÑ এক. রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে? দুই. রোহিঙ্গারা সেখানে কতটুকু নিরাপদ? তিন. রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে পারবে কি না? চার. রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তাদের জীবন-জীবিকার কী হবে? মিয়ানমারের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক ও পরবর্তীতে বাস্তুচ্যুত রাখাইনের বাসিন্দাদের প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতে নাগরিকত্বের বিষয়টি আদৌ নেই। মিয়ানমার এদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। রোহিঙ্গা নামেরও আপত্তি রয়েছে তাদের। এমনকি কফি আনান কমিশনের রিপোর্টেও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। মিয়ানমার এদের ‘বাঙালি’ হিসেবে স্বীকার করে।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় এবং ডকুমেন্টে কোথাও রোহিঙ্গা শব্দটি নেই। গত বছর ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকলেও নাগরিকত্বের প্রশ্নে তাদের অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছেÑ এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি উঠবে, তা হচ্ছে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া রোহিঙ্গা আদৌ ফেরত যেতে চাইবে কি না?
মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের এটা একটা বড় দুর্বলতা। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি। দ্বিতীয় প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণÑ নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে? নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। অনেকে তার স্ত্রী, স্বামী, সন্তানকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা করতে দেখেছে। অনেক দেরিতে হলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীপ্রধান ‘সীমিত হত্যাকা-ে’র কথা স্বীকার করেছেন। তাদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইবেন নাÑ এটাই স্বাভাবিক। এখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের নিজ বাসভূম থেকে উৎখাত করেছে, রোহিঙ্গারা তাদের বিশ্বাস করবে না। ইতোমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা সুস্পষ্ট করেই বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না! রোহিঙ্গারা এ ধরনের বক্তব্যে উৎসাহিত হবেন নিঃসন্দেহে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো যাবে না! এ ধরনের বক্তব্য রোহিঙ্গাদের এই দেশে থেকে যেতে উৎসাহ জোগাতে পারে। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আরও ম্যাচিউরড বক্তব্য আশা করেছিলাম। তৃতীয় প্রশ্নটিকেও আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। রোহিঙ্গারা কি আদৌ নিজ বাসভূমে ফেরত যেতে পারবে? এর সরাসরি জবাব হচ্ছেÑ না। যে চুক্তি হয়েছে, তাতে মিয়ানমার দুটি ক্যাম্প করবে। প্রথমটা অভ্যর্থনা ক্যাম্প, দ্বিতীয়টা অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্প। অর্থাৎ যারা বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবে, তাদের প্রথমে অভ্যর্থনা ক্যাম্পে রাখা হবে। তারপর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অপর একটি অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। এখানেই সমস্যাটা তৈরি হবে। এই ক্যাম্পে তারা বছরের পর বছর থেকে যেতে বাধ্য হবে! এটা একধরনের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। এখানে রেখেই তথাকথিত যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি হবে। আমার শঙ্কা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ভাগ্য ফিলিস্তিনিদের মতো হতে পারে! পাঠক স্মরণ করতে পারেন, ফিলিস্তিনিরা নিজ বাসভূম থেকে উৎখাত হয়ে বছরের পর বছর, জেনারেশনের পর জেনারেশন থেকে যাচ্ছেন ক্যাম্পে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পাঠক, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ যুগে ‘হোমল্যান্ড’গুলোর কথা স্মরণ করতে পারেন। বর্ণবাদ যুগের অবসানের আগে কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে সাতটি হোমল্যান্ডে রাখা হয়েছিল। আমার আশঙ্কাটা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের অবস্থা অনেকটা হোমল্যান্ডগুলোয় থাকা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অথবা ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর মতো হতে পারে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নীতি এটাইÑ রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করা। আন্তর্জাতিক ‘চাপ’ এর কারণে তারা রোহিঙ্গাদের নিতে চাচ্ছে বটে, কিন্তু বাস্তবতাই বলে তারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করে নিতে চাইছে না। উপরন্তু তারা কোনোদিনই তাদের নিজ নিজ বসতবাটিতে ফেরত নেবে না। কেননা সেসব বসতবাটির আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। রাখাইনে কয়েকশ গ্রামে রোহিঙ্গাদের বসতবাটি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেসব গ্রাম এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘লিজ’ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে থাকতে পারছে না। রোহিঙ্গারা কোনোমতেই অন্যত্র থাকতে চাইবে না। বংশপরম্পরায় তারা নিজ বাসভূমে বসবাস করে আসছে। জমিজমা চাষ করে আসছে। কেউ কেউ ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। এখন তাদের যদি অন্যত্র রাখা হয়, তারা তা মানতে চাইবে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এটা একটা অন্যতম সমস্যা। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এসব প্রশ্নের জবাব থাকা বাঞ্ছনীয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ খুব শক্ত অবস্থানে গেছে, এটা আমার মনে হয় না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং তার ‘বডি ল্যাংগুয়েজ’ বলে দেয়, বাংলাদেশ একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল; কিন্তু মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার কোনো কৌশল অবলম্বন করেনি। জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হয়েছে। জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান একটি ঘৃণিত অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনে তা দ-নীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। ইতোমধ্যে বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কঙ্গো, লাইবেরিয়া কিংবা রুয়ান্ডায় যারা জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে জড়িত ছিলেন, সেসব সেনা কর্মকর্তার বিচার হয়েছে। রায়ও দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সেনা কর্মকর্তাকে মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ এদের বিচারের দাবি করতে পারত। তাহলে অন্তত মিয়ানমার সরকার একটা ‘চাপ’ এর মুখে থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একটি ‘সফ্ট ডিপ্লোম্যাসি’র আশ্রয় নিয়েছে। ২৫ আগস্টের (২০১৭) রোহিঙ্গা গণহত্যা ও রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও বাংলাদেশ নিকট প্রতিবেশী, বিশেষ করে চীন ও ভারতের ‘সাহায্য’ নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ অবধি চীন স্ব-উদ্যোগে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সে প্রস্তাব অনুসরণ করেই মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। আগস্টের পর থেকে সংকটের গভীরতা বাড়লেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ওই সময় চীন, রাশিয়া, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেননি, এমনকি এসব দেশের সাহায্যও চাননি। অথচ প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভালো। এসব দেশকে দিয়ে আমরা মিয়ানমারের ওপর প্রভাব খাটাতে পারতাম। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পক্ষে। সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে। তিনিও বলেছেন, ভারত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। কিন্তু জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উরসুলা মুয়েলার যখন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি অনুকূল নয়, তা বিশ্ব সম্প্রদায়কে ভিন্ন মেসেজ পৌঁছে দিতে পারে! তারা ‘জোর করে’ রোহিঙ্গাদের পাঠাতে চাইবে না! এমনকি বাংলাদেশ যেখানে ৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছে, সেখানে মিয়ানমার জানিয়েছে তারা মাত্র ৩৮৩ জনকে গ্রহণ করবে। এর অর্থ পরিষ্কারÑ মিয়ানমার অন্য রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না! তাহলে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ কোথায় আশ্রয় দেবে? ভাসানচরে কিছু বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার স্থান হবে, কিন্তু বাকিরা থেকে যাবে বৃহত্তর কক্সবাজার এলাকায়। এখন জাতিসংঘের কর্মকর্তার বক্তব্য প্রকারান্তরে রোহিঙ্গাদের উৎসাহ জোগাবে বাংলাদেশে থেকে যেতে। এরই মাঝে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উ উইন মাইয়াত আই। প্রথমে তিনি কুতুপালং কাম্পে যান। রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করেন। এর পর ঢাকায় এসে দেখা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। রোহিঙ্গাদের তিনি ‘সবকিছু ভুলে’ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বলেছেন, তাদের জন্য নতুন নতুন গ্রাম তৈরি করা হবে। রোহিঙ্গাদের NVC বা National Varification Card দেওয়া হবে বলেও জানান। কিন্তু এই কার্ড নাগরিকত্বের পরিচয় বহন করে না। ফলে প্রশ্ন থাকলইÑ রোহিঙ্গারা শেষ অবধি নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন কি না।
মিথ্যা বলেননি উরসুলা মুয়েলার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জাতিসংঘের যে ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল, সেটি করতে পারছে না শুধু বৃহৎ দুই শক্তি চীন ও রাশিয়ার অসহযোগিতার কারণে। এ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হলেও তাতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন ভারতের নয়া পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে। গোখলে সাংবাদিকদের বলেছেন, তার সরকার ও বাংলাদেশ একসঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কাজ করবে। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ভারত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য দেবে। অতীতে ভারত রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। নিঃসন্দেহে ভারত যদি মিয়ানমার সরকারকে কিছুটা ‘চাপ’ দেয়, তাহলে চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২১ জানুয়ারি বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেছিলেন। তিনি নিজে মিডিয়ার সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং ঝি লিও ২১ জানুয়ারি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এদের সবার বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ব্রিফিং করেছেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতও। তার বক্তব্যও গুরুত্বের দাবি রাখে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠিক কোনদিন থেকে শুরু হবে, সে রকম তারিখ-টারিখ বলা মুশকিল।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘যেতে না চাইলে তো জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের চুক্তির সব জায়গায়ই স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কফি আনানের কমিশনের রিপোর্টেও তা আছে।’ যখন রোহিঙ্গারা জানতে পারবে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেÑ এসব বিষয় দেখলে তখন তারা নিজেরাই যেতে উৎসাহী হবে। (যুগান্তর, ২২ জানুয়ারি)। অনেকটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বক্তব্যের একটা ‘মিল’ খুঁজে পাওয়া যায়। বার্নিকাট বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অবশ্যই নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় হতে হবে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্পষ্টই কয়েকটি বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছেÑ এক. রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে? দুই. রোহিঙ্গারা সেখানে কতটুকু নিরাপদ? তিন. রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে পারবে কি না? চার. রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তাদের জীবন-জীবিকার কী হবে? মিয়ানমারের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক ও পরবর্তীতে বাস্তুচ্যুত রাখাইনের বাসিন্দাদের প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতে নাগরিকত্বের বিষয়টি আদৌ নেই। মিয়ানমার এদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। রোহিঙ্গা নামেরও আপত্তি রয়েছে তাদের। এমনকি কফি আনান কমিশনের রিপোর্টেও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। মিয়ানমার এদের ‘বাঙালি’ হিসেবে স্বীকার করে।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় এবং ডকুমেন্টে কোথাও রোহিঙ্গা শব্দটি নেই। গত বছর ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকলেও নাগরিকত্বের প্রশ্নে তাদের অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছেÑ এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি উঠবে, তা হচ্ছে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া রোহিঙ্গা আদৌ ফেরত যেতে চাইবে কি না?
মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের এটা একটা বড় দুর্বলতা। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি। দ্বিতীয় প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণÑ নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে? নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। অনেকে তার স্ত্রী, স্বামী, সন্তানকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা করতে দেখেছে। অনেক দেরিতে হলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীপ্রধান ‘সীমিত হত্যাকা-ে’র কথা স্বীকার করেছেন। তাদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইবেন নাÑ এটাই স্বাভাবিক। এখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের নিজ বাসভূম থেকে উৎখাত করেছে, রোহিঙ্গারা তাদের বিশ্বাস করবে না। ইতোমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা সুস্পষ্ট করেই বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না! রোহিঙ্গারা এ ধরনের বক্তব্যে উৎসাহিত হবেন নিঃসন্দেহে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো নিজেই বলেছেন, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো যাবে না! এ ধরনের বক্তব্য রোহিঙ্গাদের এই দেশে থেকে যেতে উৎসাহ জোগাতে পারে। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে আরও ম্যাচিউরড বক্তব্য আশা করেছিলাম। তৃতীয় প্রশ্নটিকেও আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। রোহিঙ্গারা কি আদৌ নিজ বাসভূমে ফেরত যেতে পারবে? এর সরাসরি জবাব হচ্ছেÑ না। যে চুক্তি হয়েছে, তাতে মিয়ানমার দুটি ক্যাম্প করবে। প্রথমটা অভ্যর্থনা ক্যাম্প, দ্বিতীয়টা অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্প। অর্থাৎ যারা বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবে, তাদের প্রথমে অভ্যর্থনা ক্যাম্পে রাখা হবে। তারপর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অপর একটি অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। এখানেই সমস্যাটা তৈরি হবে। এই ক্যাম্পে তারা বছরের পর বছর থেকে যেতে বাধ্য হবে! এটা একধরনের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। এখানে রেখেই তথাকথিত যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি হবে। আমার শঙ্কা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ভাগ্য ফিলিস্তিনিদের মতো হতে পারে! পাঠক স্মরণ করতে পারেন, ফিলিস্তিনিরা নিজ বাসভূম থেকে উৎখাত হয়ে বছরের পর বছর, জেনারেশনের পর জেনারেশন থেকে যাচ্ছেন ক্যাম্পে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পাঠক, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ যুগে ‘হোমল্যান্ড’গুলোর কথা স্মরণ করতে পারেন। বর্ণবাদ যুগের অবসানের আগে কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে সাতটি হোমল্যান্ডে রাখা হয়েছিল। আমার আশঙ্কাটা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের অবস্থা অনেকটা হোমল্যান্ডগুলোয় থাকা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অথবা ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর মতো হতে পারে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নীতি এটাইÑ রোহিঙ্গাদের অস্বীকার করা। আন্তর্জাতিক ‘চাপ’ এর কারণে তারা রোহিঙ্গাদের নিতে চাচ্ছে বটে, কিন্তু বাস্তবতাই বলে তারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করে নিতে চাইছে না। উপরন্তু তারা কোনোদিনই তাদের নিজ নিজ বসতবাটিতে ফেরত নেবে না। কেননা সেসব বসতবাটির আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। রাখাইনে কয়েকশ গ্রামে রোহিঙ্গাদের বসতবাটি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেসব গ্রাম এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘লিজ’ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে রোহিঙ্গারা নিজ বাসভূমে থাকতে পারছে না। রোহিঙ্গারা কোনোমতেই অন্যত্র থাকতে চাইবে না। বংশপরম্পরায় তারা নিজ বাসভূমে বসবাস করে আসছে। জমিজমা চাষ করে আসছে। কেউ কেউ ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল। এখন তাদের যদি অন্যত্র রাখা হয়, তারা তা মানতে চাইবে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এটা একটা অন্যতম সমস্যা। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এসব প্রশ্নের জবাব থাকা বাঞ্ছনীয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ খুব শক্ত অবস্থানে গেছে, এটা আমার মনে হয় না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এবং তার ‘বডি ল্যাংগুয়েজ’ বলে দেয়, বাংলাদেশ একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল; কিন্তু মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার কোনো কৌশল অবলম্বন করেনি। জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হয়েছে। জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান একটি ঘৃণিত অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনে তা দ-নীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। ইতোমধ্যে বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কঙ্গো, লাইবেরিয়া কিংবা রুয়ান্ডায় যারা জাতিগত উচ্ছেদ অভিযানে জড়িত ছিলেন, সেসব সেনা কর্মকর্তার বিচার হয়েছে। রায়ও দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সেনা কর্মকর্তাকে মিয়ানমারে গণহত্যার জন্য চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ এদের বিচারের দাবি করতে পারত। তাহলে অন্তত মিয়ানমার সরকার একটা ‘চাপ’ এর মুখে থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। এর অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে একটি ‘সফ্ট ডিপ্লোম্যাসি’র আশ্রয় নিয়েছে। ২৫ আগস্টের (২০১৭) রোহিঙ্গা গণহত্যা ও রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও বাংলাদেশ নিকট প্রতিবেশী, বিশেষ করে চীন ও ভারতের ‘সাহায্য’ নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ অবধি চীন স্ব-উদ্যোগে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সে প্রস্তাব অনুসরণ করেই মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। আগস্টের পর থেকে সংকটের গভীরতা বাড়লেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ওই সময় চীন, রাশিয়া, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেননি, এমনকি এসব দেশের সাহায্যও চাননি। অথচ প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভালো। এসব দেশকে দিয়ে আমরা মিয়ানমারের ওপর প্রভাব খাটাতে পারতাম। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পক্ষে। সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে। তিনিও বলেছেন, ভারত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। কিন্তু জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উরসুলা মুয়েলার যখন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি অনুকূল নয়, তা বিশ্ব সম্প্রদায়কে ভিন্ন মেসেজ পৌঁছে দিতে পারে! তারা ‘জোর করে’ রোহিঙ্গাদের পাঠাতে চাইবে না! এমনকি বাংলাদেশ যেখানে ৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছে, সেখানে মিয়ানমার জানিয়েছে তারা মাত্র ৩৮৩ জনকে গ্রহণ করবে। এর অর্থ পরিষ্কারÑ মিয়ানমার অন্য রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না! তাহলে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ কোথায় আশ্রয় দেবে? ভাসানচরে কিছু বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার স্থান হবে, কিন্তু বাকিরা থেকে যাবে বৃহত্তর কক্সবাজার এলাকায়। এখন জাতিসংঘের কর্মকর্তার বক্তব্য প্রকারান্তরে রোহিঙ্গাদের উৎসাহ জোগাবে বাংলাদেশে থেকে যেতে। এরই মাঝে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উ উইন মাইয়াত আই। প্রথমে তিনি কুতুপালং কাম্পে যান। রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করেন। এর পর ঢাকায় এসে দেখা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। রোহিঙ্গাদের তিনি ‘সবকিছু ভুলে’ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বলেছেন, তাদের জন্য নতুন নতুন গ্রাম তৈরি করা হবে। রোহিঙ্গাদের NVC বা National Varification Card দেওয়া হবে বলেও জানান। কিন্তু এই কার্ড নাগরিকত্বের পরিচয় বহন করে না। ফলে প্রশ্ন থাকলইÑ রোহিঙ্গারা শেষ অবধি নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন কি না।
Daily Alokito Bangladesh
22.04.2018
0 comments:
Post a Comment