বিএনপির সর্বশেষ রোডমার্চ শেষ হয়েছে গত ৯ জানুয়ারি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি এই রোডমার্চের আয়োজন করেছিল। চট্টগ্রামে এক বিশাল জনসভায় বেগম জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি আবার উত্থাপন করলেন। বললেন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া তার দল নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ আদৌ পরিলৰিত হচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি সংলাপ করেছেন। কিন্তু এজেন্ডায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই। আছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টি। আগামী ফেব্রম্নয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ ব্যাপারে মতামত নিতে বাধ্য নন। তবুও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেৰিতে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়েছেন। এতে বেশ কিছু মতামত পাওয়া গেছে। এখন কোন মতটি তিনি গ্রহণ করবেন, সে ব্যাপারে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না। একটি সার্চ কমিটির পৰে মতামত পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি যদি সত্যি সত্যিই একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন এবং তাতে যদি বিএনপির সমর্থন না থাকে, তাহলে ওই সার্চ কমিটির কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আমার কথা বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিয়েছে। সংলাপে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পৰে তাদের অভিমত দিয়েছে। যদিও সরকারি দল এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। অতি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ও কুমিলস্না সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এই দুটো নির্বাচনেই সরকারি দলের প্রার্থীরা হেরে গেছেন। উপরন্তু কুসিক নির্বাচনে শতকরা একশ ভাগ ইভিএম মেশিন ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে দলীয় সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন ও নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহারের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে বিরোধী দলের দাবির ব্যাপারে যদি কোনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে রাজনীতিতে সঙ্কট বাড়বেই। আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার চলিস্নশ বছর পার করেছি বটে, কিন্তু জাতীয় ইস্যুতে আমরা আজো এক হতে পারলাম না। সর্বশেষ সংবিধান সংশোধনীও (১৫তম) পাস হলো এককভাবে। দলীয় স্বার্থে আমরা বারবার সংবিধানে সংশোধনী এনেছি। আবার সেই সংশোধনীতেও পরিবর্তন এনেছি। স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরম্ন হয়েছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী তথা সংসদীয় রাজনীতি প্রবর্তন করেছিলেন। আবার বঙ্গবন্ধুই ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন দেশে। ১৯৯১ সাল পর্যনত্দ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বহাল ছিল। তারপর সংসদীয় রাজনীতি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়নে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল একটি উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি। ১৯৯৬ সালের ৬ষ্ঠ সংসদে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করতে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দরকার। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। সপ্তম, অষ্টম, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও, ২০১১ সালে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। গণতন্ত্রে পরস্পরের প্রতি আস্থা রাখা ও বিরোধী দলকে গ্রহণযোগ্যতায় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই জিনিসটির বড় অভাব বাংলাদেশে। এই আস্থাহীনতা পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে শুরম্ন হয়েছিল, যা আজো অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ বিশেষ ইস্যুতে জাতি আজো বিভক্ত। সংসদ বয়কটের সংস্কৃতি শুরম্ন হয়েছিল পঞ্চম সংসদ থেকে। আজো সংসদ বয়কট চলছে। বিরোধী দলকে গ্রহণযোগ্যতায় নেয়ার জন্য একটি ডেপুটি স্পিকারের পদসহ গুরম্নত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের কয়েকটি পদ বিরোধী দলকে দেয়ার কথা বলা হলেও, তা রৰিত হয়নি। কনফিডেন্টস বিল্ডিং মেজারসের যে স্পিরিটির কথা গণতন্ত্রে বলা আছে, তা লৰ্য করা যায়নি বাংলাদেশে। বাংলাদেশে নির্দিষ্ট সময় পরপর নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একদল ৰমতাসীন হয়েছে, পরে আবার ৰতাসীন দলের পতন ঘটেছে। শুধু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আর গণতন্ত্রকে উন্নত পর্যায়েও নিয়ে যাওয়া যায় না। এজন্য দরকার মানসিকতা পরিবর্তনের। বাংলাদেশের ৰেত্রে আজ এ কথাটা প্রযোজ্য। গত চারদশকের রাজনীতিতে একাধিকবার বাংলাদেশে নির্র্বাচন হয়েছে। সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে আরো উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'এক-এগার'র ঘটনা (২০০৭) একটি বিতর্কিত অধ্যায়। দু'বছর ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৰমতায় থেকেছে সংবিধান লঙ্ঘন করে। শুধু তাই নয়, ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকাণ্ড যথেষ্ট বিতর্কিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ব্যক্তিগতভাবে নিন্দিত হয়েছেন তার ভূমিকার জন্য। একটি অনির্বাচিত সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ৰমতা গ্রহণ করলেও, সংবিধানে বর্ণিত ৯০ দিনের মধ্যে ৰমতা হসত্দানত্দর না করে ৰমতা ধরে রেখেছেন দু'বছর পর্যনত্দ, যা তাদের বিতর্কিত করেছে। এমনকি তথাকথিত 'মাইনাস টু' ফর্মুলার জন্যও তারা সমালোচিত হয়েছেন। সংসদ নির্বাচন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির একটি অংশ। এই বিষয়টিকে আমরা যদি বিবেচনায় নিই, তাহলে দেখা যাবে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঝে ৰমতার পালা বদল ঘটছে অর্থাৎ বলা যেতে পারে বাংলাদেশে একটি দ্বিদলীয় রাজনীতির জন্ম হয়েছে। এ ৰেত্রে এককভাবে তৃতীয় কোনো শক্তি জন্ম হয়নি, যারা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করার ৰমতা রাখে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শক্তির বিকাশ ঘটেছে, যারা কোয়ালিশন সরকারের অংশিদার হিসেবে তাদের অসত্দিত্ব বজায় রেখেছে। এই দ্বিদলীয় ব্যবস্থা গণতন্ত্রের একটি সৌন্দর্য। পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশে এই দ্বিদলীয় ব্যবস্থা বজায় রয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কথা বলা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় শক্তির কোনো অসত্দিত্ব নেই। যুক্তরাজ্যে আছে বটে, কিন্তু তাদের একার পৰে ৰমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। জার্মানিতেও এই তৃতীয় ও চতুর্থ শক্তি রয়েছে, যারা কোয়ালিশন সরকারের অংশিদার। এই তৃতীয় তথা চতুর্থ শক্তির উপস্থিতি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে আরো শক্তিশালী করেছে মাত্র। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে দুটি প্রধান দলের মাঝে ৰমতা পরিবর্তিত হলেও, অপর দুটি দল জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। সংসদের ইতিহাস সেই কথাই বলে। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে সর্বোচ্চ আসনে বিজয়ী হয়েছিল (২৯২ আসন ও ৭৩ দশমিক ২০ ভাগ ভোট)। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। স্বতন্ত্র সদস্যরা চারটি আসন পেয়েছিল (৫.২৫ ভাগ ভোট)। কিন্তু ন্যাপ (মো.) একটি আসনে পেলেও শতকরা ভোট পেয়েছিল ৮.৩৩ ভাগ। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২০৭ আসনে বিজয়ী হয়েছিল (৪১.১৭ ভাগ ভোটে। আওয়ামী লীগ (মালেক ও মিজান গ্রম্নপ) পেয়েছিল ৪১টি আসন (৩৯+২), আর প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ২৪.৫৬ ও ২.৭৮ ভাগ। ওই নির্বাচনে মুসলিম লীগ ও ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ ঐক্য করে পেয়েছিল ২০টি আসন (১০.০৭ ভাগ ভোট)। জাসদ পেয়েছিল ৮টি আসন। মজার ব্যাপার আজকের মন্ত্রী বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একতা পার্টির ব্যানারে নির্বাচন করে তখন বিজয়ী হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির আত্মপ্রকাশ ও তথাকথিত নির্বাচনে (১৯৮৬ ও ১৯৮৮) বিজয়ী হলেও, ওই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিয়ে পেয়েছিল ৭৬টি আসন (২৬.১৬ ভাগ ভোট)। গণতন্ত্রের 'দ্বিতীয় যাত্রাপথ' শুরম্ন হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (১৯৯১) মধ্য দিয়ে। ওই নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ১৪১ সিট (৩০.০৮ ভাগ ভোট) আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৮৮টি সিট (৩০.০৮ ভাগ ভোট)। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ৩৫টি (১১.৯২ শতাংশ) ও জামায়াতে ইসলামী ১৮টি আসন পেয়েছিল (১২.১৩ শতাংশ)। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) এই দৃশ্যপট বদলে যায়। আওয়ামী লীগ (৩৭.৪৪ শতাংশ) ১৪৬ আসন ও বিএনপি ১১৬টি আসন (৩৩.৬১) পাওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছিল। পঞ্চম সংসদেও বিএনপি একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছিল। সপ্তম সংসদে জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা প্রায় এক থেকে (৩২ আসন, ১৬.৩৯ ভাগ ভোট)। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর আসন কমে এসে দাঁড়ায় ৩-এ (৮.৬১ ভাগ ভোট)। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০০১) আবার দৃশ্যপট বদলে যায়। চারদলীয় জোটে বিএনপি ১৯৩ আসন (৪০.৯৭ ভাগ ভোট) ও জামায়াতে ইসলামী ১৭ আসনে (৪.১৮ ভাগ ভোট)। বিজয়ী হয়। জোটগতভাবে চারদলের আসন ছিল ২১৬, আর প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪৭ ভাগ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২টি আসন পেলেও, তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪০.১৩ ভাগ। আর জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ১৪টি আসন (৭.২৫ ভাগ ভোট)। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে আবার দৃশ্যপট বদলে যায়। আওয়ামী লীগ ২৩১টি আসনে বিজয়ী হয় (৪৮.০৬ ভাগ ভোট)। আর বিএনপির ভাগ্যে জোটে ৩০টি আসন (৩২.৪৫ ভাগ ভোট)। জাতীয় পার্টি ২৬টি আসন (৭.০৫ ভাগ ভোট) জামায়াতে ইসলামী দুটি আসন (৪.৬০ ভাগ ভোট), বিজেপি ১, জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ২, এলডিপি ১টি আসন পেয়ে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে মজার ব্যাপার জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের নিজস্ব মার্কা নিয়ে নয়, বরং নৌকা মার্কা নিয়ে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য করেই তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এই নির্বাচনী ফলাফল প্রমাণ করে বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি বড় শক্তি। এই দুটি দলকে বাদ দিয়ে এ দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হবে না। সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও দুএকটি ছোট ছোট দল ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থেকে তাদের সংসদীয় ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আর ইসলামী চিনত্দা চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে বিএনপির নেতৃত্বে চারদল। এই ধারায় আগামীতে ইসলামিক শক্তিগুলো একত্রিত হতে পারে। অন্যদিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা ধর্মনিরপেৰতার প্রতিনিধিত্ব করে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশে বাম ধারার রাজনৈতিক সংগঠনকগুলো আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সংগঠিত হয়ে নিজেদের অসত্দিত্ব ধরে রাখবে। এই দুটি ধারার বাইরে তৃতীয় একটি ধারার জন্ম ও বিকাশের সম্ভাবনা তেমন একটি নেই। বাংলাদেশের চার দশকের রাজনীতিতে আমাদের প্রাপ্তি এটাই যে এখানে একটি সংসদীয় রাজনীতির সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। দুটি প্রধান দলকে কেন্দ্র করেই এই সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ একটি কোয়ালিশন রাজনীতির যুগে প্রবেশ করেছে। দুটি প্রধান দল এখন এবং আগামীতে তাদের শরিকদের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। দুটি প্রধান দলেরই টার্গেট হচ্ছে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা ধর্মনিরপেৰবাদীদের সমন্বয়ে এই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলছে। অন্যদিকে বিএনপির বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তথা ইসলামী মূল্যবোধের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দুটি ধারা আগামী দিনের রাজনীতিকেও নিয়ন্ত্রণ করবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটাই হচ্ছে বাসত্দবতা। এই বাসত্দবতা মেনে নিয়েই জনগণের কাছে যেতে হবে। জনমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, যাতে জনগণের সমর্থন থাকে। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি ঐকমত্য প্রয়োজন_ আর তা হচ্ছে নিরপেৰ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, নাকি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। ১৯৯১ সালের মতো আবারো এই ইস্যুতে যদি আমরা 'এক' হতে পারি, জাতির মঙ্গল এখানেই নিহিত। বেগম জিয়ার সর্বশেষ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়ে গেল যে বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। এ ৰেত্রে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রৰা করে যদি নির্বাচন হয় (যেমনটি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন), তাহলে সেই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। সুতরাং সরকারকেই আজ এগিয়ে আসতে হবে।
ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
0 comments:
Post a Comment