বাংলাদেশে একটি সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। এটাকে সেনা অভ্যুত্থান না বলে সেনা ঘটনা বলাই বাঞ্ছনীয়। কেননা অভ্যুত্থানের এতটুকু পরিবেশও তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। গত কয়েকদিন ধরে পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত যেসব সংবাদ ছাপা হয়েছে এবং যেসব প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়েছে, তার একদিকে যেমনি ইতিবাচক দিক রয়েছে, ঠিক তেমনি রয়েছে নেতিবাচক দিকও। ইতিবাচক দিক হচ্ছে সেনা নেতৃত্ব এ ধরনের চেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে এবং সংবাদ সম্মেলন করে জাতিকে তা জানান দিয়েছে। এতে গণতান্ত্রিক কার্যক্রমের প্রতি সেনাবাহিনীর অব্যাহত সমর্থন সেনা নেতৃত্ব আবারও প্রমাণ করলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেনা নেতৃত্ব অতীতে কখনও প্রেসের মুখোমুখি হননি। এবার হলেন। এর মধ্য দিয়ে এক ধরনের জবাবদিহিতা তৈরি হয়েছে। এটা ভালো। পৃথিবীর অনেক দেশেই অতীতে যেসব সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে (বিশেষ করে আফ্রিকাতে ষাট ও সত্তরের দশকে), সেখানে অনেক সময় বাইরের শক্তি সেনাবাহিনীকে প্ররোচিত করেছিল ক্ষমতা দখল করতে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ঘটনায় একটি নিষিদ্ধ ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর নাম এসেছে। তবে তা ব্যাপক সেনা নেতৃত্বকে আকৃষ্ট করতে পারেনি।
আমাদের সেনাবাহিনী আমাদের গৌরবের। এই সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করেছে জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। এই সেনাবাহিনী এখন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাচ্ছে আফ্রিকাতে। এক একজন সেনা সদস্য বিদেশে পালন করছেন এক একজন ‘রাষ্ট্রদূতের’ দায়িত্ব। আজকে যারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চান, তারা ভালো করেননি। যারাই অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছেন, তারা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে চেয়েছিলেন। সেনাবাহিনী যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ‘কমিটেড’, তাতে আঘাত হানতে চেয়েছিলেন। আশার কথা, তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আরও একটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই সেনা নেতৃত্বকে প্রশংসা করেছে। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসাররাও এ ধরনের যে কোন চেষ্টার সমালোচনা করেছেন। তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এক. একটি নিষিদ্ধ ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার নাম এসেছে। হিজবুত তাহরীর নামক সংগঠনটির তেমন কোন জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে আছে বলেও আমার মনে হয় না। মাঝেমধ্যে তরুণদের মাঝে এদের কর্মতৎপরতা পত্রপত্রিকায় লক্ষ্য করা যায়। সেনাবাহিনীর তরুণ অফিসারদের একটা অংশের মাঝে এরা কিছুটা পৌঁছতে পেরেছে বলেই মনে হয়। এটা একটা খারাপ দিক। সংগঠনটি বাংলাদেশভিত্তিক নয়। এদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেই এরা পরিচালিত হয়। সারা বিশ্বে মুসলমান তরুণদের মাঝেই এদের প্রভাব কিছুটা আছে। এদের রাজনীতি সম্পর্কে আমি যতদূর জানি, এরা ‘ইসলামী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। সেনাবাহিনীর মতো একটি শৃংখলিত বাহিনীতে এরা ‘অনুপ্রবেশ’ করবে, এটা কাম্য নয়।
দুই. ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে দুটি বড় দল পরস্পর পরস্পরকে ‘অভিযুক্ত’ করেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। মন্ত্রীরা সরাসরি অভিযোগ এনেছেন। নামধাম উল্লেখ করে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে। ফলে বিএনপিও সংবাদ সম্মেলন করে সরকারি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। দুটো বড় দলই রেষারেষির রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছে। এটা ভালো নয়। সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিকে খুব দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ব্যর্থ সেনা ঘটনা নিয়ে যখন তদন্ত হচ্ছে, তখন এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করাই শ্রেয়। এতে করে তদন্তকাজে বাধা আসতে পারে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা বিব্রত হতে পারেন। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ব্যর্থ সেনা ঘটনা নিয়ে কোন মন্তব্য না করেন, তাহলে তারা বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন। আরও একটা কথাÑ ব্যর্থ সেনা ঘটনা নিয়ে সংবাদও ছাপা হচ্ছে প্রতিদিন। ওইসব সংবাদে যাদের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তারা আদৌ জড়িত ছিলেন কিনা আমরা জানি না। তদন্ত পর্যায়ে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখার বিষয়। মানুষের জানার আগ্রহ থাকবে, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু কোন মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য যদি ছাপা হয়, তাহলে তা শুধু ওই ব্যক্তিকেই নয়, বরং বেশ কয়েকটি পরিবারকে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দিতে পারে। তিন. ব্যর্থ সেনা ঘটনা নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা বেশ কয়েকটি রিপোর্ট করেছে কয়েকদিন পরপর। একটি ভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের মন্তব্যও আমার চোখে পড়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকায় কোন কোন মন্তব্যে নয়াদিল্লির সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কতটুকু সত্য, আমরা জানি না। তবে ওইসব মন্তব্য বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে আদৌ সাহায্য করবে না। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে মন্তব্য সঠিক নয়। একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল সেনাবাহিনীকে হেয়প্রতিপন্ন করা যাবে না। সেনাবাহিনী আমাদের আস্থার জায়গা। এই সংগঠনটিকে দুর্বল করার উদ্দেশ্য সৎ নয়।
এই ব্যর্থ সেনা ঘটনা আমাদের জন্য অনেক চিন্তার খোরাক জোগাবে। এক. এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সেনা নেতৃত্ব আদৌ এর সঙ্গে কোনভাবে জড়িত ননÑ এটা প্রমাণিত হয়েছে। এখন এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। দুই. কেন তরুণ অফিসাররা ধর্মান্ধ গোষ্ঠী হিজবুত তাহরিরের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন, এটা সেনা নেতৃত্বকে অনুসন্ধান করতে হবে। ধর্মপালন করা ও ধর্মান্ধ হওয়া এক নয়। ধর্ম আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। প্রতিটি বাড়িতেই ধর্মচর্চা করা হয়। তার অর্থ ধর্মান্ধ হওয়া নয়। সেনাবাহিনীর তরুণ সদস্যরা ধর্মচর্চা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা কেন বিপথে যাবেন? আমার ধারণা বিভিন্ন পর্যায়ে যে সেনা প্রশিক্ষণ হয়, সেখানে ‘ধর্মান্ধতার’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ধর্ম নিয়ে যাতে কেউ বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সে বিষয়টিও দেখা উচিত। তরুণকে খুব সহজেই ধর্মের নামে আকৃষ্ট করা যায়। তাদের বিভ্রান্ত করা সহজ। কোনটা ভালো, কোনটি খারাপÑ এটা ওই বয়সে তারা বিবেচনায় নিতে পারে না। কেননা ধর্ম সম্পর্কে তাদের তখন তেমন পড়াশুনা থাকে না। ফলে ধর্ম নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায়, তারা খুব সহজেই তরুণ সমাজের মাঝে ‘প্রবেশ’ করেন। ‘হিজবুত তাহরির’ এই কাজটিই করেছে। সেনা নেতৃত্ব বিষয়টি বিবেচনায় নিলে ভালো করবেন। দুই. এখন রেষারেষির সময় নয়। কে দায়ী, কে দায়ী নয়, এর ভাগীদার কেÑ এ নিয়ে পরস্পরকে অভিযুক্ত না করে দুটি বড় দল যদি সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য আরও ‘সাজেশন’ দেয়, তাহলে তারা ভালো করবেন। তিন. বিএনপির জন্য এটা একটা ভালো সুযোগ সংসদে যাওয়ার। সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়ে তারা সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। একটা যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন সরকারের সঙ্গে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই সহনশীল হতে হবে। বিরোধীদলকে সংসদে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। সংসদে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করা চলবে না। চার. ব্যর্থ সেনা ঘটনার সঙ্গে যদি সিভিলিয়ানরা জড়িত থাকে, তাদের শাস্তির ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া যাবে না। তবে অহেতুক রাজনৈতিক নেতৃত্বকে টেনে না আনাই মঙ্গল।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সারা বিশ্বে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তারা নেতৃত্বের সারিতে রয়েছেন। এটা আমাদের কম পাওয়া নয়। বিপথগামী কিছু ব্যক্তি, এ ধরনের অপকর্ম করে শুধু সেনাবাহিনীর এই অর্জনকে নষ্ট করতে চায়। এরা বাংলাদেশের শত্র“। গণতন্ত্রের শত্র“। আমাদের আশার কথা সেনাবাহিনীর ঐক্যে তাতে এতটুকুও ফাটল দেখা দেয়নি। এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কোন তত্ত্বেই এর সমর্থন মেলে না। সারা বিশ্ব যেখানে গণতন্ত্রমুখী, যেখানে সামরিক অভ্যুত্থান পশ্চিমা বিশ্বে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায় না, সেখানে গুটিকয়েক ব্যক্তির এই অপচেষ্টা, শুধু নিন্দাই কুড়াবে মাত্র। এ ঘটনা বাংলাদেশের দুটি বড় দলকে যদি গণতন্ত্রের স্বার্থে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে, তাহলে আগামীতে আমরা গণতন্ত্রকে আরও কিছুটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব। দেখার বিষয় বড় দলগুলো এই সুযোগটি নেয় কিনা।
আমাদের সেনাবাহিনী আমাদের গৌরবের। এই সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করেছে জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। এই সেনাবাহিনী এখন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাচ্ছে আফ্রিকাতে। এক একজন সেনা সদস্য বিদেশে পালন করছেন এক একজন ‘রাষ্ট্রদূতের’ দায়িত্ব। আজকে যারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চান, তারা ভালো করেননি। যারাই অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছেন, তারা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে চেয়েছিলেন। সেনাবাহিনী যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ‘কমিটেড’, তাতে আঘাত হানতে চেয়েছিলেন। আশার কথা, তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আরও একটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই সেনা নেতৃত্বকে প্রশংসা করেছে। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসাররাও এ ধরনের যে কোন চেষ্টার সমালোচনা করেছেন। তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এক. একটি নিষিদ্ধ ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার নাম এসেছে। হিজবুত তাহরীর নামক সংগঠনটির তেমন কোন জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে আছে বলেও আমার মনে হয় না। মাঝেমধ্যে তরুণদের মাঝে এদের কর্মতৎপরতা পত্রপত্রিকায় লক্ষ্য করা যায়। সেনাবাহিনীর তরুণ অফিসারদের একটা অংশের মাঝে এরা কিছুটা পৌঁছতে পেরেছে বলেই মনে হয়। এটা একটা খারাপ দিক। সংগঠনটি বাংলাদেশভিত্তিক নয়। এদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেই এরা পরিচালিত হয়। সারা বিশ্বে মুসলমান তরুণদের মাঝেই এদের প্রভাব কিছুটা আছে। এদের রাজনীতি সম্পর্কে আমি যতদূর জানি, এরা ‘ইসলামী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। সেনাবাহিনীর মতো একটি শৃংখলিত বাহিনীতে এরা ‘অনুপ্রবেশ’ করবে, এটা কাম্য নয়।
দুই. ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে দুটি বড় দল পরস্পর পরস্পরকে ‘অভিযুক্ত’ করেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। মন্ত্রীরা সরাসরি অভিযোগ এনেছেন। নামধাম উল্লেখ করে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে। ফলে বিএনপিও সংবাদ সম্মেলন করে সরকারি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। দুটো বড় দলই রেষারেষির রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছে। এটা ভালো নয়। সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিকে খুব দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ব্যর্থ সেনা ঘটনা নিয়ে যখন তদন্ত হচ্ছে, তখন এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করাই শ্রেয়। এতে করে তদন্তকাজে বাধা আসতে পারে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা বিব্রত হতে পারেন। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ব্যর্থ সেনা ঘটনা নিয়ে কোন মন্তব্য না করেন, তাহলে তারা বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন। আরও একটা কথাÑ ব্যর্থ সেনা ঘটনা নিয়ে সংবাদও ছাপা হচ্ছে প্রতিদিন। ওইসব সংবাদে যাদের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তারা আদৌ জড়িত ছিলেন কিনা আমরা জানি না। তদন্ত পর্যায়ে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখার বিষয়। মানুষের জানার আগ্রহ থাকবে, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু কোন মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য যদি ছাপা হয়, তাহলে তা শুধু ওই ব্যক্তিকেই নয়, বরং বেশ কয়েকটি পরিবারকে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দিতে পারে। তিন. ব্যর্থ সেনা ঘটনা নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা বেশ কয়েকটি রিপোর্ট করেছে কয়েকদিন পরপর। একটি ভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের মন্তব্যও আমার চোখে পড়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকায় কোন কোন মন্তব্যে নয়াদিল্লির সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কতটুকু সত্য, আমরা জানি না। তবে ওইসব মন্তব্য বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে আদৌ সাহায্য করবে না। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে মন্তব্য সঠিক নয়। একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল সেনাবাহিনীকে হেয়প্রতিপন্ন করা যাবে না। সেনাবাহিনী আমাদের আস্থার জায়গা। এই সংগঠনটিকে দুর্বল করার উদ্দেশ্য সৎ নয়।
এই ব্যর্থ সেনা ঘটনা আমাদের জন্য অনেক চিন্তার খোরাক জোগাবে। এক. এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সেনা নেতৃত্ব আদৌ এর সঙ্গে কোনভাবে জড়িত ননÑ এটা প্রমাণিত হয়েছে। এখন এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। দুই. কেন তরুণ অফিসাররা ধর্মান্ধ গোষ্ঠী হিজবুত তাহরিরের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন, এটা সেনা নেতৃত্বকে অনুসন্ধান করতে হবে। ধর্মপালন করা ও ধর্মান্ধ হওয়া এক নয়। ধর্ম আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। প্রতিটি বাড়িতেই ধর্মচর্চা করা হয়। তার অর্থ ধর্মান্ধ হওয়া নয়। সেনাবাহিনীর তরুণ সদস্যরা ধর্মচর্চা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা কেন বিপথে যাবেন? আমার ধারণা বিভিন্ন পর্যায়ে যে সেনা প্রশিক্ষণ হয়, সেখানে ‘ধর্মান্ধতার’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ধর্ম নিয়ে যাতে কেউ বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সে বিষয়টিও দেখা উচিত। তরুণকে খুব সহজেই ধর্মের নামে আকৃষ্ট করা যায়। তাদের বিভ্রান্ত করা সহজ। কোনটা ভালো, কোনটি খারাপÑ এটা ওই বয়সে তারা বিবেচনায় নিতে পারে না। কেননা ধর্ম সম্পর্কে তাদের তখন তেমন পড়াশুনা থাকে না। ফলে ধর্ম নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়ায়, তারা খুব সহজেই তরুণ সমাজের মাঝে ‘প্রবেশ’ করেন। ‘হিজবুত তাহরির’ এই কাজটিই করেছে। সেনা নেতৃত্ব বিষয়টি বিবেচনায় নিলে ভালো করবেন। দুই. এখন রেষারেষির সময় নয়। কে দায়ী, কে দায়ী নয়, এর ভাগীদার কেÑ এ নিয়ে পরস্পরকে অভিযুক্ত না করে দুটি বড় দল যদি সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য আরও ‘সাজেশন’ দেয়, তাহলে তারা ভালো করবেন। তিন. বিএনপির জন্য এটা একটা ভালো সুযোগ সংসদে যাওয়ার। সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়ে তারা সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। একটা যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন সরকারের সঙ্গে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই সহনশীল হতে হবে। বিরোধীদলকে সংসদে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। সংসদে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করা চলবে না। চার. ব্যর্থ সেনা ঘটনার সঙ্গে যদি সিভিলিয়ানরা জড়িত থাকে, তাদের শাস্তির ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া যাবে না। তবে অহেতুক রাজনৈতিক নেতৃত্বকে টেনে না আনাই মঙ্গল।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সারা বিশ্বে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তারা নেতৃত্বের সারিতে রয়েছেন। এটা আমাদের কম পাওয়া নয়। বিপথগামী কিছু ব্যক্তি, এ ধরনের অপকর্ম করে শুধু সেনাবাহিনীর এই অর্জনকে নষ্ট করতে চায়। এরা বাংলাদেশের শত্র“। গণতন্ত্রের শত্র“। আমাদের আশার কথা সেনাবাহিনীর ঐক্যে তাতে এতটুকুও ফাটল দেখা দেয়নি। এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কোন তত্ত্বেই এর সমর্থন মেলে না। সারা বিশ্ব যেখানে গণতন্ত্রমুখী, যেখানে সামরিক অভ্যুত্থান পশ্চিমা বিশ্বে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায় না, সেখানে গুটিকয়েক ব্যক্তির এই অপচেষ্টা, শুধু নিন্দাই কুড়াবে মাত্র। এ ঘটনা বাংলাদেশের দুটি বড় দলকে যদি গণতন্ত্রের স্বার্থে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে, তাহলে আগামীতে আমরা গণতন্ত্রকে আরও কিছুটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব। দেখার বিষয় বড় দলগুলো এই সুযোগটি নেয় কিনা।
দৈনিক যুগান্তর ২৭ জানুয়ারি ২০১২।
ড. তারেক শামসুর রেহমান : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ড. তারেক শামসুর রেহমান : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
0 comments:
Post a Comment