রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশের সমুদ্র জয় যেতে হবে অনেক দূর

১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) সমুদ্রসীমা বিরোধের রায় বাংলাদেশের পক্ষে যাওয়ার পর যেভাবে প্রশংসার ঝড় সর্বত্র বয়ে যাচ্ছে, তাতে বিভ্রান্ত হওয়ার একটা বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এ মুহূর্তে আমাদের করণীয় কী, সে বিষয়টি চাপা পড়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারত দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার কথা বলেছে। সেটাও বিভ্রান্তিকর। কেননা দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরই বাংলাদেশ হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে গেছে। তবে এটা সত্য, বর্তমান সরকারের সময়েই সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়। অতীতে কোনো সরকারই এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি সমুদ্র যে আমাদের জন্য বিশাল এক সম্পদ, এ বিষয়টিও আমাদের বিশেষজ্ঞ তথা নীতি নির্ধারকরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেননি। অথচ মিয়ানমার ও ভারত অনেক আগেই তাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে ফেলেছিল। আমরা সমুদ্রসীমা নির্ধারণ না করেই সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ২৮টি বস্নকে ভাগ করেছিলাম এবং বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বস্নক বণ্টনের ব্যাপারে আলোচনা ও বস্নক বণ্টন (কনকো ফিলিপ ও তুল্লো) শুরু করে দিয়েছিলাম। ফলে আপত্তি উঠেছিল মিয়ানমার ও ভারতের কাছ থেকে। যে কারণে আমরা বাধ্য হয়েছিলাম হামবুর্গের ট্রাইব্যুনাল ও হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আমরা যা চেয়েছিলাম, তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। এতে সব প্রশ্নের সমাধান হয়েছে, এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। যেমন, যে ২৮টি বস্নক আমরা নির্ধারণ করেছি, তার সব কটাতে আমাদের অধিকার রক্ষিত হবে কিনা বলা মুশকিল। কেননা ইটলস এ বাংলাদেশ যেসব ম্যাপ উপস্থাপন করেছে কিংবা নটিক্যাল চার্ট ও আনক্লজ-৩ এর বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করার পরই বোঝা যাবে বাংলাদেশের অধিকার ওই ২৮টি বস্নকে কতটুকু রচিত হয়েছে। তবে জার্মানির কোনো কোনো সংবাদপত্র আভাস দিয়েছে ওই রায়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি মিয়ানমারও লাভবান হয়েছে। যদিও মিয়ানমারের সংবাদপত্র ঘেটে এটা বোঝা যায়নি মিয়ানমার ওই রায়ে কতটুকু সন্তুষ্ট হয়েছে। তবে তারা এ রায় মেনে নিয়েছে। কেননা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের এ রায়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। মিয়ানমার এ রায় মেনে নিলেও সেখানে অসন্তুষ্টি আছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করা এর বড় প্রমাণ। তবে মিয়ানমার এ মুহূর্তে সমুদ্রে 'স্ট্যাটাস কো' বজায় রাখবে। কেননা প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনস মিয়ানমারকে এখন বহিঃবিশ্বে 'ওপেন' করে দিয়েছেন। এ রায় পাওয়ার পরপরই তিনি কম্পোডিয়া ও ভিয়েতনাম সফরে গেছেন। ইতোমধ্যে ৪৮ আসনের মধ্যে ৪৫ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূচি ওই নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন। মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র তথা আসিয়ানের পর্যবেক্ষকদের নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে তারা এ মুহূর্তে কোনো বিবাদে যাবে না। বাংলাদেশের উচিত মিয়ানমারের এ অ্যাপ্রোচকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা। বলা ভালো, তিনভাবে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল, দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক আদালত ও তৃতীয়ত আরবিট্রয়াল ট্রাইব্যুনাল। ভারত প্রথম দুটাতে আগেই আপত্তি দেয়ায় ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আমাদের তৃতীয় অপশনে যেতে হয়েছে। এখন মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ন্যায়পরায়ণতার (বা ইকুইটি) দাবি স্বীকৃত হওয়ায় ধারণা করছি ভারতের সঙ্গেও বিরোধ নিষ্পত্তিতে এ দাবি টিকে যাবে। ভারত ও মিয়ানমার প্রথম থেকেই 'ইকোডিসটেন্স' বা সমদূরত্বের কথা বলে আসছিল। এ দাবি মেনে নেয়া হলে বঙ্গোপসাগরের ওপর যথাক্রমে দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে দুটি সীমারেখা টানা হতো। এর ফলে বাংলাদেশ সমুদ্র অঞ্চলের ওপর তার অধিকার হারাত। বাংলাদেশ চেয়েছে 'সমতা ও ন্যায়পরায়ণতার' ভিত্তিতে একটি সমাধান। এ পদ্ধতিতে সোজা দক্ষিণ দিকে এ সীমারেখা টানতে হবে। ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের এ দাবিকে স্বীকৃতি দিল। বাংলাদেশ যদি মিয়ানমারের দাবি অনুযায়ী 'সমদূরত্বর' দাবি মেনে নিত, তাহলে বাংলাদেশের ৪৮ হাজার ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা মিয়ানমারের হাতে চলে যেত। একইসঙ্গে ৩১ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চলে যেত ভারতের হাতে। ফলে সমুদ্রের যে বিশাল সম্পদ সেই সম্পদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো বাংলাদেশ। তাই ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি তখন সঠিক বলেই বিবেচিত হবে। যারা সমুদ্র আইন নিয়ে কাজ করেন, তারা জানেন হামবুর্গে বাংলাদেশের অনুকূলে ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছেন, তার সঙ্গে ১৯৬৯ সালের আন্তর্জাতিক আদালতের দেয়া একটি রায়ের সঙ্গে অদ্ভুত এক মিল রয়েছে। আজকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতকে নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, ঠিক একই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল জার্মানি, ডেনমার্ক ও হল্যান্ডের মধ্যে। এ তিনটি দেশই তেলসমৃদ্ধ নর্থ সিতে তাদের বিশাল এলাকা দাবি করেছিল। ওই সময় একদিকে ছিল জার্মানি, অন্যদিকে ডেনমার্ক ও হল্যান্ড। জার্মানির অবস্থান ছিল অনেকটা আজকের বাংলাদেশের মতো। জার্মানির দাবি ছিল ডেনমার্ক ও হল্যান্ড 'সমদূরত্বের' নীতি অনুসরণ করায় সমুদ্রে তার অধিকার খর্ব হয়েছে। ও দেশটি ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে দেশ তিনটি তখন ১৯৬৭ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে যায়। আদালত ১৯৬৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে ঘোষণা করেন যে দেশ তিনটির সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে হবে 'সমদূরত্বের' নীতিতে নয়, বরং ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে। আজ ৪৩ বছর পর নতুন করে আবার 'ন্যায়পরায়ণতার' ভিত্তিটি স্বীকৃতি পেল। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের উপকূল বিচিত্র ধরনের। প্রতিনিয়ত পলি জমার কারণে তীরের গভীরতাও এতই কম যে জাহাজ সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারে না। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের উপকূল উত্তল (কনভেক্স), অর্থাৎ তাদের উপকূল সমুদ্রের ভেতরে ঢুকে গেছে। আমাদের উপকূল অবতল (কনক্যাভ), অর্থাৎ সমুদ্র এখানে উপকূলের ভেতরে ঢুকে গেছে। এর ফলে উপকূল অাঁকাবাঁকা হয়। এখানে পলি বেশি জমা হয়। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনে একে বিশেষ পরিস্থিতি বলা হয়েছে। ভূসনি্নহিত এ ধরনের সমুদ্র সম্পদে পরিপূর্ণ হলে আন্তর্জাতিক আইনে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বেশি থাকে। তবে এখানে একটা সমস্যা ছিল ভারতকে নিয়ে। অর্থাৎ সমুদ্রসীমাটা কোত্থেকে শুরু হয়েছে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যাখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক নদী হাড়িয়াভাঙ্গার মধ্য স্রোত হবে বাংলাদেশের সীমানা। অন্যদিকে ভারত চাইছে রায়মঙ্গল, যমুনা এবং হাড়িয়াভাঙ্গা নদীগুলো বঙ্গোপসাগরে গিয়ে যেখানে মিশেছে, সেখানে গভীর চ্যানেলের কোনো এক জায়গায় সীমানা নির্ধারণ হোক। তবে বাংলাদেশের যুক্তি- রায়মঙ্গল ও যমুনা অভ্যন্তরীণ নদী। সমুদ্রসীমা শুরুর পয়েন্ট নিয়ে বিরোধ থাকায়, ভারত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপকে নিজের বলে দাবি করে আসছে। এখানে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে ১৯৫৮ সালের আগ পর্যন্ত সমুদ্রসংক্রান্ত কোনো আইন ছিল না। ১৯৫৮ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রথমবারের মতো চারটি কনভেনশন বা সনদ গ্রহণ করা হয়। এগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সমুদ্র ও নিকটস্থ অঞ্চলবিষয়ক কনভেনশন, উন্মুক্ত সমুদ্রবিষয়ক কনভেনশন, মহীসোপান বিষয়ক কনভেনশন ও মৎস্য শিকার ও প্রাণিজসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক কনভেনশন। এসব কনভেনশন পরে অনেক রাষ্ট্রের অনুমোদন পেয়ে আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য বর্তমানে বলবৎ আছে ৩ৎফ টহরঃবফ ঘধঃরড়হং পড়হাবহঃরড়হ ড়হ ঃযব খধ িড়ভ ংবধ (টঘঈখঙঝ ওওও)। এটি ১৯৮২ সালে গৃহীত এবং ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে তা কার্যকর হয়। ভারত ১৯৯৫ সালের ২৭ জুন ও মিয়ানমার ১৯৯৬ সালের ২১ মে টঘঈখঙঝ ওওও অনুমোদন করে। বাংলাদেশ তা অনুমোদন করে ২০০১ সালের ২৭ জুলাই। তবে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ঞবৎৎরঃড়ৎরধষ ডধঃবৎং ধহফ গধৎরঃরসব তড়হবং অপঃ ১৯৭৪ পাস করেছিল। ওই অ্যাক্টের বেইজ লাইন ৬০ ফুট সমুদ্র গভীরতার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছিল। জাতিসংঘের সমুদ্র আইনের ধারা ৭৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ সমুদ্র হটরেখা থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল বা ৬৪৮ দশমিক ২ কিলোমিটার পর্যন্ত নিজেদের অধিকার দাবি করতে পারে। ২০০ নটিক্যাল মাইল এমনিতেই বাংলাদেশের পাওনা। বাকি ১৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গেলে জাতিসংঘে দাবি করতে হয়। আইন অনুযায়ী মহীসোপানের মহিঢাল থেকে যেখানে সেডিমেন্ট (পলি) ১ শতাংশ পর্যন্ত আছে অথবা ২ হাজার ৫০০ মিটার পানির গভীরতা রেখা থেকে আরো ১০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত যাওয়া যাবে। কিন্তু প্রথম ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যেই ভারত ও মিয়ানমার তাদের ভূখ- দাবি করে আসছিল। ২০০৯ সালের ২৯ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংসদকে জানিয়েছিলেন যে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ২৮ হাজার ৪৭৬ বর্গ নটিক্যাল মাইল অমীমাংসিত সীমান্ত রয়েছে। এখানে ভারতের দাবি ৮ হাজার ৭১৪ বর্গ নটিক্যাল মাইল ও মিয়ানমারের দাবি ১৯ হাজার ৭০২ বর্গ নটিক্যাল মাইল। সম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সমুদ্রে গ্যাস বস্নক (৫, ১০ ও ১১) ইজারা দিতে গেলে ভারত (৫ ও ১০) এবং মিয়ানমার (১১) একযোগে আপত্তি তোলে। শুধু তাই নয় গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের ২৮টি বস্নকের মাঝে ভারতের দাবি রয়েছে ১০টিতে, আর মিয়ানমারের দাবি ১৭টিতে। বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বস্নক ১৩, ১৭, ১৮, ২২, ২৩, ২৭ ও ২৮ এর ভেতর মিয়ানমারের গভীর সমুদ্র বস্নক এডি-৭, এডি-৮, এডি-৯ ও এডি-১০ ঢুকে পড়েছে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে মিয়ানমার এডি-৭ (বাংলাদেশের বস্নক ১৩) বস্নকে গ্যাস অনুসন্ধান চালাতে গেলে (কোরিয়ার দেওউ কোম্পানি) দু'দেশের নৌবাহিনী পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল। আমাদের সমুদ্র অঞ্চল নানা ধরনের খনিজ পদার্থ ও গ্যাস সম্পদে ভরপুর। বাংলাদেশের তার উপকূল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌসীমা রয়েছে। এ অভ্যন্তরীণ নৌসীমায় বাংলাদেশের পূর্ণ কর্তৃত্ব এবং সার্বভৌমত্ব বজায় রয়েছে। তার পরের ১২ নটিক্যাল মাইল সনি্নকটবর্তী অঞ্চল এবং এ অঞ্চলের সীমানা শেষ হলে শুরু হয় একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল, যা ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। এখন ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী এ ২০০ নটিক্যাল মাইলের উপর আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরেই সাগরের যে মহীসোপান, সেখানেও আমাদের অধিকার রক্ষিত হলো। হামবুর্গের এ ট্রাইব্যুনালের রায় আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হয় গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের এলাকায় ১৮ বিলিয়ন ব্যারেল তেল ও ২০০ ট্রিলিয়ন কিউসিক ফিট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশ যে বড় ধরনের জ্বালানি সঙ্কটের মুখোমুখি পড়তে যাচ্ছে, এ রিজার্ভে আমাদের জন্য একটা সমাধান বয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বাস্তবতার নিরিখে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা এই মুহূর্তে জরুরি। বড় ধরনের জ্বালানি সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে আজ প্রয়োজনে যৌথ উদ্যোগে গ্যাস, তেল ও খনিজ সম্পদ আহরণের উদ্যোগ নিতে হবে। হটকারী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। আমাদের সীমানায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে পিএসসি ২০০৮ এর অধীনে চুক্তি করলেও তাতে যেন বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। বিদেশি কোম্পানিগুলো এখন আগ্রহী হবে। তাই বলে আমরা যেন আমাদের স্বার্থের কথা ভুলে না যাই। আমরা কোনো অবস্থাতে আমাদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে পারি না। রায় আমাদের পক্ষে গেছে। কিন্তু এটাই শেষ নয়। যেতে হবে অনেক দূর। নিতে হবে সঠিক সিদ্ধান্তটি। তাই আত্মতুষ্টি নয়। বরং সঠিক সিদ্ধান্তটি নেয়া এখন অনেক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক যায় যায় দিন, ৩ এপ্রিল ২০১২।  ড. তারেক শামসুর রেহমান: প্রফেসর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 

0 comments:

Post a Comment