রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কি অবনতি হচ্ছে


গত ১০ জুলাই প্রেস ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে স্পষ্টতই এটা প্রতীয়মান হয় যে দু'দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা চিড় ধরেছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন বেশকিছু ইস্যুতে মার্কিন আইন প্রণেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকা-ের প্রকৃত কারণ উদঘাটনের সরকারের ব্যর্থতা, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান, র‌্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- ইত্যাদি। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশের পণ্য বিক্রিতে (যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে) বিধি নিষেধ আরোপিত হতে পারে। হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফর করে গিয়েছিলেন। তখনো তিনি সংবাদ সম্মেলনে আমিনুল ইসলামের হত্যাকা- নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আমিনুল ছিলেন আশুলিয়া এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের নেতা। তাকে কারা হত্যা করেছিল, তার রহস্য আজো উদঘাটিত হয়নি। এটা নিয়ে আমেরিকার লেবার অর্গানাইজেশনগুলো প্রশ্ন তুলেছে। সংবাদপত্রে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এখন এর সঙ্গে যোগ হলো পদ্মা সেতুর বিষয়টি। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে দুর্নীতির কারণে। বিষয়টি যে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ হিলারির সফরের মধ্যে দিয়ে সম্পর্কের নতুন একটি ইতিহাস রচিত হয়েছিল। বাংলাদেশে তার উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ওই সফর নিয়ে প্রচুর লেখাও হয়েছিল। যদিও এর যে একটি নেতিবাচক দিকও ছিল, তাও ওই সময় বিভিন্ন বিশ্লেষকের লেখায় প্রতিফলিত হয়েছিল। এখন মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে দু'দেশের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এক ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। বাংলাদেশটা তার একেবারে অপরিচিত নয়। এর আগেও তিনি বাংলাদেশে এসেছেন, তবে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নয়। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণের বিকাশ ড. ইউনূসের সঙ্গে তার সখ্যতা, বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়ন ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশের ব্যাপারে হিলারি ক্লিনটনকে আগ্রাহান্বিত করে তুলেছিল। এর প্রমাণও তিনি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ না হলেও ড. ইউনূসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। দীর্ঘ কথাও হয়েছে। তবে এবারে হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিভিন্ন কারণে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব এ মুহূর্তে অনেক বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অক্ষ, ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি বেড়ে যাওয়া, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়া, ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হওয়া ইত্যাদি নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। নিছক প্রটোকল রক্ষার্থে হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশে এসেছিলেন, এটা আমি মনে করি না। বরং দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতিতে যে পরিবর্তন আসছে, সেই পরিবর্তনের আলোকেই দু'দেশের সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রশ্ন উঠেছিল ওই সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি নিয়ে। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের আলোকে এই সফর থেকে আমরা সুবিধা আদায় করে নিতে পারিনি। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে হিলারি ক্লিনটনের দেয়া বক্তব্য থেকে যে বিষয়গুলো বেরিয়ে এসেছিল, তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি যে খুব বেশি ছিল তা আমার কাছে মনে হয়নি। তখন একটি যৌথ অংশীদারিত্বের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে দু'দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ে বছরে একবার সংলাপ হবে। এ ধরনের সংলাপ অতীতে হলেও এবার এর একটি আইনি কাঠামো দেয়া হলো। প্রশ্ন হচ্ছে এই সংলাপ এর মধ্য দিয়ে কী আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ আদায় করে নিতে পারব? নাকি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থটা এখানে বেশি? চুক্তিতে সন্তানের বিরুদ্ধে লড়াই, সহিংস চরমপন্থা এবং মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং জলদস্যুতার মতো আন্তঃদেশীয় অপরাধবোধ ও নিরাপত্তা সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের ব্যাখ্যা নানাভাবে বিশ্লেষণ হতে পারে। যা আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা হচ্ছে ভবিষ্যতে তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ রোধে সহযোগিতার আলোকে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হোক মার্কিন সেনা মোতায়েন হবে কিনা? যে অংশীদারী সংলাপের কথা বলা হচ্ছে, তাতে এই দিকটা নির্দেশ করে কিনা? অনেকের মনে থাকার কথা গত ২ মার্চ সিনেটের এক অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের (বাংলাদেশ প্যাসিফিক ফ্লিটের অন্তর্ভুক্ত) কমান্ডার রবার্ট উইলাড বলেছিলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। যদিও ঢাকার মার্কিন দূতাবাস পরে এর একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছিল। আসলে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে নানা কারণে ভারতীয় মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি, যা মার্কিন তথা ভারতীয় স্বার্থকে আঘাত করছে, এটা পেন্টাগনের উদ্বেগের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে মিয়ানমার এখন অনেকটা 'উন্মুক্ত' হয়ে যাচ্ছে। সু চি সংসদে গেছেন। সু চির ভবিষ্যতে ক্ষমতায় বসান এবং মিয়ানমারে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়ে 'চীনকে ঘিরে ফেলার' মার্কিনী নীতিতে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন। যদিও এটা ঠিক যুক্তরাষ্ট্র চায় না বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক। বাংলাদেশকে তারা একটি মডারেট মুসলিম দেশ হিসেবেই মনে করে। জঙ্গিবাদকে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ভয়। প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের ব্যর্থতা স্বীকার করে ২০১৪ সালে সেখান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে যাচ্ছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়া, হর্ন অফ আফ্রিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিবাদ বিকশিত হোক, আল-কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি দলগুলো শক্তিশালী হোক, এটা যুক্তরাষ্ট্র কখনো চাইবে না। আমেরিকা-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব চুক্তি এ লক্ষ্যেই স্বাক্ষরিত হয়েছে কিনা, এটাই বড় প্রশ্ন এখন। ভুলে গেলে চলবে না দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্ব মার্কিনীদের কাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। অতি সম্প্রতি এডমিরাল জেমস স্টাভরিডিস মার্কিন বাহিনীর ভড়ৎধিৎফ ঢ়ৎবংবহপব এর কথা বলেছেন। এডমিরাল স্টাভরিডিস যুক্তরাষ্ট্রের ঊটঈঙগ (টহরঃবফ ঝঃধঃবং ঊঁৎড়ঢ়বধহ ঈড়সসধহফ) এর প্রধান। স্টাভরিডিস দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য তথা আফ্রিকাতে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তার কথাই বোঝাতে চেয়েছেন। এখন দেখার বিষয় যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিটিকে কীভাবে ব্যবহার করে। এখান থেকে আমাদের পাওয়ার কিছু নেই। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের যে সুযোগ চেয়েছিল, তা পায়নি। বাংলাদেশকে তার তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে যে শুল্ক দিতে হয়, তাতে করে প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারছি না। অথচ এলএসডির দেশ হিসেবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগে আমাদের পাওয়ার কথা। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন (এমসিপি) থেকে বাংলাদেশ কোনো সাহায্য পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে হিলারি ক্লিনটনের সফরের সময় কোনো বক্তব্য বা সহযোগিতার আশ্বাসও আমরা পাইনি। ঢাকায় মিসেস ক্লিনটন গণতন্ত্রের জন্য সংলাপ ও পার্লামেন্টারি ডিবেটের কথা বলেছিলেন। এগুলো হচ্ছে_ তত্ত্বের কথা। আমরা সবাই জানি গণতন্ত্রে সরকারি ও বিরোধী দলের মাঝে সংলাপ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখাটা যে জরুরি এ কথাটা আমরা বারবার বলে আসছি। কিন্তু এই সংলাপ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি সংসদীয় ডিবেট ও তেমন কার্যকর নয় বাংলাদেশে। হিলারি ক্লিনটনের মুখ থেকে এ কথাটা বেরিয়ে এসেছিল সত্য, কিন্তু আদৌ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে, এ আস্থাটা রাখতে পারছি না। হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিল-বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের 'নাক গলানো'। ভারত কিংবা অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এমনটা করে না। আমরা তেমন একটা 'ক্ষেত্র' তৈরি করেছি, সেখানে বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় মন্তব্য করছে। আজ ড্যান মজিনাও করলেন। আমরা একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করেছি। যাতে বিদেশিরা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটাচ্ছে। সরকার যদি আরো সতর্ক হতো, আমার বিশ্বাস তারা এ ধরনের মন্তব্য করতে সাহস পেত না। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে অনেকের আবেগ জড়িত। সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। সুতরাং যেভাবেই হোক সরকারকে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে হবে। নিজস্ব অর্থায়নে কাজটি করা সম্ভব। কিন্তু তাতে করে অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে। সেতুটির স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। সর্বোপরি দুর্নীতির প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেবে তখন। যারা বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা জানেন বিশ্বব্যাংক উন্নয়নশীল বিশ্বে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এ সংক্রান্ত অনেক গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একটি প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুললে, ছলে-বলে কৌশলে বাকি প্রকল্পগুলোও আটকে দেয় বিশ্বব্যাংক। আজ সে রকম একটি পরিস্থিতিরই মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমরা। তাদের এ সিদ্ধান্তে অন্যরাও প্রভাবিত হবে। ড্যান মজিনার মন্তব্যে আমি একটি খারাপ গন্ধ পাচ্ছি। যদি সত্যি সত্যিই পোশাক রপ্তানিতে বাধা আসে, তাহলে শত শত পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। লাখ লাখ নারী চাকরি হারানোর ঝুঁকির মুখে থাকবে। কেননা মার্কিন লেবার অর্গানাইজেশন অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা আমিনুল হত্যার বিচার চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আর বিচার না পেলে তারা বাংলাদেশি পোশাক বয়কটের ডাক দিতে পারে। সুতরাং বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে আমিনুলের হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচন করে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের অবহিত করা। র‌্যাবের কর্মকা- সংস্থাটিকে বিতর্কিত করেছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধের ব্যাপারেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শুধু তাই নয়। পদ্মা সেতু নিয়ে অভিযুক্ত মন্ত্রীকে অপসারণ করে সরকার প্রধান একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আমরা আরো উন্নত পর্যায়ে দেখতে চাই। বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ অনেক বেশি, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু আমাদের বৈদেশিক নীতির প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের প্রয়োজন রয়েছে। এই সম্পর্কের মাঝে চিড় ধরুক, কিংবা সম্পর্কে অবনতি হোক আমরা তা চাই না। মজিনার আশঙ্কা সত্য বলে প্রমাণিত হবে না, এটাই আমরা আশা করি।Daily JAI JAI DIN18.7.12

0 comments:

Post a Comment